নেতিবাচক চিন্তার ১১টি ধরন

নেতিবাচক চিন্তার ১১টি ধরন

নেতিবাচক চিন্তা একটা ঘটনার ভিন্ন দিক নিয়ে আমাদেরকে ভাবতে সুযোগ দেয়। কিন্তু পুরো চিন্তাটাই যখন নেতিবাচকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে, আমরা আগানোর চেয়ে অনেক বেশি পিছিয়ে যাই।

এজন্য দরকার নেতিবাচক চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করা। এর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সবার আগে সেই চিন্তাটাকে একটা নাম দিয়ে শনাক্ত করতে পারা। যেমন: “অতিরিক্ত চিন্তা”। এরকম ভাবে আপনার প্রতিটা নেতিবাচক চিন্তাকে যদি শনাক্ত পারেন, আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, কোন জায়গা নিয়ে আপনার কাজ করা দরকার। এখানে নেতিবাচক চিন্তার কয়েকটি ধরন ও তা থেকে কীভাবে নিষ্কৃতি পেতে পারেন তা তুলে ধরা হলো।

১. অল অর নাথিং থিংকিং

নেতিবাচক চিন্তার এই ধরনটি ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট থিংকিং’ বা ‘ডাইকোটমাস থিংকিং’ নামেও পরিচিত।

এর অর্থ হচ্ছে একটি বিষয়কে ২টি শ্রেণিতে ভাগ করা। সেটা হয় খারাপ না হয় ভালো, সাদা অথবা কালো, এর মাঝে কোনো ধূসর ভাগ নেই। 

এই ধরনের চিন্তার মাধ্যমে আপনার মনে হয়, কোনো কিছু পুরোপুরি মনমতো হয়নি মানে তা একদমই ভালো লাগার মতো না। আপনার মনে হতে পারে জীবনের সবক্ষেত্রে আপনাকে ভালো করতেই হবে, একদম পারফেক্ট হতেই হবে, নাহলে আপনি ব্যর্থ। 

২. আবেগ দিয়ে সবকিছু বিচার করা

এর অর্থ হচ্ছে আপনি যা ভাবছেন সেটাই সত্যি এমন মনে করা, এমনকি যখন এক্ষেত্রে আপনার ভাবনা ছাড়া অন্য কোনো প্রমাণ নেই। এ ধরনের নেতিবাচক চিন্তার মাধ্যমে “আমার একা লাগছে” থেকে কেউ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারে “কেউ আমাকে পছন্দ করে না!”

৩. অতিরিক্ত জেনারালাইজ করা

এর অর্থ হচ্ছে একটা পরিস্থিতি বা ঘটনার ছোট একটা নেতিবাচক দিক নিয়ে সেটাকেই জীবনের পরম সত্য বানিয়ে দেয়া।

যেমন: কেউ একজন আমার সাথে আড্ডা দিতে চায়নি মানে, সে আমার সাথে আড্ডা দিতে যেতে চায় না। অথবা, কেমিস্ট্রি ল্যাবে একটা এক্সপেরিমেন্ট ভুল করেছি মানে আমি কখনোই সঠিকভাবে কোনো কিছু করতে পারি না।

৪. লেবেল করা

এর অর্থ হচ্ছে নিজের বা অন্য কারো ওপর নেতিবাচক লেবেল লাগিয়ে দেয়া, যার কারণে সেই লেবেলের চেয়ে বেশি কিছু চোখে পড়ে না। আপনি যখন কাউকে এমন একটা ফ্রেমে বন্দি করে ফেলেন, সেই ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার চিন্তাভাবনা এত কঠোর হয়ে যায় যে তার ব্যাপারে অন্যরকম ভাবে ভাবা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। 

যেমন: “কারো সাথে কথা বলার সময় কী বলবো বুঝতে পারি না”, নেতিবাচক লেবেলে এর অর্থ দাঁড়ায় “আমি খুবই নীরস প্রকৃতির মানুষ!”

