অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব ইসলামের বিধান

অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব ইসলামের বিধান

ইসলামে অমুসলিমদের
 জন্যে উদারতা ও সদ্ব্যবহারের শিক্ষা রয়েছে। তাদের সাথে যদিও বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতার সম্পর্ক স্থাপন করতে নিষেধ করা হয়েছে, কিন্তু সহানুভূতি, সৌজন্য, আতিথেয়তা ও লেন-দেনমূলক আচরণ করতে নিষেধ করা হয়নি। অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে কি? সাম্প্রতিককালে একটি ব্যাপার খুব জোরালো হচ্ছে তা হল: অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে কি ? ইসলাম কি বলে ? এই ব্যাপারে পানি ঘোলা করা শুরু হয়েছে।

এক শ্রেণীর মানুষ এ থেকে ফায়দা নিতে চাচ্ছে। আর এ ব্যাপারে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখছেন ইউরোপিয়ান কিছু স্কলারশীফরা।

কাফিরদের সাথে বন্ধুত্বের স্বপক্ষে তারা কিছু যুক্তি দেখান, আল্লাহ কোরআনে উল্লেখ করেছেন:

لاَّ يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاء مِن دُوْنِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللّهِ فِي شَيْءٍ

إِلاَّ أَن تَتَّقُواْ مِنْهُمْ تُقَاةً وَيُحَذِّرُكُمُ اللّهُ نَفْسَهُ

وَإِلَى اللّهِ الْمَصِيرُ

মুমিনগন যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কেন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না।

তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করেছেন।

এবং সবাই কে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে। সুরা ইমরান আয়াত :২৮

এখানে আল্লাহ্‌ তা’লা বন্ধু/অভিভাবক শব্দের জন্য আউলিয়া শব্দটি ব্যাবহার করেছেন। তাদের মতে এখানে আউলিয়া দ্বারা আল্লাহ্‌ তা’লা অভিভাবক বুঝিয়েছেন।

আল্লাহ্‌ তা’য়ালা অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব ও অভিভাবক বানাতে নিষেধ করেছেন।

তাই আল্লাহ্‌ তা’লা কাফিরদেরকে অভিভাবক বানাতে নিষেধ করেছেন, বন্ধু বানাতে নয়, অর্থাৎ কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে।

তারা এই উদ্ভট ব্যাখ্যার স্বপক্ষে কোন স্বনামধন্য মুফাসসেরের নাম উল্লেখ করতে পারেনি। বরং এ ছিল তাদের মনগড়া বানানো একটি মিথ্যা কথা। যা বুঝে আসে কোরআনের অপর আয়াত দ্বারা।

আল্লাহ্‌ তা’লা কোরআনকে সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণানা করেছেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَتَّخِذُواْ بِطَانَةً مِّن دُونِكُمْ

لاَ يَأْلُونَكُمْ خَبَالاً وَدُّواْ مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاء مِنْ أَفْوَاهِهِمْ

وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الآيَاتِ

إِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়।

আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও। সুরা ইমরান আয়াত : ১১৮

এখানে অন্তরঙ্গ বুঝাতে আল্লাহ তা’লা بِطَانَةً শব্দ ব্যাবহার করেছেন। এই আয়াত প্রসঙ্গে আল্লামা আল সাদি রহ. তার তাফসির আল সাদি পৃ: ১৯৮ বলেন

তারা যেন অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব এর সম্পর্ক না রাখে।

এটি আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে তার বান্দাদের প্রতি সতর্কবার্তা: যে, তারা যেন কাফিরদের বন্ধু হিসেবে গ্রহন না করে।

অনুরুপ ভাবে সুরা আল-মুজাদিলাতে বলা হয়েছে:

لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ

وَلَوْ كَانُوا آبَاءهُمْ أَوْ أَبْنَاءهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُوْلَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ

وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ

خَالِدِينَ فِيهَا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ أُوْلَئِكَ حِزْبُ اللَّهِ

أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন

এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ,আল্লাহর দলই সফলকাম হবে। সুরা মুজাদালাহ আয়াত : ২২

ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না।

এই আয়াতে يُوَادُّونَ শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া সুরা মায়েদাতে আল্লাহ তা’লা বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَتَّخِذُواْ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاء بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ

وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللّهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না। সুরা মায়েদা আয়াত : ৫১

 এই আয়াতে أَوْلِيَاء শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া সুরা মায়েদার আরেক আয়াতে আল্লাহ তা’লা বলেন:

وَلَوْ كَانُوا يُؤْمِنُونَ بِالله والنَّبِيِّ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاء

وَلَـكِنَّ كَثِيراً مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ

যদি তারা আল্লাহর প্রতি ও রসূলের প্রতি অবতীর্ণ বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত, তবে কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না।কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই দুরাচার। সুরা মায়েদা আয়াত : ৮১

এখানেও বন্ধু বা অভিভাবক বুঝাতে আল্লাহ তা’লা أَوْلِيَاء শব্দটি ব্যাবহার করেছেন।

সুরা মায়েদার উল্লেখিত দুই আয়াত পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সুরা মায়েদা একটি মাদানি সুরা। আর মদিনায় থাকা কালে কোন মুসলিম ইহুদি বা খ্রিষ্টানদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহন করা কল্পনাই করা যায় না।

তুমি খৃষ্টানকে কেন তোমার কাতেব বানালে? এ বিষয়টি হাদিস থেকে আরও পরিস্কার হয়ে যায়: ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন, আবু মুসা আল-আশারি রাযি. বলেন:

একদিন আমি ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলি, আমার একজন কাতেব আছে, সে খৃষ্টান।এ কথা শুনে তিনি বললেন: আল্লাহ তোমার অমঙ্গল করুন! তুমি খৃষ্টানকে কেন তোমার কাতেব বানালে? তুমি কি আল্লাহ তা’আলার বাণী শুনোনি?

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহুদি ও খৃষ্টানদের বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। তারা নিজেরা পরস্পর বন্ধু”।তুমি একজন খাটি মুসলিমকে কেন তোমার কাতেব বানালে না। তার কথা শুনে আমি বললাম, .হে আমীরুল মুমীনিন! আমি তার থেকে কিতাবত আদায় করব, আর সে তার দ্বীন আদায় করবে।

উত্তরে তিনি বলেন, আল্লাহ যাদের অপমান করে আমি তাদের সম্মান করব না। আর আল্লাহ যাদের বে-ইজ্জত করে আমি তাদের ইজ্জত দেবো না এবং আমি তাদেরকে অন্তরঙ্গ বানাবো না। শায়েখ সালিহ আল উসায়মিন কে কাফিরদের সাথে মিলামিশা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন:

নিঃসন্দেহে মুসলিমদের উচিত কাফিরদের ঘৃণা করা এবং তাদের ত্যাগ করা। কারন আল্লাহ তা’লা বলেন:

قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ

إِنَّا بُرَاء مِنكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ

وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاء أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ

إِلَّا قَوْلَ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ

وَمَا أَمْلِكُ لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن شَيْءٍ

رَّبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ

তোমাদের জন্যে ইব্রাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ

তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার এবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না।তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে।কিন্তু ইব্রাহীমের উক্তি তাঁর পিতার উদ্দেশে এই আদর্শের ব্যতিক্রম। তিনি বলেছিলেনঃ আমি অবশ্যই তোমার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করব। তোমার উপকারের জন্যে আল্লাহর কাছে আমার আর কিছু করার নেই।

হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা তোমারই উপর ভরসা করেছি, তোমারই দিকে মুখ করেছি এবং তোমারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন। সুরা মুমতাহিনা আয়াত : ৪

কাফেরদের সাথে শরয়ী কারন ছাড়া খাওয়া যাবে না।

আল্লামা বিন বায রহ. বলেন: “কাফিরদের বন্ধু হিসেবে গ্রহন করা যাবে না। তাই তাদের সাথে কোন শরয়ী কারন ছাড়া খাওয়া যাবে না। এমনকি তাদের সাথে বসা, গল্প বা হাসাহাসি ও করা যাবে না।

তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, আমাদের বন্ধু কারা?

আল্লাহ্‌ তা’য়ালা কোরআনে বলেন:

إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ

তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ তাঁর রসূল এবং মুমিনবৃন্দ- যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র। [ সুরা মায়েদা ৫:৫৫

وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ

وَيُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللّهَ وَرَسُولَهُ أُوْلَـئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللّهُ

إِنَّ اللّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা’আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী। সুরা তাওবা আয়াত : ৭১

রাসূলুল্লাহ সা. ইহুদির লাশ দেখে কেন দাঁড়িয়ে গেলেন।

এখন একটি প্রশ্ন জাগে  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদির লাশ দেখে কেন দাঁড়িয়ে গেলেন। এর উত্তর স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়াছেন।

حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ فَضَالَةَ … عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ مَرَّ بِنَا جَنَازَةٌ

