বুখারি শরিফের ৮৮০/ ৫৫২৪-৫৫২৮ নং হাদিস দ্বারা ছবি তুলা নিষেধ করেন, তাদের বুঝ মোটেই ঠিক নয়।পবিত্র কুরআনে ছবি তোলা হারাম মর্মে কোন আয়াত নেই।ছবি তোলা ফরজ মর্মে আলোচনার পুর্বে ছবির অর্থ জেনে নিই।


আধ্যাত্বিক বিদ্যায় ছবি বলতে আপন সন্তান, আপত্য, সন্তান - সন্ততি বলা হয়। ভারতিয় পরম্পরায় সন্তান রুপ এই প্রতিচ্ছবি কে প্রতিমা, মূর্তি, প্রতিমূর্তি, প্রতিকৃতি বলে। ঔরশ জাত পুনর্জন্ম কে রুপক সাহিত্য শিল্পে ছবি বলে। উৎস আধ্যাত্বিক লালন অভি,১ম খন্ড ৫৮০ পৃ.।
নবী রাসুলগণের যদি ছবি থাকে তাহলে মানুষের জন্য ছবি কখনোই হারাম হতে পারে না। আমাদেরকে জানতে হবে নবী রাসুলগণের ছবি ছিল কি না।

" তারা তাঁর জন্য তৈরি করতো যা কিছু সে চাইতো, উঁচু-উঁচু ইমারত,
ছবি,
বড় বড় পুকুর সদৃশ থালা এবং অনড় বৃহদাকার দেগসমুহ " সুরা সাবা ৩৪ঃ১৩ আয়াত।


৩৪ নং সুরা ছাবার ১৩ নং আয়াতে



বিভক্ত অত্যন্ত সুন্দর ও দীর্ঘ। সম্রাট আমাদের কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কে তা জানেন কি? আমরা উত্তর দিলাম না। তিনি বল্লেন এটা হজরত আদম আঃ এর ছবি
। তাঁর দেহে অনেক গুলি চুল ছিল। তারপর তিনি আরেকটি বাক্সের তালা খোললেন। ওর মধ্যে থেকে একটি কালো রেশমী কাপড় বের করলেন। তাতে একটি গৌর বর্নের মনুষের ছবি বানানো ছিল।

মানুষটির ছিল কুঞ্চিত কেশ, কালো চোখ, বড় মাথা এবং সুন্দর দাড়ি । সম্রাট বললেন এই ছবিটি হচ্ছে
হজরত নুহ আঃ এর ছবি। তার পর আর একটি বাক্সো হতে আর একটি ফটো বের করলেন, ওটার রং ছিল গৌর, চোখগুলো সুন্দর ছিল। কপাল ছিল চওড়া, চেহারা ছিল খাড়া, দাড়ি ছিল সাদা এবং মুখটি ছিল হাস্যময়। সম্রাট বললেন, জানো? এটি কার ছবি? এটা হল
হজরত ইব্রাহীম আঃ এর ছবি। তারপর তিনি আর একটি বাক্সো খুললেন। তাতে ছিল গৌরবর্নের একটি ছবি।
ওটা ছিল হজরত মুহাম্মাদ সাঃএর ফটো
।




তারপর সম্রাট বললেন, জানো এই ছবিটি কার? আমরা বললাম হ্যাঁ, এটি হচ্ছে হজরত মুহাম্মাদ সাঃ এর ছবি। তাঁর ছবিটি দেখে আমরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লাম। সম্রাট বললেন আল্লাহ জানেন ইনিই হচ্ছেন হজরত মুহাম্মাদ সাঃ। তার পর তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন আল্লাহর কসম, ইনিই কি হজরত মুহাম্মাদ সাঃ? আমরা বল্লাম জী। তার পর অনেক ক্ষন ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। এভাবে সম্রাট আমাদের কে পরীক্ষা করলেন। পরে হজরত মুসা আঃ + হজরত হারুন আঃ এর ছবি দেখালেন।
প্রিয় পাঠক, উল্লেখিত প্রসিদ্ধ তাফসির হতেও প্রমানিত হলো যে নবীদের ছবি ছিল, বিধায় ছবি তোলাতে কোন দোষ, শেরেক, বিদআত জড়িত নেই।

