কুরআন মতে অধিকাংশ মানুষের পরিচয় !

কুরআন মতে অধিকাংশ মানুষের পরিচয় !


কুরআন মতে অধিকাংশ মানুষই মূর্খ - ৬:১১১; অকৃতজ্ঞ - ২:২৪৩, ৭:১৭, ১২:৩৮, ১৬:৮৩, ২৫:৫০, ২৭:৭৩, ৪০:৬১; নাফরমান - ৭:১০২, ৫:৫৯; প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী -৯:৮, অবিশ্বাসকারী - ২:১০০, ১৩:১, ১২:১০৩, ২৬:৮, ২৬:৬৭, ২৬:১০৩, ২৬:১২১, ২৬:১৩৯, ২৬:১৫৮, ২৬:১৭৪, ২৬:১৯০, ৩৬:৭, ৪০:৫৯; অস্বীকারকারী - ১৭:৮৯; মিথ্যাবাদী -২৬:২২৩; মুশরিক - ৩০:৪২; বিপথগামী - ৩৭:৭১; অবুঝ - ২৯:৬৩, ৩৪:৩৬, ৩৯:৪৯, ৪০:৫৭, ৪৪:৩৯, ৪৫:২৬, ৪৯:৪; পাপাচারী - ৩:১১০, ৫৭:১৬; ৫৭:২৬, ৫৭:২৭।

কুরআন মতে অধিকাংশ মানুষই মূর্খ! 

 وَ لَوۡ اَنَّنَا نَزَّلۡنَاۤ اِلَیۡهِمُ الۡمَلٰٓئِکَۃَ وَ کَلَّمَهُمُ الۡمَوۡتٰی وَ حَشَرۡنَا عَلَیۡهِمۡ کُلَّ شَیۡءٍ قُبُلًا مَّا کَانُوۡا لِیُؤۡمِنُوۡۤا اِلَّاۤ اَنۡ یَّشَآءَ اللّٰهُ وَ لٰکِنَّ اَکۡثَرَهُمۡ یَجۡهَلُوۡنَ

আর যদি আমি তাদের নিকট ফেরেশতা নাযিল করতাম এবং মৃতরা তাদের সাথে কথা বলত। আর সবকিছু সরাসরি তাদের সামনে সমবেত করতাম, তাহলেও তারা ঈমান আনত না, যদি না আল্লাহ চাইতেন; কিন্তু তাদের অধিকাংশই মূর্খ। সূরা আল আন-আম:১১১

কুরআন মতে অধিকাংশ মানুষই অকৃতজ্ঞ ! 

اَلَمۡ تَرَ اِلَی الَّذِیۡنَ خَرَجُوۡا مِنۡ دِیَارِهِمۡ وَ هُمۡ اُلُوۡفٌ حَذَرَ الۡمَوۡتِ ۪ فَقَالَ لَهُمُ اللّٰهُ مُوۡتُوۡا ۟ ثُمَّ اَحۡیَاهُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَذُوۡ فَضۡلٍ عَلَی النَّاسِ وَ لٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یَشۡکُرُوۡنَ

তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা তাদের গৃহসমূহ থেকে বের হয়েছে মৃত্যুর ভয়ে এবং তারা ছিল হাজার-হাজার? অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে বললেন, ‘তোমরা মরে যাও’! তারপর তিনি তাদেরকে জীবিত করলেন। নিশ্চয় আল্লাহ তো মানুষের উপর অনুগ্রহশীল। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ শুকরিয়া (কৃতজ্ঞতা) আদায় করে না। সুরা বাকারা আয়াত ২৪৩

এ ঘটনা বিগত কোন জাতির। কোন সহীহ হাদীসে এর বিস্তারিত আলোচনা আসেনি। তফসীরের বর্ণনায় এটাকে বনী-ইস্রাঈলদের যুগের ঘটনা বলা হয়েছে 

বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, কোন এক শহরে ইসরাঈল-বংশধরের কিছু লোক বাস করত। তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় দশ হাজার। সেখানে এক মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব হয়। তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে সে শহর ত্যাগ করে দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী এক প্রশস্ত ময়দানে গিয়ে বসবাস করতে লাগল। আল্লাহ্ তা'আলা তাদের কাছে দু’জন ফেরেশতা পাঠালেন তাদেরকে এবং দুনিয়ার অন্যান্য জাতিকে একথা অবগত করানোর জন্য যে, মৃত্যুর ভয়ে পালিয়ে গিয়ে কেউ রক্ষা পেতে পারে না। ফেরেশতা দু'জন ময়দানের দু’ধারে দাঁড়িয়ে এমন এক বিকট শব্দ করলেন যে, তাদের সবাই একসাথে মরে গেল। দীর্ঘকাল পর ইসরাঈল-বংশধরদের একজন নবী সেখান দিয়ে যাওয়ার পথে সেই বন্ধ জায়গায় বিক্ষিপ্ত অবস্থায় হাড়-গোড় পড়ে থাকতে দেখে বিস্মিত হলেন। তখন ওহীর মাধ্যমে তাকে মৃত লোকদের সমস্ত ঘটনা অবগত করানো হল। তখন তিনি দোআ করলেন এবং আল্লাহ তাদেরকে জীবিত করে দিলেন। [ইবনে কাসীর]

