জীবাণু কিভাবে আমাদের উপকার করে?

 
জীবাণু কিভাবে আমাদের উপকার করে?



জীবাণু কিভাবে আমাদের উপকার করে?

বিজ্ঞানীরা বলেছেন,আমাদের একেকজনের শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা .×!অর্থাৎ আমাদের শরীরে আমাদের নিজস্ব যত না কোষ আছে,তার চেয়ে ১০গুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া আছে!!সবচেয়ে বেশি ব্যাকটেরিয়া রয়েছে ত্বক,দাঁত ও মুখগহ্বর এবং পরিপাকতন্ত্রে।এসব ব্যাকটেরিয়ার নাম "কমেনসাল"(কমেনসাল শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ মেনসা থেকে যার অর্থ হলো "টেবিল"।এক্ষেত্রে মানব শরীরকে টেবিল হিসেবে ধরা হয়েছে যেখানে জীবাণুগুলো খাদ্যগ্রহণ করে)

জীবাণু কিভাবে আমাদের উপকার করে?

সব ব্যাকটেরিয়াই খারাপ না!এ কমেনসাল গুলো ভালো ব্যাকটেরিয়া অর্থাৎ আমাদের মানবশরীরের জন্য উপকারী।বর্তমান বিজ্ঞানীরা বলছেন যে এসব ব্যাকটেরিয়া ছাড়া আমাদের ইমিউন সিস্টেম ঠিকমতো কাজই করতে পারবে না!!

এখন প্রশ্ন হলো,এসব পরজীবী শরীরে এলো কিভাবে!?

জন্মের আগে আমরা যখন মাতৃগর্ভে থাকি,তখন অ্যামনিওটিক ফ্লুইড আর প্লাসেন্টা বাইরের পরিবেশ থেকে আমাদের সুরক্ষিত রাখে, কোন জীবাণুর প্রবেশ করতে দেয় না।জন্মের পর পরই আমরা পরিবেশের নানা জীবাণু ও পরজীবীদের সংস্পর্শে আসি।তখন কেউ কেউ নাক মুখ দিয়ে শরীরের ভিতরে ঢুকে পড়ে, কেউ বা ত্বকের ওপর, চুল বা ভ্রু এ গেড়ে বসে।তারপর ধীরে ধীরে তারা মানব শরীরের সঙ্গে একটা দীর্ঘমেয়াদী ,লাগসই ও নির্ভরযোগ্য সম্পর্ক গড়ে তোলে।এ সম্পর্কটি পারস্পরিক নির্ভরতার।তারা বেঁচে থাকার রসদ এই শরীর থেকেই গ্রহণ করে, বিনিময়ে এর কোনো ক্ষতি করে না বরং উপকার করারই চেষ্টা করে। এজন্য এদের আরেক নাম মিউচুয়াল অরগানিজম, মানে এদের সঙ্গে মানুষের একটা মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা বোঝাপড়া হয়ে যায়।তবে রক্ত,সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড বা সলিড অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন যকৃৎ বা কিডনি ইত্যাদি কিন্তু জীবাণুমুক্ত।কোনোভাবে এসব ব্যাকটেরিয়া ঐসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ঢুকে পড়লে সমস্যা হতে পারে। এজন্য এসব জীবাণু কে বলা হয় অপরচুনিস্টিক মাইক্রো অরগানিজম বা সুবিধাবাদী জীবাণু।এরা সুযোগের অভাবে ভালো কিন্তু সুযোগ পেলেই যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

আমাদের সারা দেহের ত্বকে আছে মিলিয়ন মিলিয়ন জীবাণু; বিশেষ করে শরীরের ভাঁজগুলোয়।বাইরের ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ এরাই গড়ে তোলে ।এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ডেমোডেক্স ব্রেভিস ও ডেমোনেক্স ফলিকুলোরাম।এরা মরা ত্বককোষ,ঘাম ও তৈলাক্ত পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে।

ছবিঃ ডেমোডেক্স ব্রেভিস।

চোখের পানিতে আছে করাইনো ব্যাকটেরিয়া।এরা কর্নিয়াকে রক্ষা করার জন্য কাজ করে যায়।

জীবাণু কিভাবে আমাদের উপকার করে?