"তাদেরকে তাদের নবী বললেন, "তার বাদশাহীর নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট 'তাবুত' আসবে, যার মধ্যে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রশান্তি রয়েছে এবং কিছু অবশিষ্ট বস্তু, মুসা ও হারুনের বংশধরদের পরিত্যক্ত; সেটাকে ফেরেশতাগণ বহন করে আনবে। নিঃসন্দেহে এর মধ্যে মহান নিদর্শন রয়েছে তোমাদের জন্য যদি ঈমান রাখো।" (২ নং সূরা বাকারাহ, আয়াত-২৪৮ আয়াত)
এ আয়াতে ব্যবহৃত তাবুত সম্পর্কে তাফসীরে জালালাইনে বর্ণিত হয়েছেঃ=
বনি ইস্রাইলরা তাদের নবী হযরত শামূইল (আঃ)-এর কাছে রাজত্বের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার নিদর্শন চায়, তখন তিনি তাদেরকে বলেছিলেন, তার কর্তৃত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট আসবে তাবুত অর্থাৎ সিন্দুক। এতে নবীগণের ছবি সংরক্ষিত ছিল। হযরত আদম (আঃ)-এর নিকট আল্লাহ তা নাজিল করেছিলেন। পরে তা বনি-ইসরাইলের হাতে এসে পরে। অমালিকা সম্প্রদায় এদের উপর বিজয়ী হলে তারা তা ছিনিয়ে নেয়। ইস্রাইলীগণ এর উসিলায় শত্রুর উপর বিজয় প্রার্থনা করতো। তারা যুদ্ধের মাঠে তা নিজেদের সম্মুখে স্থাপন করতো এবং তা দিয়ে 'সাকীনা' বা 'চিত্ত প্রশান্তি' লাভ করতো।

শামশাদ কাঠের তৈরি একটা স্বর্ণ-খচিত সিন্দুক ছিল, যার দৈর্ঘ্য ৩ হাত এবং প্রস্থ দু'হাত ছিল। সেটাকে আল্লাহ হযরত আদম (আঃ)-এর উপর নাজিল করেছিলেন। এর মধ্যে সমস্ত নবী রাসুলগণের ছবি সংরক্ষিত ছিল। তাঁদের বাসস্থান ও বাসগৃহের ফটোও ছিল এবং শেষ ভাগে রাসুল (সাঃ)-এর পবিত্রতম বাসগৃহের ছবি লাল ইয়াকতের মধ্যে ছিল, যাতে রাসুল (সাঃ) নামাজরত অবস্থায় দণ্ডায়মান, আর রাসুল (সাঃ)-এর চতুষ্পার্শ্বে তাঁর সাহাবীগণও ছিলেন। হযরত আদম (আঃ) সেসব ছবি দেখেছেন। সিন্দুকখানা বংশ পরস্পরায় হযরত মুসা (আঃ) পর্যন্ত পৌঁছলো। তিনি এর মধ্যে তাওরাত রাখতেন এবং তাঁর বিশেষ বিশেষ সামগ্রীও রাখতেন। সুতরাং, এ তাবুতের মধ্যে তাওরাতের ফলকসমূহের টুকরাও ছিল। আর হযরত মুসা (আঃ)-এর লাঠি, তাঁর পোষাক-পরিচ্ছদ, তাঁর পবিত্র স্যান্ডেল যুগল এবং হারুন (আঃ)-এর পাগড়ি ও তাঁর লাঠি এবং সামান্য পরিমাণ মান্না যা বনি ইস্রাইলের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল।
আদম সৃষ্টির ইতিহাসে দেখা যায়, আল্লাহ কাদা মাটি দিয়ে ৩৮ঃ৭১ সর্বপ্রথম তাঁর সুরাতে বা আকারে ৮২ঃ৮ আদম আঃ এর বডি / ভাস্কর্য/ সুরুত / প্রতিকৃতি তৈরি করেন। যতক্ষন ঐ ভাস্কর্যের বা মূর্তির মধ্যে প্রান ফুৎকার করা হয়নি তখন সেটি ছিল ভাস্কর্য বা মূর্তি আকারে নির্জিব জড় পদার্থ। সেই দৃষ্টে মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মানের ইতিহাস অতিপ্রাচীন।
হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে হযরত মাওলানা আহমদ ছাইদ (রহঃ) প্রণীত মোহাম্মদ খালেদ অনুদিত "বিশ্বনবী (সাঃ)-এর তিনশত মো'জেযা" নামক কিতাবের ২৩৭ নম্বর পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ=

