কোরআনের দোয়া!

কোরআনের দোয়া!



মুসলমানদের কাছে দোয়া শব্দটি ব্যাপক পরিচিত। দোয়া সকল বেদনার উপশম। যে দোয়া করতে জানে, সে কোনো কিছুতেই আটকে থাকে না। আল্লাহ তাআলাই উত্তম সাহায্যকারী। ইসলামের পরিভাষায়, দোয়া শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘আবাহন’ বা ‘ডাকা’ । দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নানান বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।’ (সুরা মু'মিন-৬০)

আমাদের একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ তাআলার নিকটই দোয়া করতে হবে। তার কাছে চাইতে হবে। তিনিই সবাইকে সব ধরনের দুশ্চিন্তা ও পেরেশানিমুক্ত করতে পারেন। দোয়া আমাদের জন্য সবসময় উপাদেয় ও উপকারী।  আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নামাজ-রোজা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি, বিপদ-মুসিবতসহ দুনিয়ার যাবতীয় কল্যাণ এবং পরকালের সফলতা লাভে জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করা উচিত।


কোরআন থেকে দোয়া: ১ 

اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ. صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ

'আমাদেরকে সরল পথ দেখাও,সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নিয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।'সুরা ফাতিহা- আয়াত ৬/৭

স্নেহ ও করুণা এবং কল্যাণ কামনাসহ কাউকে মঙ্গলময় পথ দেখিয়ে দেয়া ও মনজিলে পৌছিয়ে দেয়াকে আরবী পরিভাষায় ‘হেদায়াত’ বলে।  হেদায়াত’ শব্দটির দুইটি অর্থ। একটি পথ প্রদর্শন করা, আর দ্বিতীয়টি লক্ষ্য স্থলে পৌছিয়ে দেয়া। যেখানে এই শব্দের পর দুইটি object থাকবে إلى থাকবে না, সেখানে এর অর্থ হবে লক্ষ্যস্থলে পৌছিয়ে দেয়া। আর যেখানে এ শব্দের পর إلى শব্দ আসবে, সেখানে অর্থ হবে পথ-প্রদর্শন।

 যেমন আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সম্বোধন করে বলেছেন,

 إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ 

“নিশ্চয়ই আপনি লক্ষ্যস্থলে—মনজিলে পৌঁছিয়ে দিতে পারবেন না যাকে আপনি পৌছাতে চাইবেন। বরং আল্লাহই লক্ষ্যস্থলে পৌছিয়ে দেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন  [সূরা আল-কাসাস ৫৬] 

এ আয়াতে হেদায়েত শব্দের পর إلى ব্যবহৃত হয়নি বলে লক্ষ্যস্থলে পৌছিয়ে দেয়া অর্থ হয়েছে এবং তা করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাধ্যায়ত্ত নয় বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে পথ প্রদর্শন রাসূলে করীমের সাধ্যায়ত্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَىٰ صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ “হে নবী। আর আপনি অবশ্যই সরল সঠিক দৃঢ় ঋজু পথ প্রদর্শন করেন [সূরা আশ-শূরা: ৫২]

কিন্তু লক্ষ্যস্থলে পৌছিয়ে দেয়ার কাজ কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। তাই তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন, وَلَهَدَيْنَاهُمْ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا  “আর অবশ্যই আমরা তাদেরকে সরল সোজা সুদৃঢ় পথে পৌছিয়ে দিতাম। [সূরা আন-নিসা: ৬৮]

সূরা আল-ফাতিহা’র আলোচ্য আয়াতে হেদায়েত শব্দের পর إلى শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি। ফলে এর অর্থ হবে সোজা সুদৃঢ় পথে মনজিলের দিকে চালনা করা। অর্থাৎ যেখানে বান্দাহ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে শুধু এতটুকু বলে না যে, হে আল্লাহ্! আপনি আমাদেরকে সোজা সুদৃঢ় পথের সন্ধান দিন। বরং বলে, হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে সরল সুদৃঢ় পথে চলবার তাওফীক দিয়ে মনজিলে পৌছিয়ে দিন। 

 কেননা শুধু পথের সন্ধান পাইলেই যে সে পথ পাওয়া ও তাতে চলে মনজিলে পোঁছা সম্ভবপর হবে তা নিশ্চিত নয়। কিন্তু সিরাতে মুস্তাকীম কি? সিরাত শব্দের অর্থ হচ্ছে, রাস্তা বা পথ। আর মুস্তাকীম হচ্ছে, সরল সোজা।  সে হিসেবে সিরাতে মুসতাকীম হচ্ছে, এমন পথ, যা একেবারে সোজা ও ঋজু, প্রশস্ত ও সুগম; যা পথিককে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছিয়ে দেয়; যে পথ দিয়ে লক্ষ্যস্থল অতি নিকটবর্তী এবং মনযিলে মাকছুদে পৌছার জন্য যা একমাত্র পথ, যে পথ ছাড়া লক্ষ্যে পৌছার অন্য কোন পথই হতে পারে না।

আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ আমারও রব তোমাদেরও রব, অতএব একমাত্র তারই দাস হয়ে থাক। এটাই হচ্ছে সিরাতুম মুস্তাকীম-সঠিক ও সুদৃঢ় ঋজু পথ  [সূরা মারইয়াম: ৩৬]

অর্থাৎ আল্লাহকে রব স্বীকার করে ও কেবল তারই বান্দাহ হয়ে জীবন যাপন করলেই সিরাতুম মুস্তাকীম অনুসরণ করা হবে। অন্যত্র ইসলামের জরুরী বিধি-বিধান বর্ণনা করার পর আল্লাহ তা'আলা বলেন, “আর এটাই আমার সঠিক দৃঢ় পথ, অতএব তোমরা এই পথ অনুসরণ করে চল। এছাড়া আরও যত পথ আছে, তাহার একটিতেও পা দিও না; কেননা তা করলে সে পথগুলো তোমাদেরকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে দিবে-ভিন্ন দিকে নিয়ে যাবে। আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন এ উদ্দেশ্যে, যেন তোমরা ধ্বংসের পথ হতে আত্মরক্ষা করতে পার [সূরা আল-আনআমঃ ১৫৩]

একমাত্র আল্লাহর নিকট থেকে যে পথ ও বিধি-বিধান পাওয়া যাবে, তাই মানুষের জন্য সঠিক পথ।

 আল্লাহ বলেন, “প্রকৃত সত্য-সঠিক-ঋজু-সরল পথ প্রদর্শন করার দায়িত্ব আল্লাহর উপর, যদিও আরও অনেক বাঁকা পথও রয়েছে। আর আল্লাহ চাইলে তিনি সব মানুষকেই হেদায়াতের পথে পরিচালিত করতেন [সূরা আন-নাহ্‌ল: ৯]

সিরাতে মুসতাকীমের তাফসীর কোন কোন মুফাসসির করেছেন, ইসলাম। আবার কারও কারও মতে, কুরআন। [আত-তাফসীরুস সহীহ] বস্তুত: আল্লাহর প্রদত্ত বিশ্বজনীন দ্বীনের অন্তর্নিহিত প্রকৃত রূপ ‘সিরাতুল মুস্তাকীম’ শব্দ হতে ফুটে উঠেছে। আল্লাহ্ তা'আলার দাসত্ব কবুল করে তারই বিধান অনুসারে জীবন যাপন করার পথই হচ্ছে সিরাতুল মুস্তাকীম এবং একমাত্র এই পথে চলার ফলেই মানুষ আল্লাহর নিয়ামত ও সন্তোষ লাভ করতে পারে। সে একমাত্র পথই মানব জীবনের প্রকৃত ও চূড়ান্ত সাফল্যের জন্য একান্ত অপরিহার্য। তাই সে একমাত্র পথে চলার তওফীক প্রার্থনা করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে এই আয়াতটিতে। কিন্তু আল্লাহর নিকট হতে এই পথ কিরূপে পাওয়া যেতে পারে? সে পথ ও পন্থা নির্দেশ করতে গিয়ে আল্লাহ এর তিনটি সুস্পষ্ট পরিচয় উল্লেখ করেছেনঃ

১. এই জীবন কিভাবে যাপন করতে হবে তা তাদের নিকট হতে গ্রহণ করতে হবে, যারা উক্ত বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করে আল্লাহর নিকট হতে নিয়ামত ও অসীম অনুগ্রহ লাভ করেছে।

২. এই পথের পথিকদের উপর আল্লাহর গজব নাযিল হয় নি, অভিশপ্তও তারা নয়।

৩, তারা পথভ্রান্ত লক্ষ্যভ্রষ্টও নয়। পরবর্তী আয়াতসমূহে এ কথা কয়টির বিস্তারিত আলোচনা আসছে।

তাদের পথ, যাদেরকে আপনি নিয়ামত দিয়েছেন(১), যাদের উপর আপনার ক্রোধ আপতিত হয়নি(২) এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।(৩)

১. এটা আল্লাহর নির্ধারিত সঠিক ও দৃঢ় পথের প্রথম পরিচয়। এর অর্থ এই যে, আল্লাহর নিকট হতে যে পথ নাযিল হয়েছে, তা অনুসরণ করলে আল্লাহর রহমত ও নিয়ামত লাভ করা যায়। দ্বিতীয়তঃ তা এমন কোন পথই নয়, যাহা আজ সম্পূর্ণ নূতনভাবে পেশ করা হচ্ছে- পূর্বে পেশ করা হয় নি। বরং তা অতিশয় আদিম ও চিরন্তন পথ। মানুষের এই কল্যাণের পথ অত্যন্ত পুরাতন, ততখানি পুরাতন যতখানি পুরাতন হচ্ছে স্বয়ং মানুষ। প্রথম মানুষ হতেই এটা মানুষের সম্মুখে পেশ করা হয়েছে, অসংখ্য মানুষ এ পথ প্রচার করেছেন, কবুল করার আহবান জানিয়েছেন, এটা বাস্তবায়িত করার জন্য প্রাণপণ সংগ্রাম করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত তারা আল্লাহর নিকট হতে, অপূর্ব নিয়ামত ও সম্মান লাভের অধিকারী প্রমাণিত হয়েছেন। এই নিয়ামত এই দুনিয়ার জীবনেও তারা পেয়েছেন, আর আখেরাতেও তা তাদের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে রয়েছে।

মূলত: আল্লাহর নিয়ামতপ্রাপ্ত লোকদের চলার পথ ও অনুসৃত জীবনই হচ্ছে বিশ্ব মানবতার জন্য একমাত্র পথ ও পন্থা। এতদ্ব্যতীত মানুষের পক্ষে গ্রহণযোগ্য, অনুসরণীয় ও কল্যাণকর পথ আর কিছুই হতে পারে না। কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত লোক কারা এবং তাদের পথ বাস্তবিক পক্ষে কি? 

এর উত্তর অন্য আয়াতে এসেছে, “যা করতে তাদেরকে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা তা করলে তাদের ভাল হত এবং চিত্তস্থিরতায় তারা দৃঢ়তর হত। এবং তখন আমি আমার কাছ থেকে তাদেরকে নিশ্চয় মহাপুরস্কার প্রদান করতাম এবং তাদেরকে নিশ্চয় সরল পথে পরিচালিত করতাম। আর কেউ আল্লাহ এবং রাসুলের আনুগত্য করলে সে নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ (যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন) তাদের সঙ্গী হবে এবং তারা কত উত্তম সঙ্গী! এগুলো আল্লাহর অনুগ্রহ। সর্বজ্ঞ হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট  [সূরা আন-নিসাঃ ৬৬-৭০)

 এ আয়াত থেকে সঠিক ও দৃঢ় জীবন পথ যে কোনটি আর আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্ত লোকগণ যে কোন পথে চলেছেন ও চলে আল্লাহর অনুগ্রহ পাবার অধিকারী হয়েছেন তা সুস্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে জানা যায়। তারা হচ্ছেন আম্বিয়া, সিদ্দীক, শহীদ ও সালেহীন। [ইবন কাসীর]

২. এটা আল্লাহর নির্ধারিত সিরাতুল মুস্তাকীম এর দ্বিতীয় পরিচয়। আল্লাহ তাআলা যে পথ মানুষের সম্মুখে চিরন্তন কল্যাণ লাভের জন্য উপস্থাপিত করেছেন সে পথ অভিশাপের পথ নয় এবং সে পথে যারা চলে তাদের উপর কখনই আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হতে পারে না। সে পথ তো রহমতের পথ বরং সে পথের পথিকদের প্রতি দুনিয়াতে যেমন আল্লাহর অনুগ্রহ ও সাহায্য বর্ষিত হয়ে থাকে, আখেরাতেও তারা আল্লাহর চিরস্থায়ী সন্তোষ লাভের অধিকারী হবে। এই আয়াতাংশের অপর একটি অনুবাদ হচ্ছে, “তাদের পথ নয় যাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ নাযিল হয়েছে।” এরূপ অনুবাদ করলে তাতে ‘সিরাতুল মুস্তাকীম’ ছাড়া আরও একটি পথের ইঙ্গিত মানুষের সামনে উপস্থাপিত হয়, যা আল্লাহর নিকট হতে অভিশপ্ত এবং সেই পথ হতে মানুষকে রক্ষা করাই এর উদ্দেশ্য মনে হয়।

 কিন্তু এখানে আল্লাহ মূলতঃ একটি পথই উপস্থাপিত করেছেন এবং একটি পথেরই ইতিবাচক দুইটি বিশেষণ দ্বারা সেটাকে অত্যধিক সুস্পষ্ট করে তুলেছেন। তাই অনেকেই পূর্বোক্ত প্রথম অনুবাদটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। [উভয় অর্থের জন্য দেখুন, যামাখশারী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] প্রথম অনুবাদ বা দ্বিতীয় অনুবাদ যাই হোক না কেন এখানে একথা স্পষ্ট হচ্ছে যে, আল্লাহর প্রতি ঈমানদার লোকদেরকে প্রকারান্তরে এমন পথ ও পন্থা গ্রহণ হতে বিরত থাকবার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, যা আল্লাহর অভিশাপের পথ, যে পথে চলে কোন কোন লোক অভিশপ্ত হয়েছে।

কিন্তু সে অভিশপ্ত কারা, কারা কোন পথে চলে আল্লাহর নিকট হতে অভিশপ্ত হয়েছে, তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া আবশ্যক। কুরআন মজীদ ঐতিহাসিক জাতিদের সম্পর্কে উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছেঃ “আর তাদের উপর অপমান লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্যের কষাঘাত হানা হয়েছে এবং তারা আল্লাহর অভিশাপ প্রাপ্ত হয়েছে।[সূরা আল-বাকারাহ: ৬১]

পূর্বাপর আলোচনা করলে নিঃসন্দেহে এটা বুঝতে পারা যায় যে, এ কথাটি ইয়াহুদীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাই মাগদুব বলতে যে এখানে ইয়াহুদীদের বুঝানো হয়েছে, সে বিষয়ে সমস্ত মুফাসসিরই একমত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসেও অনুরুপ স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে [দেখুন, মুসনাদে আহমাদ ৫/৩২,৩৩]

৩. এটি সিরাতুল মুস্তাকীম'-এর তৃতীয় ও সর্বশেষ পরিচয়। অর্থাৎ যারা সিরাতুল মুস্তাকীম এ চলে আল্লাহর নিয়ামত লাভ করতে পেরেছেন তারা পথভ্রষ্ট নন-কোন গোমরাহীর পথে তারা চলেন না। পূর্বোল্লেখিত আয়াতের ন্যায় এ আয়াতেরও অন্য অনুবাদ হচ্ছে, তাদের পথে নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে, যারা গোমরাহ হয়ে আল্লাহর উপস্থাপিত পথ হতে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস থেকে এ পথ-ভ্ৰষ্ট লোকদের পরিচয় জানতে পারা যায় যে, দুনিয়ার ইতিহাসে নাসারাগণ হচ্ছে কুরআনে উল্লেখিত এ গোমরাহ ও পথ-ভ্ৰষ্ট জাতি। [মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩২,৩৩, ৭৭]

 কোন মুসলিম যখন সূরা ফাতিহা পাঠ করে, তখন সে প্রকারান্তরে এ কথাই ঘোষণা করে যে, “হে আল্লাহ আমরা স্বীকার করি, আপনার সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে যে জীবন-ধারা গড়ে উঠে তা-ই একমাত্র মুক্তির পথ। এজন্য আপনার নির্ধারিত এ পথে চলে যারা আপনার নিয়ামত পেয়েছেন সেই পথই একমাত্র সত্য ও কল্যাণের পথ, আল্লাহ সেই পথেই আমাদেরকে চলবার তাওফীক দিন। আর যাদের উপর আপনার অভিশাপ বর্ষিত হয়েছে ও যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তাদের যেন আমরা অনুসরণ না করি। কেননা, সে পথে প্রকৃতই কোন কল্যাণ নেই। 