ছবিঃকরাইনো ব্যাকটেরিয়া

পরিপাকতন্ত্রে আছে ই কোলাই। এরা খাদ্যকণা ভেঙে "ভিটামিন কে" তৈরি করতে সাহায্য করে। ল্যাকটোব্যাসিলাস আছে বলেই শিশুর জন্মের পর এত সহজে দুধ হজম করতে পারে। আবার পরিপাকতন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াগুলো অ্যাসিড ও টক্সিন তৈরি করে অন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি কে বাধা দেয়।এভাবেই এসব কমেনসাল আমাদের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

জীবাণু কিভাবে আমাদের উপকার করে?

ছবিঃ ই কোলাই

জীবাণু কিভাবে আমাদের উপকার করে?

ছবিঃল্যাকটোব্যাসিলাস

ক্ষমতাধর অ্যান্টিবায়োটিক বেশি ব্যবহারের ফলে অন্ত্রের সব কমেনসাল মারা গেলে পরে অন্ত্রে বাহিরের জীবাণু দ্বারা মারাত্মক সংক্রমণ ঘটে যেতে পারে।ঠিক একই ভাবে জীবাণুরোধী ও অ্যান্টিসেপটিক সাবান বেশি ব্যবহার করলে ত্বকের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো মারা যায় ফলে ক্ষতিকর সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকগুণে বেড়ে যায়!!

বিখ্যাত হাইজিন হাইপোথিসিস বলছে, যে শিশুরা জন্মের পর খুব বেশি জীবাণুমুক্ত পরিবেশে বড় হয় এবং পরিবেশের জীবাণু বা পরজীবীদের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয় না, পরবর্তী জীবনে তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এমনকি এই হাইপোথিসিসে এ ধরনের শিশুদের পরবর্তী সময়ে হাঁপানি,অ্যালার্জি, টাইপ ১ ডায়াবেটিস,মাল্টিপল স্ক্লেরসিস ও লিমফোব্লাসটিক লিউকেমিয়ায় বেশি আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে।2003 সালে এই থিওরির প্রবক্তা গ্রাহাম রুক তাই এই জীবাণুদের নাম দেন "ওল্ড ফ্রেন্ডস" বা মানবজাতির পুরোনো বন্ধু। তিনি বলেন, মানব শরীরে ভাইরাস সংক্রমণের ইতিহাস বেশি পুরনো নয়, মাত্র 10 হাজার বছরের। কেননা এর আগে আদিম মানুষ পরিবেশ ও বনজঙ্গলের সঙ্গে এমন এক মিথস্ক্রিয়া‍য় বসবাস করত যে তাদের সংক্রমণজনিত রোগ হতো না বললেই চলে। এই থিওরি এটাও প্রমাণ করেছে যে, যেসব শিশু বড় পরিবার,অধিক সংখ্যক মানুষ ও প্রাণীদের সাহচর্যে, যেমন গ্রাম বা ফার্মের এর কাছাকাছি বড় হয়, তাদের অ্যালার্জি ও অটোইমিউন রোগের হার কম।

তাহলে ব্যাকটেরিয়া মাত্রই খারাপ নয়!!আমাদের শরীরে আছে মিলিয়ন মিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া।এরা আমাদের বন্ধু ও সহচর!!অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিসেপটিক এর ব্যবহারে আমাদের এসব কমেনসেল বন্ধুদের মেরে ফেলার থেকে বিরত থাকতে হবে তা না হলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়বে।

বি.দ্র. এই আর্টিকেল আমি আমার নিজ মেধা বা গবেষণায় লিখি নাই।আমি শুধু মূল আর্টিকেলটির প্রয়োজনীয় সংযোজন,পুনর্লিখন ও সম্পাদনা করেছি।আর্টিকেলের মূল সোর্স উত্তরের সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

আর্টিকেল সোর্সঃবিজ্ঞান চিন্তা;সেপ্টেম্বর ২০১৮ সংখ্যা;পৃষ্ঠা ৭৬-৭৭।

ছবি সোর্সঃGoogle

Post a Comment

Previous Post Next Post