যারা বলেন ছবি তোলা হারাম তাদের বুঝ ঠিক নয়। হারাম বস্তু, বিষয়ের সংখ্যা অল্প, আর হালালের সংখ্যা বেশি। বিধায় হারাম বা নিষিদ্ধ বস্তু, বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে কুরআনে। আর হালালের সংখ্যা বেশি, বিধায় হালালের সংখ্যা অল্পই উল্লেখ রয়েছে। যেহেতু ছবি তোলা নিষেধ মর্মে কোন আয়াত কুরআনে উল্লেখ নেই, সেহেতু ছবি তোলা জায়েজ।

এই আন্দাজ অনুমানে চলা লোকেরাই ছবি হারাম বলে থাকে। কারন তাদের কুরআনিক এই সমস্ত আয়াতের জ্ঞান নেই, কিংবা জ্ঞান থাকলেও সঠিক বিধান প্রকাশ করেনা এবং সত্য গোপন করে। এই সমস্ত লোকদের জন্য বলা হয়েছে=

দ্বীনের ব্যাপারে সঠিক বিধান দিতে হবে এবং সত্যটি জানিয়ে দিতে হবে এবং সত্য গোপন করা যাবেনা।
এই ব্যাপারে বলা হয়েছে,
যারা দ্বীনের ব্যাপারে সঠিক বিধান দেয়না তারা জালিম, কাফির, ফাসিক সুরা মায়েদা ৫ঃ৪৪-৪৯।তারা সত্য গোপন করে, অথচ কুরআনে সত্য গোপন করতে নিষেধ করা হয়েছে ৩ঃ৭১/২ঃ৪২। বিধায় তারা সত্য গোপন করে কুরআন কে অস্বীকার করে। কারন সত্যটি জানিয়ে দেয়া ও পৌঁছিয়ে দেয়া দায়িত্বঃ১৬ঃ৮২/৩ঃ২০/৫ঃ৯২/৫ঃ৯৯/ ১৩ঃ৪০/২৪ঃ৫৪/২৯ঃ১৮/৩৬ঃ১৭/৪২ঃ৪৮/৬৪ঃ১২/৭২ঃ২৮/ ৮০ঃ১-১১ আয়াত। জেনে শুনে যারা সত্যের উপর মিথ্যার রং লাগায়, সত্যকে মিথ্যা বানায় তাদের জন্য চরম শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে ৬ঃ১১।/ ২৩ঃ৭১/৩৯ঃ৩৩।

বিধায় ছবি তোলার সুস্পষ্ট দলিল থাকার পরেও যারা সত্যটি জানিয়ে দেয়না না, সত্যের উপর মিথ্যার রং লাগিয়ে মিথ্যাচার করে ফতোয়াজি করে তারা শেষ বিচারের দিনে জবাব দিহিতার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকুন, নয়তো প্রভুর দরবারে মিথ্যাচারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।