فَقَامَ لَهَا النَّبِيُّ وَقُمْنَا بِهِ

فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّهَا جِنَازَةُ يَهُودِيٍّ قَالَ إِذَا رَأَيْتُمْ الْجِنَازَةَ فَقُومُوا

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ব দিয়ে একটি জানাযা যাচ্ছিল।নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও দাঁড়িয়ে গেলাম এবং নিবেদন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এ তো ইয়াহুদীর জানাযা। তিনি বললেনঃ তোমরা যে কোন জানাযা দেখলে দাঁড়িয়ে যাবে।

আরেক হাদীসে আরো বিস্তারিত এসেছে,

حَدَّثَنَا آدَمُ … عَبْدَ الرَّحْمٰنِ بْنَ أَبِي لَيْلَى قَالَ كَانَ سَهْلُ بْنُ حُنَيْفٍ وَقَيْسُ بْنُ سَعْدٍ قَاعِدَيْنِ بِالْقَادِسِيَّةِ

فَمَرُّوا عَلَيْهِمَا بِجَنَازَةٍ فَقَامَا فَقِيلَ لَهُمَا

إِنَّهَا مِنْ أَهْلِ الأَرْضِ أَيْ مِنْ أَهْلِ الذِّمَّةِ فَقَالاَ إِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم مَرَّتْ بِهِ جِنَازَةٌ

فَقَامَ فَقِيلَ لَهُ إِنَّهَا جِنَازَةُ يَهُودِيٍّ فَقَالَ أَلَيْسَتْ نَفْسًا

আবদুর রহমান ইবনু আবূ লাইলাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহল ইবনু হুনাইফ ও কায়স ইবনু সা‘দ (রাঃ) কাদিসিয়াতে উপবিষ্ট ছিলেন, তখন লোকেরা তাদের সামনে দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাচ্ছিল। (তা দেখে) তারা দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন তাদের বলা হল, এটা তো এ দেশীয় জিম্মী ব্যক্তির (অমুসলিমের) জানাযা। তখন তারা বললেন, (একদা) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে দিয়ে একটি জানাযা যাচ্ছিল। তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলে তাঁকে বলা হল, এটা তো এক ইয়াহূদীর জানাযা। তিনি এরশাদ করলেনঃ সে কি মানুষ নয়? অমুসলিমদের সাথে আচরণে ভদ্রতা ও সৌজন্য রক্ষা করার জন্যে ইসলাম যে উদার নির্দেশনা দেয়, উপরোক্ত হাদীসটিই তার প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট।

একজন মুসলিম অমুসলিমদের সাথে কেমন আচরণ করবে?

সমাজবদ্ধ ভাবে জীবনযাপন করতে গেলে নানান শ্রেণির নানান পেশার ও ভিন্ন মত ও পথের মানুষের মুখোমুখি হতে হয়। যাদের মধ্যে অনেক এমন আছে যারা অমুসলিম।লেনদেন ওঠাবসা চলাফেরা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে একজন মুসলমানের সাক্ষাৎ একজন অমুসলমানের সাথে হতেই পারে।কোনো মুসলিমপ্রধান দেশে অমুসলিমদের বসবাস কিংবা কোনো অমুসলিমপ্রধান দেশে মুসলমানদের বসবাস এখন বিচিত্র কিছু নয়।

অমুসলিম ব্যক্তি হতে পারে কোনো মুসলমানের প্রতিবেশী। অনুরুপ ভাবে মুসলিম ব্যক্তি হতে পারে কোনো অমুসলমানের প্রতিবেশী। কোনো অমুসলিম যদি পুরনো ধর্ম ছেড়ে ইসলামের শীতল ছায়ায় আশ্রয় নেয়, তাহলে তো আরও অনেক অমুসলিমের সাথে তার আত্মীয়তার সম্পর্কও থাকবে। বর্তমান সময়ে পৃথিবীতে যেভাবে দলে দলে অমুসলিম ইসলামের ছায়াতলে আসছে, তাতে এ বিষয়টি খুবই প্রাসঙ্গিক।

ইসলামে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে জিহাদের ঘোষনা দেয়া হয়েছে এ কথা যেমনী ভাবে ঠিক, তেমনী ভাবে জিহাদের ময়দানের বাইরে তাদের নিরাপত্তাদান, অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ সৌজন্যতা বজায় রেখে উত্তম আচরণের কথাও বলা হয়েছে। এমনকি যুদ্ধের মাঠেও যেন অমানবিক আচরণ করা না হয়, যারা যুদ্ধে অংশ নেয়নি তাদেরকে, বিশেষত নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের ওপর যেন হামলা না করার আদেশও দেয়া হয়েছে। যদি কারও কোনো প্রতিবেশী কিংবা কোনো আত্মীয় অমুসলিম হয়, ইসলামের নির্দেশনা হল- তার সাথেও প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের হক রক্ষা করে চলতে হবে।

পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এ দুটি সম্পর্ক রক্ষা করার ওপর যথেষ্ট জোর দেয়া হয়েছে। সাহাবী হযরত মুআয ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন,

একজন প্রতিবেশীর ওপর আরেকজন প্রতিবেশীর কী হক রয়েছে?

