মহান আল্লাহ, পৃথিবীতে যখনই কোন নবী-রসূল প্রেরণ করেছেন, পূর্ব থেকেই তিনি তার নাম পরিচয় আগের কিতাবে লিখিতভাবে প্রকাশ করে দিয়েছেন । যেমন, মহান আল্লাহ প্রকাশ করেছিলেন ঈসা (আঃ) ও মোহাম্মদ (সঃ)-এর আগমনের আগাম সংবাদ, তাদের পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাত ও ইঞ্জিলে । মহান আল্লাহ বলেন,
اَلَّذِیۡنَ یَتَّبِعُوۡنَ الرَّسُوۡلَ النَّبِیَّ الۡاُمِّیَّ الَّذِیۡ یَجِدُوۡنَہٗ مَکۡتُوۡبًا عِنۡدَہُمۡ فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ ﴿۱۵۷﴾
"যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উম্মীনবীকে । যার উল্লেখ তারা পেয়েছিল লিখিত অবস্থায় । তাদের কাছে অবস্থিত তাওরাত ও ইঞ্জিলে ।" (আরাফ, ৭/১৫৭)
অথচ বর্তমান পৃথিবীর এক বিরাট অংশের মানুষ আজ বিশ্বাস করে নিয়েছে যে, আজকের শেষ জামানায় মহান আল্লাহ পথভ্রষ্ট জাতিকে পথ দেখাতে ইমাম মেহেদী আর ঈসা (আঃ)-এর মতন মহান মানবদের আবার আগমন ঘটাবেন । এমনকি নবী ঈসা (আঃ) আসমান থেকে সশরীরে নেমে আসবেন । পৃথিবীতে আবার এসে দাজ্জাল নামক শয়তান কে হত্যা করে, সারা পৃথিবীতে আবার বিজয়ের ঝান্ডা উড়াবেন । তাদের আগমনের সময়কাল, এমনকি অবতরণের ধরন ও স্থান সম্পর্কেও বহু কল্পকাহিনীর বিপুল ভান্ডার রয়েছে, এক এক জাতির কাছে এক এক রকমের - তাদেরই বা তাদের পূর্বপুরুষদের রচিত কিতাবে । ঐ সমস্ত কিতাব আর তাদের রচয়িতাদের কোনোরূপ প্রমাণ, মহান আল্লাহ তাঁর অবতীর্ণ কিতাবে উল্লেখ করেন নাই । ইমাম মাহাদী, দাজ্জাল এবং তাদের নাম ও কল্পকাহিনীর কোনরূপ সত্যতা মহান আল্লাহ তাঁর সত্য কিতাব আল-কোরআনে উল্লেখ করেন নাই । এমনকি নবী ঈসা (আঃ)-এর পুনঃ আগমন আর তার আসমান থেকে অবতরণের কোনরূপ প্রমাণ, পবিত্র কোরআনের কোথাও উল্লেখ নাই । বরং কোরআনের অনুবাদে ভুল-ভাল দেখিয়ে আর অনধিকার ব্যাখ্যা তাফসীর রচনা করে, শিরকের দণ্ডে দণ্ডিত হয়ে, লাহওয়াল হাদিসের পাহাড় গড়ে, জাতি আজ সবকিছুর মীমাংসায়, মিথ্যা আশায়, আকাশের পানে চেয়ে রয়েছে । এক্ষেত্রে মহান আল্লাহ বলেন,
فَاِنۡ زَلَلۡتُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡکُمُ الۡبَیِّنٰتُ فَاعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ ﴿۲۰۹﴾ ہَلۡ یَنۡظُرُوۡنَ اِلَّاۤ اَنۡ یَّاۡتِیَہُمُ اللّٰہُ فِیۡ ظُلَلٍ مِّنَ الۡغَمَامِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ وَ قُضِیَ الۡاَمۡرُ ؕ وَ اِلَی اللّٰہِ تُرۡجَعُ الۡاُمُوۡرُ ﴿۲۱۰﴾
"সুস্পষ্ট নিদর্শন আল-কোরআন তোমাদের নিকট এসে যাবার পরেও, যদি তোমাদের পদচ্যুতি হয়, তবে জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী বিজ্ঞ বিচারক । তাহারা কি কেবল এই আশায় আকাশের পানে চেয়ে রয়েছে যে, আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ মেঘের আড়াল থেকে এসে যাবে আর সবকিছুরই মীমাংসা হয়ে যাবে ? সাবধান তোমাদের সকলকে কিন্তু আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে ।" (বাকারা, ২/২০৯,২১০)
