নাক ডাকে কেন?
ঘুমের সময় নাকে বায়ু চলাচলে অর্থাৎ নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে বাধাপ্রাপ্তি ঘটলে নাক ডাকার সমস্যা সৃষ্টি হয়। নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞদের মতে ‘‘ চলতি ভাষায় যাকে নাক-ডাকা বলে, সেই শব্দটা কিন্তু নাক থেকে আসে বললে ভুল হবে। বরং শব্দটা তৈরি হয় গলা আর নাকের মাঝখানের অংশ থেকে। সেখানে বাতাসের গতিবিধি কোনও ভাবে বাধা পেলে শব্দের সৃষ্টি হয়। চিকিৎসাবিদ্যার পরিভাষায় এর নাম ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’। তবে ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ মাত্রেই নাক-ডাকা, যদিও সব নাক-ডাকাই ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ নয়। অর্থাৎ ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ থাকলে নাক ডাকার সমস্যা থাকবেই।'অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’ প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে, ঘুমের মধ্যে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।"
নাক ডাকার কারণ?
- নাকের ভিতরে শ্বাস চলাচলে বাধা প্রাপ্তি।
- গলার পিছন দিকে আল-জিভ বা সফ্ট প্যালেটের দিকে টিস্যু ঢিলে হয়ে গেলে ভাইব্রেশনের জন্য।
- জিভের নীচের অংশ (টাং বেস) থেকেও শব্দ হতে পারে।
- উপরের সবকটি কারণ মিলিয়েও শব্দ তৈরি হতে পারে।
- বয়সের সঙ্গেও সম্পর্ক রয়েছে।সাধারণত ৩৫ বছরের পরে এই সমস্যার সৃষ্টি হতে দেখা যায়। তবে ব্যতিক্রমও আছে।
- সাইনুসাইটিস বা পলিপের (নাকের ভিতরে মিউকাস পর্দায়) সমস্যা।
- নাসিকাগহ্বরের মধ্যে নাকের ভিতরের অংশ ফুলে ওঠা থেকে।
- শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা থাকলে।
- গঠনগত সমস্যা যেমন- টন্সিল, এডিনরেডস বৃদ্ধি, নাকের মধ্যে পলিপ বা কোনো টিউমার, নাকের পার্টিশন বেঁকা হলে উক্ত রাস্তা সরু হতে পারে।
নাক ডাকার সমস্যা কমানো যায়? কী করা হয় সে ক্ষেত্রে (যদি স্লিপ অ্যাপনিয়া না হয়)
- অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে।
- অল্প-স্বল্প সমস্যা থাকলে জীবনযাপনে বদল দরকার। যেমন, এক দিকে পাশ ফিরে শুলে নাক ডাকার সমস্যা অনেকটা হ্রাস পায়। তাই চিত হয়ে শোওয়ার অভ্যাস থাকলে তা বদলে ফেলতে হবে।
- ঘুমনোর আগে ভারী খাবার খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। রাতের খাবার খেয়েই শুতে যাবেন না। হাতে কমপক্ষে ঘণ্টা দুয়েক সময় নিয়ে রাতের খাওয়া সারুন।
- প্রতি দিন রাতে একই সময়ে ঘুমনোর অভ্যাস করুন। স্লিপ হাইজিন রক্ষা করা অত্যন্ত দরকারি।
- মাদকবর্জন,ঘুমের ওষুধ, ধুমপান বন্ধ করতে হবে।
ঘরোয়া উপায়ে উপকার না পেলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবেই। সেক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি আছে, যা একমাত্র বিশেষজ্ঞ পরামর্শেই করানো উচিত।
- প্যালেটাল সার্জারি বা অস্ত্রোপচার করা হয় কোনও ক্ষেত্রে।
- ডেভিয়েটেড সেপ্টামের (নাকের হাড় বাঁকা) জন্যও অনেক সময় শব্দ হতে পারে।
- C-pap, Bi-pap প্রভৃতি মেশিনের সাহায্যে অক্সিজেন নাক দিয়ে ঢোকাতে হবে।
- কিছু সার্জারি করা যেতে পারে, Enlarged tonsil, এডিরাডস, normal septum division ছাড়াও UPPP । [1]
এছাড়া একটি মুখ, চোয়াল এবং গলার পেশীর ব্যায়াম ব্যায়াম করে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
আমরা সাধারণত শরীরের বাড়তি মেদ বলতে হাত, পা বা পেটের মেদ বুঝি এবং এগুলো কমাতেই ব্যায়াম করে থাকি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে শরীরের প্রতিটি পেশীকে সুস্থ রাখতে আলাদা আলাদা ব্যায়ামের প্রয়োজন রয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক মুখের কিছু ব্যায়াম:
- জিহ্বাকে উপরে তালুর দিকে ধাক্কা দিন এবং আস্তে আস্তে পেছনের দিকে নিন।
- জিহ্বাকে উপরের দিকে চুষে নিন এবং আস্তে আস্তে পুরো জিহ্বা উপরের তালুতে চেপে ধরুন।
- জিহ্বার পেছনের অংশকে মুখের নিচের অংশে চেপে ধরুন। একইসাথে জিহ্বার অগ্রভাগ নিচের পাটির সামনের দাঁতে চেপে রাখুন।
- আলাজিহ্বা এবং নরম তালু (মুখের একদম ভেতরের নরম ভাগ) চেপে ধরে “আ-আ-আ” শব্দ করুন।
এই ব্যায়ামগুলো মুখের এবং চোয়ালের পেশীকে সুস্থ রাখে এবং রাতে নিঃশ্বাসের জন্য জায়গা রাখতে সাহায্য করে।[2]
চিত্রসুত্রঃ The Art of Manliness | Men's Interests and Lifestyle
, গুগল
ফুটনোটগুলি