এ ঘটনাটি দুনিয়ার সমস্ত চিন্তাশীল বুদ্ধিজীবীকে সৃষ্টিবলয় সম্পর্কিত চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সন্ধান দেয়। তদুপরি এটা কেয়ামত অস্বীকারকারীদের জন্য একটা অকাট্য প্রমাণ হওয়ার সাথে সাথে এ বাস্তব সত্য উপলব্ধি করার পক্ষেও বিশেষ সহায়ক যে, মৃত্যুর ভয়ে পালিয়ে থাকা তা জিহাদ হোক বা প্লেগ মহামারীই হোক, আল্লাহ এবং তার নির্ধারিত নিয়তি বা তাকদীরের প্রতি যারা বিশ্বাসী তাদের পক্ষে সমীচীন নয়। যার এ বিশ্বাস রয়েছে যে, মৃত্যুর একটা নির্ধারিত সময় রয়েছে, নির্ধারিত সময়ের এক মুহুর্ত পূর্বেও তা হবে না এবং এক মূহুর্ত পরেও তা আসবে না, তাদের পক্ষে এরূপ পলায়ন অর্থহীন এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ।

(২) এ আয়াত কয়েকটি বিষয়ের সমাধান করে দিয়েছে। প্রথমতঃ আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীরের উপর কোন তদবীর কার্যকর হতে পারে না। জিহাদ বা মহামারীর ভয়ে পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাচানো যায় না, আর মহামারীগ্রস্ত স্থানে অবস্থান করাও মৃত্যুর কারণ হতে পারে না। মৃত্যুর একটি সুনির্দিষ্ট সময় রয়েছে, যার কোন ব্যতিক্রম হওয়ার নয়। দ্বিতীয়তঃ কোনখানে কোন মহামারী কিংবা কোন মারাত্মক রোগ-ব্যাধি দেখা দিলে সেখান থেকে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়া বৈধও নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এরশাদ মোতাবেক অন্য এলাকার লোকের পক্ষেও মহামারীগ্রস্ত এলাকায় যাওয়া বৈধ নয়। হাদীসে বলা হয়েছেঃ ‘সে রোগের মাধ্যমে আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের পূর্ববতী বিভিন্ন উম্মতের উপর আযাব নাযিল করেছেন। সুতরাং যখন তোমরা শুনবে যে, কোন শহরে প্লেগ প্রভৃতি মহামারী দেখা দিয়েছে, তখন সেখানে যেও না। আর যদি কোন এলাকাতে এ রোগ দেখা দেয় এবং তুমি সেখানেই থাক, তবে সেখান থেকে পলায়ন করবে না।‘ [বুখারী ৩৪৭৩, মুসলিম: ২২১৮]

ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস হচ্ছে এই যে, কোথাও যাওয়া মৃত্যুর কারণ হতে পারে না, আবার কোনখান থেকে পালিয়ে যাওয়াও মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় নয়’! এ মৌলিক বিশ্বাসের পাশাপাশি আলোচ্য নির্দেশটি নিঃসন্দেহে বিশেষ তাৎপর্যপূৰ্ণ।

প্রথমতঃ মহামারীগ্রস্ত এলাকার বাইরের লোককে আসতে নিষেধ করার একটি তাৎপর্য এই যে, এমনও হতে পারে যে, সেখানে গমন করার পর তার হায়াত শেষ হওয়ার দরুনই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে সে মৃত্যুবরণ করলঃ এতদসত্ত্বেও আক্রান্ত ব্যক্তির মনে এমন ধারণা হতে পারে যে, সেখানে না গেলে হয়ত সে মারা যেত না। তাছাড়া অন্যান্য লোকেরও হয়ত এ ধারণাই হবে যে, এখানে না এলে মৃত্যু হত না। অথচ যা ঘটেছে তা পূর্বেই নির্ধারিত ছিল। যেখানেই থাকত, তার মৃত্যু এ সময়েই হত! এ আদেশের মাধ্যমে মুসলিমদেরকে ঈমানের ব্যাপারে সন্দেহসংশয় থেকে রক্ষা করা হয়েছে। যাতে করে তারা কোন ভুল বোঝাবুঝির শিকার না হয়।

দ্বিতীয়তঃ এতে আল্লাহ তা'আলা মানুষকে উপদেশ দিয়েছেন যে, যেখানে কষ্ট হওয়ার বা মৃত্যুর আশংকা থাকে, সেখানে যাওয়া উচিত নয়; বরং সাধ্যমত ঐসব বস্তু থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করা কর্তব্য, যা তার জন্য ধ্বংস বা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাছাড়া নিজের জানের হেফাযত করা প্রত্যেক মানুষের জন্য ওয়াজিব ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়মের চাহিদাও তাই যে, আল্লাহর দেয়া তাকদীরে পূর্ণ বিশ্বাস রেখে যথাসাধ্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে। যেসব স্থানে প্রাণ নাশের আশংকা থাকে, সেসব স্থানে না যাওয়াও এক প্রকার সতর্কতামূলক তদবীর। এমনিভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকদেরকে সে স্থান থেকে পলায়ন করতে নিষেধ করার মাঝেও বহু তাৎপর্য নিহিতঃ একটি হচ্ছে এই যে, যদি এ পলায়নের প্রথা চলতে থাকে, তবে সাধারণভাবে ও সমষ্টিগতভাবে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যারা সক্ষম ও সবল তারা তো সহজেই পালাতে পারে, কিন্তু যারা দুর্বল তাদের কি অবস্থা হবে? আর যারা রোগাক্রান্ত, তাদের সেবা-শুশ্রুষা কিংবা মরে গেলে দাফন-কাফনেরই বা কি ব্যবস্থা হবে? দ্বিতীয়তঃ যারা সেখানে ছিল, তাদের মধ্যে হয়ত রোগের জীবাণু প্রবেশ করে থাকবে। এমতাবস্থায় তারা যদি বাড়ী-ঘর থেকে বের হয়ে থাকে, তবে তাদের দুঃখ-দুর্দশা আরও বেড়ে যাবে। কারণ প্রবাস জীবনে রোগাক্রান্ত হলে যে কি অবস্থা তা সবারই জানা।