বস্তুতঃ পবিত্র কুরআন দুনিয়ার বর্তমান বিশ্বমানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ ও একমাত্র সর্বশেষ আল্লাহর দেয়া গ্রন্থ। এর উপস্থাপিত আদর্শ ও জীবন পথই হচ্ছে বিশ্বমানবতার একমাত্র স্থায়ী ও কল্যাণের পথ। এর বিপরীত সমস্ত জীবনাদর্শকে মিথ্যা প্রমাণ করে একমাত্র এরই উপস্থাপিত আদর্শের ভিত্তিতে নিজেদেরকে গঠন করা মুসলিমদের একমাত্র দায়িত্ব। মুসলিমরা আজও সেই দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ হলে সূরা আল ফাতিহা তাদের জীবনে সার্থক হবে।

মূলতঃ যারা সূরা আল-ফাতিহার অর্থ বুঝে সূরা আল-ফাতিহা পাঠ শেষ করার পর তাদের মন থেকে দোআ করবে, আল্লাহ তা'আলা তাদের দোআ কবুল করবেন। হাদীসে এসেছে, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, إِذَا قَالَ الْإِمَامُ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ فَقُولُوا آمِينَ فَمَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ “ইমাম গাইরিল মাগদূবি আলাইহিম ওয়ালাদদ্বলীন বলে তখন তোমরা ‘আমীন’ বা ‘হে আল্লাহ কবুল কর’ একথাটি বল; কেননা যার কথাটি ফেরেশতাদের কথা অনুযায়ী হবে তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয় হবে” [বুখারী: ৭৮২, মুসলিম ৪০৯] 

অন্য বর্ণনায় এসেছে, وَإِذَا قَالَ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ فَقُولُوا آمِينَ يُجِبْكُمُ الله যখন ইমাম ‘গাইরিল মাগদূবি আলাইহিম ওয়ালাদ দ্বলীন’ বলে তখন তোমরা আমীন বা 'হে আল্লাহ কবুল কর একথাটি বল; এতে আল্লাহ তোমাদের আহবানে সাড়া দিবেন (দোআ কবুল করবেন) [মুসলিম ৪০৪] 

অন্য একহাদীসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, مَا حَسَدَتْكُمْ الْيَهُودُ عَلَى شَيْءٍ ، مَا حَسَدَتْكُمْ عَلَى السَّلَامِ وَالتَّأْمِينِ “ইয়াহুদীরা তোমাদেরকে সালাম ও আমীন বলার চেয়ে বেশী কোন বিষয়ের উপর হিংসা করে না।” [ইবন মাজাহ: ৮৫৬] তাফসীরে জাকারিয়া

কোরআন থেকে দোয়া: ২

وَ اِذۡ یَرۡفَعُ اِبۡرٰهٖمُ الۡقَوَاعِدَ مِنَ الۡبَیۡتِ وَ اِسۡمٰعِیۡلُ ؕ رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ

আর (স্মরণ কর) যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কাবাগৃহের ভিত্তি তুলছিল, তখন প্রার্থনা করল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ থেকে কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাতা’।

সুরা বাকারা আয়াত ১২৭

رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

'হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।'

এখানে লক্ষণীয় যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম رب শব্দ দ্বারা দোআ আরম্ভ করেছেন। তিনি এই শব্দের মাধ্যমে দো'আ করার রীতি শিক্ষা দিয়েছেন। কারণ এ জাতীয় শব্দ আল্লাহর রহমত ও কৃপা আকৃষ্ট করার ব্যাপারে খুবই কার্যকর ও সহায়ক। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, “ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ইসমাঈলকে বললেন, হে ইসমাঈল। আল্লাহ আমাকে একটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। 

ইসমাঈল বললেন, আপনার রব আপনাকে যা নির্দেশ করেছেন তা বাস্তবায়িত করুন। ইবরাহীম বললেন, তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে? ইসমাঈল বললেন, আমি আপনাকে সাহায্য করব। ইবরাহীম পাশের একটি উঁচু জায়গা দেখিয়ে বললেন, আল্লাহ আমাকে এখানে একটি ঘর বানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইবনে আব্বাস বলেন, তারপর তারা দু’জনে ঘরের ভিত্তি স্থাপন করে তা উঁচু করছিলেন। ইসমাঈল পাথর নিয়ে আসতেন আর ইবরাহীম ঘর বানাতেন। তারপর যখন ঘর উঁচু হয়ে গেল তখন ইসমাঈল এ পাথরটি এনে ইবরাহীমের পায়ের নীচে রাখলেন। তখন ইবরাহীম তাতে দাঁড়িয়ে ঘর বানাতে থাকলেন। এমতাবস্থায় তাদের মুখ থেকে এ দোআ বের হচ্ছিল।” [বুখারী ৩৬৬৪]

(২) ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহ্‌র নির্দেশে সিরিয়ার সুজলা-সুফলা সুদর্শন ভূ-খণ্ড ছেড়ে মক্কার বিশুস্ক পাহাড়সমূহের মাঝখানে স্বীয় পরিবার-পরিজনকে এনে রাখেন এবং কা'বা গৃহের নির্মাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। এরূপ ক্ষেত্রে অন্য কোন আত্মত্যাগী ইবাদতকারীর অন্তরে অহংকার দানা বাধতে পারত এবং সে তার ক্রিয়াকর্মকে অনেক মূল্যবান মনে করতে পারত। কিন্তু এখানে ছিলেন আল্লাহর এমন একজন বন্ধু যিনি আল্লাহর প্রতাপ এবং মহিমা সম্পর্কে যথার্থভাবে অবহিত। তিনি জানতেন, আল্লাহর উপযুক্ত ইবাদাত ও আনুগত্য কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। প্রত্যেকেই নিজ নিজ শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করে। তাই আমল যত বড়ই হোক সেজন্য অহংকার না করে কেঁদে কেঁদে এমনি দোআ করা প্রয়োজন যে, হে আমার রব! আমার এ আমল কবুল হোক। কা'বা গৃহ নির্মাণের আমল প্রসংগে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাই বলেছেন, (رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا) হে রব! আমাদের এ আমল কবুল করুন। কেননা, আপনি শ্রোতা, আপনি সর্বজ্ঞ। [মা'আরিফুল কুরআন]

কোরআন থেকে দোয়া: ৩

رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَآ إِنَّكَ أَنتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। বাকারা আয়াত-  ১২৮


কোরআন থেকে দোয়া: ৪

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

'হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদিগকে দুনয়াতেও কল্যাণ দান করো এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করো এবং আমাদিগকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করো।' বাকারা আয়াত ২০১

আবদুল্লাহ ইবনে সায়েব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কাবার দুই রুকনের মাঝখানে এ দোআ বলতে শুনেছি। [আবু দাউদ: ১৮৯২] আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই এ দো'আ করতেন। [বুখারী ৪৫২২, মুসলিম: ২৬৯০]

কোরআন থেকে দোয়া: ৫

وَ لَمَّا بَرَزُوۡا لِجَالُوۡتَ وَ جُنُوۡدِهٖ قَالُوۡا رَبَّنَاۤ اَفۡرِغۡ عَلَیۡنَا صَبۡرًا وَّ ثَبِّتۡ اَقۡدَامَنَا وَ انۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ

আর যখন তারা জালূত ও তার সৈন্যবাহিনীর মুখোমুখি হল, তখন তারা বলল, ‘হে আমাদের রব, আমাদের উপর ধৈর্য ঢেলে দিন, আমাদের পা স্থির রাখুন এবং আমাদেরকে কাফের জাতির বিরুদ্ধে সাহায্য করুন’।

رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

'হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের মনে ধৈর্য্য সৃষ্টি করে দাও এবং আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখ, আর কাফির জাতির বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য কর।' বাকারা আয়াত- ২৫০

জালূত সেই শত্রুদলের সেনাপতি ও দলনেতা ছিল, যাদের সাথে ত্বালূত ও তাঁর সঙ্গীদের সংঘর্ষ ছিল। এরা ছিল আমালেক্বা জাতি। সেই সময়ে এই জাতি বড় দুর্ধর্ষ যুদ্ধ-বিশারদ এবং বীর নামে প্রসিদ্ধ ছিল। তাদের এই প্রসিদ্ধির কারণে ঠিক যুদ্ধের সময় ঈমানদারগণ আল্লাহর নিকট ধৈর্য ও সুদৃঢ় থাকার তওফীক চেয়ে এবং কুফরীর মোকাবেলায় ঈমানের সফলতার জন্য দু’আ করেন। অর্থাৎ, (যুদ্ধের) পার্থিব উপকরণাদি গ্রহণ করার সাথে সাথে ঈমানদারদের জন্য অত্যাবশ্যক হল, এ রকম পরিস্থিতিতে আল্লাহর নিকট বিশেষভাবে প্রার্থনা করা। যেমন, বদরের যুদ্ধে নবী করীম (সাঃ) অত্যধিক কাকুতি-মিনতির সাথে বিজয় ও সাহায্য চেয়ে দু’আ করেছিলেন। মহান আল্লাহ তাঁর সে দু’আ কবুল করেছিলেন। ফলে অতীব অল্প সংখ্যক মুসলিম দল অধিক সংখ্যক কাফের দলের উপর জয় লাভ করেছিল।

কোরআন থেকে দোয়া: ৬

اٰمَنَ الرَّسُوۡلُ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡهِ مِنۡ رَّبِّهٖ وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ؕ کُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ مَلٰٓئِکَتِهٖ وَ کُتُبِهٖ وَ رُسُلِهٖ ۟ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡ رُّسُلِهٖ ۟ وَ قَالُوۡا سَمِعۡنَا وَ اَطَعۡنَا ٭۫ غُفۡرَانَکَ رَبَّنَا وَ اِلَیۡکَ الۡمَصِیۡرُ

রাসূল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর, আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল। বাকারা আয়াত  ২৮৫

এই আয়াতে এমন কিছু বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে, যার উপর ঈমানদারদেরকে ঈমান আনতে বলা হয়েছে। এর পরের

{لاَ يُكَلِّفُ اللهُ} আয়াতে আল্লাহর রহমত, তাঁর দয়া এবং তাঁর অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, তিনি মানুষকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না। হাদীসে এই শেষ দুটি আয়াতের অনেক ফযীলতের কথা এসেছে। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি সূরা বাক্বারার শেষের দু’টি আয়াত রাতে পড়ে নেয়, তার জন্য এই আয়াত দু’টিই যথেষ্ট হয়ে যায়।’’ (বুখারী, ইবনে কাসীর) অর্থাৎ, এই আমলের কারণে মহান আল্লাহ তার হেফাযত করবেন। অপর একটি হাদীসে এসেছে, নবী করীম (সাঃ) মিরাজের রাতে যে তিনটি জিনিস পেয়েছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল, সূরা বাক্বারার শেষের এই দু’টি আয়াত। (সহীহ মুসলিম) অনেক বর্ণনায় এ কথাও এসেছে যে, এই সূরার শেষের আয়াত দু’টি রসূল (সাঃ)-কে আরশের নীচের একটি ভান্ডার থেকে দেওয়া হয় এবং এই আয়াত কেবল তাঁকেই দেওয়া হয়, অন্য কোন নবীকে দেওয়া হয়নি। (আহমদ, নাসায়ী, ত্বাবারানী, বায়হাক্বী, হাকেম এবং দারেমী ইত্যাদি।) মুআয (রাঃ) এই সূরা শেষ করে ‘আমীন’ বলতেন।’’ (ইবনে কাসীর)

لَا یُکَلِّفُ اللّٰهُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَهَا ؕ لَهَا مَا کَسَبَتۡ وَ عَلَیۡهَا مَا اکۡتَسَبَتۡ ؕ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَاۤ اِنۡ نَّسِیۡنَاۤ اَوۡ اَخۡطَاۡنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تَحۡمِلۡ عَلَیۡنَاۤ اِصۡرًا کَمَا حَمَلۡتَهٗ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَۃَ لَنَا بِهٖ ۚ وَ اعۡفُ عَنَّا ٝ وَ اغۡفِرۡ لَنَا ٝ وَ ارۡحَمۡنَا ٝ اَنۡتَ مَوۡلٰىنَا فَانۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ

আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে। হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর আপনি আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক। অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। 

رَبَّنَا لاَ تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا

'হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না।  

'বাকারা আয়াত- ২৮৬]

পূর্ববর্তী আয়াতে বলা হয়েছিল যে, তোমাদের অন্তরে যা আছে, প্রকাশ কর কিংবা গোপন রাখ সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন। আয়াতের আসল উদ্দেশ্য ছিল এই যে, তোমরা স্বেচ্ছায় যেসব কাজ করবে, আল্লাহ তা'আলা তার হিসাব নেবেন। অনিচ্ছাকৃত কু-চিন্তা ও ক্রটি-বিচূতি এর অন্তর্ভুক্তই ছিল না। কিন্তু আয়াতের ভাষা বাহ্যতঃ ব্যাপক ছিল। এতে বোঝা যেত যে, অনিচ্ছকৃত ধারণারও হিসাব নেয়া হবে। এ আয়াত শুনে সাহাবায়ে কেরাম অস্থির হয়ে গেলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এতদিন আমরা মনে করতাম যে, আমাদের ইচ্ছাকৃত কাজেরই হিসাব হবে। মনে যেসব অনিচ্ছাকৃত কল্পনা আসে, সেগুলোর হিসাব হবে না। কিন্তু এ আয়াত দ্বারা জানা গেল যে, প্রতিটি কল্পনারও হিসাব হবে। এতে তো শাস্তির কবল থেকে মুক্তি পাওয়া সাংঘাতিক কঠিন মনে হয়।

মহানবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াতের সঠিক উদ্দেশ্য জানতেন, কিন্তু উক্ত আয়াতে ব্যবহৃত শব্দের ব্যাপকতার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলা সমীচীন মনে করলেন না, বরং ওহীর অপেক্ষায় রইলেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে আপাততঃ আদেশ দিলেন যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে যে নির্দেশ আসে, তা সহজ হোক কিংবা কঠিন - মুমিনের কাজ হলো তা মেনে নেয়া। সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশমত কাজ করলেন; যদিও তাদের মনে এ সংশয় ছিল যে, অনিচ্ছাকৃত কল্পনা ও কু-চিন্তা থেকে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তা'আলা প্রথমে মুসলিমদের আনুগত্যের প্রশংসা করেন এবং বিশেষ ভঙ্গিতে ঐ সন্দেহের নিরসন করে বলেন, আল্লাহ তা'আলা কাউকে তার সাধ্যের বহির্ভূত কোন কাজের নির্দেশ দেন না।

কাজেই অনিচ্ছাকৃতভাবে যেসব কল্পনা ও কু-চিন্তা অন্তরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, এরপর সেগুলো কার্যে পরিণত করা না হয়, সেসব আল্লাহ তা'আলার কাছে মাফযোগ্য। যেসব কাজ ইচ্ছে করে করা হয়, শুধু সেগুলোরই হিসাব হবে। কুরআনে বর্ণিত এ ব্যাখ্যার ফলে সাহাবায়ে কেরামের মানসিক উদ্বেগ দূর হয়ে যায়। [মুসনাদে আহমাদ: ২/৪১২, ১/৩৩২: মুসলিম: ১২৫] তারপর আল্লাহ তা'আলা মুসলিমদেরকে একটি বিশেষ দো'আ শিক্ষা দিয়েছেন। যাতে ভুল-ভ্রান্তিবশতঃ কোন কাজ হয়ে যাওয়ার পর ক্ষমা প্রার্থনার পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়া হয়েছে এবং পূর্ববর্তী উম্মতদের মত শাস্তিও যেন এ উম্মতের উপর না আসে, তার জন্য বিশেষভাবে দো'আ করতে বলা হয়েছে।

(২) আলোচ্য আয়াত দুটি সূরা বাকারার শেষ আয়াত। সহীহ হাদীসসমূহে এ আয়াত দুটির বিশেষ ফয়ীলতের কথা বর্ণিত আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কেউ রাতের বেলায় এ আয়াত দুটি পাঠ করলে তা তার জন্য যথেষ্ট। [বুখারীঃ ৪০০৮, ৫০০৮, মুসলিমঃ ৮০৮] অর্থাৎ বিপদাপদ ও বিভিন্ন প্রকার অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকার জন্য যথেষ্ট।

কোরআন থেকে দোয়া: ৭

رَبَّنَا وَلاَ تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا

'হে আমাদের প্রতিপালক! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছিলে।' [সুরা বাকারা আয়াত- ২৮৬]  

কোরআন থেকে দোয়া: ৮

رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَآ أَنتَ مَوْلاَنَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

'হে আমাদের প্রতিপালক! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন করো, আমাদেরকে ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি দয়া করো। তুমিই আমাদের প্রতিপালক। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে করো।' সুরা বাকারা আয়াত- ২৮৬]  


