প্রেমে পড়ার পর খিদে কমে যায় কেন?
আগে একটু বলা যাক এই প্রেমে পড়ে খিদে কমে যাওয়ার ঘটনাটা কিন্তু একেবারে সত্য এবং এর প্রমাণ একবার হাতেনাতে পেয়েছিলাম । মা গো মা ! সেই ঝক্কির কথা আর না বলাই ভালো।
কিন্তু ব্যাপার হল আমি বিজ্ঞানের ছাত্রী তাই কোন কিছু হলে সেটার পিছনের বৈজ্ঞানিক কারণ না জেনে শান্ত হইনা । সেই ঔৎসুক্য থেকেই এর আসল কারণ খুঁজতে গিয়ে যা যা তথ্য পেয়েছিলাম । সেটাই ভাগাভাগি করে নিচ্ছি -
আপনারা কি জানেন ?
প্রেমে পড়া আর উচ্চমাত্রায় ড্রাগ ( যেমন - কোকেন) সেবন করা - দুটি ক্ষেত্রেই বহিঃপ্রকাশ প্রায় সমান । [1] শুধু প্রথমটার প্রভাব একমাসের বেশি স্থায়ী হয় না । যাকে পোশাকি ভাষায় বলে হানিমুন ফেজ। এই ফেজ পর্যন্ত এই প্রেমে পড়ার সাইড এফেক্ট থাকে। কিন্তু দ্বিতীয়টির প্রভাব ! থাক আর বললাম না। তাই দ্বিতীয়টি করার চেষ্টাও করবেন না ।
যাইহোক প্রেম নিয়েই থাকা যাক । প্রেমে পড়লে "পুরা মাথাই নষ্ট " - এই কথাটা নিশ্চয়ই শুনেছেন । কথাটা কিন্তু মিথ্যা নয় । প্রেমে পড়লে ডোপামিন , অক্সিটোসিন , সেরাটোনিন ইত্যাদি নিউরোট্রান্সমিটার আপনার মস্তিষ্ককে বারো দিক থেকে আক্রমণ করে। ফলে আপনার শুধু ক্ষুধামান্দ্য নয় , ঘুমেরও বারোটা বেজে তেরোটা হয়ে যায় ।
এই প্রসঙ্গে একটা ঐতিহাসিক তথ্য দিয়ে রাখা ভালো । প্রথম সেলুকাসের পুত্র অ্যান্টিওকাস তার সৎ মা স্ট্র্যাটনিসের প্রেমে পড়ে যায় । এই প্রেম এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে তার শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে সেলুকাস অবশেষে তার পুত্রকে রক্ষা করার জন্য তার পুত্রের সাথে তার স্ত্রীর বিবাহ দিতে সম্মত হন। [2]
এ তো গেলো ইতিহাসের গল্প । কিন্তু বাস্তবে হারভাড মেডিকেল স্কুলে একটি গবেষণা সংঘটিত হয়েছিল । এটা জানার জন্য যে প্রেম কি খিদের উপর কোন বিশেষ প্রভাব ফেলে?
কিছুজন পুরুষের উপর এই গবেষণা করার সময় - অর্ধেক জনকে খাবার খাওয়ার আগে অক্সিটোসিন হরমোন ন্যাসাল স্প্রে করা হয় । এরফলে দেখা যায় - যাদেরকে অক্সিটোসিন স্প্রে করা হয় তারা পরিমাণে কম খাবার গ্রহণ করেছে। তাছাড়া তাদের বিপাকের হারও অনেক বেশি।[3]
অক্সিটোসিন যাকে লাভ হরমোন বলে , সেটি অত্যধিক খুশি হলে বা প্রেমে পড়লে মস্তিষ্কে ক্ষরিত হয় ।
এই প্রেমে পাগল হওয়ার গল্প তো স্বয়ং শেক্সপিয়ার তার রোমিও জুলিয়েট নাটকেও বলেছে। যখন শেষ দৃশ্যে রোমিও আবিষ্কার করল যে তার প্রেমিকা জুলিয়েট মারা গেছে তখন কিছু না ভেবে রোমিও তার প্রাণত্যাগ করল । এখানে একজন স্বাভাবিক মানুষ থাকলে মরে যাওয়ার আগে তো একবার তার প্রেমিকাকে ঝাকানাকা করে নাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করত -
বলো জুলিয়েট তুমি আমাকে টুরু লাভ করো । বলো বলো !
কিন্তু না ! অক্সিটোসিন , সেরাটোনিন আর ডোপামিন তখন তো রোমিওর মাথায় অন্য খেলা খেলছে। ফলে সে তার প্রাণ নিয়ে নিল আর জুলিয়েট আড়মোড়া ভেঙ্গে যখন ঘুম থেকে উঠল । তখন তাকে মৃত দেখে জুলিয়েট তো একেবারে ফুল টস খেয়ে গেল । ফলে তারও মৃত্যু আর মাঝখান থেকে রোমিও জুলিয়েট উপন্যাস বিখ্যাত হয়ে গেল ।
ধন্যবাদ
ফুটনোটগুলি