মুয়াবিয়া আলী রাঃ কে হত্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ক্ষমতায় এসে তার দাদা মূর্তি পূজারী উমাইয়ার নামে মুসলিম খিলাফত রাজতন্ত্র কায়েম করে। তা আজও উমাইয়া খিলাফত নামে পরিচিত। ধুরন্ধর মুয়াবিয়ার ২০ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে তার অনুগত লোকদের দিয়ে নিজের প্রশংসার উপর মহানবীর নামে বহু মিথ্যা হাদিস তৈরি করে নেয় ।
চতুর মুয়াবিয়ার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো নিজের পাপকর্ম ঢেকে রাখা। কারণ সে জানতো ইতিহাস কখনো ঢেকে রাখা যাবে না। তাই সে জঘন্যতম কালো ইতিহাস মুছে ফেলার জন্য, স্বর্ণ মুদ্রার বিনিময়ে জাল হাদিস ও মিথ্যা ইতিহাস রচনা করে। যাতে তার অন্ধ অনুসারীরা এইসব জাল হাদিস ও মিথ্যা ইতিহাস দিয়ে সাধারণ মানুষকে তার পক্ষে আনুগত্য স্বীকার করাতে সক্ষম হয়। যুগের কালক্রমে আজও সমাজে সেটাই হয়ে আসছে।তার আর একটি উদ্দেশ্য ছিল খুনি মদ্যপ লম্পট পুত্র ইয়াজিদ কে উত্তর সুরি করে মুয়াবিয়া পরবর্তি সময়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসানো।পরবর্তিতে সে সফল হয়।
ইসলামে ছবি তোলা হারাম মর্মে হাদিস গুলি রচনার কুটকৌশল গুলির হেতু হিসেবে জানা যায়, নবী সাঃ পরবর্তি ইয়াজিদ কারবালার প্রান্তরে নবী বংশ কে ধ্বংস করে খুনি ইয়াজিদ ক্ষমতার ভিত্তি মজবুত করার লক্ষ্যে তার পোষা বেতন খোর মোল্লাহ আলেম দ্বারা মিথ্যা হাদিসের মহাস্তুপ রচনা করে নেয়।কারন তারা জানতো তিন খলিফাকে হত্যা, আলী আঃ এর মাজায় রশি লাগানো, হজরত মা ফাতিমা রাঃ এর বাসায় হামলা, তাঁর পেটে লাথি মেরে গর্ভপাত করা, ইমাম হাসান আঃ কে বিষপানে হত্যা, ইমাম হোসাইন আঃ কে শিরোচ্ছেদ সহ কারবালার প্রান্তরে নবী বংশ কে নৃশংশ ভাবে হত্যা, অবৈধ খিলাফত প্রতিষ্ঠা নিয়ে ধুম্রজালের প্রকৃত নোংরা চিত্র গুলি যদি কোন চিত্র শিল্পি রংতুলিতে ধারন করে জনগনের মাঝে প্রচার করতো তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দ্বারা তাদের খল চরিত্রের এই নোংরা ছবি গুলির উপর ফুলের মালা শোভা পেতোনা শোভা পেতো ঝাড়ু - ঝাঁটা, জুঁতা দিয়ে বানানো অপমানের মালা।
সেই কারনে তারা ছবি তোলা নিষেধ মর্মে হাদিস বানিয়ে নেয়। যারা এই হাদিস মানতে চাইতো না তাদের উপর নেমে আসতো অমানবিক নির্যাতন, ভয়- ভিতি, খুন, গুম, ধর্ষন,জেল - জরিমানা, লুটতরাজ করানো হতো। এমনি ভাবে তাদের বানানো বিধান মানার জন্য বাধ্যকরা হতো। তাদের অশরীরি প্রেতাত্না গুলি আজও হালাল ছবির বিরুদ্ধে তাদের বানানো হাদিস গুলি তোতাপাখির মতো বোল আউড়িয়ে ফতোয়াবাজি করে মুখ দিয়ে ফেনা ফেলায়।
কারবালায় নবী বংশ ধ্বংশ করে দুই রাজবংশ তাদের কুকির্তি ঢাঁকার জন্য তাদের পোষা আলেম দ্বারা বিভিন্ন ফতোয়া মহানবীর নামে আমদানি করিয়ে নেয় এবং মওলা হজরত আলী আঃ এবং নবী বংশের বিরুদ্ধে তাদের পোষা ইমাম কর্তৃক মসজিদে জুম্মর ফরজ সালাতের পুর্বে খুৎবার সময় অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করিয়ে নিত। ফলে নবী বংশের অনুসারিরা গালি শুনতে চাইতোনা বলে জুম্মার ২ রাকাত ফরজ সালাত আদায় না করেই ক্ষোভের তাড়নায় মসজিদ ত্যাগ করতো। এই কারনে মুসল্লিদের উপস্থিতি মসজিদে কম হচ্ছিল। তখন তারা বেকায়দায় পড়ে। ফলে জুস্মার ২ রাকাত ফরজ সালাতের পরে খুৎবা চালু করে, যেন মুসল্লি চলে না যায়। যে ধারা বর্তমানে কুরআনিদের মধ্যে এখনো চালু রয়েছে।
সেই অবোধী ধুরন্ধর রাজবংশের ভেলকিবাজ, চালাকি, চাতুরতা বুঝতে না পেরে তাদের অনুসারি আলেম, মোল্লাহ, মুন্সিরা তোতা পাখীর ন্যায় বোল আউড়িয়ে চলেছে ইসলামে ছবি তোলা বিলকুল হারাম। উল্লেখ্য এরই অংশ হিসেবে ইসলামের অনেক তরতাজা ঐতিহ্যকে বুল্ডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। জান্নাতুল বাকি, জান্নাতুল মাওয়ায় মা ফাতিমা আঃ, খাদিজা আঃ সহ বহু সাহাবীর তরতাজা মাজার / রওজা গুলি গুঁড়িয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ন করে দেয় । এর উপরও হাদিস রচনা করে নেয় যে, উঁচু কবর গুলি গুড়িয়ে দিতে হবে। যদি কেউ সেই চালাকীর কথা তুলে ধরে তখন তাকে কাফের, নাস্তিক, জালেম, মুর্দাদ লকব বহন করতে হয়। ( উৎসঃ সুফিবাদ আত্নপরিচয়ের একমাত্র পথ - প্রথম খন্ড ১৬০ পৃষ্ঠা)