কোরআন থেকে দোয়া: ৯

رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ

'হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা।' [সুরা আল ইমরান আয়াত ৮ ] 

কোরআন থেকে দোয়া: ১০

رَبَّنَا إِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ لِيَوْمٍ لاَّ رَيْبَ فِيهِ إِنَّ اللّهَ لاَ يُخْلِفُ الْمِيعَادَ

হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি মানুষকে সমবেত করবেন এমন একদিন, যাতে কোন সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।' [সুরা আল ইমরান আয়াত ৯ ] 


কোরআন থেকে দোয়া: ১১

رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

'হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, কাজেই আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও আর আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর।' [সুরা আল ইমরান আয়াত ১৬ ] 


কোরআন থেকে দোয়া: ১২

رَبَّنَا آمَنَّا بِمَا أَنزَلَتْ وَاتَّبَعْنَا الرَّسُولَ فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ

হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের অপরাধগুলো এবং আমাদের কাজ-কর্মে বাড়াবাড়িগুলোকে তুমি ক্ষমা করে দাও, আমাদেরকে দৃঢ়পদ রেখ এবং কাফিরদলের উপর আমাদেরকে সাহায্য কর।’ [সুরা আল ইমরান আয়াত৫৩]


কোরআন থেকে দোয়া: ১৩

رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

'হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচাও।' সুরা আল ইমরান আয়াত ১৯১ 


কোরআন থেকে দোয়া: ১৪

الَّذِیۡنَ یَذۡکُرُوۡنَ اللّٰهَ قِیٰمًا وَّ قُعُوۡدًا وَّ عَلٰی جُنُوۡبِهِمۡ وَ یَتَفَکَّرُوۡنَ فِیۡ خَلۡقِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۚ رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هٰذَا بَاطِلًا ۚ سُبۡحٰنَکَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে। (বলে) ‘হে আমাদের রব, তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র মহান। সুতরাং তুমি আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা কর’।

رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

'হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচাও।' [সুরা আল ইমরান আয়াত ১৯১] 

সারকথা, আল্লাহ্ তা'আলার সৃষ্টি ও সৃষ্টজগতের উপর চিন্তা-গবেষণা করে তার মাহাত্ম্য ও কুদরাত সম্পর্কে অবগত হওয়া একটি মহৎ ও উচ্চ পর্যায়ের ইবাদাত। সেগুলোর মধ্যে গভীর মনোনিবেশ করে তা থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ না করা একান্তই নির্বুদ্ধিতা। উল্লেখিত আয়াতের শেষ বাক্যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহে চিন্তা গবেষণা করার ফলাফল বাতলে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে (رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَٰذَا بَاطِلًا) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলার সীমাহীন সৃষ্টির উপর যে লোক চিন্তা-ভাবনা করে সে লোক সহজেই বুঝে যে, এসব বস্তু-সামগ্রীকে আল্লাহ নিরর্থক সৃষ্টি করেননি; বরং এসবের সৃষ্টির পেছনে হাজারো তাৎপর্য নিহিত রয়েছে।

সে সমস্তকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করে দিয়ে মানুষকে এ চিন্তা-ভাবনা করার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে যে, সমগ্র পৃথিবী তাদের কল্যাণের জন্য তৈরী করা হয়েছে এবং তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে একমাত্র আল্লাহ তা'আলার ইবাদাতের উদ্দেশ্যে। এটাই হল তাদের জীবনের লক্ষ্য। সুতরাং গোটা বিশ্ব-সৃষ্টি নিরর্থক নয় বরং এগুলো সবই বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলমীনের অসীম কুদরাত ও হেকমতেরই প্রকৃষ্ট প্রমাণ।

উবাইদ ইবনে উমাইর বলেনঃ আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললাম, রাসূলের সবচেয়ে আশ্চর্য কি কাজ আপনি দেখেছেন, তা আমাদেরকে জানান। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আয়েশা, আমাকে আমার রবের ইবাদাত করতে দাও। আমি বললাম, হে রাসূল, আমি আপনার পাশে থাকতে ভালবাসি এবং যা আপনাকে খুশি করে তা করতে ভালবাসি। তারপর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করলেন এবং সালাত আদায়ে নিবিষ্ট হলেন ও কাঁদতে থাকলেন।

আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কাঁদছেন অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না? এ রাতে আমার উপর একটি আয়াত নাযিল হয়েছে, যে ব্যক্তি তা তেলাওয়াত করল এবং চিন্তা-গবেষণা করল না, তার ধ্বংস অনিবার্য। তারপর তিনি এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। সহীহ [ইবনে হিব্বানঃ ৬২০]

কোরআন থেকে দোয়া: ১৫

رَبَّنَا إِنَّكَ مَن تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ

'হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় তুমি যাকে দোযখে নিক্ষেপ করবে, তাকে অবশ্যই তুমি অপমান করবে; আর জালিমদের জন্যে তো সাহায্যকারী নেই।' [সুরা আল ইমরান আয়াত ১৯২]


কোরআন থেকে দোয়া: ১৬

رَبَّنَاۤ اِنَّنَا سَمِعۡنَا مُنَادِیًا یُّنَادِیۡ لِلۡاِیۡمَانِ اَنۡ اٰمِنُوۡا بِرَبِّکُمۡ فَاٰمَنَّا ٭ۖ رَبَّنَا فَاغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوۡبَنَا وَ کَفِّرۡ عَنَّا سَیِّاٰتِنَا وَ تَوَفَّنَا مَعَ الۡاَبۡرَارِ

‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমরা শুনেছিলাম একজন আহবানকারীকে, যে ঈমানের দিকে আহবান করে যে, ‘তোমরা তোমাদের রবের প্রতি ঈমান আন’। তাই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং বিদূরিত করুন আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি, আর আমাদেরকে মৃত্যু দিন নেককারদের সাথে’।

[সুরা আল ইমরান আয়াত ১৯৩]


কোরআন থেকে দোয়া: ১৭

رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الأبْرَارِ

'হে আমাদের প্রতিপালক! অতঃপর আমাদের সকল গোনাহ মাফ কর এবং আমাদের সকল দোষত্রুটি দুর করে দাও, আর আমাদের মৃত্যু দাও নেক লোকদের সাথে।' [সুরা আল ইমরান আয়াত ১৯৩]


কোরআন থেকে দোয়া: ১৮

رَبَّنَا وَآتِنَا مَا وَعَدتَّنَا عَلَى رُسُلِكَ وَلاَ تُخْزِنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّكَ لاَ تُخْلِفُ الْمِيعَادَ

‘হে আমাদের রব, আর আপনি আমাদেরকে তা প্রদান করুন যার ওয়াদা আপনি আমাদেরকে দিয়েছেন আপনার রাসূলগণের মাধ্যমে। আর কিয়ামতের দিনে আপনি আমাদেরকে অপমান করবেন না। নিশ্চয় আপনি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না’। [সুরা আল ইমরান আয়াত ১৯৪]


কোরআন থেকে দোয়া: ১৯

وَ اِذَا سَمِعُوۡا مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَی الرَّسُوۡلِ تَرٰۤی اَعۡیُنَهُمۡ تَفِیۡضُ مِنَ الدَّمۡعِ مِمَّا عَرَفُوۡا مِنَ الۡحَقِّ ۚ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاکۡتُبۡنَا مَعَ الشّٰهِدِیۡنَ

‘‘‘আর রাসূলের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে যখন তারা তা শুনে, তুমি দেখবে তাদের চক্ষু অশ্রুতে ভেসে যাচ্ছে, কারণ তারা সত্য হতে জেনেছে।( তারা সত্যকে উপলদ্ধি করতে পেরেছে) তারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্য দানকারীদের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করুন’।

رَبَّنَا آمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ

'হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্য দানকারীদের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করুন।'

[সুরা আল মায়েদা আয়াত-  ৮৩]

আলোচ্য আয়াতসমূহে মুসলিমদের সাথে শক্রতা ও বন্ধুত্বের মাপকাঠিতে ঐসব আহলে কিতাবের কথা আলোচনা করা হয়েছে, যারা সত্যানুরাগ ও আল্লাহভীতির কারণে মুসলিমদের প্রতি হিংসা ও শক্রতা পোষণ করত না। কিন্তু ইয়াহুদীদের মধ্যে এ জাতীয় লোকের সংখ্যা ছিল একান্তই নগণ্য। উদাহরণতঃ আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম প্রমূখ। নাসারাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে এরূপ লোকের সংখ্যা ছিল বেশী। বিশেষতঃ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলে আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাসী এবং উচ্চ পদস্থ কর্মচারী ও জনগণের মধ্যে এরূপ লোকের সংখ্যা ছিল প্রচুর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানতে পারলেন যে, আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাসী একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি, তখন তিনি জাফর ইবন আবু তালেব, ইবন মাসউদ, উসমান ইবন মায'উনসহ একদল সাহাবাকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করার অনুমতি দেন।

তারা সেখানে সুখে-শান্তিতেই বসবাস করছিল। মক্কার মুশরিকরা এ খবর পেয়ে আমর ইবন আসকে একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়ে নাজ্জাসীর কাছে পাঠায়। তারা নাজ্জাসীকে অনুরোধ জানায় যে, এরা আহম্মক ধরণের কিছু লোক। এরা বাপ-দাদার দ্বীন ছেড়ে আমাদেরই একজন লোক- যে নিজেকে নবী বলে দাবী করেছে, তার অনুসরণ করছে। আমরা তাদেরকে ফেরৎ নিতে এসেছি। নাজ্জাসী জাফর ইবন আবু তালেবকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ঈসা এবং তার মা সম্পর্কে তোমাদের অভিমত কি? জবাবে তিনি বললেনঃ ঈসা আল্লাহর বান্দা এবং তার এমন কালেমা যা তিনি তার পক্ষ থেকে মারইয়ামের কাছে অর্পণ করেছেন এবং তার পক্ষ থেকে একটি রূহ।

একথা শুনে নাজ্জাসী একটি কাঠি উঠিয়ে বললেনঃ তোমরা যা বলেছ, তার থেকে ঈসা এ কাঠি পরিমাণও বেশী নন। তারপর নাজ্জাসী তাদেরকে বললেনঃ তোমাদের উপর যা নাযিল করা হয়েছে, তা থেকে কি আমাকে কিছু শুনাতে পার? তারা বললঃ হ্যাঁ। নাজ্জাসী বললেনঃ পড়। তখন জাফর ইবন আবু তালেব কুরআনের আয়াত পড়ে শুনালে নাজ্জাসীসহ তার দরবারে সে সমস্ত নাসারা আলেমগণ ছিলেন তারা সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। [সহীহ সনদসহ তাবারী, বাগভী]


কোরআন থেকে দোয়া: ২০

قَالَ عِیۡسَی ابۡنُ مَرۡیَمَ اللّٰهُمَّ رَبَّنَاۤ اَنۡزِلۡ عَلَیۡنَا مَآئِدَۃً مِّنَ السَّمَآءِ تَکُوۡنُ لَنَا عِیۡدًا لِّاَوَّلِنَا وَ اٰخِرِنَا وَ اٰیَۃً مِّنۡکَ ۚ وَ ارۡزُقۡنَا وَ اَنۡتَ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ

মারইয়ামের পুত্র ঈসা বলল, ‘হে আল্লাহ, হে আমাদের রব, আসমান থেকে আমাদের প্রতি খাবারপূর্ণ দস্তরখান নাযিল করুন; এটা আমাদের জন্য ঈদ( আনন্দের ব্যাপার ) হবে। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের জন্য। আর আপনার পক্ষ থেকে এক নিদর্শন হবে। আর আমাদেরকে রিয্ক দান করুন, আপনিই শ্রেষ্ঠ রিয্কদাতা’। [ সুরা আল মায়েদা-  ১১৪]


কোরআন থেকে দোয়া: ২১

আর অবশ্যই আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। তারপর তোমাদের আকৃতি দিয়েছি। তারপর ফেরেশতাদেরকে বলেছি, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’। অতঃপর তারা সিজদা করেছে, ইবলীস ছাড়া। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না । 

[ সুরা আল আ'রাফ আয়াত ২৩ ] 

তিনি বললেন, ‘কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছে যে, সিজদা করছ না, যখন আমি তোমাকে নির্দেশ দিয়েছি’? সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি থেকে’।

এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, ইবলীসকে আল্লাহ্ তা'আলা আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর যদি ইবলীসকে সমস্ত জিন জাতির পিতা বলা হয়, তখন তো এ ব্যাপারে আর কোন কথাই থাকে না। কারণ অন্যান্য আয়াতেও জিন জাতিকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “আর এর আগে আমরা সৃষ্টি করেছি জিনদেরকে অতি উষ্ণ নিধুম আগুন থেকে।” [সূরা আল-হিজর: ২৭] তাছাড়া অন্যত্র আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, জিন জাতিকে ‘মারেজ’ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর ‘মারেজ’ হচ্ছে, নিধুম অগ্নিশিখা। আল্লাহ বলেন, “এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন নিধুম আগুনের শিখা হতে।” [সূরা আর-রহমানঃ ১৫]

শয়তান ফিরিশতাদের জাতিভুক্ত ছিল না। বরং স্বয়ং কুরআনের বিবৃতি অনুযায়ী সে ছিল জ্বিন জাতির একজন। (সূরা কাহা্ফ ৫০) তবে আসমানে ফিরিশতাদের সাথে থাকার কারণে সেও আল্লাহর সিজদা করতে বলার সেই আদেশের আওতাভুক্ত ছিল, যা তিনি ফিরিশতাদেরকে করেছিলেন। আর এই কারণেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তিরস্কারও করা হয়েছে। যদি সে এই আদেশে শামিল না থাকত, তাহলে না তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হত, আর না সে (আল্লাহর দরবার থেকে) বিতাড়িত হত।

তিনি বললেন, ‘সুতরাং তুমি এখান থেকে নেমে যাও। তোমার এ অধিকার নেই যে, এখানে তুমি অহঙ্কার করবে। সুতরাং বের হও। নিশ্চয় তুমি লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত’। সুরা আ'রাফ আয়াত:১৩

‘সাগেরীন’ শব্দটি বহুবচন। এক বচন হলো ‘সাগের’। অর্থ লাঞ্ছনা ও অবমাননার মধ্যে নিজেকে নিয়ে রাখা। শব্দটি মূল হচ্ছে, ‘সাগার’ যার অর্থ, সবচেয়ে কঠিন লাঞ্ছনা ও অবমাননার শিকার হওয়া। [আদওয়াউল বায়ান] অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজেই লাঞ্ছনা, অবমাননা ও নিকৃষ্টতর অবস্থা অবলম্বন করে। সুতরাং আল্লাহর বাণীর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর বান্দা ও সৃষ্টি হয়েও তোমার অহংকারে মত্ত হওয়া এবং তুমি নিজের মর্যাদা ও শ্রেষ্টত্বের যে ধারণা নিজেই তৈরী করে নিয়েছ তার দৃষ্টিতে তোমার রবের হুকুম তোমার জন্য অবমাননাকর মনে হওয়া ও সে জন্য তা অমান্য করার অর্থ নিজেই নিজেকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করতে দেয়া।

শ্রেষ্ঠত্বের মিথ্যা অহমিকা, মর্যাদার ভিত্তিহীন দাবী এবং কোন জন্মগত স্বতঃসিদ্ধ অধিকার ছাড়াই নিজেকে অযথা শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন মনে করা তোমাকে বড়, শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাশীল করতে পারে না। বরং এর ফলে তুমি মিথুক, লাঞ্ছিত ও অপমানিতই হবে এবং তোমার এ লাঞ্ছনা ও অবমাননার কারণ হবে তুমি নিজেই। কুরআনের অন্যত্র মিথ্যা অহঙ্কারের পরিণাম বর্ণিত হয়েছে। কোথাও বলা হয়েছে যে, অহঙ্কারী আল্লাহর আয়াতসমূহ ও তার নিদর্শনাবলী বুঝতে অক্ষম হয়ে যায়। সে তা থেকে হিদায়াত পায় না।

আল্লাহ বলেন, “যমীনে যারা অন্যায়ভাবে অহংকার করে বেড়ায় আমার নিদর্শনসমূহ থেকে আমি তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে রাখব। আর তারা প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে ঈমান আনবে না এবং তারা সৎপথ দেখলেও সেটাকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, কিন্তু তারা ভুল পথ দেখলে সেটাকে পথ হিসেবে গ্রহণ করবে।” [সূরা আল-আরাফ: ১৪৬] আবার কোথাও বলা হয়েছে যে, অহঙ্কারীর ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম। আল্লাহ বলেন, “কাজেই তোমরা দরজাগুলো দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ কর, তাতে স্থায়ী হয়ে। অতঃপর অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্টা।” [সূরা আন-নাহ্‌ল: ২৯]