এভাবেই শুধু এখনই নয়, অতীত যুগেও এরূপ মিথ্যা বানোয়াট চাকচিক্যময় লাহওয়াল হাদিসের পিছে পড়ে মানুষ আল্লাহর কিতাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল । আজও ঠিক তারই পুনরাবৃত্তি চলছে । আবার কেহ কেহ কোরআন বিরোধী অবস্থান নিয়ে, নিজেরাই ইমাম মাহাদী সেজে, কখনোবা নিজেই ঈসা দাবি করে, দাজ্জালের দোহাই দিয়ে, কোরআনের বিষয়ে অজ্ঞ জাতিকে ভুল-ভাল বুঝিয়ে, লোকদেরকে নিজেদের দাসে পরিণত করে অর্থ আত্মসাতের পাহাড় গড়ছে ।
আল্লাহ বলেন,
اٰمَنَ الرَّسُوۡلُ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡہِ مِنۡ رَّبِّہٖ وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ؕ کُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰہِ وَ مَلٰٓئِکَتِہٖ وَ کُتُبِہٖ وَ رُسُلِہٖ ۟ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡ رُّسُلِہٖ ۟ وَ قَالُوۡا سَمِعۡنَا وَ اَطَعۡنَا ٭۫ غُفۡرَانَکَ رَبَّنَا وَ اِلَیۡکَ الۡمَصِیۡرُ ﴿۲۸۵﴾
"ঈমান এনেছে রসূল এবং মুমিনগণ, তারা বলে, আমাদের রব থেকে, আমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে আল্লাহর কিতাব, তা আমরা শুনেছি আর তা মেনে নিয়েছি । আর আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ, ফেরেশতা ও রসূলগণে । রসূলদের মধ্যে আমরা কোনো পার্থক্য করি না । হে আমাদের রব আমাদেরকে ক্ষমা করো । নিশ্চয় তোমার কাছেই আমাদের প্রত্যাবর্তন ।" (বাকারা, ২/২৮৫)
আল্লাহ বলেন,
وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا لِیُطَاعَ بِاِذۡنِ اللّٰہِ ؕ ﴿۶۴﴾
"আমি তো রসূল প্রেরণ করেছি এই জন্য যে, আল্লাহর বিধান অনুসারে তার অনুসরণ করা হবে ।" (নিসা, ৪/৬৪)
আল্লাহ বলেন,
مَا کَانَ لِبَشَرٍ اَنۡ یُّؤۡتِیَہُ اللّٰہُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحُکۡمَ وَ النُّبُوَّۃَ ثُمَّ یَقُوۡلَ لِلنَّاسِ کُوۡنُوۡا عِبَادًا لِّیۡ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ وَ لٰکِنۡ کُوۡنُوۡا رَبّٰنِیّٖنَ بِمَا کُنۡتُمۡ تُعَلِّمُوۡنَ الۡکِتٰبَ وَ بِمَا کُنۡتُمۡ تَدۡرُسُوۡنَ ﴿ۙ۷۹﴾
"কোনো মানুষের জন্য এমনটি হওয়া কখনই চলবে না, তা এই যে- আমি কাউকে কিতাব, আমার হুকুম, আমার পক্ষ থেকে নবুওতী দান করবো অথচ সে বলবে যে, তোমরা আমার দাস হয়ে যাও ! বরং সে বলবে যে, তোমরা আল্লাহর দাস হয়ে যাও । যেখানে তোমরা আল্লাহর কিতাব কি তা জানো এবং তা অধ্যায়নও করো ।" (ইমরান, ৩/৭৯)
অথচ আজ নেতাগণ তাদের অনুসারীদেরকে নিজেদের দাসে পরিণত করেছে । এবং অনুসারীরাও তাদের নেতাদেরকে রব হিসাবে গ্রহণ করে এই বলে মেনে নিয়েছে যে, আমরা আমাদের নেতাদের কথা শুনলাম আর তা মেনে নিলাম । আহ ! পথভ্রষ্টতা হিসাবে তা কত ভয়ংকর । সুস্পষ্ট কোরআন থাকার পরেও মানুষ কেন বুঝতে চায় না ???
