পা ফাটার কারণ কী? চিকিৎসা ও প্রতিকার!

পা ফাটার কারণ কী? চিকিৎসা ও প্রতিকার!
 পা ফাটার কারণ কী?

পায়ের গোড়ালি ফাটা খুব-ই সাধারণ একটি সমস্যা। এমন অনেকেই আছেন যাদের গোড়ালি সারা বছরই ফাটে। তাদের সব সময়ই যত্ন নিতে হয়। যাদের পায়ের গোড়ালি শুধু শীতকালে ফাটে, তাদের-ও সারা বছরই পায়ের যত্ন নেয়া উচিত যাতে শীতকালে আর না ফাটে। অনেক সময় আমরা হাত মুখের যত্ন নিলেও পায়ের যত্ন টাই এড়িয়ে যাই, পায়ের গোড়ালির যত্ন তো নেয়াই হয় না। মনে হতে পারে এটা শুধু সৌন্দর্যগত সমস্যা, কিন্তু এটা অনেক সময়ই বিরক্তির উৎপাদন করতে পারে। এর থেকে গুরুতর কিছু শারীরিক সমস্যাও হয়। চলুন জেনে নিই পায়ের গোড়ালি ফাটার কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত।

পায়ের গোড়ালি ফাটার কারণ

১) যাদের গোড়ালির চারপাশের ত্বক শুষ্ক।

২) যাদের গোড়ালির ত্বক একটু মোটা।

৩) দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয় যাদের।

৪) অতিরিক্ত ওজন হলে।

৫) জুতোর পেছনের অংশ খোলা হলে পা ছড়িয়ে পড়ে এবং গোড়ালিতে চাপ পড়ে পা ফেটে যায়।

৬) বয়স বাড়ার কারণে ত্বকের পরিবর্তনে।

৭) দীর্ঘক্ষণ ভেজা পরিবেশে থাকলে বা স্যাঁতস্যাঁতে বাথরুম এ থাকলে।

৮) জুতোর সাইজ ঠিক না হলে।

৯) কিছু রোগের কারণে হতে পারে। যেমন – সোরিয়াসিস, অ্যাথলেট’স ফুট, একজিমা, থাইরয়েড ডিজিজ, ডায়াবেটিস।

১০) অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।

১১) ভিটামিন, মিনারেলস এবং জিঙ্ক এর অভাব হলে।

১২) শুষ্ক জলবায়ু।

১৩) নিষ্ক্রিয় ঘর্মগ্রন্থি।

কি কি হতে পারে

১) পায়ের গোড়ালি লাল হয়ে যায়।

২) গোড়ালিতে ইচিং বা চুলকানি হয়।

৩) গোড়ালিতে ক্র্যাক বা ফাটা দাগ পড়ে।

৪) অনেক সময় চামড়া উঠে আসতে পারে।

৫) রক্ত বা অন্য কোনও ডিসচার্জ আসতে পারে।

পায়ের গোড়ালি ফাটার চিকিৎসা ও প্রতিকার

একবার যদি গোড়ালি ফেটে যায়, তার নিয়মিত চিকিৎসা করতে হবে। প্রথমেই পা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে, নতুবা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হবে। পা ফেটে গেলে বেশি ঘষা যাবে না, এতে রক্তপাত হতে পারে। উষ্ণ গরম পানিতে লেবু এবং শ্যাম্পু দিয়ে পা ডুবিয়ে রাখুন ২০ মিনিট, তারপর আলতো করে নরম কোন ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অয়েন্টমেন্ট বা ক্রিম ব্যবহার করুন। সাধারণ ভাবে ক্লোবিটাসল বা ১০% স্যালিসাইলিক এসিড অয়েন্টমেন্ট দেয়া হয়। কিন্তু কোনও কিছুই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়। কেননা সোরিয়াসিস নামক রোগেও পা ফাটতে পারে, এক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসা কাজে লাগে না।

যদি অনেক বেশি পরিমাণে হয় বা রক্তপাত হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ঘরোয়াভাবে ভ্যাসলিন বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন একটু পর পর-ই। আর পা ফাটা কমে এলে নিয়মিত যত্ন নিন যাতে ভবিষ্যতে আর না ফাটে।

ঘরোয়া পরিচর্যা

গোড়ালি ফাটা প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে ভালো উপায় প্রতিকার এর চেয়ে। সমস্যা হওয়ার পর সচেতন হওয়ার চেয়ে আগে সচেতন হওয়াই ভালো। ঘরোয়া ভাবে গোড়ালি ফাটার জন্য যা যা করতে পারেন-