আরও বলেন, “অহংকারীদের আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়?” [সূরা আয-যুমার: ৬০] আরও বলেন, “বলা হবে, জাহান্নামের দরজাসমূহে প্রবেশ কর তাতে স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য। অতএব অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট।” [সূরা আয-যুমার: ৭২] “নিশ্চয় যারা অহংকারবশে আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে।” [সূরা গাফির: ৬০] আবার বলা হয়েছে যে, অহঙ্কারীদের ঈমান নসীব হয় না। আল্লাহ বলেন, “শুধু তারাই আমার আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনে, যারা সেটার দ্বারা উপদেশপ্রাপ্ত হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, আর তারা অহংকার করে না।” [সূরা আস-সাজদাহ: ১৫]

আরও বলেন, “তাদেরকে -অপরাধীদেরকে- ‘আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই’ বলা হলে তারা অহংকার করত।” [সূরা আস-সাফফাত: ৩৫] আবার কোথাও এসেছে যে, আল্লাহ অহঙ্কারীকে ভালবাসেন না। “নিশ্চয় তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না।” [সূরা আন-নাহ্‌ল: ২৩]

সে বলল, ‘সেদিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দিন, যেদিন তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে’সুরা আ'রাফ আয়াত:১৪

তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত’।সুরা আ'রাফ আয়াত:১৫

আলোচ্য ইবলিসের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত আয়াতসমূহ থেকে বুঝাযায় যে, কাফেরদের দোআ কবুল করা হয়। অথচ অন্যত্র আল্লাহর বাণী (وَمَا دُعَاءُ الْكَافِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَالٍ) “কাফেরদের দোআ তো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবেই।” [সূরা আর-রাদঃ ১৪] এ আয়াত থেকে বাহ্যতঃ বুঝা যায় যে, কাফেরের দোআ কবুল হয় না। এর উত্তর এই যে, দুনিয়াতে কাফেরের দোআও কবুল হতে পারে। ফলে ইবলীসের মত মহা কাফেরের দোআও কবুল হয়ে গেছে। কিন্তু আখেরাতে কাফেরের দোআ কবুল হবে না। উল্লেখিত আয়াত আখেরাতের সাথে সম্পর্কযুক্ত। দুনিয়ার সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই। আর কাফেরের কোন কোন দোআ কবুল হয় বলে হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা মাযলুমের দোআ থেকে বেঁচে থাক, যদিও সে কাফের হয়; কেননা তার দোআ কবুলের ব্যাপারে কোন পর্দা নেই। [মুসনাদে আহমাদ: ৩/১৫৩; দিয়া আল-মাকদেসী, হাদীস নং ২৭৪৮]

সে বলল, ‘আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, সে কারণে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আপনার সোজা পথে বসে থাকব। সুরা আ'রাফ আয়াত:১৬

ভ্রষ্ট তো সে আল্লাহর সৃষ্টিগত ইচ্ছার ভিত্তিতে হয়েছিল। কিন্তু মুশরিকদের মত সেও তাঁর প্রতি এই দোষ আরোপ করল। যেমন, মুশরিকরা বলত যে, যদি আল্লাহ চাইতেন, তাহলে আমরা শিরক করতাম না।

তারপর আমি তাদের সামনে দিয়ে, তাদের পেছন দিয়ে, তাদের ডান দিয়ে, তাদের বাম দিয়ে, তাদের কাছে অবশ্যই আসব, তুমি তাদের অধিকাংশকেই শোকর আদায়কারী পাবে না। সুরা আ'রাফ আয়াত:১৭

অর্থ হল, প্রত্যেক ভালো ও মন্দের পথে আমি বসে থাকব। ভালো থেকে তাদেরকে বাধা দেব এবং মন্দকে তাদের নজরে সুন্দরভাবে তুলে ধরে তা অবলম্বন করার উপর তাদেরকে প্রলুব্ধ করব।

شَاكِرِيْنَ এর দ্বিতীয় অর্থ مُوْحِّدِيْنَ করা হয়েছে। অর্থাৎ, অধিকাংশ লোককে আমি শির্কে পতিত করব। শয়তান তার এই ধারণাকে বাস্তবে সত্য করেই দেখাল। মহান আল্লাহ বলেন, {وَلَقَدْ صَدَّقَ عَلَيْهِمْ إِبْلِيسُ ظَنَّهُ فَاتَّبَعُوهُ إِلَّا فَرِيقًا مِنَ الْمُؤْمِنِينَ} অর্থাৎ, তাদের উপর ইবলীস তার অনুমান সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করল। ফলে তাদের মধ্যে মু’মিনদের একটি দল ব্যতীত সকলেই তার অনুসরণ করল। (সূরা সাবা’ ২০) এই জন্য কুরআন ও হাদীসে শয়তান থেকে পানাহ চাওয়ার এবং তার চক্রান্ত থেকে বেঁচে থাকার প্রতি বড়ই তাকীদ করা হয়েছে।

তিনি বললেন, ‘তুমি এখান থেকে বের হও লাঞ্ছিত বিতাড়িত অবস্থায়। অবশ্যই তাদের মধ্য থেকে যে তোমার অনুসরণ করবে, আমি তোমাদের সবাইকে দিয়ে জাহান্নাম ভরে দেবই’। সুরা আ'রাফ আয়াত:১৮

আয়াতে শয়তান ও শয়তানের অনুসারীদের দিয়ে জাহান্নাম ভর্তি করার কথা বলা হয়েছে। এ কথা অন্য আয়াতেও এসেছে, যেমন, “তিনি বললেন, তবে এটাই সত্য, আর আমি সত্যই বলি— অবশ্যই তোমার দ্বারা ও তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে তাদের সবার দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব।” [সূরা ছোয়াদ ৮৪–৮৫] আরও এসেছে, “আল্লাহ বললেন, যাও, অতঃপর তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, নিশ্চয় জাহান্নামই হবে তোমাদের সবার প্রতিদান, পূর্ণ প্রতিদান হিসেবে। আর তোমার কণ্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পার পদস্থলিত কর, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদেরকে আক্রমণ কর এবং তাদের ধনে ও সন্তান-সন্ততিতে শরীক হয়ে যাও, আর তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দাও। আর শয়তান ছলনা ছাড়া তাদেরকে কোন প্রতিশ্রুতিই দেয় না।” [সূরা আল-ইসরা ৬৩–৬৪] আরও বলেন, “তারপর তাদেরকে এবং পথভ্রষ্টকারীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে অধোমুখী করে এবং ইবলীসের বাহিনীর সকলকেও।” [সূরা আশ-শু'আরা: ৯৪–৯৫] অনুরূপ অন্যান্য আয়াত।

‘আর হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বাস কর। অতঃপর তোমরা আহার কর যেখান থেকে চাও এবং এই গাছটির নিকটবর্তী হয়ো না। তাহলে তোমরা উভয়ে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে’। (সুরা আ'রাফ আয়াত:১৯)

অর্থাৎ, কেবল এই একটি গাছ বাদ দিয়ে যেখান থেকে এবং যেভাবে চাও খাও। একটি গাছের ফল খাওয়ার প্রতিবন্ধকতা পরীক্ষা স্বরূপ আরোপ করেছিলেন।

অতঃপর শয়তান তাদেরকে প্ররোচনা দিল, যাতে সে তাদের জন্য প্রকাশ করে দেয় তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের থেকে গোপন করা হয়েছিল এবং সে বলল, ‘তোমাদের রব তোমাদেরকে কেবল এ জন্য এ গাছ থেকে নিষেধ করেছেন যে, (খেলে) তোমরা ফেরেশতা হয়ে যাবে অথবা তোমরা চিরস্থায়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’। (সুরা আ'রাফ আয়াত:২০)

আদম ও হাওয়া (আলাইহিমাস সালাম)-কে এই ভ্রষ্ট করার পিছনে শয়তানের উদ্দেশ্য ছিল, তাদেরকে সেই জান্নাতী পোশাক থেকে বঞ্চিত করে লজ্জিত করা, যা তাদেরকে জান্নাতে পরার জন্য দেওয়া হয়েছিল। سَوْآتٌ হল سَوْءَةٌ (লজ্জাস্থান)এর বহুবচন। লজ্জাস্থানকে سَوْءَةٌ বলে এই জন্য আখ্যায়িত করা হয়েছে যে, তা প্রকাশ হয়ে পড়াকে খারাপ মনে করা হয়।

وَسْوَسَةٌ এবং وِسْوَاسٌ হল, زَلْزَلَةٌ এবং زِلْزَالٌ এর ওজনে। অস্পষ্ট শব্দ এবং মনের কথাকে অসঅসা বলে। শয়তান অন্তরে যে নোংরা কথা ভরে (কুমন্ত্রণা দেয়) তাকেই ‘অসঅসা’ বলা হয়।

অতঃপর সে তাদেরকে প্রতারণার মাধ্যমে পদস্খলিত করল। তাই তারা যখন গাছটির ফল আস্বাদন করল, তাদের সামনে তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশিত হয়ে গেল। আর তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজদেরকে ঢাকতে লাগল এবং তাদের রব তাদেরকে ডাকলেন যে, ‘আমি কি তোমাদেরকে ঐ গাছটি থেকে নিষেধ করিনি এবং তোমাদেরকে বলিনি যে নিশ্চয় শয়তান তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু’?(সুরা আ'রাফ আয়াত:২১)

অতঃপর সে তাদেরকে প্রতারণার মাধ্যমে পদস্খলিত করল। তাই তারা যখন গাছটির ফল আস্বাদন করল, তাদের সামনে তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশিত হয়ে গেল। আর তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজদেরকে ঢাকতে লাগল এবং তাদের রব তাদেরকে ডাকলেন যে, ‘আমি কি তোমাদেরকে ঐ গাছটি থেকে নিষেধ করিনি এবং তোমাদেরকে বলিনি যে নিশ্চয় শয়তান তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু’? সুরা আ'রাফ আয়াত:২২

সতর্কবাণী সত্ত্বেও তোমরা শয়তানের কুমন্ত্রণার শিকার হয়ে গেলে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শয়তানের জাল এত সুন্দর এবং চিত্তাকর্ষক যে, তা থেকে বাঁচার জন্য বড় প্রচেষ্টা ও মেহনত করা এবং সব সময় তার ব্যাপারে সতর্ক ও হুঁশিয়ার থাকার প্রয়োজন হয়।

قَالَا رَبَّنَا ظَلَمۡنَاۤ اَنۡفُسَنَا ٜ وَ اِنۡ لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَ تَرۡحَمۡنَا لَنَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ

‘তারা বলল, ‘হে আমাদের রব, আমরা নিজদের উপর যুলম করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব’। সুরা আ'রাফ আয়াত :২৩

তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার এ হল সেই বাক্যসমূহ, যা আদম (আঃ) বরকতময় মহান আল্লাহর কাছ থেকে শেখেন। যেমন সূরা বাক্বারার ৩৭নং আয়াতে এ কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। (উক্ত আয়াতের টীকা দ্রঃ) শয়তান আল্লাহর অবাধ্যতা করল এবং তারপর সে কেবল এর উপর অটলই থাকেনি, বরং এটাকে বৈধ ও সাব্যস্ত করার জন্য জ্ঞান ও অনুমানভিত্তিক দলীলসমূহ পেশ করতে লাগল। 

ফলে সে আল্লাহর সান্নিধ্য থেকে বিতাড়িত এবং চিরদিনকার জন্য অভিশপ্ত গণ্য হল। পক্ষান্তরে আদম (আঃ) স্বীয় ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দরবারে তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করার প্রতি যত্নবান হলেন। ফলে তিনি আল্লাহর রহমত ও তাঁর ক্ষমা লাভের যোগ্য গণ্য হলেন। এইভাবে দু’টি পথের পরিচয় স্পষ্ট হয়ে গেল। শয়তানের পথের এবং আল্লাহওয়ালাদের পথেরও। পাপ করে অহংকার প্রদর্শন করা, তার উপর অটল থাকা এবং তাকে সঠিক সাব্যস্ত করার জন্য দলীলাদির স্তূপ খাড়া করা ইত্যাদি হল শয়তানী পথ। আর পাপ করার পর অনুতাপে দগ্ধ হয়ে আল্লাহ-সমীপে নত হয়ে যাওয়া এবং তওবা ও ক্ষমা চাওয়ায় সচেষ্ট হওয়া ইত্যাদি হল আল্লাহর বান্দাদের পথ। اللَّهُمَّ! اجْعَلْنَا مِنْهُمْ।

وَ بَیۡنَهُمَا حِجَابٌ ۚ وَ عَلَی الۡاَعۡرَافِ رِجَالٌ یَّعۡرِفُوۡنَ کُلًّۢا بِسِیۡمٰهُمۡ ۚ وَ نَادَوۡا اَصۡحٰبَ الۡجَنَّۃِ اَنۡ سَلٰمٌ عَلَیۡکُمۡ ۟ لَمۡ یَدۡخُلُوۡهَا وَ هُمۡ یَطۡمَعُوۡنَ

উভয় দলের মাঝে আছে পর্দা আর আ‘রাফে (জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী অংশ) কিছু লোক থাকবে যারা প্রত্যেক লোককে তার চিহ্ন দ্বারা চিনতে পারবে (যে সে জান্নাতের বাসিন্দা না জাহান্নামের)। জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে তারা বলবে, ‘তোমাদের প্রতি সালাম’। তারা (আ‘রাফবাসীরা) তখনও জান্নাতে প্রবেশ করেনি কিন্তু তারা আশা করছে।[সুরা আ'রাফ আয়াত ৪৬] 

উভয়ের মধ্যে’ বলতে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে অথবা কাফের ও মু’মিনদের মাঝখানে। حِجَابٌ (পর্দা বা আড়াল) বলতে সেই প্রাচীরকে বুঝানো হয়েছে, যার কথা সূরা হাদীদ ১৩নং আয়াতে এসেছে।{فَضُرِبَ بَيْنَهُمْ بِسُورٍ لَهُ بَابٌ} ‘‘অতঃপর উভয় দলের মাঝখানে খাড়া করা হবে একটি প্রাচীর, যার একটি দরজা হবে।’’ এটাই হল আ’রাফের দেওয়াল।

আ’রাফ বেহেশ্ত ও দোযখের মধ্যবর্তী জায়গা। আ’রাফবাসী কারা হবে? এদের নির্দিষ্টীকরণের ব্যাপারে মুফাসসেরদের মাঝে রয়েছে বিরাট মতভেদ। অধিকাংশ মুফাসসেরদের নিকট এরা হবে সেই লোক, যাদের পুণ্য ও পাপ সমান সমান হবে। এদের পুণ্যরাশি জাহান্নামে যাওয়ার পথে এবং পাপরাশি জান্নাতে যাওয়ার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করবে। আর এইভাবে আল্লাহর পক্ষ হতে চূড়ান্ত ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত তারা জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে আটকে থাকবে।

আরাফ কি?