ঈসা (আঃ) বিশেষ বৈশিষ্ট্যের একজন মর্যাদাসম্পন্ন নবী ছিলেন । ঈসা (আঃ)-এর পরেই এসেছেন মোহাম্মঃ)(সঃ) । অতঃপর আল্লাহ ঘোষণা করে দিলেন, আল্লাহর কিতাব আল-কোরআন সত্য ও ন্যায়ে একেবারেই পূর্ণ । আর কোরআনের সংরক্ষণকারী স্বয়ং আল্লাহ নিজেই । অতএব কোরআন অপরিবর্তনীয়, কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে মানব জাতির প্রয়োজন মেটাতে কোরআন সংরক্ষিত থাকবে । তাই পৃথিবীতে আর কোন নবী-রাসূলের আগমনের প্রয়োজন নাই । তাই আল্লাহ ঘোষণা করে বলেন,
مَا کَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنۡ رِّجَالِکُمۡ وَ لٰکِنۡ رَّسُوۡلَ اللّٰہِ وَ خَاتَمَ النَّبِیّٖنَ ؕ وَ کَانَ اللّٰہُ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمًا ﴿۴۰﴾
"মোহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নহেন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও নবী হিসাবে তিনিই শেষ । নিশ্চয় আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্ব জ্ঞানী ।" (আহযাব, ৩৩/৪০)
নবী আগমনের পরিসমাপ্তি হওয়ায় ঈসা (আঃ)-এর পৃথিবীতে আবার আসমান থেকে নেমে আসার ব্যর্থ প্রচেষ্টা কারীরা, তারা "খাতামুন্নাবীঈন" কথাটির অর্থ "শেষ নবী"- এটাকে মেনে না নিয়ে, অনেকেই তার অর্থ ঘোরানোর চেষ্টা করেছে । আসলে তাদের এমন চেষ্টা কখনোই সফল হবে না । আবার অনেকে কথা ঘুরিয়ে ঈসা (আঃ)-এর নবুওতী কর্তন করে তারা ঈসা (আঃ)-কে শেষ নবী মুহাম্মদ (সঃ)-এর উম্মত বলে চালানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছে । ব্যর্থ প্রচেষ্টার সূত্র ধরেই তারা শিরকের কিতাব লাহওয়াল হাদিসকে প্রতিষ্ঠা করতে, কোরআনের অর্থের বিকৃতি ঘটিয়ে অজ্ঞতাবশত তারা কোরআনকে দলীল হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করে ভুলভাল অর্থ করে বলছে যে,
وَ اِنَّہٗ لَعِلۡمٌ لِّلسَّاعَۃِ فَلَا تَمۡتَرُنَّ بِہَا وَ اتَّبِعُوۡنِ ؕ ہٰذَا صِرَاطٌ مُّسۡتَقِیۡمٌ ﴿۶۱﴾
"ঈসা তো কিয়ামতের নিশ্চিত নিদর্শন । সুতরাং তোমরা কিয়ামতে সন্দেহ করিও না এবং আমাকে অনুসরণ করো । ইহাই সরল পথ ।" (যখরূফ, ৪৩/৬১)
আসলে উপরোক্ত অনুবাদটি ভুল । ভুল-ভাল অনুবাদের উপর দাঁড়িয়ে শিরকে নিমজ্জিত জাতি ধরে নিল যে, কিয়ামতের পূর্বে ঈসা (আঃ) কিয়ামতের নিদর্শন হিসাবে আবার আসবেন । তিনি এসেই এই পথভ্রষ্ট জাতিকে আবার সৎ পথে ফিরিয়ে আনবেন । আর বাপ-দাদার অনুসারী এই অজ্ঞ জাতি, শিরকের কিতাবের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এই ভুল অর্থকেই মাথায় ধরে, কিয়ামতের নিদর্শন হিসাবে ঈসা (আঃ) এর আগমনের দিকে চেয়ে রইল । আবার কেউবা মিথ্যা ঈসা সেজে জাতিকে ভুল পথে আগায়ে দিয়ে, নিজেরা ধর্ম বাণিজ্য গড়ে তুলল । হে আমার জাতি, অথচ উক্ত আয়াতের যথার্থ অর্থ হলো এই যে, আল্লাহ বলেন,
وَ اِنَّہٗ لَعِلۡمٌ لِّلسَّاعَۃِ فَلَا تَمۡتَرُنَّ بِہَا وَ اتَّبِعُوۡنِ ؕ ہٰذَا صِرَاطٌ مُّسۡتَقِیۡمٌ ﴿۶۱﴾
"নিশ্চয় ঈসা তো ছিল সেই যুগের (বা সে সময়ের) নিশ্চিত নিদর্শন । অতএব তোমরা উহাতে সন্দেহ করিও না । আর আমাকেই অনুসরণ করো । ইহাই সরলপথ ।" (যখরূফ, ৪৩/৬১)