তৃতীয়তঃ যদি তাদের মধ্যে রোগের জীবাণু ক্রিয়া করে থাকে, তবে তা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। আর যদি নিজের জায়গায় আল্লাহর উপর ভরসা করে পড়ে থাকে, তবে হয়ত নাজাত পেতে পারে। আর যদি এ রোগে মারা যাওয়াই তার ভাগ্যে থাকে, তবে ধৈর্য ও স্থিরতা অবলম্বনের বদলায় শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। প্লেগ মহামারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, ‘এ রোগটি আসলে শাস্তিরূপে নাযিল হয়েছিল এবং যে জাতিকে শাস্তি দেয়া উদ্দেশ্য হত তাদের ভেতর পাঠানো হত। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা একে মুমিনদের জন্য রহমতে পরিবর্তিত করে দিয়েছেন। আল্লাহর যেসব বান্দা এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়া সত্বেও নিজ এলাকায়ই ধৈর্য সহকারে বসবাস করে এবং এ বিশ্বাস রাখে যে, তার শুধু সে বিপদই হতে পারে, যা আল্লাহ তা'আলা তার জন্য লিখে রেখেছেন, তবে এমন ব্যক্তি শহীদের মত সওয়াব পাবে। [বুখারীঃ ৫৭৩৪] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ প্লেগ শাহাদাত এবং প্লেগ আক্রান্ত ব্যক্তি শহীদ [বুখারীঃ ৫৭৩২] এর ব্যাখ্যাও তাই। [মাআরিফুল কুরআন থেকে সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত] তাফসীরে জাকারিয়া

‘তারপর অবশ্যই তাদের নিকট উপস্থিত হব, তাদের সামনে থেকে ও তাদের পেছন থেকে এবং তাদের ডান দিক থেকে ও তাদের বাম দিক থেকে। আর আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না’। ৭:১৭

‘আর আমি অনুসরণ করেছি আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের ধর্ম। আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করা আমাদের জন্য সঙ্গত নয়। এটি আমাদের ও সকল মানুষের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না’।১২:৩৮

তারা আল্লাহর নিআমত চিনে, তারপরও তারা তা অস্বীকার করে, আর তাদের অধিকাংশই কাফির।১৬:৮৩

আর আমি তা তাদের মধ্যে বণ্টন করি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে; তারপর অধিকাংশ লোক শুধু অকৃতজ্ঞতাই প্রকাশ করে।২৫:৫০

আর নিশ্চয় তোমার রব মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল; কিন্তু তাদের বেশীর ভাগই শুকরিয়া আদায় করে না।২৭:৭৩

আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য রাত বানিয়েছেন যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম করতে পার এবং দিনকে করেছেন আলোকোজ্জ্বল। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি বড়ই অনুগ্রহশীল; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। ৪০:৬১


কুরআন মতে অধিকাংশ মানুষই নাফরমান

আর তাদের অধিকাংশ লোককে আমি অঙ্গীকার রক্ষাকারী পাইনি। বরং তাদের অধিকাংশকে আমি ফাসিক-ই পেয়েছি।৭:১০২

আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অর্থহীন কসমের ব্যাপারে, কিন্তু যে কসম তোমরা দৃঢ়ভাবে কর সে কসমের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করেন। সুতরাং এর কাফফারা হল দশ জন মিসকীনকে খাবার দান করা, মধ্যম ধরনের খাবার, যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদের বস্ত্র দান, কিংবা একজন দাস-দাসী মুক্ত করা। অতঃপর যে সামর্থ্য রাখে না তবে তিন দিন সিয়াম পালন করা। এটা তোমাদের কসমের কাফ্ফারা, যদি তোমরা কসম কর, আর তোমরা তোমাদের কসম হেফাযত কর। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর। ৫:৫৯