সূরা হাদীদের ১২ থেকে ১৯নং আয়াতে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। হাশরের ময়দানে তিনটি দল হবে। (এক) সুস্পষ্ট কাফের ও মুশরিক। (দুই) মুমিনের দল। তাদের সাথে ঈমানের আলো থাকবে। (তিন) মুনাফেকের দল। এরা দুনিয়াতে মুসলিমদের সাথে মিলে থাকত। হাশরের ময়দানেও প্রথম দিকে সাথে মিলে থাকবে এবং পুলসেরাত চলতে শুরু করবে। তখন একটি ভীষণ অন্ধকার সবাইকে ঘিরে ফেলবে। মুমিনরা ঈমানের আলোর সাহায্যে সামনে এগিয়ে যাবে। মুনাফেকরা ডেকে ডেকে তাদেরকে বলবেঃ একটু আস। আমরাও তোমাদের আলো দ্বারা উপকৃত হই। এতে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন ফিরিশতা বলবেঃ পেছনে ফিরে যাও এবং সেখানেই আলো তালাশ কর। এ আলো হচ্ছে ঈমান ও সৎকর্মের। এ আলো হাসিল করার স্থান পেছনে চলে গেছে। যারা সেখানে ঈমান ও সৎকর্মের মাধ্যমে এ আলো অর্জন করেনি, তারা আজ আলো দ্বারা উপকৃত হবে না। এমতাবস্থায় মুমিন ও মুনাফেকদের মধ্যে একটি প্রাচীর বেষ্টনী দাঁড় করিয়ে দেয়া হবে। এতে একটি দরজা থাকবে। দরজার বাইরে কেবলই আযাব দৃষ্টিগোচর হবে এবং ভেতরে মুমিনরা থাকবে। তাদের সামনে আল্লাহর রহমত এবং জান্নাতের মনোরম পরিবেশ বিরাজ করবে।

আরাফবাসী কারাঃ বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে যে, আরাফবাসী ঐ সমস্ত লোকেরা যাদের সৎ এবং অসৎকর্ম সমান হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলেনঃ কিছু লোক এমনও থাকবে, যারা জাহান্নাম থেকে তো মুক্তি পাবে, কিন্তু তখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করার আশা পোষণ করবে। তাদেরকেই আরাফবাসী বলা হয়। ইবন জারীর বলেন, তাদের সম্পর্কে এটা বলাই বেশী সঠিক যে, তারা হচ্ছে এমন কিছু লোক যারা জান্নাতী ও জাহান্নামীদেরকে তাদের নিদর্শনের মাধ্যমে চিনতে পারবে।

এ আয়াতে জান্নাতী ও জাহান্নামীদের চিহ্ন কেমন হবে তা বর্ণনা করা হয়নি। অন্য আয়াতে তাদের কিছু চিহ্ন বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সেদিন কিছু মুখ উজ্জল হবে এবং কিছু মুখ কালো হবে; যাদের মুখ কালো হবে (তাদেরকে বলা হবে), তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফরী করেছিলে? সুতরাং তোমরা শাস্তি ভোগ কর, যেহেতু তোমরা কুফরী করতে। [সূরা আলে-ইমরানঃ ১০৬] “আপনি তাদের মুখমণ্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের দীপ্তি দেখতে পাবেন” [সূরা আল-মুতাফফিফীন: ২৪] আরও বলেন, “সেদিন কোন কোন মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে।” [সূরা আল-কিয়ামাহ: ২২]

আরও বলেন, “অনেক চেহারা সেদিন হবে উজ্জ্বল” (সূরা আবাসা: ৩৮] সুতরাং চেহারা শুভ্র ও সুন্দর হওয়া জান্নাতীদের চিহ্ন। আর চেহারা কালো, বিকট ও নীলচক্ষুবিশিষ্ট হওয়া জাহান্নামীদের চিহ্ন। আল্লাহ বলেন, “তাদের মুখমন্ডল যেন রাতের অন্ধকারের আস্তরণে আচ্ছাদিত। তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।” [সূরা ইউনুস ২৭] আরও বলেন, “আর অনেক চেহারা সেদিন হবে ধূলিধূসর।” [সূরা আবাসাঃ ৪০] আরও বলেন, “যেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে এবং যেদিন আমরা অপরাধীদেরকে নীলচক্ষু তথা দৃষ্টিহীন অবস্থায় সমবেত করব।” [সূরা ত্বা-হা: ১০২]

আরাফবাসীরা জান্নাতীদের ডেকে বলবেঃ ‘সালামুন আলাইকুম’। এ বাক্যটি দুনিয়াতেও পারস্পরিক সাক্ষাতের সময় সম্মান প্রদর্শনার্থে বলা হয় এবং বলা সুন্নাত। মৃত্যুর পর কবর যিয়ারতের সময় এবং হাশর ও কেয়ামতেও বলা হবে। অনুরূপভাবে ফিরিশতাগণও জান্নাতীদেরকে এ বাক্য দ্বারা সালাম করবে। [সূরা আর-রা'আদঃ ২৪, সূরা আয-যুমারঃ ৭৩]

কোরআন থেকে দোয়া: ২২

وَ اِذَا صُرِفَتۡ اَبۡصَارُهُمۡ تِلۡقَآءَ اَصۡحٰبِ النَّارِ ۙ قَالُوۡا رَبَّنَا لَا تَجۡعَلۡنَا مَعَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ

আর যখন তাদের দৃষ্টিকে আগুনের অধিবাসীদের প্রতি ফেরানো হবে, তখন (আ‘রাফবাসীরা) তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে যালিম কওমের অন্তর্ভুক্ত করবেন না’।সুরা আ'রাফ আয়াত ৪৭]

رَبَّنَا لاَ تَجْعَلْنَا مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

'হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এ জালিমদের সাথী করো না।' [সুরা আ'রাফ আয়াত ৪৭]

অর্থাৎ আরাফবাসীরা সবাইকে চিনবে, তারপর যখন জান্নাতীদেরকে তাদের পাশ দিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন তারা তাদেরকে ‘সালামুন আলাইকুম’ বলবে। যদিও জান্নাতে প্রবেশ করেনি তবুও তারা আশায় থাকবে। পক্ষান্তরে জাহান্নামীদেরকে যখন তাদের পাশ দিয়ে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন তারা ভীত সন্ত্রস্ত হবে এবং বলতে থাকবে, হে আমাদের রব আমাদেরকে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত করবেন না।

কোরআন থেকে দোয়া: ২৩

رَبَّنَا افْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِالْحَقِّ وَأَنتَ خَيْرُ الْفَاتِحِينَ

'হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের আর আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে সঠিকভাবে ফয়সালা করে দাও। আপনিই শ্রেষ্টতম ফয়সালাকারী।' [সুরা আ'রাফ ৮৯]


কোরআন থেকে দোয়া: ২৪

رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ

হে আমাদের রব, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন।             [সুরা আ'রাফ আয়াত ১২৬] 

 কোরআন থেকে দোয়া: 25 

হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি জানেন, যা আমরা গোপন করি এবং যা প্রকাশ করি, আর কোন কিছু আল্লাহর নিকট গোপন নেই, না যমীনে না আসমানে।[সুরা ইব্রাহিম আয়াত - ৩৮] 


কোরআন থেকে দোয়া: ২6 

رَبَّنَا لَا تَجۡعَلۡنَا فِتۡنَۃً لِّلۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ

হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে যালিম কওমের ফিতনার পাত্র বানাবেন না’।[সুরা ইউনুস আয়াত - ৮৫] 

وَ نَجِّنَا بِرَحۡمَتِکَ مِنَ الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ

আর তোমার অনুগ্রহে আমাদেরকে কাফির সম্প্রদায় থেকে রক্ষা কর।’’[সুরা ইউনুস আয়াত - ৮৬ ] 

কোরআন থেকে দোয়া: ২৭

رَبِّ اجۡعَلۡنِیۡ مُقِیۡمَ الصَّلٰوۃِ وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِیۡ ٭ۖ رَبَّنَا وَ تَقَبَّلۡ دُعَآءِ

‘হে আমার রব, আমাকে সালাত কায়েমকারী বানান এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও, হে আমাদের রব, আর আমার দো‘আ কবূল করুন’।[সুরা ইব্রাহিম আয়াত ৪০] 


কোরআন থেকে দোয়া: ২৮

رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاء

'হে আমাদের প্রতিপালক! এবং কবুল করুন আমাদের দোয়া।'সুরা ইব্রাহিম আয়াত ৪০] 


কোরআন থেকে দোয়া: ২৯

رَبَّنَا اغۡفِرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَوۡمَ یَقُوۡمُ الۡحِسَابُ

‘হে আমাদের রব, যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিবেন’ [সুরা ইব্রাহিম আয়াত ৪১] 

ইবরাহীম (আঃ) এই দু’আ তখন করেছিলেন যখন তাঁর কাছে স্বীয় পিতার ব্যাপারে আল্লাহর দুশমন হওয়ার কথা প্রকাশ পায়নি। যখন প্রকাশ পেয়ে গেল যে, তাঁর পিতা আল্লাহর দুশমন, তখন তিনি সম্পর্কছিন্নতা ব্যক্ত করলেন। কেননা যতই নিকটাত্মীয় হোক না কেন, মুশরিকদের জন্য (ক্ষমা প্রার্থনার) দু’আ করা বৈধ নয়।

কোরআন থেকে দোয়া: ৩০

رَبَّنَا آتِنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا

'হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে নিজের কাছ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্যে আমাদের কাজ সঠিকভাবে পূর্ণ করুন।' [সুরা আল কাহাফ আয়াত ১০] 

এরা হল সেই যুবকদল, যাদেরকে ‘আসহাবে কাহ্ফ’(গুহার অধিবাসী) বলা হয়েছে। তারা যখন নিজেদের দ্বীনের রক্ষার্থে গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল, তখন এই প্রার্থনা করেছিল।

কোরআন থেকে দোয়া: ৩১

رَبَّنَا إِنَّنَا نَخَافُ أَن يَفْرُطَ عَلَيْنَا أَوْ أَن يَطْغَى

'হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আশঙ্কা করি যে, সে আমাদের প্রতি জুলুম করবে কিংবা হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠবে।  [সুরা ত্ব-হা আয়াত ৪৫] 

(إِنَّنَا نَخَافُ) মূসা ও হারূন আলাইহিমাস সালাম এখানে আল্লাহ্ তা'আলার সামনে দুই প্রকার ভয় প্রকাশ করেছেন। এক ভয় (أَنْ يَفْرُطَ) শব্দের মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন। এর অর্থ সীমালংঘন করা। উদ্দেশ্য এই যে, ফিরআউন সম্ভবতঃ আমাদের বক্তব্য শ্রবণ করার আগেই ক্ষমতার অহমিকায় উত্তেজিত হয়ে উঠবে এবং অনাকাঙ্খিত কিছু করে বসবে। [ইবন কাসীর] দ্বিতীয় ভয় (أَنْ يَطْغَىٰ) শব্দ দ্বারা বর্ণনা করেছেন। এর উদ্দেশ্য এই যে, সম্ভবতঃ সে আপনার শানে অসমীচীন কথাবার্তা বলে আরো বেশী অবাধ্যতা প্রদর্শন করবে। অথবা তাড়াতাড়ি আক্রমন করে বসবে। অথবা আমাদের উপর তার হাত প্রসারিত করবে। ইবন আব্বাস বলেন, এর অর্থ সীমালঙ্ঘন করবে।

কোরআন থেকে দোয়া: ৩২

رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ

'হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি। অতএব, তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর, তুমি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।' [কুরআন থেকে দোয়া: ৩৩] 

وَ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَا اصۡرِفۡ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ ٭ۖ اِنَّ عَذَابَهَا کَانَ غَرَامًا

আর যারা বলে, ‘হে আমাদের রব, তুমি আমাদের থেকে জাহান্নামের আযাব ফিরিয়ে নাও। নিশ্চয় এর আযাব হল অবিচ্ছিন্ন’। [সুরা আল ফুরকান আয়াত ২৫] 

رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا

হে আমাদের রব, তুমি আমাদের থেকে জাহান্নামের আযাব ফিরিয়ে নাও। নিশ্চয় এর আযাব হল অবিচ্ছিন্ন’।           [সুরা আল ফুরকান আয়াত ২৫] 

এখান হতে বুঝা যাচ্ছে যে, রহমানের বান্দা ওরাই যারা একদিকে রাত্রে আল্লাহর ইবাদত করে, আবার অন্য দিকে ভয়ও করে যে, কোন ভুল বা আলস্যের কারণে আল্লাহ ধরে না বসেন। সেই জন্য তারা জাহান্নামের আযাব হতে আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকে। অর্থাৎ, আল্লাহর ইবাদত তথা আজ্ঞা পালন করা সত্ত্বেও আল্লাহর আযাব ও তাঁর পাকড়াও হতে নির্ভয় হওয়া ও নিজ ইবাদতের উপর গর্ব করা উচিত নয়। এই অর্থ অন্য জায়গায় এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, {وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آتَوا وَّقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَى رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ} অর্থাৎ, আর যারা তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করবার তা দান করে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে। (সূরা মু’মিনূন ৬০ আয়াত) ভয় শুধু এই কারণে নয় যে, তাদেরকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে হবে; বরং তাদের ভয় হয় যে, তাদের দান খয়রাত গ্রহণ হচ্ছে কি না? হাদীসে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় এসেছে, আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, ‘এই আয়াতে কি ঐ সব লোকেদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা মদ পান ও চুরি করে?’ তিনি বললেন, ‘‘না, হে আবূ বাকরের বেটী! বরং তারা ঐ সব লোক, যারা রোযা রাখে, নামায পড়ে, দান করে। তা সত্ত্বেও তারা ভয় করে যে, তাদের এইসব সৎকর্মগুলো যেন আল্লাহর দরবারে অগ্রহণীয় না হয়ে যায়।’’ (তিরমিযী, কিতাবুততাফসীর সূরাতুল মু’মিনূন)


কোরআন থেকে দোয়া: ৩৪

وَ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ اَزۡوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّۃَ اَعۡیُنٍ وَّ اجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِیۡنَ اِمَامًا

আর যারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন’। [সুরা আল ফুরকান আয়াত ৭৪]


কোরআন থেকে দোয়া: ৩৫

رَبَّنَا لَغَفُورٌ شَكُورٌ

'আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় পরম ক্ষমাশীল, বড়ই মর্যাদাদানকারী।' [সুরা ফাতির আয়াত ৩৪] 


কোরআন থেকে দোয়া: ৩৬

رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُوا وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ

'হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছু বেষ্টন করে রেখেছেন। কাজেই যারা তাওবাহ করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।'                                       [ সুরা আল মুমিন আয়াত ৭]


কোরআন  থেকে দোয়া: ৩৭

رَبَّنَا وَ اَدۡخِلۡهُمۡ جَنّٰتِ عَدۡنِۣ الَّتِیۡ وَعَدۡتَّهُمۡ وَ مَنۡ صَلَحَ مِنۡ اٰبَآئِهِمۡ وَ اَزۡوَاجِهِمۡ وَ ذُرِّیّٰتِهِمۡ ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ

‘হে আমাদের রব, আর আপনি তাদেরকে স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করান, যার ওয়াদা আপনি তাদেরকে দিয়েছেন। আর তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নি ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম সম্পাদন করেছে তাদেরকেও। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়।’ [সুরা আল মুমিন আয়াত ৮] 

وَ قِهِمُ السَّیِّاٰتِ ؕ وَ مَنۡ تَقِ السَّیِّاٰتِ یَوۡمَئِذٍ فَقَدۡ رَحِمۡتَهٗ ؕ وَ ذٰلِکَ هُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ

‘আর আপনি তাদের অপরাধের আযাব হতে রক্ষা করুন এবং সেদিন আপনি যাকে অপরাধের আযাব থেকে রক্ষা করবেন, অবশ্যই তাকে অনুগ্রহ করবেন। আর এটিই মহাসাফল্য।’[সুরা আল মুমিন আয়াত ৯] 


কোরআন থেকে দোয়া: ৩৮

رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا

'হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এবং আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর যারা ঈমানের ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রবর্তী হয়েছে, আর ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না।' [সুরা আল হাশর আয়াত ১০] 

কোরআন থেকে দোয়া: ৩৯

رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ

'হে আমাদের প্রতিপালক!আপনি অতি দয়ালু, পরম করুণাময়।' [সুরা আল হাশর আয়াত ১০] 

কোরআন থেকে দোয়া: ৪০

رَّبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ

'হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমারই উপর ভরসা করেছি, তোমারই দিকে মুখ করেছি এবং তোমারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন।' [সুরা মুমতাহিনা আয়াত ৪] 

‘তাওয়াক্কুল’ (নির্ভর, ভরসা) করার অর্থ হল, সাধ্যমত বাহ্যিক উপায়-উপকরণ অবলম্বন করার সাথে সাথে ব্যাপারকে আল্লাহর উপর ছেড়ে দেওয়া। এর অর্থ এই নয় যে, বাহ্যিক উপায়-উপকরণ অবলম্বন না করেই আল্লাহর উপর ভরসা প্রকাশ করা হোক। এ থেকে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। কাজেই ‘তাওয়াক্কুল’ এর এই (উপায়-উপকরণ গ্রহণ না করেই ভরসা করা) অর্থ ভুল হবে। নবী (সাঃ)-এর নিকট এক ব্যক্তি উপস্থিত হল এবং তার উটকে বাহিরে দাঁড় করিয়ে দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল। তিনি তাকে (উটের কথা) জিজ্ঞাসা করলে, সে বলল, ‘আমি উটকে আল্লাহর ভরসায় রেখে এসেছি।’ তিনি (সাঃ) বললেন, (اعْقِلْها وَتَوَكَّلْ) ‘‘প্রথমে একে বাঁধ, তারপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।’’ (তিরমিযী) إنابة অর্থ হল, আল্লাহর প্রতি প্রত্যাবর্তন করা, আল্লাহর অভিমুখী হওয়া।


কোরআন থেকে দোয়া: ৪১

رَبَّنَا لَا تَجۡعَلۡنَا فِتۡنَۃً لِّلَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ اغۡفِرۡ لَنَا رَبَّنَا ۚ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ

হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে কাফিরদের উৎপীড়নের পাত্র বানাবেন না। হে আমাদের রব, আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [সুরা মুমতাহিনা আয়াত ৫ ] 