১) ভেজিটেবল অয়েল গোড়ালির ফাটা অংশে লাগাতে পারেন ময়েশ্চারাইজার হিসেবে। রাতভর পা ঢেকে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে মোজা ব্যবহার করতে পারেন।

২) এক চামচ ভ্যাসলিন এর সাথে কয়েক ফোটা লেবু মিশিয়ে ফাটা অংশে লাগিয়ে রাতভর মোজা পরে থাকলে, কয়েকদিনেই আকর্ষণীয় রেজাল্ট পাওয়া যায়।

৩) পা ফাটার পরে কলার পুরু পেস্ট ওখানে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুঁয়ে ফেলুন।

৪) বাজারে একটু খোঁজ নিলেই এভোক্যাডো পাবেন, এর সাথে নারিকেল এবং কলা মিক্স করে ঘন পেস্ট তৈরি করে পায়ে লাগান। এই মিশ্রণ অনেক রিচ তেলসমৃদ্ধ। পা ফাটা ঠেকাতে এর কোন জুড়ি নেই।

৫) লেবুর রস পায়ে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। লেবু আপনার গোড়ালির মৃত কোষগুলো তুলে ফেলে এবং পা ফাটা প্রতিরোধ করে। এরপর ব্রাশ দিয়ে হালকা করে ঘষে মৃত কোষগুলো তুলে ফেলুন। ভালো ফলাফলের জন্য নিয়মিত ১ সপ্তাহ ব্যবহার করতে হবে।

৬) পরিষ্কার এবং ময়েশ্চারাইজ করা পা, ফাটার বিরুদ্ধে হাতিয়ার। পরিষ্কার করার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হল একটি পরিষ্কার বালতিতে সহনীয় মাত্রার গরম পানি নিয়ে তাতে বেবি সাবান অথবা শ্যাম্পু মিশিয়ে নিন। এতে একটু লেবুর রস এবং লবণ মিক্স করে পা ভিজিয়ে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ পর গোড়ালির মৃত কোষগুলো নরম হয়ে এলে ব্রাশ অথবা পিউমিস স্টোন দিয়ে ঘষে তুলতে হবে। এরপর শুকনো কাপড় দিয়ে পানি মুছে নিয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।

৭) নিয়মিত পায়ে গোলাপজল এবং গ্লিসারিন এর মিশ্রণ লাগালে এর হিলিং ইফেক্ট পাওয়া যায়।

৮) প্যারাফিন মোম আর মাস্টার্ড তেল একসাথে মিশিয়ে ক্র্যাকড স্থানে লাগিয়ে সকালে পানি দিয়ে ওয়াশ করতে হবে। এটা ১০-১৫ দিন করলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়।

৯) পায়ের ড্রাই স্কিন থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত স্ক্রাব করতে হবে। বাজারের স্ক্রাব ব্যবহার না করতে চাইলে ঘরে বসেই তৈরি করুন মধু, আপেল সিডার ভিনেগার আর চালের গুঁড়ো দিয়ে। এগুলোর সাথে কয়েক ফোঁটা বাদাম তেল বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন এবং ঘন পেস্ট তৈরি করে পায়ে লাগান। ২০ মিনিট পর এই মিশ্রণ দিয়েই পায়ের গোড়ালি ম্যাসাজ করে ফেলুন। এখানে ভিনেগার গোড়ালির ফাটা দূর করবে, চালের গুঁড়ো স্ক্রাব হিসেবে কাজ করবে আর মধু ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করবে।

১০) বাজারের ময়েশ্চারাইজার আপনার যদি না মানায় সেক্ষেত্রে ঘরে বসেই ময়েশ্চারাইজার বানিয়ে ফেলতে পারেন। একটি বোতলে এক চামচ অলিভ অয়েল এবং কয়েক ফোটা ল্যাভেন্ডার অয়েল নিয়ে তাতে সমান পরিমাণ পানি মিশিয়ে ঝাঁকান এবং দুধসাদা রং আসলে তৈরি হয়ে গেল আপনার ময়েশ্চারাইজার।

১১) প্রতিদিন সকালে ওটমিল আর জোজোবা অয়েল এর মিক্সার দিয়ে ফুট স্ক্রাব করলেও আপনার পায়ের ময়েশ্চারাইজার ঠিক থাকবে। আর পা ফাটার ক্ষেত্রে এটার ঘন পেস্ট তৈরি করে ৩০ মিনিট রেখে ওয়াশ করতে হবে ১দিন পর পর।

সূত্র সাজগোজ.কম।

Post a Comment

Previous Post Next Post