৫. নিজে নিজে ভবিষ্যদ্বাণী করে নেয়া

এর অর্থ হচ্ছে কোনোকিছু নেতিবাচকভাবে ঘটতে পারে তা আগে থেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করে নেয়া, অর্থাৎ ধরেই নেয়া যে এই ঘটনাটার ফল নেতিবাচক হবে। 

এর ফলে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। আর তার প্রভাব আপনার আচরণেও পড়তে পারে। 

যেমন: “আমি জানি এই পরীক্ষায় আমি খুবই খারাপ রেজাল্ট করবো” এই চিন্তা থেকে  আপনি অতিরিক্ত ভয় পেয়ে যান এবং পরীক্ষায় ভালো করতে পারেন না।

৬. অন্যের মনের কথা অনুমান করে নেয়া

এর অর্থ হচ্ছে অন্য কেউ কী ভাবছে তা আপনি জানেন বা বুঝতে পারছেন এমন ভেবে নেয়া। এক্ষেত্রে আপনি প্রায় নিশ্চিত থাকেন যে তারা আপনাকে নিয়ে নেতিবাচক কিছু ভাবছে। 

যেমন: “আমি কথা বলার সময় অমুক মনোযোগ দিচ্ছে না”, তার মানে সে আমাকে পছন্দ করে না। আসলে হয়তো সেই ব্যক্তি এমন কোনো কিছু নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছেন, যার সাথে আপনার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই।

৭. তিলকে তাল করা

কোনো সামান্য সমস্যা অথবা নেতিবাচক ঘটনাকে নিয়ে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো। 

যেমন: বন্ধুরা এমন কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলছে, যেটা আপনি জানেন না। আপনি ভেবে বসলেন, তারা ইচ্ছা করে আপনাকে জানায়নি। কারণ তারা আপনাকে আর পছন্দ করে না।

৮. ইতিবাচকতা কমিয়ে আনা

একে ‘মিনিমাইজিং’ও বলা হয়। এর অর্থ হচ্ছে একটা ইতিবাচক ঘটনাকে খুব ছোট করে দেখা যাতে সেটাকে আপনার জীবনের কোনো ভালো ঘটনাই মনে না হয়। ফলে আমাদের জীবনের নেতিবাচকতার বিরুদ্ধে তুলে ধরার মতো কিছুই থাকে না।

৯. মানসিক ফিল্টার

এর অর্থ হচ্ছে একটা অভিজ্ঞতার ভালো অথবা নিরপেক্ষ দিকগুলির বদলে কেবল খারাপ দিকগুলিতে ফোকাস করা। 

যেমন: আপনি ক্লাসের জন্য একটা পেপার লিখলেন, আপনার শিক্ষক সেটার অনেক প্রশংসা করলো। কিন্তু আপনি কারো একজনের নামের বানান ভুল করেছেন। আর আপনি তারপর শুধু সেই ভুল বানানের কথাই ভাবতে থাকলেন। 

অথবা, কোনোদিন অনেকের সাথে অনেক পজিটিভ আলাপ হলো, এর মাঝে আপনি এমন কিছু বলেছেন যেটা বলা ঠিক হয়নি মনে হয়েছে পরে। তাই আপনার ফোকাস কেবল ওই কথাটার মধ্যেই আটকে থাকলো।

১০. নিজস্বীকরণ

এর অর্থ হচ্ছে সবকিছুকে নিজের ব্যাপারে বানিয়ে নেয়া। আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরের কোনোকিছুর জন্য নিজেকে দোষারোপ করা অথবা কোনোকিছুকে ব্যক্তিগত ভাবে নেয়া, এমনকি যখন এর মাধ্যমে আপনার ক্ষতি করার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারো।

১১. কোনোকিছুকে বাধ্যতামূলক ভাবা

এর অর্থ হচ্ছে সবকিছুকে “করা বা হওয়া উচিত” অথবা “করতে বা হতে হবেই” এমনটা ভাবা।

যেমন: ক্লাসে কোনো ভয় ছাড়াই আমার প্রেজেন্টেশন দিতে পারা উচিত। এই ধরনের চিন্তাভাবনা আপনাকে আরও ভীত করে তোলে।

নানা কারণে দেনন্দিন জীবনে যুক্ত হয় নেতিবাচক চিন্তা। তা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু নেতিবাচক চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ না করে উল্টা তা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হতে থাকলে সমস্যা। নিজের মনে এরকম চিন্তা তৈরি হওয়া মাত্র সেটা চিহ্নিত করুন। নিজেকে মনে করিয়ে দিন, “আমি নেতিবাচক চিন্তা করছি, এটাকে এভাবেও ভাবা যায়, কিন্তু আমি শুধু নেতিবাচকটাই ভাবছি!” 

নিয়মিত এই চর্চার কারণে একটা সময় আপনি সাধারণভাবেই কোনো বিষয়ের নানা দিক নিয়ে ভাবতে পারবেন, শুধু নেতিবাচকটা না ভেবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post