কোরআন থেকে দোয়া: ৪২

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا تُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰهِ تَوۡبَۃً نَّصُوۡحًا ؕ عَسٰی رَبُّکُمۡ اَنۡ یُّکَفِّرَ عَنۡکُمۡ سَیِّاٰتِکُمۡ وَ یُدۡخِلَکُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ ۙ یَوۡمَ لَا یُخۡزِی اللّٰهُ النَّبِیَّ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَهٗ ۚ نُوۡرُهُمۡ یَسۡعٰی بَیۡنَ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ بِاَیۡمَانِهِمۡ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَتۡمِمۡ لَنَا نُوۡرَنَا وَ اغۡفِرۡ لَنَا ۚ اِنَّکَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ

হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাঁটি তাওবা; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, নবী ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সেদিন আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের আলো তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদের জন্য আমাদের আলো পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে সর্বক্ষমতাবান।’

رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

'হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান।' [সুরা আত তাহরীম আয়াত ৮] 

তাওবার শাব্দিক অৰ্থ ফিরে আসা। উদ্দেশ্য গোনাহ থেকে ফিরে আসা। কুরআন ও সুন্নাহর পরিভাষায় তওবার অর্থ বিগত গোনাহের জন্যে অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে তার ধারে কাছে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করা।

“তাওবাতুন নাসূহ” এর অর্থ এমন তাওবা, যা রিয়া ও নামযশ থেকে খাঁটি-কেবল আল্লাহ তা’আলার সস্তুষ্টি অর্জন ও আযাবের ভয়ে ভীত হয়ে এবং গোনাহের কারণে অনুতপ্ত হয়ে গোনাহ পরিত্যাগ করা।

বিশুদ্ধ বা নিষ্ঠাপূর্ণ তওবা হল, 

(ক) তওবা একমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে।

(খ) যে গুনাহ হতে তওবা করা হচ্ছে, তা সত্বর ত্যাগ করতে হবে। 

(গ) এই গুনাহ করে ফেলার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে। 

(ঘ) আগামীতে এই গুনাহ ‘আর করব না’ বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে।

 (ঙ) যদি এই গুনাহের সম্পর্ক কোন বান্দার অধিকারের সাথে হয়, তবে যার অধিকার নষ্ট হয়েছে, তার সাথে মিটমাট করে নিতে হবে। যার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। পক্ষান্তরে কেবল মৌখিক তওবা করার কোন অর্থ হয় না।

এই দু’আ মু’মিনরা তখন করবে, যখন মুনাফিকদের জ্যোতি কেড়ে নেওয়া হবে এবং তাদের উপর অন্ধকার নেমে আসবে। এর আলোচনা সূরা হাদীদ ১২নং আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে। মু’মিনরা তখন বলবে, জান্নাতে প্রবেশ করা অবধি আমাদের এই জ্যোতিকে অবশিষ্ট রাখ এবং তাতে পূর্ণতা দান কর।

কোরআন থেকে দোয়া: ৪৩

رَّبِّ اَعُوۡذُ بِکَ مِنۡ هَمَزٰتِ الشَّیٰطِیۡنِ

‘হে আমার রব, আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই’ [সুরা আল মুমিনুন আয়াত ৯৭] 

কোরআন থেকে দোয়া: ৪৪

وَ اَعُوۡذُ بِکَ رَبِّ اَنۡ یَّحۡضُرُوۡنِ

আর হে আমার রব, আমার কাছে তাদের উপস্থিতি হতে আপনার কাছে পানাহ চাই।’                                            [সুরা আল মুমিনুন আয়াত ৯৮] 

কোরআন থেকে দোয়া: ৪৫

وَ قُلۡ رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا

আর বল, ‘হে আমার রব, আমাকে প্রবেশ করাও উত্তমভাবে এবং বের কর উত্তমভাবে*। আর তোমার পক্ষ থেকে আমাকে সাহায্যকারী শক্তি দান কর’

وَ قُلۡ رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا

উপরোক্ত অনুবাদটি বাগভীর অনুকরণে করা হয়েছে। অন্য অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর সন্তোষ যেভাবে হয় সেভাবে প্রবেশ করানো এবং আল্লাহর সন্তোষ যাতে রয়েছে সেভাবে বের করা। মূলত: مدخل ও مخرج এর অর্থ প্রবেশ করার স্থান ও বহিগর্মনের স্থান। উভয়ের সাথে صدق বিশ্লেষণ যুক্ত হওয়ার অর্থ এই যে, এই প্রবেশ ও বহিগর্মন সব আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী উত্তম পন্থায় হোক। কেননা, আরবী ভাষায় صدق এমন কাজের জন্যে ব্যবহৃত হয়, যা বাহ্যতঃ ও আভ্যন্তরীন উভয় দিক দিয়ে সঠিক ও উত্তম হবে।

কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এখানে ‘প্ৰবেশ করার স্থান’ বলে মদীনা এবং ‘বহির্গমনের স্থান’ বলে মক্কা বোঝানো হয়েছে। [তাবারী] উদ্দেশ্য এই যে, হে আল্লাহ, মদীনায় আমার প্রবেশ উত্তমভাবে সম্পন্ন হোক। সেখানে কোন অগ্ৰীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে এবং মক্কা থেকে আমার বের হওয়া উত্তমভাবে সম্পন্ন হোক। এই তাফসীরটি অনেক তাবেয়ীন থেকে বর্ণিত হয়েছে।

কেউ কেউ বলেন, এটা হিজরতের সময় অবতীর্ণ হয়েছিল। যখন নবী (সাঃ)-এর মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদীনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল। কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হল, সত্যের উপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের উপর আমাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করো। আবার কেউ কেউ বলেন, সত্যতার সাথে আমাকে কবরে প্রবিষ্ট করো এবং কিয়ামতের দিন সত্যতার সাথে আমাকে কবর থেকে বের করো ইত্যাদি। ইমাম শাওকানী বলেন, এটা যেহেতু দু’আ, বিধায় এর ব্যাপকতায় উল্লিখিত সব কথাই এসে যায়।

কোরআন থেকে দোয়া: ৪৬

নাকি তারা বলে, ‘সে এটা রচনা করেছে’। বল, ‘যদি আমি তা রচনা করে থাকি, তবে আমার অপরাধ আমার উপরই বর্তাবে এবং তোমরা যে অপরাধ করছ, আমি তা থেকে মুক্ত’।[সুরা হুদ আয়াত ৩৫] 

এটিও নূহ আলাইহিস সালামের সাথে তার কাওমের কথা

কোন কোন তফসীরবিদের নিকটে উক্ত কথোপকথন নূহ ও তাঁর সম্প্রদায়ের মাঝে হয়েছিল। আবার অনেকের ধারণা যে, এটা পূর্বাপর থেকে বিচ্ছিন্ন বাক্য স্বরূপ নবী (সাঃ) এবং মক্কার মুশরিকদের মাঝে হওয়া কথোপকথন। উদ্দ্যেশ্য এই যে, যদি এই কুরআন আমার তৈরী করা হয়, আর আমি আল্লাহর অবতীর্ণকৃত কিতাব বলাতে মিথ্যুক হই, তবে তা আমার অপরাধ, তার শাস্তি আমিই ভোগ করব। কিন্তু তোমরা যা করছ, আমি তা থেকে মুক্ত। তোমরা তা জান, তার সাজা আমার উপর নয়, তোমাদের উপরেই বর্তাবে, তার চিন্তা-ভাবনা কি তোমাদের কিছু আছে?

وَ اُوۡحِیَ اِلٰی نُوۡحٍ اَنَّهٗ لَنۡ یُّؤۡمِنَ مِنۡ قَوۡمِکَ اِلَّا مَنۡ قَدۡ اٰمَنَ فَلَا تَبۡتَئِسۡ بِمَا کَانُوۡا یَفۡعَلُوۡنَ

আর নূহের কাছে ওহী পাঠানো হল যে, ‘যারা ঈমান এনেছে, তারা ছাড়া তোমার কওমের আর কেউ ঈমান আনবে না। সুতরাং তারা যা করে সে জন্য তুমি দুঃখিত হয়ো না’।[সুরা হুদ আয়াত ৩৬] 

যখন নূহ (আঃ) এর সম্প্রদায় আযাব আসার জন্য বলেছিল, তখন এই কথা বলা হয়েছিল এবং নূহ (আঃ) আল্লাহর দরবারে দু’আ করেছিলেন যে, ‘হে আমার প্রভু! পৃথিবীতে বসবাসকারী একজন কাফেরকেও জীবিত রেখো না।’ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এখন অতিরিক্ত আর কেউ ঈমান আনবে না, অতএব এ নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।’

وَ اصۡنَعِ الۡفُلۡکَ بِاَعۡیُنِنَا وَ وَحۡیِنَا وَ لَا تُخَاطِبۡنِیۡ فِی الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا ۚ اِنَّهُمۡ مُّغۡرَقُوۡنَ

‘আর তুমি আমার চোখের সামনে ও আমার ওহী অনুসারে নৌকা তৈরী কর। আর যারা যুলম করেছে, তাদের ব্যাপারে তুমি আমার কাছে কোন আবেদন করো না। নিশ্চয় তাদেরকে ডুবানো হবে’।[সুরা হুদ আয়াত ৩৭]

আয়াতে তাদের শোচনীয় পরিণতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাদের সবাইকে পানিতে ডুবিয়ে মারা হবে। সুতরাং আপনি আমার কাছে তাদের কারও জন্য ক্ষমা চাইবেন না। তাদের কাউকে ক্ষমা করতে বলবেন না। তারা তাদের অর্জিত কুফরির কারণে তুফানে ডুবে মরবে। [তাবারী] এরূপ অবস্থায়ই নূহ আলাইহিস সালামের মুখে তার কাওম সম্পর্কে উচ্চারিত হয়েছিলঃ হে আমার রব! যমীনের কাফিরদের মধ্য থেকে কোন গৃহবাসীকে অব্যাহতি দেবেন না, আপনি তাদেরকে অব্যাহতি দিলে তারা আপনার বান্দাদেরকে বিভ্রান্ত করবে এবং জন্ম দিতে থাকবে শুধু দুস্কৃতিকারী ও কাফির। [সূরা নূহঃ ২৬–২৭] এই বদদোআ আল্লাহর দরবারে কবুল হল। যার ফলে সমস্ত কওম ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল।

وَ یَصۡنَعُ الۡفُلۡکَ ۟ وَ کُلَّمَا مَرَّ عَلَیۡهِ مَلَاٌ مِّنۡ قَوۡمِهٖ سَخِرُوۡا مِنۡهُ ؕ قَالَ اِنۡ تَسۡخَرُوۡا مِنَّا فَاِنَّا نَسۡخَرُ مِنۡکُمۡ کَمَا تَسۡخَرُوۡنَ

আর সে নৌকা তৈরী করতে লাগল এবং যখনই তার কওমের নেতৃস্থানীয় কোন ব্যক্তি তার পাশ দিয়ে যেত, তাকে নিয়ে উপহাস করত। সে বলল, ‘যদি তোমরা আমাদের নিয়ে উপহাস কর, তবে আমরাও তোমাদের নিয়ে উপহাস করব, যেমন তোমরা উপহাস করছ’ [সুরা হুদ আয়াত ৩৮] 

এ আয়াতে নৌকা তৈরীকালীন সময়ে নূহ আলাইহিস সালামের কওমের উদাসীনতা গাফিলতি ও দুঃসাহস এবং এর শোচনীয় পরিণতির বর্ণনা দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহর আদেশক্রমে নূহ আলাইহিস সালাম যখন নৌকা নির্মাণকর্যে ব্যস্ত ছিলেন তখন তার পাশ দিয়ে পথ অতিক্রমকালে কওমের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাকে জিজ্ঞেস করত আপনি কি করছেন? তিনি উত্তর দিতেন অনতিবিলম্বে এক মহাপ্লাবন হবে তাই নৌকা তৈরী করছি। তখন তারা বলত, হে নূহ আপনি তো আগে ছিলেন নবী এখন কি তাহলে কাঠমিস্ত্রি হয়ে গেলেন। অথবা হে নূহ! কিশতী কি ডাঙ্গায় চলবে নাকি? ইত্যাদি।

এর উত্তরে নূহ আলাইহিস সালাম বলতেন, যদিও আজ তোমরা আমাদের প্রতি উপহাস করছ কিন্তু মনে রেখো সেদিন দূরে নয় যেদিন আমরাও তোমাদের প্রতি উপহাস করব। অর্থাৎ তোমরাও উপহাসের পাত্র হবে।

حَتّٰۤی اِذَا جَآءَ اَمۡرُنَا وَ فَارَ التَّنُّوۡرُ ۙ قُلۡنَا احۡمِلۡ فِیۡهَا مِنۡ کُلٍّ زَوۡجَیۡنِ اثۡنَیۡنِ وَ اَهۡلَکَ اِلَّا مَنۡ سَبَقَ عَلَیۡهِ الۡقَوۡلُ وَ مَنۡ اٰمَنَ ؕ وَ مَاۤ اٰمَنَ مَعَهٗۤ اِلَّا قَلِیۡلٌ

অবশেষে যখন আমার আদেশ আসল এবং চুলা উথলে উঠল*, আমি বললাম, ‘তুমি তাতে তুলে নাও প্রত্যেক শ্রেণী থেকে জোড়া জোড়া** এবং যাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে তাদের ছাড়া তোমার পরিবারকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে। আর তার সাথে অল্পসংখ্যকই ঈমান এনেছিল। [সুরা হুদ আয়াত ৪০] 

কুরআনের সুস্পষ্ট বক্তব্য থেকে বুঝা যায়, প্লাবনের সূচনা হয় । সূরা আল-কামার ১১–১৩ এর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেঃ “আমি আকাশের দরজা খুলে দিলাম। এর ফলে অনবরত বৃষ্টি পড়তে লাগলো। মাটিতে ফাটল সৃষ্টি করলাম। ফলে চারদিকে পানির ফোয়ারা বের হতে লাগলো।

তারপর নুহ আলাইহিস সালামকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, বেঈমান কাফেরদের বাদ দিয়ে আপনার পরিজনবর্গকে এবং সমস্ত ঈমানদারগণকে কিশতিতে তুলে নিন। তবে তখন ঈমানদারদের সংখ্যা অতি নগণ্য ছিল। জাহাজে আরোহনকারীদের সঠিক সংখ্যা কুরআনে ও হাদীসে নির্দিষ্ট করে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। তাই এ ব্যাপারে কোন সংখ্যা নির্ধারণ করা ঠিক হবে না।

وَ قَالَ ارۡکَبُوۡا فِیۡهَا بِسۡمِ اللّٰهِ مَ‍‍جۡؔرٖىهَا وَ مُرۡسٰىهَا ؕ اِنَّ رَبِّیۡ لَغَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ

আর সে বলল, ‘তোমরা এতে আরোহণ কর। এর চলা ও থামা হবে আল্লাহর নামে। নিশ্চয় আমার রব অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সুরা হুদ আয়াত ৪১] 

আয়াতে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আপনার চলা ও থামা সবই আল্লাহর নামে হোক। আল্লাহর নির্দেশ ও কর্তৃত্বেই সেটি চলবে।

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তাআলা নূহ আলাইহিস সালামকে এরপর বলেছিলেন যে, “যখন আপনি ও আপনার সংগীরা নৌযানের উপরে স্থির হবেন তখন বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাদেরকে উদ্ধার করেছেন যালেম সম্প্রদায় থেকে। আরো বলুন, হে আমার রব! আমাকে নামিয়ে দিন কল্যাণকরভাবে; আর আপনিই শ্রেষ্ঠ অবতারণকারী।” [সূরা মুমিনুন: ২৮–২৯]

আর এ জন্যই যখন কেউ কোন নৌকা কিংবা বাহনে উঠবে তার জন্য বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। যেমন আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন, “আর যিনি সকল প্রকারের জোড়া যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এমন নৌযান ও গৃহপালিত জন্তু যাতে তোমরা আরোহণ কর; যাতে তোমরা এর পিঠে স্থির হয়ে বসতে পার, তারপর তোমাদের রবের অনুগ্রহ স্মরণ করবে যখন তোমরা এর উপর স্থির হয়ে বসবে; এবং বলবে, ‘পবিত্ৰ-মহান তিনি, যিনি এগুলোকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। আর আমরা সমর্থ ছিলাম না এদেরকে বশীভূত করতে। [সূরা আয-যুখরুফ ১২–১৪]



কবুলকৃত দোয়া সমূহ (কোরআন থেকে)

🤲 রবের নিকট আত্নসমর্পণ
🤲 রব এর নিকট ক্ষমা/চাওয়ার দোয়া
🤲 মাতা-পিতার জন্য দোয়া
🤲 সন্তানদের জন্য দোয়া
🤲 পরিবারের জন্য দোয়া
🤲 জ্ঞান অর্জনের জন্য দোয়া
🤲 সাহস সঞ্চার করার দোয়া
🤲 রিজিকের বৃদ্ধির জন্য দোয়া
🤲 যানবাহনে আরোহন ও অবতারনের দোয়া
🤲 নেককারদের সাথে অন্তর্ভুক্তির দোয়া
🤲 কেহ মিথ্যাবাদী দোষারোপ করলে দোয়া
🤲 অত্যাচারী কাফের/দুশমনের বিরুদ্ধে দোয়া
🤲 জাহান্নাম থেকে বাঁচার দোয়া
🤲 জাহান্নামি/কাফেরদের আর্তনাদ