قسم (কসম) এর আরবী প্রতিশব্দ حلف বা يمين আর বহুবচন أحلاف বা أيمان যা শপথ অর্থে ব্যবহার হয়। এই কসম বা শপথ তিন ভাগে বিভক্ত; (ক) لغو (খ)  غموس (গ) مُعقَّدة (ক) لغو (নিরর্থক বা নিরুদ্দেশ) এমন কসম, যা মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে এবং কথায় কথায় ইচ্ছা, উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন ছাড়াই ব্যবহার করে। (এমন কসম খাওয়া তার মুদ্রাদোষে পরিণত হয়।) এই ধরনের কসমের কোন কাফফারা বা ধর-পাকড় নেই। (খ) غموس (মিথ্যা কসম) যা মানুষ ধোঁকা দেওয়া ও প্রতারণা করার জন্য করে থাকে। এটা মহাপাপ; বরং অতি মহাপাপ। কিন্তু এ ধরনের কসমের কোন কাফফারা নেই। (গ) معقَّدة ঐ কসমকে বলা হয়, যা মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে এবং নিয়ত সহকারে নিজের কথার সত্যতার তাকীদ ও তা পাকা করার জন্য ব্যবহার করে। যদি কেউ এ ধরনের কসম ভঙ্গ করে, তাহলে তাকে কাফফারা আদায় করতে হবে। এই কাফফারার কথা এই আয়াতের পরের অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।

কুরআন মতে অধিকাংশ মানুষই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী

কীভাবে থাকবে (মুশরিকদের জন্য অঙ্গীকার)? অথচ তারা যদি তোমাদের উপর জয়ী হয়, তাহলে তারা তোমাদের আত্মীয়তা ও অঙ্গীকারের ব্যাপারে লক্ষ্য রাখে না। তারা তাদের মুখের (কথা) দ্বারা তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করে, কিন্তু তাদের অন্তর তা অস্বীকার করে। আর তাদের অধিকাংশ ফাসিক।৯:৮

কুরআন মতে অধিকাংশ মানুষই প্রতিশ্রুতি অবিশ্বাসকারী 

আর আমি অবশ্যই তোমার প্রতি সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নাযিল করেছি, ফাসিকরা ছাড়া অন্য কেউ তা অস্বীকার করে না।২.৯৯ 

তবে কি যখনই তারা কোন ওয়াদা করেছে, তখনই তাদের মধ্য থেকে কোন এক দল তা ছুড়ে মেরেছে? বরং তাদের অধিকাংশ ঈমান রাখে না। ২.১০০ 

আলিফ-লাম-মীম-রা; এগুলো কিতাবের আয়াত, আর তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার উপর যা কিছু নাযিল হয়েছে তা সত্য, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ঈমান আনে না।১৩:১

আর তুমি আকাঙ্খা করলেও অধিকাংশ মানুষ মুমিন হবার নয়। ১২:১০৩

আপনার ঐকান্তিক ইচ্ছা যতই থাকুক না কেন অধিকাংশ মানুষই ঈমান আনবে না। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আর যদি আপনি যমীনের অধিকাংশ লোকের কথামত চলেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে।” [সূরা আল-আনআমঃ ১১৬] 

নিশ্চয় এতে আছে নিদর্শন, আর তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। ২৬:৮

নিশ্চয় এর মধ্যে রয়েছে নিদর্শন। আর তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়।২৬:৬৭

নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন, আর তাদের অধিকাংশ মুমিন নয়।২৬:১০৩

নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন, আর তাদের বেশীর ভাগ মুমিন ছিল না। ২৬:১২১

অতঃপর তারা তাকে অস্বীকার করল, ফলে তাদেরকে আমি ধ্বংস করে দিলাম; নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে। আর তাদের অধিকাংশ মুমিন ছিল না। ২৬:১৩৯

আ’দ জাতি ছিল পৃথিবীর শক্তিশালী জাতিদের অন্যতম। যাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন,{الَّتِي لَمْ يُخْلَقْ مِثْلُهَا فِي الْبِلَادِ}  অর্থাৎ, এ রকম জাতি পৃথিবীতে সৃষ্টিই হয়নি। (সূরা ফাজর ৮ আয়াত) অর্থাৎ, এমন জাতি যারা শক্তি, ক্ষমতা ও প্রতাপের দিক দিয়ে তাদের মত। সেই জন্য তারা বলত,{مَنْ أَشَدُّ مِنَّا قُوَّةً}  আমাদের থেকে শক্তিশালী আর কে আছে? (সূরা হা-মীম সাজদাহ ১৫ আয়াত) কিন্তু যখন ঐ জাতি কুফরীর রাস্তা ত্যাগ করে ঈমানের রাস্তা অবলম্বন করল না, তখন মহান আল্লাহ আযাব স্বরূপ এক কঠিন ঝড় তাদের উপর প্রেরণ করলেন, যা অবিরত সাত রাত আট দিন তাদের উপর বয়েছিল। ঝড় এক একটি মানুষকে উপরে তুলে মাটির উপর আছড়ে দিয়েছিল, যার কারণে তাদের মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে মগজ বের হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের লাশগুলি বিনা মাথায় এমনভাবে মাটির উপর পড়ে ছিল, যেন তা খেজুরের সারশূন্য কান্ড। তারা পাহাড় কেটে, পাহাড়ের গুহায় বিশাল বিশাল প্রাসাদ তৈরী করেছিল, পানির জন্য গভীর কূপ খনন করেছিল এবং বহু বাগানের মালিক ছিল তারা। কিন্তু যখন আল্লাহর আযাব এসে পৌঁছল, তখন এ সমস্ত জিনিস তাদের কোনই কাজে এল না। আর তা তাদেরকে পৃথিবী হতে নিশ্চিহ্ন করে ছাড়ল।