বিধায় যেহেতু রাষ্ট্রের আইন মানা ফরজ সামাজিক শৃংখলা রক্ষার সার্থে, যেহেতু রাষ্ট্রযন্ত্র বা সরকার বাহাদুর= সন্ত্রাসী সনাক্তকরন , ভুয়া ভোটার চিহ্নিত করনের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্রে (NID CARD এ) ছবি যুক্ত করা বাধ্যতামুলক করেছেন , ভুয়া প্রবাসি সনাক্তকরন, চাকুরীর আবেদন পত্রে ,হজে গমনের জন্য, অনুপ্রবেশকারি ঠেকাতে, ভুয়া পরীক্ষার্থী সনাক্তকরতে , ভিসা করতে, ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য , বিমা, এন.জি.ও. এর একাউন্ট খোলার জন্য, জমির মালিক নির্ধারন, জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি, বিবাহ রেজিস্ট্রি সহ বিভিন্ন গুরুত্ব পুর্ন প্রয়োজনে ছবি তোলা, ছবির ব্যবহার আবশ্যক করেছেন, সেহেতু ছবি তুলা ফরজ, কুরআনিক বুঝ। এ ক্ষেত্রে ১২ শ বছর আগের বুখারীদের মনগড়া তৈরি বয়ান অযথার্থ। নিস্প্রয়োজন।মক্কার শয়তানের পিলার তিনটি, হাজরে আসোয়াদ, মাকামে ইব্রাহীম ছবিরই প্রতিক যা মুলক কে তথা মুল শয়তান, মুল আসোয়াদ, মুল মাকাম কে চেনার সহায়ক,চেনার নিদর্শন । সুতরাং ছবিও মুল ব্যাক্তিকে সনাক্তকরনের জন্য আবশ্যক। বিধায় ছবি তোলা, ছবির ব্যবহার জায়েজ, আবশ্যক, ফরজ।
প্রতিটি মানুষ আল্লাহর নিজ ২ হাতে ৩৮ঃ৭৫, নিজ রুহ ফুৎকারে ৩৮ঃ৭২ এবং নিজ সুরাতে তৈরি ৮২ঃ৮। সেই দৃষ্টে প্রতিটি মানুষ আল্লাহর প্রতিচ্ছবি।কুরআনের ২২ঃ৩২ /৫ঃ৩ আয়াত দুটিতে শায়ারাল্লাহ বা আল্লাহর নিদর্শন সমুহকে সম্মান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আল্লাহর সেই শায়ার বা নিদর্শন হতে পারে কুরআন, কাবা, মসজিদ, আল্লাহওয়ালা কোন মানুষ, মানুষের ছবি, হতে পারে কোন নবী - রাসুলের রওজা, ওলির মাজার,কোন প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী,প্রাকৃতিক নিদর্শনাদি । কারণ যে দৃশ্য, নিদর্শন গুলি দেখলে আল্লাহর কথা স্মরন হয় তাই শায়ারাল্লাহ । আর নবী - রাসুল -ওলি - আল্লাহওয়ালা কোন মানুষর ছবি , কাবার, হাজরে আসোয়াদ, মাকামে ইব্রাহীমের ছবি দেখলে শায়ার আল্লাহ বা আল্লাহর নিদর্শনের কথা মনে পড়ে, শ্রদ্ধাবোধ প্রগাঢ় হয়।বিধায় যেহেতু উপরের আলোচনা হতে ৩৪ঃ১৩ আয়াত মতে সরাসরি এবং ৭ঃ১৫৭/২ঃ২৪৮ এর বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ মোতাবেক নবী- রাসুল, ফেরেস্তাদের ছবি তোলার রেওয়াজ ছিল প্রমানিত হল সেহেতু বর্তমানে ছবি তোলাতে দোষ নেই এবং ৪ঃ৫৯ এর উলিল আমরের বিধান তথা রাষ্ট্রীয় বিধান মতেও ছবি তোলা বাধ্যতামুলক।
অবশ্য বর্তমানে ছবি বিরোধীদের কথা অত্যন্ত শিথিল ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। কারন তাদের স্ত্রী, সন্তান সন্ততি, নাতী-পুতিরা এমনকি খোদ ফতোয়াবাজগনদের মধ্যেও অনেকে বিভিন্ন পোজে ছবি, সেল্পি তুলা শুরু করেছে। অষথাই কিছু বেআক্কল খুনি ইয়াজিদের উচ্ছিষ্ট কিচ্ছা - কাহিনি মানুষ কে শুনানোর ব্যর্থ প্রয়াস চালািয়ে যাচ্ছে।