🤲 রবের নিকট আত্নসমর্পণঃ
◾‘আমি সকল সৃষ্টির রবের কাছে নিজকে সমর্পণ করলাম’। (২ঃ১৩১)
◾‘নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব’। (৬ঃ১৬২)
◾নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। (২ঃ১৫৬)
◾‘হে আমার রব, আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই’। আর হে আমার রব, আমার কাছে তাদের উপস্থিতি হতে আপনার কাছে পানাহ চাই।’(২৩ঃ৯৭-৯৮)
◾হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা আপনার ওপরই ভরসা করি, আপনারই অভিমুখী হই আর প্রত্যাবর্তন তো আপনারই কাছে। (৬০ঃ৪, ইব্রাহীম আঃ)
◾‘হে আমার রব, নিশ্চয় আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহই নাযিল করবেন, আমি তার মুখাপেক্ষী’। (২৮ঃ২৪, মূসা আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে কবূল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী’। (২ঃ১২৭, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (২ঃ১২৮, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের উপর ও যা নাযিল করা হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের সন্তানদের উপর আর যা প্রদান করা হয়েছে মূসা ও ঈসাকে এবং যা প্রদান করা হয়েছে তাদের রবের পক্ষ হতে নবীগণকে। আমরা তাদের কারো মধ্যে তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁরই অনুগত’। (২ঃ১৩৬)
◾‘আমাদের রব! আল্লাহর কসম! আমরা মুশরিক ছিলাম না’। (৬ঃ২৩)
◾‘নিশ্চয় আমি নিবিষ্ট করেছি আমার চেহারা একনিষ্ঠভাবে তাঁর জন্য, যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’। (৬ঃ৭৯)
◾‘আমি আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম এবং আমার অনুসারীরাও’। (৩ঃ২০)
◾হে আমাদের রব, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন।’ (৭ঃ১২৬)
◾‘আপনি পবিত্র মহান, আমি আপনার নিকট তাওবা করলাম এবং আমি মুমিনদের মধ্যে প্রথম।’ (৭ঃ১৪৩)
◾হে আমার রব, আমি তাড়াতাড়ি করে আপনার নিকট এসেছি, যাতে আপনি আমার উপর সন্তুষ্ট হন’। (২০ঃ৮৪)
◾‘আমার রব, ক্ষমা করুন আমাকে ও আমার ভাইকে এবং আপনার রহমতে আমাদের প্রবেশ করান। আর আপনিই রহমকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। (৭ঃ১৫১)
◾‘হে আমার রব, যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই তা চাওয়া থেকে আমি অবশ্যই আপনার আশ্রয় চাই। আর যদি আপনি আমাকে মাফ না করেন এবং আমার প্রতি দয়া না করেন, তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’। (১১ঃ৪৭)
◾‘অবশ্যই আমরা তো আমাদের রবের দিকেই ফিরে যাব।’(২৬ঃ৫০)
◾আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না; আমার প্রতিদান কেবল সৃষ্টিকুলের রবের নিকট’ (২৬ঃ১২৭)
◾‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি আমার নিজের প্রতি যুলম করেছি। আমি সুলাইমানের সাথে সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম’। (২৭ঃ৪৪, রানী বিলকিস)
◾‘হে আমার রব, আপনি চাইলে ইতঃপূর্বে এদের ধ্বংস করতে পারতেন এবং আমাকেও। আমাদের মধ্যে নির্বোধরা যা করেছে তার কারণে কি আমাদেরকে ধ্বংস করবেন? এটাতো আপনার পরীক্ষা ছাড়া কিছু না। এর মাধ্যমে যাকে চান আপনি পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে চান হিদায়াত দান করেন। আপনি আমাদের অভিভাবক। সুতরাং আমাদের ক্ষমা করে দিন এবং আপনি উত্তম ক্ষমাশীল। (৭ঃ১৫৫)
◾‘হে আমার রব, আপনার নিকট দো‘আ করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি’। (১৯ঃ৪)
◾‘যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনিই আমাকে হিদায়াত দিয়েছেন।’ ‘আর যিনি আমাকে খাওয়ান এবং পান করান’। ‘আর যখন আমি অসুস্থ হই, তখন যিনি আমাকে আরোগ্য করেন’। ‘আর যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন তারপর আমাকে জীবিত করবেন’। ‘আর যিনি আশা করি, বিচার দিবসে আমার ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দেবেন’। (২৬ঃ৭৮-৮২, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত’। (২৬ঃ২১৬)
◾‘আমার কর্ম আমার, আর তোমাদের কর্ম তোমাদের। আমি যা আমল করি তোমরা তা থেকে মুক্ত এবং তোমরা যা আমল কর আমি তা থেকে মুক্ত’। (১০ঃ৪১)
◾হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি জানেন, যা আমরা গোপন করি এবং যা প্রকাশ করি, আর কোন কিছু আল্লাহর নিকট গোপন নেই, না যমীনে না আসমানে। (১৪ঃ৩৮)
◾তিনিই আল্লাহ, আমার রব। আর আমি আমার রবের সাথে কাউকে শরীক করি না’। (১৮ঃ৩৮)
◾‘নিশ্চয় আমি আল্লাহকে সাক্ষী রাখছি আর তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমি অবশ্যই তা থেকে মুক্ত যাকে তোমরা শরীক কর, (১১ঃ৫৪)
◾‘আমি অবশ্যই তাওয়াক্কুল করেছি আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর উপর, প্রতিটি বিচরণশীল প্রাণীরই তিনি নিয়ন্ত্রণকারী। নিশ্চয় আমার রব সরল পথে আছেন’। (১১ঃ৫৬)
◾আমি আমার সাধ্যমত সংশোধন চাই। আল্লাহর সহায়তা ছাড়া আমার কোন তওফীক নেই। আমি তাঁরই উপর তাওয়াক্কুল করেছি এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাই’। (১১ঃ৮৮)
◾আল্লাহ সে সব থেকে অতিপবিত্র ও মহান, যা তারা আরোপ করে, (৩৭ঃ১৫৯)
◾তারা যা আরোপ করে, আসমানসমূহ ও যমীনের রব এবং আরশের রব তা থেকে পবিত্র-মহান। (৪৩ঃ৮২)
◾অতএব আল্লাহরই জন্য সকল প্রশংসা, যিনি আসমানসমূহের রব, যমীনের রব ও সকল সৃষ্টির রব। (৪৫ঃ৩৬)
◾যা কিছু রয়েছে আসমানসমূহে এবং যা কিছু রয়েছে যমীনে, সবই আল্লাহর জন্য পবিত্রতা ঘোষণা করে। বাদশাহী তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই। তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। (৬৪ঃ১)
◾‘পবিত্র মহান আমার রব! (১৭ঃ৯৩)
◾‘পবিত্র মহান আমাদের রব! আমাদের রবের ওয়াদা অবশ্যই কার্যকর হয়ে থাকে’। (১৭ঃ১০৮)
◾আপনারই আমরা ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট আমরা সাহায্য চাই। (১ঃ৫)
◾অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’ (৪১ঃ৩৩)
◾সৃষ্টিকুলের রবের নিকট আত্মসমর্পণ করতে আমি আদিষ্ট হয়েছি’। (৪০ঃ৬৬)
◾‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, (৯ঃ৫৯)
◾‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক’! (৩ঃ১৭৩)
◾‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। আমি তাঁরই উপর তাওয়াক্কুল করেছি। আর তিনিই মহাআরশের রব’। (৯ঃ১২৯)
◾সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ মহাপবিত্র, মহিমান্বিত’। (২৭ঃ৮)
◾আল্লাহ মহান, যিনি সকল সৃষ্টির রব। (৭ঃ৫৪)

🤲 রব এর নিকট ক্ষমা/চাওয়ার দোয়াঃ

◾হে আমাদের রব! আমরা আপনারই কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল। (২ঃ২৮৫)
◾হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। (২ঃ২৮৬)
◾হে আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। (২ঃ২৮৬)
◾হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর আপনি আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। (২ঃ২৮৬)
◾হে আমাদের রব, আপনি হিদায়াত দেয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (৩ঃ৮)
◾‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমরা ঈমান আনলাম। অতএব, আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন’। (৩ঃ১৬)
◾‘হে আল্লাহ, রাজত্বের মালিক, আপনি যাকে চান রাজত্ব দান করেন, আর যার থেকে চান রাজত্ব কেড়ে নেন এবং আপনি যাকে চান সম্মান দান করেন। আর যাকে চান অপমানিত করেন, আপনার হাতেই কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান’। (৩ঃ২৬)
◾হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন। (২ঃ২০১)
◾‘হে আমাদের রব, আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আর জাহান্নামের আযাব থেকে আপনি তাদেরকে রক্ষা করুন’। (৪০ঃ৭)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদের পাপ ও আমাদের কর্মে আমাদের সীমালঙঘন ক্ষমা করুন এবং অবিচল রাখুন আমাদের পাসমূহকে, আর কাফির কওমের উপর আমাদেরকে সাহায্য করুন’। (৩ঃ১৪৭)
◾‘হে আমাদের রব, আমরা নিজদের উপর যুলম করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব’। (৭ঃ২৩)
◾হে আসমানসমূহ ও যমীনের সষ্টা! আপনিই দুনিয়া ও আখিরাতে আমার অভিভাবক। আপনি আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দিন এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন (১২ঃ১০১, ইউসুফ আঃ)
◾‘হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন এক রাজত্ব দান করুন যা আমার পর আর কারও জন্যই প্রযোজ্য হবে না। নিশ্চয়ই আপনি বড়ই দানশীল। (৩৮ঃ১০, সুলাইমান আঃ)
◾‘আর এর উপর আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না; আমার প্রতিদান কেবল সৃষ্টিকুলের রবের নিকট’। (২৬ঃ১২৭)
◾‘আপনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই’। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম’ । (২১ঃ৮৭, ইউনুস আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি, অতএব আমাদেরকে ক্ষমা ও দয়া করুন, আর আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (২৩ঃ১০৯)
◾‘হে আমাদের রব, আপনি ক্ষমা করুন, দয়া করুন এবং আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (২৩ঃ১১৮, মূসা আঃ)
◾‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আমাদের রব পরম ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী’। (৩৫ঃ৩৪)
◾‘হে আমাদের রব, আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আর জাহান্নামের আযাব থেকে আপনি তাদেরকে রক্ষা করুন’। (৪০ঃ৭)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদের জন্য আমাদের আলো পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে সর্বক্ষমতাবান।’ (৬৬ঃ৮)
◾‘আমরা আশা করি যে, আমাদের রব আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেবেন, কারণ আমরা মুমিনদের মধ্যে প্রথম।’ (২৬ঃ৫১)
◾‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি আমার নফসের প্রতি যুলম করেছি, সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন’। অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ‘হে আমার রব, আপনি যেহেতু আমার প্রতি নিআমত দান করেন, তাই আমি কখনো আর অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না। (২৮ঃ১৬-১৭, মূসা আঃ)
◾হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা আপনার ওপরই ভরসা করি, আপনারই অভিমুখী হই আর প্রত্যাবর্তন তো আপনারই কাছে। হে আমাদের রব, আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (৬০ঃ৪-৫, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। (২ঃ১২৯, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘আমি দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়েছি। আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু’। (২১ঃ৮৩, আয়্যুব আঃ)
◾‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার রবের কাছে, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, আর রাতের অন্ধকারের অনিষ্ট থেকে যখন তা গভীর হয়, আর গিরায় ফুঁ-দানকারী নারীদের অনিষ্ট থেকে, আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে’। (১১৩ঃ১-৫)
◾‘আমি আশ্রয় চাই মানুষের রব, মানুষের অধিপতি, মানুষের ইলাহ-এর কাছে, কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট থেকে, যে দ্রুত আত্মগোপন করে। যে মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দেয়। জিন ও মানুষ থেকে। (১১৪ঃ১-৬)
◾‘আর যখন আমি অসুস্থ হই, তখন যিনি আমাকে আরোগ্য করেন’। (২৬ঃ৮০)
◾আল্লাহর আশ্রয় চাই (মা'আযাল্লা-হ) (১২ঃ২৩,৭৯)
◾আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। আর তিনি সবচেয়ে বেশি দয়ালু’। (১২ঃ৯২)
◾ নিশ্চয় আমার রব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (১২ঃ৫৩)
◾নিশ্চয় আমার রব পরম দয়ালু, অতীব ভালবাসা পোষণকারী’। (১১ঃ৯০)
◾আমাদেরকে সরল পথ দেখান/পথের হিদায়াত দিন। (১ঃ৬)

🤲 মাতা-পিতার জন্য দোয়াঃ
◾‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন’। (১৭ঃ২৪)
◾আমার পিতাকে ক্ষমা করুন; (২৬ঃ৮৬-ঈব্রহীম আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিবেন’। (১৪ঃ৪১)
◾‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’ (৭১ঃ২৮- নূহ আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আর আপনি তাদেরকে স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করান, যার ওয়াদা আপনি তাদেরকে দিয়েছেন। আর তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নি ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম সম্পাদন করেছে তাদেরকেও। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়।’ (৪০ঃ৮)
◾‘হে আমার রব, তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছ তার জন্য আমাকে তোমার শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক দাও। আর আমি যাতে এমন সৎকাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর। আর তোমার অনুগ্রহে তুমি আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর’। (২৭ঃ১৯- সোলাইমান আঃ)
◾‘হে আমার রব, আমাকে সামর্থ্য দাও, তুমি আমার উপর ও আমার মাতা-পিতার উপর যে নিআমত দান করেছ, তোমার সে নিআমতের যেন আমি শোকর আদায় করতে পারি এবং আমি যেন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর। আর আমার জন্য তুমি আমার বংশধরদের মধ্যে সংশোধন করে দাও। নিশ্চয় আমি তোমার কাছে তাওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’। (৪৬ঃ১৫)

সন্তানদের জন্য দোয়াঃ🤲

◾‘হে আমার রব, আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন’। (৩৭ঃ১০০- ইব্রাহীম আঃ)
◾‘হে আমর রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী’। (৩ঃ৩৮, জাকারিয়া আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন’। (২৫ঃ৭৪)
◾‘হে আমার রব, আমাকে সালাত কায়েমকারী বানান এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও, হে আমাদের রব, আর আমার দো‘আ কবূল করুন’। (১৪ঃ৪০- ইব্রাহিম আঃ)
◾‘হে আমার রব, আপনি এ শহরকে নিরাপদ করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন’। (১৪ঃ৩৫- ইব্রাহিম আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমি আমার কিছু বংশধরদেরকে ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের নিকট বসতি স্থাপন করালাম, হে আমাদের রব, যাতে তারা সালাত কায়েম করে। সুতরাং কিছু মানুষের হৃদয় আপনি তাদের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন এবং তাদেরকে রিয্ক প্রদান করুন ফল-ফলাদি থেকে, আশা করা যায় তারা শুকরিয়া আদায় করবে’। (১৪ঃ৩৭- ইব্রাহিম আঃ)
◾‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি বৃদ্ধ বয়সে আমাকে ঈসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার রব দো‘আ শ্রবণকারী’। (১৪ঃ৩৯- ইব্রাহিম আঃ)
◾‘হে আমার রব! আমার হাড়গুলো দুর্বল হয়ে গেছে এবং বার্ধক্যবশতঃ আমার মাথার চুলগুলো সাদা হয়ে গেছে। হে আমার রব, আপনার নিকট দো‘আ করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি’। (১৯ঃ৪)
◾‘হে আমার রব, আমার গর্ভে যা আছে, নিশ্চয় আমি তা খালেসভাবে আপনার জন্য মানত করলাম। অতএব, আপনি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ’। (৩ঃ৩৫- ইমরান আঃ এর স্ত্রী)
◾‘হে আমার রব! আমাকে একা রেখো না, তুমি তো শ্রেষ্ঠ মালিকানার অধিকারী’। (২১ঃ৮৯, জাকারিয়া আঃ)
◾আপনি আমাকে আপনার পক্ষ থেকে একজন উত্তরাধিকারী দান করুন’। ‘যে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়াকূবের বংশের উত্তরাধিকারী হবে। হে আমার রব, আপনি তাকে পছন্দনীয় বানিয়ে দিন’। (১৯ঃ৫-৬, জাকারিয়া আঃ)