অতএব আযাব তাদেরকে পাকড়াও করল, নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে, আর তাদের অধিকাংশ মুমিন ছিল না।২৬:১৫৮

নিশ্চয় এতে এক নিদর্শন রয়েছে। আর তাদের অধিকাংশই মুমিন ছিল না।২৬:১৭৪

(২৬.১৮৯) অতঃপর ওরা তাকে মিথ্যাজ্ঞান করল, পরে ওদেরকে মেঘাচ্ছন্ন দিনের শাস্তি গ্রাস করল।[1] নিশ্চয় তা ছিল এক ভীষণ দিনের শাস্তি।

শুআইব (আঃ)-এর জাতি, 

মক্কার কাফেরদের মত আকাশ হতে আযাব চেয়েছিল। সেই মত আল্লাহও তাদের উপর আযাব অবতীর্ণ করেন। আর তা ছিল এইরূপঃ এক বর্ণনা সূত্রে মহান আল্লাহ আযাবস্বরূপ তাদের উপর সাত দিন পর্যন্ত কঠিন গরম এবং রৌদ্র অব্যাহত রাখেন। তারপর একটি মেঘখন্ড ভেসে এল। আর তারা গরম রৌদ্র থেকে বাঁচার জন্য সকলেই সেই ছায়াতলে জমা হয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল। কিন্তু পরক্ষণেই আকাশ হতে আগুনের বৃষ্টি শুরু হল। যমীন ভূকম্পনে কেঁপে উঠল এবং এক বিকট শব্দ এসে তাদেরকে চিরনিদ্রায় শুইয়ে দিল। এভাবে তাদের উপর তিন ধরনের আযাব আসল। আর তা সেই দিন আসল, যেদিন মেঘখন্ড তাদেরকে ছায়া দ্বারা আচ্ছাদিত করেছিল। সেই জন্য বলা হয়েছে মেঘাচ্ছন্ন বা ছায়ার দিনের আযাব তাদেরকে পাকড়াও করল।

নোটঃ ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) বলেছেন, মহান আল্লাহ শুআইব (আঃ)-এর জাতির ধ্বংসের বিবরণ তিন জায়গায় উল্লেখ করেছেন এবং তিন জায়গাতেই ভিন্ন ভিন্ন তিন আযাবের কথার বর্ণনা করেছেন। সূরা আ’রাফের ৯১নং আয়াতে ভূমিকম্পের কথা, সূরা হূদের ৯৪নং আয়াতে বিকট শব্দের কথা আর এখানে সূরা শুআরাতেও আকাশখন্ড ফেলার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, তিন ধরনের আযাব ঐ জাতির উপর এসেছিল।

নিশ্চয় এতে অনেক নিদর্শন রয়েছে। আর তাদের অধিকাংশই মুমিন ছিল না।২৬:১৯০

৩৬.৫) কুরআন পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ।

যাতে তুমি এমন এক কওমকে সতর্ক কর, যাদের পিতৃপুরুষদেরকে সতর্ক করা হয়নি, কাজেই তারা উদাসীন। ৩৬.৬

 নবী (সাঃ)-কে রসূল এই জন্য মনোনীত করা হয়েছে এবং এই কিতাব (কুরআন) এই জন্য অবতীর্ণ করা হয়েছে, যাতে তিনি (সাঃ) ঐ সম্প্রদায়কে সতর্ক ও ভীতি প্রদর্শন করেন, যাদের মাঝে তাঁর পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি। যার ফলে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এরা সত্য ধর্ম থেকে বেখবর ছিল।  আরবদের নিকট ইসমাঈল (আঃ)-এর পরে নবী (সাঃ)-এর পূর্ব পর্যন্ত সরাসরি কোন নবী আসেননি। এখানেও তাই আলোচনা করা হয়েছে।

অবশ্যই তাদের অধিকাংশের উপর (আল্লাহর) বাণী অবধারিত হয়েছে, ফলে তারা ঈমান আনবে না। ৩৬.৭ 

যেমন আবু জাহল, উতবা, শায়বা, ইত্যাদি। ‘বাণী অবধারিত হয়েছে’-এর উদ্দেশ্য হল, আল্লাহ তাআলার এই বাণী, ‘‘আমি নিশ্চয়ই মানব ও দানব উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করব।’’ (সূরা সাজদাহ ১৩ আয়াত) শয়তানকে তিরস্কার করার সময়ও আল্লাহ তাআলা বলেছিলেন, ‘‘তোমার দ্বারা ও ওদের মধ্যে তোমার সকল অনুসারীদের দ্বারা আমি অবশ্যই জাহান্নাম পূর্ণ করব।’’ (সূরা স্বাদ ৮৫ আয়াত) অর্থাৎ, তারা শয়তানের অনুসরণ করে নিজেদেরকে জাহান্নামের উপযুক্ত করে নিয়েছে। কারণ আল্লাহ তাআলা তো তাদেরকে ইচ্ছা, স্বাধীনতা ও এখতিয়ার দানে ধন্য করেছিলেন। কিন্তু তারা তা ভুল ব্যবহার করে নিজের এখতিয়ারেই জাহান্নামের জ্বালানি হয়ে গেছে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ঈমান থেকে বঞ্চিত করেননি। কারণ জোর করে হলে তো তারা শাস্তির উপযুক্তই হত না।

