চরমোনাই পীর — সত্য এবং কেরামতি: এক সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ

চরমোনাই পীরের কেরামতি

চরমোনাই পীর, সৈয়দ মোহাম্মদ এছহাক (এছহাক চরমোনাই), বাংলাদেশের বরিশালের একটি ধর্মীয় গুরু। ১৯৪৬ সালে তিনি ঊজানীর ক্বারি ইব্রাহিম থেকে খেলাফত লাভ করেন ও পরবর্তীতে চরমোনাই দরবার প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর জীবন ও কেরামতি নিয়ে নাটকীয় বিতর্ক রয়েছে।

১. পীর হিসেবে তাঁর যাত্রা

  • খেলাফত লাভ: ১৯৪৬ সালে ক্বারি ইব্রাহিম থেকে খেলাফতগ্রহণ।

  • চরমোনাই দরবার প্রতিষ্ঠা: বরিশাল সদর থানার উত্তরপূর্বকোনে কীর্তন খোলা নদীর তীরে দরবার গড়ে তোলেন।

  • রাজনৈতিক পদক্ষেপ: তাঁর বড় ছেলে ফজলুল করিম দায়িত্ব নেয়ার পর ১৯৮৭ সালে “ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন” নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন।

২. আকীদাগত বিতর্ক ও সমালোচনা

– নিজের পরিচয় নিয়ে দ্বন্দ্ব

  • তাঁর বই ‘আশেক মাশুক বা এস্কে এলাহী’ (February ২০০৭, পৃষ্ঠা ৯১)–এ লিখেছেন:

    “আমিতো এখন আমাকেই চিনি না... আমি মুসলমান, না ইহুদী, না অগ্নিপুজক তাহাও বলিতে পারি না।”
    ফলে প্রশ্ন আসে—পীরকে কি কখনো মুসলিম বলা যায়?

– ‘হালুল’ শিরক ও বিভ্রান্তি

  • পীরের ভাষায় ‘হালুল’ নামে বিভ্রান্ত সুফি আকীদা, যেখানে আল্লাহ নিজের প্রিয় বান্দার মধ্যে প্রবেশ করেন—যা প্রথাগত ইসলামী তাওহীদ বিরুদ্ধ।

  • এ আকীদার প্রভাবে তাঁকে মানসুর আল-হাল্লাজের মতো শিরকি নজরে ধরা হয়।

– সম্পর্কের অশালীন ও প্রেমময় ভাবনা

তাঁর রচনায় রয়েছে এমন শিরকি এবং প্রেমময় উপমা যা অনেকেই অশালীনধৃষ্ট মনে করেন:

  • “হে আমার মাশুক! আপনি আমাকে...”

  • “আপনিও আর একা থাকিতে না পারিয়া...”

  • এমন শব্দ ব্যবহারে তিনি 'আল্লাহকে প্রেমিকারূপে' উপস্থাপন করেন।

– ইসলামী শরীয়তের সাথে সংঘাত

  • এক নির্দেশে বলেছেন: “কামেল পীরের আদেশ পেলে জায়নামাজ মদের সাথে রঙ্গিন করিয়ে নামাজ পড়ো”—যা শরীয়ত মতে স্পষ্টভাবে অবৈধ।

– নবী-আল্লাহ বিনয়ীয় বিশ্বাসের টিপ্পণি

  • উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহ কেন আমাদের সৃষ্টি করেছেন—এই বিষয়ে পীরের দৃষ্টিভঙ্গি কোরআনের ঈখলাস সূরার সঠিক ব্যাখ্যার বিপরীত।

৩. সমালোচকদের মূল প্রশ্ন

  • পীর নিজের পরিচয় জানেন না—তাহলে তাঁর ঈমানের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ উঠছে।

  • তাঁর ‘হালুল’ আকীদা, আল্লাহকে প্রেমমূলক ভাষা ব্যবহার, অন্যান্য বিভ্রান্ত প্রতীক—এগুলো ইসলামী মৌলিক তাওহীদ ও শরীয়তের নিয়মবিরুদ্ধ।

৪. ইসলামী উত্তরে শ্রদ্ধা ও সতর্কতা

  • ইসলামী অনুশীলনে তাওহীদুল আসমা ওয়াসিফাতআকীদার মৌলিক শর্ত মেনে চলা অত্যনৈতিক।

  • যেসব কোনো বক্তব্য বা ‘পীরের বানী’ কুরআনের বা ৬ শতাধিক সহীহ হাদিসে সমর্থন না পায়—সেগুলো গ্রহণ করা ঝুঁকিপূর্ণ।

চরমোনাই পীর সৈয়দ মোহাম্মদ এছহাক—যদিও বরিশালে আলোচিত ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, তাঁর ভাষা ও আকীদা বেশাংশে ঈমান ও তাওহীদ ভিত্তির বিরুদ্ধে প্রমাণিত হতে পারে। যেহেতু তিনি নিজে বলেছেন যে তিনি জানেন না মুসলিম নাকি কাফির, এতে তাঁর অনুসারীদের উদ্দেশ্যে স্পষ্টভাবে সতর্কতা ও সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ জরুরি।


FAQs (প্রশ্নোত্তর)

❓ চরমোনাই পীর মুসলিম না কাফির?

তিনি নিজেই বলেছেন—"আমি জানি না আমি মুসলিম না অগ্নিপুজক।" এটি ঈমানের গুরুতর সমস্যা নির্দেশ করে।

❓ 'হালুল' আকীদা কী?

'হালুল' মানে হলো আল্লাহ বান্দার মধ্যে প্রবেশ করেন—যা ইসলামের তাওহীদের পরিপন্থী শিরকি বিশ্বাস।

❓ চরমোনাই পীরের রচনার মূল সমস্যা কী?

তাঁর বক্তব্যে রয়েছে শরিয়তবিরোধী প্রেমময় উপমা, হাদীসবিরোধী বক্তব্য এবং ঈমান সংকটের স্পষ্ট আলামত।

Post a Comment

Previous Post Next Post