আশ্চর্য বিষয় এই যে, কিয়ামত কথাটি আরবি । অথচ এ ক্ষেত্রে কিয়ামত কথাটি আরবিতে নাই । এখানে আরবিতে রয়েছে ছাআত (سَّاعَۃِ), যাহার অর্থ হলো- সময়, যুগ, ঘন্টা ইত্যাদি । এখানে সময় বা ছাআত (سَّاعَۃِ) শব্দটি যেকোন ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হতে পারে । যদি ভাষার ব্যবহারে কিয়ামতের সময় বোঝাতে হয়, সেখানে কিয়ামত হতে পারে । যদি অতীত যুগের সময় বোঝাতে হয়, সেখানে অতীত যুগ হতে পারে । অর্থাৎ বিষয়টি অনেকটা ইংরেজিতে প্রোনাউন এর মত । যেমন- রহিম ভালো ছেলে, সে বাড়ি যাচ্ছে । এখানে "সে" অর্থ ভালো ছেলে রহিম । আবার আনোয়ার খারাপ ছেলে, সে চুরি করছে । এখানে "সে" অর্থ খারাপ ছেলে আনোয়ার । সে কথাটি সর্ব ক্ষেত্রে এক হবে না । তদ্রূপ ছাআত() অর্থ - যুগ, সময়, ঘড়ি, ঘন্টা ইত্যাদি । এখানে যখরূফ- এর ৬১ নম্বর আয়াতে যে ছাআত (سَّاعَۃِ) বোঝানো হয়েছে, তা কখনোই কিয়ামতের সময় হবে না । বরং তা হবে অতীত সেই ঈসা (আঃ)-এর জন্মের সময়কার সেই যুগ । সেই সময়ের জন্য তিনি ছিলেন নিশ্চিত নিদর্শন । কারণ পিতা ছাড়াই ছিল তার জন্ম । তিনি কোলের শিশু হওয়া সত্ত্বেও স্পষ্ট কথা বলতেন । তাই সে সময়ে ঈসা (আঃ) এবং তাঁর মা উভয়ই ছিলেন সেই যুগ বা সেই সময়ের নিশ্চিত নিদর্শন । সেখানে মুশরিকরা সত্য লুকিয়ে, অজ্ঞতাবশত বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ মূলক রচনার জন্ম দিয়েছিল । তাই এই আয়াতে সত্য প্রকাশ করে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দা, ঈসা (আঃ) সম্পর্কে বিভিন্ন সন্দেহের অবসান ঘটাতেই বলেছেন,
وَ اِنَّہٗ لَعِلۡمٌ لِّلسَّاعَۃِ فَلَا تَمۡتَرُنَّ بِہَا وَ اتَّبِعُوۡنِ ؕ ہٰذَا صِرَاطٌ مُّسۡتَقِیۡمٌ ﴿۶۱﴾
"নিশ্চয় ঈসা তো ছিল সেই যুগের (বা সে সময়ের) নিশ্চিত নিদর্শন । অতএব তোমরা উহাতে সন্দেহ করিও না । আর আমাকেই অনুসরণ করো । ইহাই সরলপথ ।" (যখরূফ, ৪৩/৬১)
অথচ শুধুমাত্র একটু পরিবর্তন করে বানোয়াটি কিয়ামত কথাটি গ্রহণ করেই, শিরককারীরা সন্তুষ্ট হয়ে রইল । আর জায়েজ করে নিল, তাদের লাহওয়াল হাদীসের চাকচিক্যময়-চমকপ্রদ রচনার মিথ্যা প্রতিযোগিতা । অথচ সুস্পষ্ট ভাবে মহান আল্লাহ ঘোষণা করলেন,
اِنۡ ہُوَ اِلَّا عَبۡدٌ اَنۡعَمۡنَا عَلَیۡہِ وَ جَعَلۡنٰہُ مَثَلًا لِّبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ ﴿ؕ۵۹﴾
"সে তো ছিলো আমারই এক দাস, যাকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং করেছিলাম বণী ইস্রাঈলের জন্য নিদর্শনস্বরূপ ।" (যখরূফ, ৪৩/৫৯)
আল্লাহ বলেন,
وَ الَّتِیۡۤ اَحۡصَنَتۡ فَرۡجَہَا فَنَفَخۡنَا فِیۡہَا مِنۡ رُّوۡحِنَا وَ جَعَلۡنٰہَا وَ ابۡنَہَاۤ اٰیَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۹۱﴾
"স্মরণ করো সেই নারী মরিয়মকে, যে নিজ সতীত্বকে রক্ষা করেছিল, অতঃপর তাহার মধ্যে আমি আমার রুহ ফুকিয়ে দিয়েছিলাম এবং তাহাকে ও তার পুত্র ঈসা-কে করেছিলাম বিশ্ববাসীর জন্য এক নিদর্শন ।" (আম্বিয়া, ২১/৯১)
আল্লাহ বলেন,
قَالَتۡ اَنّٰی یَکُوۡنُ لِیۡ غُلٰمٌ وَّ لَمۡ یَمۡسَسۡنِیۡ بَشَرٌ وَّ لَمۡ اَکُ بَغِیًّا ﴿۲۰﴾ قَالَ کَذٰلِکِ ۚ قَالَ رَبُّکِ ہُوَ عَلَیَّ ہَیِّنٌ ۚ وَ لِنَجۡعَلَہٗۤ اٰیَۃً لِّلنَّاسِ وَ رَحۡمَۃً مِّنَّا ۚ وَ کَانَ اَمۡرًا مَّقۡضِیًّا ﴿۲۱﴾