নিশ্চয় কিয়ামত আসবেই, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ লোক ঈমান আনে না।৪০:৫৯


কুরআন মতে অধিকাংশ মানুষই অস্বীকারকারী

আর অবশ্যই মানুষের জন্য এ কুরআনে আমি নানাভাবে বিভিন্ন উপমা বর্ণনা করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কুফরী না করে থাকেনি।১৭:৮৯

আর অবশ্যই আমি এ কুরআনে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে; কিন্তু তা কেবল তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি করে।১৭.৪১

এ কুরআনে আমি নানাভাবে বিভিন্ন উপমা বর্ণনা করেছি,  আল্লাহ্‌  কখনো ওয়াজ ও নসীহত রূপে, কখনো প্রমাণাদি পেশ করে, আশা দিয়ে ও ভয় দেখিয়ে এবং বহু দৃষ্টান্ত ও উপমা দিয়ে, ঐতিহাসিক ঘটনাবলী উল্লেখ করে বিভিন্নভাবে একই কথা বারবার বর্ণনা করেছেন ,  যাতে মানুষ বুঝতে ও উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু তারা কুফরী ও শিরকের অন্ধকারে এমনভাবে ডুবে আছে যে, তারা সত্যের নিকটবর্তী হওয়ার পরিবর্তে তা হতে আরো দূরে সরে গেছে। 


কুরআন মতে অধিকাংশ মানুষই মিথ্যাবাদী

‘আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দেব, কার নিকট শয়তানরা অবতীর্ণ হয়’? ২৬:২২১

তারা অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক চরম মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট। ২৬:২২২

তারা কান পেতে থাকে এবং তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী।২৬:২২৩

শয়তানরা কিছু শুনে নিয়ে নিজেদের চেলাদেরকে জানিয়ে দেয় এবং তাতে সামান্যতম সত্যের সাথে বিপুল পরিমাণ মিথ্যার মিশ্রণ ঘটায়। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, মিথ্যুক-প্রতারক গণকরা শয়তানের কাছ থেকে কিছু শুনে নেয় এবং তারপর তার সাথে নিজের পক্ষ থেকে অনেকটা মিথ্যা মিশিয়ে মানুষের কানে ফুঁকে দিতে থাকে। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর] একটি হাদীসে এর আলোচনা এসেছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেনঃ কোন কোন লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গণকদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। জবাবে তিনি বলেন, ওসব কিছুই নয়। তারা বলে, হে আল্লাহর রাসূল! কখনো কখনো তারা তো আবার ঠিক সত্য কথাই বলে দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বলেন, সত্যি কথাটা কখনো কখনো জিনেরা নিয়ে আসে এবং তাদের বন্ধুদের কানে ফাঁকে দেয় তারপর তারা তার সাথে শত মিথ্যার মিশ্রণ ঘটিয়ে একটি কাহিনী তৈরী করে। [বুখারী ৩২১০]

কুরআন মতে অধিকাংশ মানুষই মুশরিক 

‘তোমরা যমীনে ভ্রমণ কর। অতঃপর দেখ পূর্ববর্তীদের পরিণাম কিরূপ হয়েছিল’। তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক।৩০:৪২

কুরআন মতে অধিকাংশ মানুষই  বিপথগামী

নিশ্চয় এদের পূর্বে প্রাথমিক যুগের মানুষের বেশীরভাগই পথভ্রষ্ট হয়েছিল। ৩৭:৭১


কুরআন মতে অধিকাংশ মানুষই অবুঝ

আর তুমি যদি তাদেরকে প্রশ্ন কর, ‘কে আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা দ্বারা যমীনকে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করেন’? তবে তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ’। বল, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর’। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা বুঝে না।২৯:৬৩

বল, ‘আমার রব যার জন্য ইচ্ছা রিয্ক প্রশস্ত করেন অথবা সঙ্কুচিত করেন। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।’৩৪:৩৬

অতঃপর কোন বিপদাপদ মানুষকে স্পর্শ করলে সে আমাকে ডাকে। তারপর যখন আমি আমার পক্ষ থেকে নি‘আমত দিয়ে তাকে অনুগ্রহ করি তখন সে বলে, ‘জ্ঞানের কারণেই কেবল আমাকে তা দেয়া হয়েছে’। বরং এটা এক পরীক্ষা। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। ৩৯:৪৯

১. অধিকাংশ মানুষেরই এই অবস্থা যে, যখন তারা রোগ, অভাব-অনটন অথবা অন্য কোন সমস্যার শিকার হয়, তখন তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে এবং তার সামনে কাকুতি-মিনতি করে।

[2] অর্থাৎ, নিয়ামত লাভ করার সাথে সাথেই অবাধ্যতা ও ধৃষ্টতার পথ অবলম্বন করে নেয় এবং বলে যে, এতে আল্লাহর আবার অনুগ্রহ কি? এ তো আমার পারদর্শিতার ফল। অথবা যে জ্ঞান ও দক্ষতা আমার রয়েছে, তারই মাধ্যমে এসব নিয়ামত অর্জিত হয়েছে। কিংবা আমি জানতাম যে, দুনিয়াতে এই সমস্ত জিনিস আমি পাব। কেননা, আল্লাহর নিকট আমার সম্মান অনেক।

