কোরআনে মহাবিশ্ব সৃষ্টির বিষয় নিয়ে অনেক আয়াত রয়েছে পৃথিবী সৃষ্টির সঠিক তথ্য আছে পবিত্র কোরআনে। পৃথিবী সৃষ্টি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক আল কোরআনে সূরা আম্বিয়ায় বলেছেন, ‘সত্য প্রত্যাখানকারীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলি ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অত:পর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম’ (আম্বিয়া:৩০)।
পবিত্র কুরআন সত্যিই একগুচ্ছ বিস্ময়ের সমষ্টি। অক্ষর থেকে শব্দ, শব্দ থেকে বাক্য অজানা সব জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্মুক্ত বিশ্বকোষ।
তেমনি যে গ্রহে বসবাস করি, অর্থাৎ পৃথিবী এ সম্পর্কেও কুরআনে রয়েছে বৃহৎ তথ্যভাণ্ডার। মহান আল্লাহ বলেন, বিশ্বাসীদের জন্য পৃথিবীতে অসংখ্য নিদর্শনাবলি রয়েছে। (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ২৩)
মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে পৃথিবীর সৃষ্টি
খুব বেশি দিনের কথা নয় যে মানুষ জানতে পেরেছে মহাবিশ্বের সূচনা এক মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে ঘটেছে। আইনস্টাইনের ক্ষেত্র সমীকরণ থেকে ফ্রিদমান সমীকরণ। তার পর বিশ্বতত্ত্ব নীতি এবং হোবল নীতি। সর্বশেষ ১৯৬০ সালে মহাজাগতিক অণুতরঙ্গের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিজ্ঞান যখন ক্লান্ত, তখন দেখা গেল আজ থেকে প্রায় ১৫০০ শ বছর আগেই মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে এ ব্যাপারে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।
( সত্য প্রত্যাখানকারীরা) ‘অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে সপ্তাকাশ ও পৃথিবী পুঞ্জীভূত হয়ে ছিল। অতঃপর আমি উভয়টি এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে সূচনা করেছি। ’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩০)
পৃথিবীর সৃষ্টি মহাকাশ সৃষ্টির আগে
মহাকাশ নাকি পৃথিবী? আকাশের গ্রহ-নক্ষত্র, নাকি পৃথিবীর গাছপালা, কোনটি আগে সৃষ্টি হয়েছে? উত্তর খুঁজতে বেশি দূর যেতে হবে না।
আপনার ঘরের পবিত্র কুরআন হাতে নিন। তাতে দেখতে পাবেন। আল্লাহ্ বলেন ,
বল, ‘তোমরা কি তাঁকে অস্বীকার করবে যিনি দু’দিনে যমীন সৃষ্টি করেছেন? (যমীন সৃষ্টির পর) তার উপরিভাগে তিনি দৃঢ় পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং তাতে বরকত দিয়েছেন, আর তাতে চারদিনে প্রার্থীদের জন্য সমভাবে খাদ্য নিরূপণ করে দিয়েছেন।তারপর তিনি আসমানের দিকে মনোনিবেশ করেন। তা ছিল ধোঁয়া। তারপর তিনি আসমান ও যমীনকে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় আস’। তারা উভয়ে বলল, ‘আমরা অনুগত হয়ে আসলাম’। (সুরা : ফুসিসলাত, আয়াত : ৯-১১)
আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির বিষয় পবিত্র কুরআনে সংক্ষেপে ও বিস্তারিতভাবে বহু জায়গায় বিবৃত হয়েছে, কিন্তু কোনটির পরে কোনটি সৃজিত হয়েছে, এর উল্লেখ সম্ভবত: মাত্র তিন আয়াতে করা হয়েছে
(এক)(যমীন সৃষ্টির পর) তার উপরিভাগে তিনি দৃঢ় পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং তাতে বরকত দিয়েছেন, আর তাতে চারদিনে প্রার্থীদের জন্য সমভাবে খাদ্য নিরূপণ করে দিয়েছেন।হা-মীম সাজদার আলোচ্য আয়াত