"মারিয়াম বলিল, কেমন করিয়া আমার পুত্র হইবে ? যেখানে কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শ করে নাই আর আমি ব্যভিচারিণীও নই । তিনি বলিলেন, এরূপই হইবে । আল্লাহ বলেন, এরূপ করা আমার জন্য খুবই সহজ । আর আমি উহাকে এই জন্য সৃষ্টি করিব, যেন মানুষের জন্য এক নিদর্শন ও আমার থেকে এক অনুগ্রহ । ইহা তো ছিল এক অবধারিত বিষয় ।" (মারিয়াম, ১৯/২০,২১)
এভাবেই আল্লাহ ঈসাকে কিয়ামতের নিদর্শন নয়, বরং তার জন্মের সময়ে বনী ইস্রাঈলদের জন্য করেছিলেন এক নিদর্শন, যাহা অসংখ্য আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর ঘোষণায় পরিষ্কার করে দিয়েছেন । অথচ অজ্ঞ জনেরা সুস্পষ্ট একটি আয়াত দ্বারা প্রমাণ করতে পারবেনা যে, ঈসা (আঃ) আবার আসবেন কিয়ামতের পূর্বে । কিয়ামতের পূর্বে নয়, বরং কিয়ামতের মাঠে আর দশজনের মতোই ঈসা (আঃ) উপস্থিত হয়ে যা বলবেন সে ক্ষেত্রে আল্লাহ বলেন,
وَ اِنۡ مِّنۡ اَہۡلِ الۡکِتٰبِ اِلَّا لَیُؤۡمِنَنَّ بِہٖ قَبۡلَ مَوۡتِہٖ ۚ وَ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ یَکُوۡنُ عَلَیۡہِمۡ شَہِیۡدًا ﴿۱۵۹﴾ۚ
"হে আহলে-কিতাবধারীরা, মৃত্যুর পূর্বেই তথা এই দুনিয়ার জীবনে তোমরা অবশ্যই বিশ্বাসের সাথে জেনে নাও এই যে, কিয়ামতের দিন অবশ্যই ঈসা তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবেন ।" (নিসা, ৪/১৫৯)
বিচারের দিনে যখন আল্লাহ বলবেন,
وَ اِذۡ قَالَ اللّٰہُ یٰعِیۡسَی ابۡنَ مَرۡیَمَ ءَاَنۡتَ قُلۡتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُوۡنِیۡ وَ اُمِّیَ اِلٰہَیۡنِ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ ؕ قَالَ سُبۡحٰنَکَ مَا یَکُوۡنُ لِیۡۤ اَنۡ اَقُوۡلَ مَا لَیۡسَ لِیۡ ٭ بِحَقٍّ ؕ اِنۡ کُنۡتُ قُلۡتُہٗ فَقَدۡ عَلِمۡتَہٗ ؕ تَعۡلَمُ مَا فِیۡ نَفۡسِیۡ وَ لَاۤ اَعۡلَمُ مَا فِیۡ نَفۡسِکَ ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ عَلَّامُ الۡغُیُوۡبِ ﴿۱۱۶﴾ مَا قُلۡتُ لَہُمۡ اِلَّا مَاۤ اَمَرۡتَنِیۡ بِہٖۤ اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ رَبِّیۡ وَ رَبَّکُمۡ ۚ وَ کُنۡتُ عَلَیۡہِمۡ شَہِیۡدًا مَّا دُمۡتُ فِیۡہِمۡ ۚ فَلَمَّا تَوَفَّیۡتَنِیۡ کُنۡتَ اَنۡتَ الرَّقِیۡبَ عَلَیۡہِمۡ ؕ وَ اَنۡتَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ شَہِیۡدٌ ﴿۱۱۷﴾
"হে মারইয়াম পুত্র ঈসা, তুমি কি লোকদিগকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আমাকে ও আমার মাকে ইলাহ রূপে গ্রহণ করো ? তখন ঈসা বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়ে বলবেন যে, তুমি মহিমান্বিত । যাহা বলার অধিকার আমার নাই, তাহা বলা আমার জন্য শোভন নয় । যদি আমি তা বলিতাম, তবে তুমি তা অবশ্যই জানিতে । আমার অন্তরের কথা তো তুমি জানো, কিন্তু তোমার অন্তরের কথা আমি জানি না । তুমি তো অবশ্যই অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত । তুমি আমাকে যে আদেশ করেছিলে, তা ব্যতীত তাহাদিগকে আমি অন্য কিছুই বলি নাই । তাহা তো এই, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর দাসত্ব করো । আর যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী । কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলিয়া লইলে, তখন তো তুমিই ছিলে তাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক । আর তুমি তো সর্ববিষয়েই সাক্ষী ।" (মায়েদা, ৫/১১৬,১১৭)