[3] অর্থাৎ, ব্যাপার তা নয়, যা তুমি মনে করছ অথবা বর্ণনা করছ। বরং এই নিয়ামতগুলো তোমার জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। এই দেখার জন্য যে, তুমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছ, না অকৃতজ্ঞ হচ্ছ।

[4] এই কথা যে, এটা আল্লাহর পক্ষ হতে অবকাশ ও পরীক্ষা।

অবশ্যই আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করা মানুষ সৃষ্টি করার চেয়ে বড় বিষয়; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না। ৪০:৫৭

আর আমি আসমানসমূহ, যমীন এবং এতদোভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তা খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।৪৪:৩৮

আমি এ দু’টোকে যথাযথভাবেই সৃষ্টি করেছি, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। ৪৪:৩৯

নিশ্চয় ফয়সালার দিনটি তাদের সকলের জন্যই নির্ধারিত সময়। ৪৪:৪০

সেদিন এক বন্ধু অপর বন্ধুর কোন কাজে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। ৪৪:৪১

যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরের খোঁজ-খবরও নিবে না। (সূরা মু’মিনূন ১০১) তিনি আরো বলেছেন, وَلاَ يُسْئَلُ حَمِيْمٌ حَمِيْمًا অর্থাৎ, সুহূদ সৃহূদের খবর নিবে না। (সূরা মাআরিজ ১০ আয়াত)

বল, ‘আল্লাহই তোমাদের জীবন দেন তারপর তোমাদের মৃত্যু ঘটান। তারপর তিনি তোমাদেরকে কিয়ামতের দিনে একত্র করবেন, যাতে কোন সন্দেহ নেই; কিন্তু অধিকাংশ লোকই জানে না।৪৫:২৬

নিশ্চয় যারা আল্লাহর রাসূলের নিকট নিজদের আওয়াজ অবনমিত করে, আল্লাহ তাদেরই অন্তরগুলোকে তাকওয়ার জন্য বাছাই করেছেন, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান।৪৯:৩

যাঁরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মান-মর্যাদার প্রতি খেয়াল করে নিজেদের কণ্ঠস্বর নীচু রাখতেন।

নিশ্চয় যারা তোমাকে হুজরাসমূহের পিছন থেকে ডাকাডাকি করে তাদের অধিকাংশই বুঝে না।৪৯:৪

এই আয়াত বনী তামীম গোত্রের কিছু বেদুঈন (অভদ্র) লোকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে; তারা একদা দুপুর বেলায়, নবী করীম (সাঃ)-এর বিশ্রামের সময়, তাঁর ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে অসভ্য ভঙ্গিতে ‘ওহে মুহাম্মাদ! ওহে মুহাম্মাদ!’ বলে ডাকাহাঁকা করতে লাগল; যাতে তিনি বেরিয়ে আসেন। (মুসনাদ আহমাদ ৩/৪৮৮, ৬/৩৯৪) মহান আল্লাহ বললেন, তাদের অধিকাংশই অবুঝ। অর্থাৎ, নবী করীম (সাঃ)-এর মান-মর্যাদা, আদব ও শ্রদ্ধার দাবীসমূহের খেয়াল না রাখা হল মূর্খতা।


কুরআন মতে অধিকাংশ মানুষই পাপাচারী

তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত,যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করবে। আর যদি আহলে কিতাব ঈমান আনত, তবে অবশ্যই তা তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের কতক ঈমানদার। তাদের অধিকাংশই ফাসিক।৩:১১০

আহলে কিতাবের গুণ হল ,كَانُوا لا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوهُ ‘‘তারা যে মন্দ কাজ করত, তা থেকে তারা একে অপরকে নিষেধ করত না।’’ (মায়েদাহঃ ৭৯) এখানে এই আয়াতে তাদের অধিকাংশ লোককে ফাসেক বলা হয়েছে। 

যারা ঈমান এনেছে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য নাযিল হয়েছে তার কারণে বিগলিত হওয়ার সময় হয়নি ? আর তারা যেন তাদের মত না হয়, যাদেরকে ইতঃপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল, তারপর তাদের উপর দিয়ে দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হল, অতঃপর তাদের অন্তরসমূহ কঠিন হয়ে গেল। আর তাদের অধিকাংশই ফাসিক। ৫৭:১৬

আর আমি তো নূহ ও ইবরাহীমকে রাসূলরূপে পাঠিয়েছিলাম এবং তাদের বংশধরদের মধ্যে নবুওয়াত ও কিতাব দিয়েছিলাম। তারপর তাদের মধ্যে কেউ কেউ সঠিক পথ অবলম্বনকারী ছিল, আর তাদের অধিকাংশই ছিল ফাসিক।  ৫৭:২৬