উত্তরে তিনি বললেন,

إِنِ اسْتَقْرَضَكَ أَقْرَضْتَهُ وَإِنِ اسْتَعَانَكَ أَعَنْتَهُ

وَإِنْ مَرِضَ عُدْتَهُ وَإِنِ احْتَاجَ أَعْطَيْتَهُ وَإِنِ افْتَقَرَ عُدْتَ عَلَيْهِ

وَإِنْ أَصَابَهُ خَيْرٌ هَنَّيْتَهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ مُصِيبَةٌ عَزَّيْتَهُ وَإِذَا مَاتَ اتَّبَعَتَ جَنَازَتَهُ

وَلَا تَسْتَطِيلُ عَلَيْهِ بِالْبِنَاءِ فَتَحْجُبَ عَنْهُ الرِّيحَ إِلَّا بِإِذْنِهِ

وَلَا تُؤْذِيهِ بِرِيحِ قِدْرِكَ إِلَّا أَنْ تَغْرِفَ لَهُ وَإِنِ اشْتَرَيْتَ فَاكِهَةً فَأَهْدِ لَهُ 

যদি সে তোমার কাছে ঋণ চায় তাহলে ঋণ দেবে, যদি তোমার সহযোগিতা চায় তাহলে তাকে সহযোগিতা করবে, যদি সে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে তার খোঁজখবর নেবে, তার কোনোকিছুর প্রয়োজন হলে তাকে তা দেবে, সে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়লে তার খোঁজখবর নেবে, যখন সে ভালো কিছু লাভ করবে তখন তাকে শুভেচ্ছা জানাবে, যদি সে বিপদে পড়ে তাহলে সান্ত্বনা দেবে, মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযায় শরিক হবে, তার অনুমতি ছাড়া তোমার ঘর এত উঁচু করবে না যে তার ঘরে বাতাস ঢুকতে পারে না, কোনো ভালো খাবার রান্না করলে তাকে এর ঘ্রাণ ছড়িয়ে কষ্ট দেবে না, তবে যদি তার ঘরেও সে খাবার থেকে কিছু পৌঁছে দাও। যখন কোনো ফল কিনে তোমার বাড়িতে নেবে তখন হাদিয়াস্বরূপ তাকে সেখান থেকে কিছু দেবে।

যে আল্লাহ ও পরকালে ঈমান এনেছে সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে। আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার বিষয়ে নির্দেশনা তো আরও স্পষ্ট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে আল্লাহ ও পরকালে ঈমান এনেছে সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে।

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ…عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ

فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ،

وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ ‏”‏‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে,

সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন কল্যাণকর কথা বলে, অথবা চুপ থাকে।

হাদিসে মুসলিম অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব এর মাঝে কোনো পার্থক্য করা হয়নি। প্রতিবেশী ও আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলার যে নির্দেশনা হাদিসে দেওয়া হয়েছে, তাতে মুসলিম অমুসলিমের মাঝে কোনো পার্থক্য করা হয়নি।

পবিত্র কুরআন ও হাদীসের কিছু নির্দেশনা এমনও রয়েছে, যেখানে সুস্পষ্ট ভাষায় অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও সম্পর্ক রক্ষা করতে বলা হয়েছে। যেমন, সূরা আনকাবুতের আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমান:

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا وَإِن جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِي

مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ

فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। সুরা আনকাবুত আয়াত : ৮

দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ ভাবে সহঅবস্থান করবে। সূরা লুকমানে একই প্রসঙ্গে আরো বলা হয়েছে:

وَإِن جَاهَدَاكَ عَلى أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ

فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا

وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ

فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো। সুরা লুকমান আয়াত : ১৫

কুরআনে কারীমের উক্ত আয়াত দুটি থেকে স্পষ্ট প্রতিভাত হয়, যদি কোনো মুশরিক বাবা-মা তাদের মুসলিম কোনো সমত্মানকে ইসলাম ধর্ম ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ তাআলার সাথে শিরক করতে বলে, তাহলে তাদের এ আদেশ কখনো মানা যাবে না। কিন্তু এমতাবস্থায়ও তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে। বাবা-মায়ের হক আদায় করতে হবে। তোমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে (গোশত) উপহার পাঠিয়েছ?