হে আমার জাতি, একবার ভেবে দেখো তো, ঈসা (আঃ) কিয়ামতের পূর্বে আবার যদি আসতেন, তাহলে কিয়ামতের মাঠে আল্লাহর সামনে তার জাতির বিরুদ্ধে সাক্ষীর ধরণ ঐরূপ কখনই হতো না । বরং সেক্ষেত্রে ঈসা (আঃ) অবশ্যই বলতেন যে, হে আল্লাহ তুমি যখন, কিয়ামতের পূর্বে দ্বিতীয়বার আমাকে আবার আমার জাতির কাছে পাঠিয়েছিলে । তখন আমি তাদেরকে সংশোধন করে দিয়েছিলাম ।- কিন্তু ঈসা (আঃ) তা কখনোই বলবেন না । সাক্ষীতে আল্লাহই যথেষ্ট । আসলে অতীত যুগের পথভ্রষ্ট জাতির মতই তোমরা তোমাদের বাপ-দাদা, আওলিয়া-দরবেশ, আহবার-রাহবারদের তৈরি করা হাদিস-ফিকাহ-ইজমা-কিয়াস ইত্যাদি নামের লাহওয়াল হাদিসের কিতাব রচনা আর তা গ্রহণ করেই মূলত কোরআন থেকে তোমরা একেবারেই দূরে সরে গিয়ে, শিরকের দায়ে দণ্ডিত হয়ে পড়েছ । আর মনগড়া কোরআন বিরোধী ধারণায় মেতে রয়েছ । মনে রেখো, কোরআনের কোনো শরীক নাই । কোরআন একেবারেই পূর্ণ । কোরআনের পাশে অন্য কিতাব, তথা হাদিস-ফিকাহ ইত্যাদির প্রয়োজন থাকলে, কোরআন পরিপূর্ণ আর কোরআন স্বয়ংসম্পূর্ণ- এ স্বীকৃতির প্রমাণ থাকে না । মানুষ যখন শিরক করে, তখন তারা কোরআন থেকেই বেরিয়ে যায় । আর পক্ষান্তরে কোরআনের নামে তারা অন্য কিতাব আর অন্য বিধাতার এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করে থাকে ।
হে আমার জাতি, আমি কোন ইমাম মাহাদী নই, তোমাদের ধারণার ঈসাও নই । তোমরা শুধু যুগের পর যুগ, অতীত লোকদের মতন ইমাম মাহাদী আর ঈসার জন্য আকাশ পানে চেয়ে থাকবা, আর তা নিয়ে পরস্পরে বাকবিতণ্ডে লিপ্ত থাকবা, তোমাদের ধারণার ইমাম মাহাদী ও ঈসা কোনোকালেই আসবেনা । আল-কোরআন সে সাক্ষ্যই বহন করে । বরং মিথ্যা দাবিদারেরা ইমাম মাহাদী আর ঈসা সেজে তোমাদেরকে তাদের গোলাম বানিয়ে, নিজেদের সহ অনুসারীদেরকে এক মহা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ।
অনেকেই আছেন, যারা শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করে বলতে চান, ইমাম অর্থ নেতা আর মাহাদী অর্থ-যিনি হেদায়েত প্রাপ্ত । অতএব কোন মুসলিম দলের নেতা বা কোন গোষ্ঠী প্রধান, নিজেকে ইমাম মাহাদী বলতেই পারেন, তাতে আর দোষের কী ?- এমন ধারণা পোষণকারীদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, "রসূল বা নবী" - যাহার অর্থ দাঁড়ায় সংবাদ বহনকারী বা খবর প্রচারকারী । কোন মুসলিম দলের নেতা বা অন্য যে কেউ আল্লাহর দ্বীন প্রচার করতেই পারেন । তাই বলে কি তিনি তার পদবী "নবী বা রসূল" পরিচয় দিতে পারবেন ? কোন সাহাবী কি কখনো "নবী-রসূল" পদবী ধারণ করেছিলেন ? কখনোই নয় । তাই যে সমাজে ইমাম মাহাদীর আবিষ্কার, ঈসা (আঃ)-এর পুনঃ আগমন-এর ধারনা নবী-রসূলগণের সমমর্যাদা গণ্য করে । সেখানে এমন নাম ধারণ করাটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চরম ধৃষ্টতা ছাড়া আর কি হতে পারে ?
তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আর কোরআন মতে আমার অনুসরণ করো । আমি তোমাদের সরল পথ দেখাবো ইনশাল্লাহ । আমি আল্লাহর মনোনীত মুসলিমিন দলের একজন মুমিন, শিরক মুক্ত একজন মুসলিম, কোরআন দ্বারা আল্লাহর দিকে একজন আহবানকারী মাত্র । এসময়ের মুসলিমিন দলের আমিই প্রথম । আমি কোরানের সাথে কোন কিছুকেই শরীক করি না । আমি আমার ঈমানকে শিরক দ্বারা কলুষিত করিনা ।
হে আমার জাতি, তোমরা মনোযোগের সাথে শ্রবণ করোঃ- তোমরা কি জানো কিতাব কি ? ঈমান কি ? কিসে ঈমান আনয়ন করতে হবে ? আসলে কিতাব তো আল-কোরআন, ইহাতো নূর । ইহাতেই তোমাদেরকে ঈমান তথা বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে । যে মহান কিতাব একমাত্র আল-কোরআনে ঈমান আনয়ন করবে, সে তো ঈমান আনে আল্লাহতে, তার ফেরেশতাগণে, রসূল সমূহে আর তাদের প্রতি অবতীর্ণ কিতাবসমূহে, ঈমান আনয়ন করে শেষ বিচার দিবসে- জান্নাত-জাহান্নামে । সেতো রসূল সমূহে আর তাদের প্রতি অবতীর্ণ কিতাবসমূহে কোন পার্থক্য করে না ।
তোমরা কি জানো শিরক কি ? প্রথম সৎকর্ম কোনটি ? আসলে কোরআনের পাশে বা কোরআন ব্যতীত দ্বীনের ব্যাপারে অন্য কোনো কিতাব, অন্য কোনো ওহী, অন্য কোনো ফতোয়া, অন্য কোনো হাদিস, অন্য কোনো মাসয়ালা তথা কোরআন ব্যতীত অন্য বিধানই শিরক । নিশ্চয় শিরক তো সব থেকে বড় জুলুম । আল্লাহর ওহী ব্যতীত অন্য কোন ওহী গৃহীত নয় । ওহী হিসেবে কোরআন একক, চূড়ান্ত, একেবারে পরিপূর্ণ । কোরআনের কোন শরীক নাই । তোমরা কোরআনের শরীক তথা আল্লাহর শরীক করা থেকে বেঁচে থাকো । শরীককারীদের অনুসরণ করো না । তাহলে তুমিও একজন মুশরিক বলেই গণ্য হবে । মনে রেখো, শিরক থেকে বেঁচে থাকাই সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ সৎকর্ম । বিশ্বাসী তথা ঈমানদার তথা মুমিন হয়ে কেহ সৎকর্ম করিলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন । আর ইহাই মহা সফলতা । তোমরা তোমাদের ঈমানকে শিরক দ্বারা মিশ্রিত করোনা । শিরক মিশ্রিত ঈমান কখনোই গৃহীত হবে না । সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে । যাহারা ঈমান আনবে আর তাদের ঈমানকে শিরক দ্বারা মিশ্রিত করবে না, তাদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তা আর তারাই সৎপথপ্রাপ্ত । আল্লাহ বলেন,
وَ مَنۡ عَمِلَ صَالِحًا مِّنۡ ذَکَرٍ اَوۡ اُنۡثٰی وَ ہُوَ مُؤۡمِنٌ فَاُولٰٓئِکَ یَدۡخُلُوۡنَ الۡجَنَّۃَ یُرۡزَقُوۡنَ فِیۡہَا بِغَیۡرِ حِسَابٍ ﴿۴۰﴾
"কোনো পুরুষ কিংবা নারী, মুমিন হইয়া সৎকর্ম করিলে, সে প্রবেশ করিবে জান্নাতে । সেখানে তাদেরকে অপরিসীম রিযিক দেওয়া হবে ।" (আল-মুমিন, ৪০/৪০)
আল্লাহ বলেন,
اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ لَمۡ یَلۡبِسُوۡۤا اِیۡمَانَہُمۡ بِظُلۡمٍ اُولٰٓئِکَ لَہُمُ الۡاَمۡنُ وَ ہُمۡ مُّہۡتَدُوۡنَ ﴿۸۲﴾
"যারা ঈমান আনিয়াছে, আর তারা তাদের ঈমানকে জুলুম তথা শিরক দ্বারা মিশ্রিত করে নাই । তাদের জন্যই রয়েছে নিরাপত্তা । আর তারাই সৎপথপ্রাপ্ত ।" (আনআম, ৬/৮২)
আল্লাহ বলেন,
اِنَّ الشِّرۡکَ لَظُلۡمٌ عَظِیۡمٌ ﴿۱۳﴾
"নিশ্চয় শিরক মহা জুলুম ।" (৩১/১৩)
হে আমার জাতি, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আর একমাত্র কোরআন অনুযায়ী আমার অনুসরণ করো । আমি তো তোমাদের থেকে কোন প্রতিদান নেই না । আমার প্রতিদান রয়েছে বিশ্বজগতের রব একমাত্র আল্লাহর কাছে । আল্লাহ সত্য দ্বারা মিথ্যাকে আঘাত করেন । অতঃপর মিথ্যা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় । আর তোমরা যা রচনা করে নিয়েছো, সেজন্য অবশ্যই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, যদি না তোমরা সংশোধন হও । সত্য এসেছে, মিথ্যা বিলুপ্ত হবেই । মিথ্যা তো বিলুপ্ত হবার জন্যই । হে আল্লাহ আমার এ জাতিকে সত্য বোঝার এবং তা মেনে নেবার সৌভাগ্য দান করো ।