(দুই) তিনিই যমীনে যা আছে সব তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তারপর আসমানের প্রতি খেয়াল করলেন এবং তাকে সাত আসমানে সুবিন্যস্ত করলেন। সূরা বাকারার ২৯
(তিন) “এরপর তিনি যমীনকে বিছিয়েছেন”
সূরা বাকারাহ ও সূরা হা-মীম সেজদার আয়াত থেকে জানা যায় যে, আকাশের পূর্বে পৃথিবী সৃজিত হয়েছে এবং সূরা আন-নাযি আতের আয়াত থেকে এর বিপরীতে জানা যায় যে, আকাশ সৃজিত হওয়ার পরে পৃথিবী সৃজিত হয়েছে।
সবগুলো আয়াত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে মনে হয় যে, প্রথমে পৃথিবীর উপকরণ সৃজিত হয়েছে।
এরপর পৃথিবীকে বর্তমান আকারে বিস্তৃত করা হয়েছে এবং এতে পর্বতমালা, বৃক্ষ ইত্যাদি সৃষ্টি করা হয়েছে।
সূরা আল বাকারার ২৯ নং আয়াতে কিন্তু এ আয়াতে আকাশ সৃষ্টির ব্যাপারটি আগে এবং পৃথিবী সৃষ্টির ব্যাপারটি পরে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি আসলে কোন বিপরীতধর্মী বক্তব্য নয়। কেননা, পৃথিবী সৃষ্টি আকাশ সৃষ্টির পূর্বে হলেও পৃথিবী বিস্তৃতকরণ, পানি ও তৃণ বের করা, পাহাড় স্থাপন ইত্যাদি করা হয়েছে আকাশ সৃষ্টির পর।
পূর্বে হা-মীম সিজদার ৯ আয়াতে উল্লেখ হয়েছে যে, خلق (সৃষ্টি করা) এক জিনিস এবং دحى (সমতল, বিস্তৃত ও বাসোপযোগী করা) করা অন্য এক জিনিস। পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে আকাশের পূর্বে। কিন্তু তাকে বিস্তৃত করা হয়েছে আকাশ সৃষ্টির পর। এখানে সেই তত্ত্বই বর্ণিত হয়েছে। সমতল ও বিস্তৃত করার মানে হল, পৃথিবীকে সৃষ্টির বাসোপযোগী করার জন্য যে সমস্ত জিনিসের প্রয়োজন আল্লাহ তাআলা তার প্রতি গুরুত্ব দিলেন। যেমন, যমীন থেকে পানি নির্গত করলেন অতঃপর তা হতে নানা খাদ্যসামগ্রী উৎপন্ন করলেন। পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ মজবুতভাবে যমীনে গেড়ে দিলেন যাতে যমীনটা না হিলে।
যেমন, সুরা নাযি’আত আয়াত আয়াতসমূহে এর বর্ণনা রয়েছে।
তিনি তার ভিতর থেকে বের করেছেন তার পানি ও তার তৃণভূমি। সুরা নাযি’আত আয়াত ৩১
আর পর্বতগুলোকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সুরা নাযি’আত আয়াত ৩২
তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুগুলোর জীবনোপকরণস্বরূপ। সুরা নাযি’আত আয়াত ৩৩
কিন্তু কুরআনের আয়াত থেকে পরিস্কারভাবে জানা যায় যে, এই সৃষ্টিকাজ ছয় দিনে হয়েছে। এক আয়াতে আছেঃ “আমি আকাশ পৃথিবী ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছি এবং আমাকে কোন ক্লান্তি স্পর্শ করেনি।” [সূরা কাফ: ৩৮]
পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহকে একত্রিত করার ফলে কয়েকটি বিষয় নিশ্চিতরূপে জনা যায়,
প্রথমত: আকাশ, পৃথিবী ও এতদূভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু মাত্র ছয় দিনে সৃজিত হয়েছে। সূরা হা-মীম সেজদার আয়াত থেকে ।
দ্বিতীয়ত: জানা যায় যে, পৃথিবী, পর্বতমালা, বৃক্ষরাজি ইত্যাদি সৃষ্টিতে পূর্ণ চার দিন লেগেছে।
তৃতীয়ত: জানা যায় যে, আকাশমন্ডলীর সৃজনে দুদিন লেগেছিল। চতুর্থত: আসমান, যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সৃষ্টির পর যমীনকে বসবাসের উপযোগী করতে সাতদিন লেগেছিল।