প্রতিবেশীর অধিকার সম্বলিত যেসকল হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেসবে মুসলিম-অমুসলিমের মাঝে যে কোনো পার্থক্য করা হয়নি- সাহাবায়ে কেরামের জীবনী থেকেও এর দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الأَعْلَى…عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو، ذُبِحَتْ لَهُ شَاةٌ فِي أَهْلِهِ

فَلَمَّا جَاءَ قَالَ أَهْدَيْتُمْ لِجَارِنَا الْيَهُودِيِّ أَهْدَيْتُمْ لِجَارِنَا الْيَهُودِيِّ

سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ

حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ ‏”‏ ‏

মুজাহিদ (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হল।

তিনি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে (গোশত) উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরীল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে।

ইসলামী রাষ্ট্রে যে সকল অমুসলিম রাষ্ট্রীয় নিয়মকানুন মেনে বসবাস করবে, তারা সেখানে পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে নিরাপদ জীবন যাপন করবে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তারা তাদের নির্ধারিত সকল অধিকার পাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই, রাষ্ট্রের শান্তিশৃংখলা বজায় রাখার জন্যে এ বিধানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব নিয়ে হযরত উমর রা.-এর একটি ঘটনা।

তিনি তখন খলীফাতুল মুসলিমীন। একদিন এক ইহুদি বৃদ্ধকে দেখলেন মসজিদের দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করে বেড়াতে।

তখন তিনি ইহুদিকে লক্ষ করে বললেন:

مَا أَنْصَفْنَاكَ إِنْ كُنَّا أَخَذْنَا مِنْكَ الْجِزْيَةَ فِي شَبِيبَتِكَ، ثُمَّ ضَيَّعْنَاكَ فِي كِبَرِكَ

قَالَ: ثُمَّ أَجْرَى عَلَيْهِ مِنْ بَيْتِ الْمَالِ مَا يُصْلِحُهُ

আমরা তোমার ওপর ইনসাফ করতে পারিনি যদি তোমার যৌবনে আমরা তোমার নিকট থেকে জিযয়া গ্রহণ করে থাকি আর তোমার বার্ধক্যে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেই। এরপর তিনি তার জন্যে বায়তুল মাল থেকে প্রয়োজনীয় ভাতার ব্যবস্থা করে দেন। এখানে হযরত উমর রাযি. সেই ইহুদিকে লক্ষ করে যে কথাটি বলে ছিলেন তা আমাদের সামনে চিন্তার নতুন দুয়ার খুলে দেয়। যে সহানুভূতি তিনি প্রকাশ করেছেন এটাই সত্যিকারে ইসলামের সৌন্দর্য ও আসল চরিত্র।

তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না।অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব ও তাদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে সূরা মুমতাহিনার এই নির্দেশনাটি বিশেষভাবে লক্ষনীয়:

لَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ

إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ

ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন। সুরা মুমতাহিনা আয়াত : ৮

إِنَّمَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ قَاتَلُوكُمْ فِي الدِّينِ

وَأَخْرَجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ وَظَاهَرُوا عَلَى إِخْرَاجِكُمْ أَن تَوَلَّوْهُمْ

وَمَن يَتَوَلَّهُمْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম। সুরা মুমতাহিনা আয়াত : ৯

দুই বন্ধুর মধ্যে আসলে কি হয় ?

একজনের দ্বারা অপরজন প্রভাবিত হয় অথবা দুইজনই দুইজনের দ্বারা প্রভাবিত হয় । অমুসলিমের সাথে বন্ধুত্ব করার সময় এটাই দেখতে হবে যেন আপনি কোন ভাবেই তার দ্বারা প্রভাবিত না হন ।

আপনার দ্বারা তাকে প্রভাবিত করতে হবে । যদি আপনার সেই বন্ধুর (অমুসলিম , ফাসেক ) দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দ্বীন হতে দূরে সরে যাওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনাও থাকে তবে ত সে আপনার বন্ধু না শত্রু।

আপনার প্রধান কাজ হবে তাকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসা যা সত্যই একটি কঠিন কাজ । আল্লাহ আমাদের সকলকে কোরআন ও হাদিস থেকে অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে কি না এবং অমুসলিমদের সাথে আচরণে ইসলামের নির্দেশনা বুঝে আমল করার তাওফিক দান করুক। আমিন।

Post a Comment

Previous Post Next Post