তারপর তাদের পিছনে আমি আমার রাসূলদেরকে অনুগামী করেছিলাম এবং মারইয়াম পুত্র ঈসাকেও অনুগামী করেছিলাম। আর তাকে ইনজীল কিতাব দিয়েছিলাম এবং যারা তার অনুসরণ করেছিল তাদের অন্তরসমূহে করুণা ও দয়ামায়া দিয়েছিলাম। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তারাই বৈরাগ্যবাদের প্রবর্তন করেছিল। এটা আমি তাদের ওপর লিপিবদ্ধ করে দেইনি। তারপর তাও তারা যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করেনি। আর তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমি তাদের প্রতিদান দিয়েছিলাম এবং তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল ফাসিক। ৫৭:২৭

আলোচনা ঃ  ঈসা আলাইহিস সালাম-এর পর বনী-ইসরাঈলের মধ্যে পাপাচার ব্যাপকাকারে ছড়িয়ে পড়ে বিশেষতঃ রাজন্যবৰ্গও শাসকশ্রেণী ইঞ্জীলের বিধানাবলীর প্রতি প্রকাশ্যে বিদ্রোহ শুরু করে দেয়। বনী-ইসরাঈলের মধ্যে কিছু সংখ্যক খাঁটি আলেম ও সৎ কর্মপরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন। তারা এই প্রবণতাকে রুখে দাড়ালে তাদেরকে হত্যা করা হয়। যে কয়েকজন প্ৰাণে বেঁচে গেলেন তারা দেখলেন যে, মোকাবেলার শক্তি তাদের নেই। কিন্তু এদের সাথে মিলে-মিশে থাকলে তাদের দ্বীন-ঈমান বরবাদ হয়ে যাবে। তাই তারা স্বতঃ প্রণোদিত হয়ে নিজেদের জন্যে জরুরি করে নিলেন যে, তারা এখন থেকে বৈধ আরাম-আয়েশও বিসর্জন দিবেন, বিবাহ করবেন না, খাওয়া-পরা এবং ভোগ্যবস্তু সংগ্ৰহ করার চিন্তা করবেন না, বসবাসের জন্য গৃহ নির্মাণে যত্নবান হবেন না, লোকালয় থেকে দূরে কোনো জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ে জীবন অতিবাহিত করবেন।

অথবা যাযাবরদের ন্যায় ভ্রমণ ও পর্যটনে জীবন কাটিয়ে দিবেন যাতে দ্বীনের বিধিবিধান স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশে পালন করা যায়। তারা আল্লাহর ভয়ে এই কর্ম পন্থা অবলম্বন করেছিলেন, তাই তারা رهبان তথা সন্ন্যাসী নামে অভিহিত হলো এবং তাদের উদ্ভাবিত মতবাদ رهبانية তথা সন্ন্যাসবাদ নামে খ্যাতি লাভ করে। 

আয়াতে আল্লাহ তাদের এ কাজের সমালোচনা করেছে; কারণ তারা নিজেরাই নিজেদের উপর ভোগ বিলাস বিসর্জন দেয়া অপরিহার্য করে নিয়েছিল-আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরয করা হয়নি। এভাবে তারা নিজেদেরকে শরীয়ত প্রবর্তকের ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছিল। যা স্পষ্টত: পথভ্রষ্টতা। 


মানুষের কাজ হচ্ছে,  কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করা এবং সেই অনুযায়ী ব্যাক্তি জীবন পরিচালনা করা । 


‎أَفَلا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا

তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা (গবেষণা) করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহের উপর তালাবদ্ধ রয়েছে। মুহাম্মাদ, ৪৭/২৪

‎أَفَلا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللَّهِ لَوَجَدُوا فِيهِ اخْتِلافًا كَثِيرًا

তবে কি তারা কুরআন সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা (গবেষণা) করে না? আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নিকট থেকে হতো, তবে অবশ্যই তারা তাতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত। আন-নিসা, ৪/৮২

‎كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الألْبَابِ

এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি তোমার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা (গবেষনা) করে আর অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন বুদ্ধিমান ব্যক্তিরাই উপদেশ গ্রহণ করবে। সোয়াদ, ৩৮/২৯

‎بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ

(তাদের প্রেরণ করেছি) স্পষ্ট প্রমাণাদি ও কিতাবসমূহ দিয়ে এবং আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি উপদেশ (কুরআন) যেন তুমি মানুষকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিতে পার, যা তাদের নিকট অবতীর্ণ করা হয়েছে আর হয়ত তারা চিন্তা-ভাবনা করবে। আন্‌-নাহ্‌ল, ১৬/৪৪

‎لَوْ أَنْزَلْنَا هَذَا الْقُرْآنَ عَلَى جَبَلٍ لَرَأَيْتَهُ خَاشِعًا مُتَصَدِّعًا مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ وَتِلْكَ الأمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ

যদি আমি এই কুরআনকে পাহাড়ের ওপর অবতীর্ণ করতাম তাহলে অবশ্যই তুমি তাকে দেখতে আল্লাহর ভয়ে বিনীত ও বিদীর্ণ হয়ে গেছে; এবং এইসব দৃষ্টান্ত আমি বর্ণনা করি মানুষের জন্য যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। আল-হাশর, ৫৯/২১

‎إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল লোকদের জন্য। আর-রাদ, ১৩/৩, ৩০/২১, ৩৯/৪২, ৪৫/১৩

‎إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল লোকদের জন্য। আন্-নাহল, ১৬/১১, ১৬/৬৯


Post a Comment

Previous Post Next Post