ওবায়দুল্লাহ ইবনে সিরাজ,
ইমাম,
মুসলিমিন (মিল্লাতে আবিকুম ইব্রাহিম),
কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ ।
ইমাম মাহদী ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ইমাম মাহদীকে নিয়ে আমার তেমন আগ্রহ নাই। আজ থেকে প্রায় ১ হাজার বছর আগে চেঙ্গিস খানের সৈন্যরা যখন পুরো পৃথিবী দখল করে নিচ্ছিল, মুসলমানরা তাদেরকেই ইয়াজুজ মাজুজ ভেবে মাহদীর জন্য অপেক্ষা করছিল। বলেছিল যুদ্ধ করে কী লাভ! মাহদী ছাড়া আর কেউ ওদের ঠেকাতে পারবে না। সুলতান রুকনুদ্দিন বাইবার্স এবং তুর্কিরা ওদেরকে প্রথম ঠেকিয়ে দিয়ে অন্যদের বুঝিয়েছিল এরা ইয়াজুজ মাজুজ না। এরা অপ্রতিরোধ্য নয়, এদেরকেও পরাজিত করা যায়। ক্রুসেডাররা যখন মসজিদুল আকসা দখল করে নিয়েছিল, তখন মুসলমানরা ধরেই নিয়েছিল এরাই দাজ্জাল। ইমাম মাহদী আসবে, এবং আল আকসা উদ্ধার করবে, মুসলমানদের বাঁচাবে। কিন্তু ইমাম মাহদী আসেননি। সুলতান সালাউদ্দিন আল আইয়ুবী জেরুজালেম বা আল আকসা খ্রিস্টানদের কাছ থেকে উদ্ধার করেন। তারও আগে খলিফার ক্ষমতা যখন কেবল বাগদাদের প্রাসাদ কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে, মুসলমানরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে, চারিদিক থেকে মার খাচ্ছিল। এমন খারাপ সময়ে মুসলমানরা ইমাম মাহদীর অপেক্ষা করে। ধরে নেয় মাহদী এসে রক্ষা করবে। সে সময়ে সুলতান আল্প আরসালান এসে ছিন্নভিন্ন মুসলমানদের একত্রিত করেন। যাযাবরের মত ঘুরে বেড়ানো, চারিদিকে মার খাওয়া মুসলমানদের জন্য আনাতোলিয়ার সেলজুক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমানদের জন্য শক্তিশালী একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলে মুসলমানদের উদ্ধার করেন। আল্প আরসালান অর্থ— সিংহ সৈনিক বা সিংহের মত বীর। সুলতান আল্প আরসালানের আসল নাম মুহম্মদ। স্পেনে যখন মুসলমানদের পতন হচ্ছিল, তখনো অনেকে ধরে নিয়েছিল ইমাম মাহদী এসে তাদেরকে রক্ষা করবে। কিন্তু কেউ রক্ষা করেনি, স্পেনের মুসলিম সভ্যতা হারিয়ে যায়। ৭শ বছর আগে বাইজেন্টাইন আর মঙ্গোলীয়দের কাছে যখন মার খাচ্ছিল মুসলমানরা তখনো অনেকে মাহদীর আশায় ছিল। তখন ওসমান ইবনে আর্তুরুল এসে বাইজেন্টাইনদের মার দিয়ে ওসমানী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। আজকে থেকে তিনশ বছর আগেও মানুষ ইমাম মাহদী আসবেন বলে প্রস্তুতি শুরু করেছিল, অপেক্ষায় ছিল। বলেছিল যুদ্ধ করে কী লাভ! মাহদী ছাড়া আর কেউ ওদের ঠেকাতে পারবে না। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বিভিন্নবার মুসলমানরা নিজেদের বিপদ থেকে নিজেরা উদ্ধার হওয়ার চেষ্টার বদলে মাহদীর অপেক্ষা করেছে। মুসলমানদের যতবারই দুঃসময় আসে তারা মাহদীর জন্য অপেক্ষা করে। ধরে নেয় ইমাম এসে মুসলমানদের রক্ষা করবে। প্রত্যেকবারই কেউ না কেউ নিজেকে মাহদী দাবী করে বসে। ব্রিটিশ আমলেও ভারতের কাদিয়ানের একজন নিজেকে নবী, মাহদী, ঈসা/মসীহ দাবী করেছিল। তার শক্তিশালী সমর্থক গোষ্ঠীও রয়েছে। যারা আহমদিয়া বা কাদিয়ানী নামেও পরিচিত। কেয়ামতের অনেক আলামতের এখনো প্রচুর বাকি আছে। যুগে যুগে আরো এমন মাহদী, ঈসা, মসীহ, নবী দাবীদার আসবে। মুসলমানরা কাউকে ইয়াজুজ-মাজুজ ভাববে, কাউকে দাজ্জাল ভাববে, কাউকে মাহদী/ঈসা মেনে নিয়ে অনুসরণ করবে। সালাউদ্দিন আয়ুবী, রুকনুদ্দীন বাইবার্স, আল্প আরসালান, ওসমানরা এসে রক্ষাও করবে। এমন হয়তো আরো শতশত বছর চলবে। তবে সহসায় যে মাহদী/ঈসা/দাজ্জাল আসবে না, সেটা মোটামুটিভাবে বলে দেয়া যায়। তাই আমার মাহদী নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ নাই। আসলে সেটা এমনিতেও বুঝা যাবে।
Tags:
ধর্ম চিন্তা