🤲 পরিবারের জন্য দোয়াঃ

◾‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন’। (২৫ঃ৭৪)
◾‘হে আমার রব, তারা যা করছে, তা থেকে আমাকে ও আমার পরিবার-পরিজনকে তুমি রক্ষা কর’। (২৬ঃ১৬৯- লূত আঃ)

🤲 জ্ঞান অর্জনের জন্য দোয়াঃ

◾‘হে আমার রব! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ করুন। (২০ঃ১১৪)
◾‘হে আমার রব! আমাকে প্রজ্ঞা দান করুন এবং সৎকর্মশীলদের সাথে মিলিয়ে দিন। (২৬ঃ৮৩, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘হে আমার রব, আমার বুক প্রশস্ত করে দিন’‘এবং আমার কাজ সহজ করে দিন, ‘আর আমার জিহবার জড়তা দূর করে দিন-যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে’। ২০ঃ২৫-২৮)
◾‘আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি’। (২ঃ৬৭)

সাহস সঞ্চার করার দোয়াঃ

◾‘হে আমার রব, আমাকে প্রবেশ করাও উত্তমভাবে এবং বের কর উত্তমভাবে। আর তোমার পক্ষ থেকে আমাকে সাহায্যকারী শক্তি দান কর’। ১৭ঃ৮০, মুহাম্মদ সঃ)
◾‘হে আমার রব! আমার বক্ষ সম্প্রসারিত করে দিন, এবং আমার কাজ সহজ করে দিন, ‘আর আমার জিহবার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে, ‘আর আমার জন্য করে দিন একজন সাহায্যকারী আমার সজনদের মধ্য থেকে, ‘আমার ভাই হারুনকে; ‘তার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন, ‘এবং তাকে আমার কাজে অংশীদার করুন। ‘যাতে আমরা আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে পারি প্রচুর, ‘এবং আমরা আপনাকে স্মরণ করতে পারি বেশি পরিমাণ। ‘আপনি তো আমাদের সম্যক দ্রষ্টা।’ (২০ঃ২৫-৩৫, মূসা আঃ)।
◾‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত দিন এবং আমাদের জন্য আমাদের কর্মকান্ড সঠিক করে দিন’। (১৮ঃ১০)

🤲 রিজিকের বৃদ্ধির জন্য দোয়াঃ

◾‘হে আল্লাহ্‌ আমাদের রব! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা পাঠান; এটা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তি সবার জন্য হবে আনন্দোৎসব স্বরুপ এবং আপনার কাছ থেকে নিদর্শন।আর আমাদের জীবিকা দান করুন; আপনিই তো শ্রেষ্ঠ জীবিকাদাতা।’ (৫ঃ১১৪, ঈসা আঃ)
◾'হে আমার রব ! এটাকে নিরাপদ শহর করুন এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ্‌ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনে তাদেরকে ফলমূল হতে জীবিকা প্রদান করুন’। (২ঃ১২৬, ইব্রাহিম আঃ)
◾হে আমাদের রব! আমি আমার বংশধরদের কিছু সংখ্যককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় আপনার পবিত্র ঘরের কাছে, হে আমাদের রব! এ জন্য যে, তারা যেন সালাত কায়েম করে। অতএব আপনি কিছু লোকের অন্তর তাদের প্রতি অনুরাগী করে দিন এবং ফল-ফলাদি দিয়ে তাদের রিযকের ব্যবস্থা করুন, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। (১৪ঃ৩৭, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘আর যাকে চান বিনা হিসাবে রিয্ক দান করেন’। (৩ঃ২৭)

🤲 যানবাহনে আরোহন ও অবতারনের দোয়াঃ

◾আল্লাহরই নামে এর গতি ও স্থিতি নিয়ে আরোহন করছি, নিশ্চয় আমার প্রতিপালক চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়াবান।’ (১১ঃ৪১, নূহ আঃ)
◾‘পবিত্র-মহান সেই সত্তা যিনি এগুলোকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। আর আমরা এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ছিলাম না’। (৪৩ঃ১৩)
◾‘তোমরা তাতে প্রবেশ কর শান্তিতে, নিরাপদ হয়ে’। (১৫ঃ৪৬)
◾আল্লাহ উত্তম হেফাযতকারী এবং তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু’। (১২ঃ৬৪)
◾‘হে আমার রব! আমাকে নামিয়ে দিন কল্যাণকরভাবে; আর আপনিই শ্রেষ্ঠ অবতারণকারী।’ (২৩ঃ২৯, নূহ আঃ)

🤲 নেককারদের সাথে অন্তর্ভুক্তির দোয়াঃ

◾‘হে আমার রব! আমাকে প্রজ্ঞা দান করুন এবং সৎকর্মশীলদের সাথে মিলিয়ে দিন। এবং পরবর্তীদের মধ্যে আমার সুনাম-সুখ্যাতি অব্যাহত রাখুন’, ‘আর আপনি আমাকে সুখময় জান্নাতের ওয়ারিসদের অন্তর্ভুক্ত করুন’। (২৬ঃ৮৩-৮৫, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু। (৫৯ঃ১০)
◾‘আমরাই আল্লাহর পথে সাহায্যকারী হব। আমরা আল্লাহতে বিশ্বাস করেছি। আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)। (৩ঃ৫২, ঈসা আঃ এর হাওয়ারীগন)
◾‘হে আমার রব! আপনি যা নাযিল করেছেন তার প্রতি আমরা ঈমান এনেছি এবং আমরা এ রাসূলের অনুসরণ করেছি। কাজেই আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের তালিকাভুক্ত করে নিন। ’(৩ঃ৫৩, ঈসা আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমরা এক আহ্‌বায়ককে ঈমানের দিকে আহ্‌বান করতে শুনেছি, ‘তোমরা তোমাদের রবের উপর ঈমান আন।’ কাজেই আমরা ঈমান এনেছি।
হে আমাদের রব! আপনি আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করুন, আমাদের মন্দ কাজগুলো দূরীভূত করুন এবং আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের সহগামী করে মৃত্যু দিন (৩ঃ১৯৩)
◾হে আসমানসমূহ ও যমীনের সষ্টা! আপনিই দুনিয়া ও আখিরাতে আমার অভিভাবক। আপনি আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দিন এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন (১২ঃ১০১, ইউসুফ আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিবেন’। (১৪ঃ৪১)
◾‘হে আমার রব, আমি যাতে এমন সৎকাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর। আর তোমার অনুগ্রহে তুমি আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর’। (২৭ঃ১৯- সোলাইমান আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।
◾‘হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। ২ঃ১২৮-১২৯, ইব্রাহিম আঃ)
◾সকল প্রশংসাই আল্লাহর নিমিত্তে। আর শান্তি তাঁর বান্দাদের প্রতি যাদের তিনি মনোনীত করেছেন। (২৭ঃ৫৯)

🤲 কেহ মিথ্যাবাদী দোষারোপ করলে দোয়াঃ

◾‘হে আমার রব! আমি আশংকা করছি যে, তারা আমার উপর মিথ্যারোপ করবে, (২৬ঃ১২, মূসা আঃ)
◾‘হে আমার রব! আমার সম্প্রদায় তো আমার উপর মিথ্যারোপ করেছে। (২৬ঃ১১৭, নূহ আঃ)
◾‘হে আমার রব! আমাকে সাহায্য করুন, কারণ তারা আমার প্রতি মিথ্যারোপ করেছে ২৩ঃ২৬/৩৯, নূহ আঃ)
◾‘হে আমার রব, আপনি ন্যায়সঙ্গতভাবে ফয়সালা করে দিন’। আর আমাদের রব তো পরম করুণাময়। তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে তিনিই একমাত্র সহায়স্থল। (২১ঃ১১২)

🤲 অত্যাচারী কাফের/দুশমনের বিরুদ্ধে দোয়াঃ

◾আপনি আমাদের অভিভাবক। অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। (২ঃ২৮৬)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদের উপর ধৈর্য ঢেলে দিন, আমাদের পা স্থির রাখুন এবং আমাদেরকে কাফের জাতির বিরুদ্ধে সাহায্য করুন’। (২ঃ২৫০, তালূত আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদের পাপ ও আমাদের কর্মে আমাদের সীমালঙঘন ক্ষমা করুন এবং অবিচল রাখুন আমাদের পাসমূহকে, আর কাফির কওমের উপর আমাদেরকে সাহায্য করুন’। (৩ঃ১৪৭)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।’ (৪ঃ৭৫)
◾‘হে আমার রব, আমি আমার ও আমার ভাই ছাড়া কারো উপরে অধিকার রাখি না। সুতরাং আপনি আমাদের ও ফাসিক কওমের মধ্যে বিচ্ছেদ করে দিন। (৫ঃ২৫, মূসা আঃ)
◾হে আমাদের রব, আমাদের ও আমাদের কওমের মধ্যে যথার্থ ফয়সালা করে দিন। আর আপনি শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী। (৭ঃ৮৯)
◾হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে যালিম কওমের ফিতনার পাত্র বানাবেন না’। (১০ঃ৮৫, মূসা আঃ)
◾হে আমাদের রব, তাদের ধন-সম্পদ নিশ্চি‎হ্ন করে দিন, তাদের অন্তরসমূহকে কঠোর করে দিন। ফলে তারা ঈমান আনবে না, যতক্ষণ না যন্ত্রণাদায়ক আযাব দেখে’। (১০ঃ৮৮, মূসা আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমরা তো আশংকা করছি যে, সে আমাদের উপর বাড়াবাড়ি করবে অথবা সীমালঙ্ঘন করবে’। (২০ঃ৪৫, মূসা আঃ)
◾‘হে আমার রব, আমাকে যালিম সম্প্রদায়ভুক্ত করবেন না।’ (২৩ঃ৯৪, মূসা আঃ)
◾‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে। (২৫ঃ৩০)
◾‘হে আমার রব, আপনি যালিম কওম থেকে আমাকে রক্ষা করুন’। (২৮ঃ২১, মূসা আঃ)
◾‘হে আমার রব, আমাকে সাহায্য করুন ফাসাদ সৃষ্টিকারী কওমের বিরুদ্ধে’। (২৯ঃ৩০, লূত আঃ)
◾হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে কাফিরদের উৎপীড়নের পাত্র বানাবেন না। (৬০ঃ৫, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে যালিম কওমের অন্তর্ভুক্ত করবেন না’। (৭ঃ৪৭)
◾‘হে আমার রব! যমীনের উপর কোন কাফিরকে অবশিষ্ট রাখবেন না’। (৭১ঃ২৬, নূহ আঃ)
◾‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’ (৭১ঃ২৮, নূহ আঃ)
◾তোমাদের প্রস্তরাঘাত থেকে আমি আমার রব ও তোমাদের রবের কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। (৪৪ঃ২০)
◾‘আমার সাথে আমার রব রয়েছেন। নিশ্চয় অচিরেই তিনি আমাকে পথনির্দেশ দেবেন’। (২৬ঃ৬২, মূসা আঃ)
◾‘হে আমার রব, আমাকে সাহায্য করুন ফাসাদ সৃষ্টিকারী কওমের বিরুদ্ধে’। (২৯ঃ৩০)
◾‘নিশ্চয় আমি পরাজিত, অতএব তুমিই প্রতিশোধ গ্রহণ কর’। (৫৪ঃ১০, নূহ আঃ)
◾ আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও নিকটবর্তী বিজয়। (৬১ঃ১৩)

🤲 জাহান্নাম থেকে বাঁচার দোয়াঃ

◾হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন। (২ঃ২০১)
◾‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমরা ঈমান আনলাম। অতএব, আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন’। (৩ঃ১৬)
◾‘হে আমাদের রব, তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র মহান। সুতরাং তুমি আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা কর’। (৩ঃ১৯১)
◾‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় তুমি যাকে আগুনে প্রবেশ করাবে, অবশ্যই তাকে তুমি অপমান করবে। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই’। (৩ঃ১৯২)
◾‘হে আমাদের রব, আর আপনি আমাদেরকে তা প্রদান করুন যার ওয়াদা আপনি আমাদেরকে দিয়েছেন আপনার রাসূলগণের মাধ্যমে। আর কিয়ামতের দিনে আপনি আমাদেরকে অপমান করবেন না। নিশ্চয় আপনি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না’। (৩ঃ১৯৪)
◾‘হে আমাদের রব, আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আর জাহান্নামের আযাব থেকে আপনি তাদেরকে রক্ষা করুন’। (৪০ঃ৭)
◾আর আপনি তাদের অপরাধের আযাব হতে রক্ষা করুন এবং সেদিন আপনি যাকে অপরাধের আযাব থেকে রক্ষা করবেন, অবশ্যই তাকে অনুগ্রহ করবেন। আর এটিই মহাসাফল্য।’ (৪০ঃ৯)
◾‘হে আমার রব, আপনার কাছে আমার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করুন এবং আমাকে ফির‘আউন ও তার কর্ম হতে নাজাত দিন, আর আমাকে নাজাত দিন যালিম সম্প্রদায় হতে। (৬৬ঃ১১, ফেরাউনের স্ত্রী)
◾হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি মানুষকে সমবেত করবেন এমন একদিন, যাতে কোন সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না। (৩ঃ৯)

🤲 জাহান্নামি/কাফেরদের আর্তনাদঃ

◾‘হে আমাদের রব, তুমি আমাদের থেকে জাহান্নামের আযাব ফিরিয়ে নাও। নিশ্চয় এর আযাব হল অবিচ্ছিন্ন’। (২৫ঃ৬৫)
◾‘হে আমাদের রব, আমরা দেখেছি ও শুনেছি, কাজেই আমাদেরকে পুনরায় পাঠিয়ে দিন, আমরা সৎকর্ম করব। নিশ্চয় আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী’। (৩২ঃ১২)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করে দিন, আমরা পূর্বে যে আমল করতাম, তার পরিবর্তে আমরা নেক আমল করব’। (৩৫ঃ৩৭)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদের থেকে আযাব দূর করুন; নিশ্চয় আমরা মুমিন হব।’ (৪৪ঃ১২)
◾‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদের কাছে কোন রাসূল পাঠালেন না কেন? তাহলে আমরা আপনার আয়াতসমূহ অনুসরণ করতাম আর আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুর্ক্ত হতাম’। (২৮ঃ৪৭)
◾‘হে আমাদের রব, দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পেয়ে বসেছিল, আর আমরা ছিলাম পথভ্রষ্ট’। ‘হে আমাদের রব, এ থেকে আমাদেরকে বের করে দিন, তারপর যদি আমরা আবার তা করি তবে অবশ্যই আমরা হব যালিম।’ (২৩ঃ১০৬-১০৭)
◾‘হে আমাদের রব, ওরা তো তারা যাদেরকে আমরা বিভ্রান্ত করেছিলাম। তাদেরকে আমরা বিভ্রান্ত করেছিলাম যেমন আমরা বিভ্রান্ত হয়েছিলাম। আমরা আপনার কাছে দায় মুক্তি চাচ্ছি। তারা তো আমাদের ইবাদাত করত না’। (২৮ঃ৬৩)
◾‘হে আমাদের রব, যে আমাদের জন্য এ বিপদ এনেছে, জাহান্নামে তুমি তার আযাবকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দাও।’ (৩৮ঃ৬১)
◾‘হে আমাদের রব, আমরা আমাদের নেতৃবর্গ ও বিশিষ্ট লোকদের আনুগত্য করেছিলাম, তখন তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল’। ‘হে আমাদের রব, আপনি তাদেরকে দ্বিগুণ আযাব দিন এবং তাদেরকে বেশী করে লা‘নত করুন’। (৩৩ঃ৬৭-৬৮)
◾‘হে আমাদের রব, জিন ও মানুষের মধ্যে যারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে তাদেরকে আমাদের দেখিয়ে দিন। আমরা তাদের উভয়কে আমাদের পায়ের নীচে রাখব, যাতে তারা নিকৃষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়। (৪১ঃ২৯)
◾‘হে আমার রব, যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তাই যমীনে আমি তাদের জন্য (পাপকে) শোভিত করব এবং নিশ্চয় তাদের সকলকে পথভ্রষ্ট করব’। (১৫ঃ৩৯, ইবলিশ)
◾‘হে আমার রব, নিশ্চয় এসব মূর্তি অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে, সুতরাং যে আমার অনুসরণ করেছে, নিশ্চয় সে আমার দলভুক্ত, আর যে আমার অবাধ্য হয়েছে, তবে নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। ১৪ঃ৩৬)
◾‘হে আমাদের ‘রব’, আমি তাকে বিদ্রোহী করে তুলিনি, বরং সে নিজেই ছিল সুদূর পথভ্রষ্টতার মধ্যে’। (৫০ঃ২৭)
◾‘হায়, আমাদের দুর্ভোগ! আমরা তো এ বিষয়ে উদাসীন ছিলাম বরং আমরা ছিলাম যালিম’ । (২১ঃ৯৭)


Post a Comment

Previous Post Next Post