আমি জীবনের প্রেমে পড়িনি, কখন বুঝবো আমি প্রেমে পড়েছি?

 আমি জীবনের প্রেমে পড়িনি, কখন বুঝবো আমি প্রেমে পড়েছি? 

যদি নিজের মাঝে এরকম কয়টা সিম্পটম দেখতে পান, তবে, সম্ভবত: বুঝা যাবে যে, প্রেম এসেছে জীবনে,

১। কোনো কারণ ছাড়াই, সব কিছুতেই মন যদি উতলা হয়ে থাকে,

২। পড়তে বসলে, বইয়ের পাতায় যেমন একটা অস্পষ্ট মুখের ছবি ভেসে উঠতেছে। কোন জায়গা অবধি পড়ে, থেমে যাওয়া হয়েছিলো, সে জায়গাটা আর মনেই করা যাচ্ছে না,

৩। বাড়ীতে কাগজে কোনো কিছু লেখা লেখি করতে গেলে, দরকারী কিছুই হয়তো লিখতে গিয়ে, বা হয়তো বাড়ী থেকেই বলা হলো যে বাজারের লিস্টিটা করতে, তখন, কেমন জানি, কলমটি আর নিজের নিয়ন্ত্রনেই যেন থাকছে না, বারবারই যেন, কাগজে প্রথমে আঁকিবুকি কাটার চেষ্টা থেকে, ধীরে ধীরে, একটা নির্দিষ্ট মুখের ছবি আঁকার দিকেই কলমটি ধাবিত হচ্ছে,

বা, কোনো একটা নামই যেন বার বার লেখার জন্য, কলমটা খুবই জোরাজুরি করতেছে,

৪। আয়নাতে, নিজেরে বারবারই দেখনের ইচ্ছা হচ্ছে, চুল কে এদিক থেকে সেদিক, সেদিক থেকে এদিক করে, কোনটা ভালো হচ্ছে, সেটা নির্দিষ্ট করার একটি অপ্রতিরোধ্য বাসনা জেগেছে,

৫। মোবাইলের নোটিফিকেশনের সাউন্ড শুনলেই যেন, একটি শিশু যেমন চট করেই জোরে কোনো শব্দ শুনলে আঁতকে উঠে, সেরকম করেই, আঁতকে উঠার ইচ্ছে হচ্ছে,

৬। বাড়ীতে খেতে বসে, নুন বেশী, ঝাল কম, এসব প্রতিবাদের সুরটি যেন ধীরে ধীরে মিইয়ে পড়ছে, মনে হচ্ছে, পৃথিবীতে খাওয়ার চাইতেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ আছে,

৭। কোনো বাড়ীতে গিয়ে, স্বামী, স্ত্রীর একসাথে বাঁধানো ফটো দেখে, সে ফটোর দিকে তাকিয়েই থাকার ইচ্ছে হচ্ছে,

৮। দেয়ালে ঝুলানো কোনো হাসিমুখ শিশুর ছবি বা ক্যালেন্ডার দেখে, বারবারই দেখার ইচ্ছে হচ্ছে, কেবলই ফটোটাকে আদর করনের ইচ্ছে হচ্ছে,

৯। দূরে কোনো বিয়ে বাড়ীতে বাজতে থাকা সানাইর সুরে মন বার বার উতলা হয়ে যাচ্ছে, উদাস লাগছে, কিচ্ছুই ভাল্লাগতাছে না, শুধু সানাইটাই যেন বুকের ভেতর বাজতেছে, আর বুকের ভেতর টা যে কেমন করছে, বুঝাতেই যে পারছি না,

১০। আগে বাড়ীতে গুরুজনরা সামান্য বকাবকি করলেই তেলে, বেগুনে জ্বলে উঠার ধাতটা যেন কমে আসতেছে, এখন আগের চাইতে আরো বেশী বকাবকি করলেও যেন মনে হচ্ছে যে কিচ্ছু না, কিচ্ছু না, তাঁরা গুরুজন, বলতেই পারেন,

১১। রাস্তার পাশে ভিখারীকে পয়সা দিতে গিয়ে যেন মনে হচ্ছে যে, না, একটু বেশীই দিই, তাঁরা কত কষ্টে থাকেন,

১২। আগে রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া নিয়ে বাগ বিতণ্ডা করার অভ্যাসটি যেন আর ভালো লাগছে না, মনে হচ্ছে, পাঁচ এর জায়গায় দশ টাকা দেয়াই উচিৎ হবে, কারণ, তিনি সারাদিন কতো পরিশ্রম করেন,

১৩। আগে বাড়ীর লোকজনের সান্নিধ্য ভালো লাগলেও, এখন যেন একটু একা, নিরিবিলি থাকতেই বেশী ভালো লাগতেছে,

১৪। কারো সাথে আর তর্কাতর্কি বা ঝগড়া ঝাঁটি করার প্রবণতা আর জাগছেই না, পৃথিবীর সব কিছুই একটা ভালো লাগায় ভরে উঠছে,

১৫। প্রতিশোধ বা প্রতিবাদ শব্দগুলি আর নিজের মাঝে খুঁজে পাওয়াই যাচ্ছে না, উল্টে, ক্ষমা শব্দটিই যেন উজ্জ্বল হয়ে, মনের কোণে বাসা বেঁধেই রয়েছে,

সম্ভাবনা, খুবই সম্ভাবনা আছে, প্রেমের কলিটি জেগেছে।

আর রাতে যদি তাঁর কথা ভেবে, বিনিদ্র রজনী কাটে, যদি মনে হয়, আর্লি টু বেড, আর্লি টু রাইজ নয়, নিশি জাগরণের ও অনেক মহিমা আছে, বিছানায় শুয়ে তাঁর কথা ভেবে ভেবে, এপাশ, ওপাশ করতে থাকা অবস্থায়, দূরে থেকে ভেসে আসা, মাইকে বাজতে থাকা গানের কলি,

"আজ তোমায় দেখে হলো মনে, তুমি ছিলে মনের কোণে" (কে তুমি তন্দ্রাহরনী)

শুনে যদি, তড়াক করেই বিছানায় উঠে বসার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, মনে হয় যে এ গান, শুধু আমারই জন্য লেখা হয়েছিলো,

প্রেমে ? শুধু পড়া নয়, অলরেডি প্রেমে পড়ে গিয়ে, হাবুডুবু খাচ্ছেন, আপনি।

ধন্যবাদ।

Post a Comment

Previous Post Next Post