উল্লেখ্য কেউ কেউ আবার বোকার মত বলেন তখন তো ক্যামেরা ছিল না তাহলে ছবি কিভাবে তুলা সম্ভব ছিল? প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মিশরীয়রা যদি বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানের জন্যও আশ্চর্যজনক পিরামিড ও মমি তৈরি করতে পারে তাহলে একজন মানুষের ছবি অঙ্কন করা কি কঠিন কিছু ছিল ? কথিত আছে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসা ছবিটি তারই একজন বন্ধুর স্ত্রীর। ক্যামেরা ছাড়া বন্ধুর স্ত্রীর ছবি যদি লিওনার্দো দা ভিঞ্চি আঁকতে পারেন। তাহলে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মত কিংবা তার চেয়েও বেশি দক্ষ সেই যুগগুলোতে থাকা কি অসম্ভব ছিল ?বিধায় যান্ত্রিক পদ্ধতি ক্যমেরা ছাড়াও চিত্রশিল্পীরা রং তুলিতে , তৈলচিত্র শিল্পীরা কাগজ, চামড়া, কাপড়, পাতা, ইত্যাদিতে , খোদাই শিল্পীরা পাথর, কাষ্টফলক, ব্রোঞ্জ সহ বিভিন্ন কিছুতে ছবি, প্রতিচ্ছবি ধারন করেছেন নিশ্চিত।

এই অধিকাংশ মানুষের মত অনুসরন কারিদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেছেন , তোমরা অধিকাংশ লোকের মত অনুসরন করোনা, তারা আপনাকে আল্লাহর পথ হতে পথচ্যুত করে ফেলবে,কারন তারা তো নিছক আন্দাজ - অনুমান ভিত্তিক চলে এবং আন্দাজ- অনুমানই করে ৬ঃ১১৬। কেননা সত্য ও ন্যয়ের দিক হতে আল্লাহর বিধানই পরিপুর্ন ৬ঃ১১৫। তাছাড়া বেশির ভাগ মানুষ ও জীন কে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে ৭ঃ১৭৯ সহ ৫০-৬০ আয়াত প্রায় একই কথা বলে।

Tags:
ধর্ম চিন্তা