পৃথিবীর পরিধি ক্রমে সংকীর্ণ হয়ে আসছে
পদার্থবিজ্ঞানীদের গবেষণামতে পৃথিবী তার সূচনালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ পানির এক-চতুর্থাংশ পানি হারিয়েছে।বিজ্ঞানীদের ধারণামতে পৃথিবীর ভার বা ওজন (৫,৯৭২,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০) অর্থাৎ ৫ সেক্সটিলিয়ন ৯৭২ কুইন্টিলিয়ন। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে প্রতিবছর পৃথিবী তার মোট ওজন থেকে ৫০০ টন ভার হারাচ্ছে। এ ছাড়া অক্সিজেনের ভাগ প্রতিনিয়ত কমে আসাও হালের বিজ্ঞানীদের কাছে স্বীকৃত বিষয়। যা থেকে তারা নিশ্চিত হয়েছে যে পৃথিবীর পরিধি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে।
➡ আমিই তাদেরকে ও তাদের পূর্বপুরুষদেরকে উপভোগ করতে দিয়েছিলাম; উপরন্তু তাদের হায়াতও দীর্ঘ হয়েছিল। তারা কি দেখে না যে, আমি চতুর্দিক থেকে তাঁদের দেশকে সঙ্কুচিত করে দিচ্ছি? (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৪৪)
পৃথিবী দ্রুতগতিতে ছুটছে!
পবিত্র কুরআনে পৃথিবী স্থির কিংবা সূর্যের পাশে ঘূর্ণমান কোনোটিই বলা হয়নি। বরং এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে যা এসেছে তার সারকথা হলো, পৃথিবী আপন কক্ষপথে দ্রুতগতিতে সাঁতার কাটার মতো ঢেউ খেলে ছুটে চলেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর চলন প্রকৃতি প্রধানত দুই ধরনের।
প্রথমত, পৃথিবীর নিজস্ব ঘূর্ণায়ন যা ঘণ্টায় প্রায় এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মহান আল্লাহ যিনি আসমান জমিন যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং দিনকে রাতের ওপর এবং রাতকে দিনের ওপর আচ্ছাদিত করেন। ’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৫) আর এ কথা শিরোধার্য, কোনো বৃত্ত আকৃতির জিনিসকে অনুরূপ অন্য কোনো জিনিস দ্বারা বারবার আচ্ছাদিত করার জন্য, তা ঘূর্ণমান হওয়ার বিকল্প নেই।
দ্বিতীয়ত, সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর সন্তরণ। বহুকাল যাবৎ মানুষ এ ধারণা পোষণ করে আসছে যে পৃথিবী সূর্যের পাশে ঘূর্ণমান। তবে খুব সাম্প্রতিক সময়ে মহাকাশ গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন যে সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর চলার ধরনটাকে ঘূর্ণন শব্দে ব্যাখ্যা করা যথাযথ নয়। বরং পৃথিবীসহ আরো অনেক গ্রহ উপগ্রহ সর্বদা সূর্যকে ঘিরে সাঁতার কাটার মতো ওপর-নিচ ঢেউ তুলে সম্মুখপানে অগ্রসর হচ্ছে।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবীর আলোচনা টেনে বলেন, প্রত্যেকেই আপন কক্ষপথে সন্তরণ করছে। (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৪০)
পৃথিবীর নিচে বিপুল পানির উৎস
টিউবওয়েল চেপে পানি তুলছেন কিংবা পাম্পের সাহায্যে। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন ভূগর্ভের এই বিপুল পরিমাণ পানির উৎস কোথায়? তাহলে জেনে নিন,
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি আসমান থেকে পরিমাণমতো পানি বর্ষণ করি, অতঃপর তা ভূগর্ভে সংরক্ষণ করে রাখি। ’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১৮)