বুকে জ্বালা-পোড়া কি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ?

বুকে জ্বালা-পোড়া কি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ?
 আমাদের দেশে অনেকেরই একটি সাধারণ সমস্যা হলো বুক জ্বালা করা। সাধারণত তেল বহুল, ঝাল ও চর্বি জাতীয় খাবার খেলে এবং একগাদা খাবার খুব তাড়াতাড়ি গোগ্রাসে গিললে, খেয়েই চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায়। অম্লরস যদি এসব কোনো কারণে পাকস্থলী থেকে ওপরের দিকে উঠে আসে তখনই বুক জ্বালা করে।

কী করবেন?

• খেয়ে শোবার সময় মাথার দিকটা পায়ের দিকের তুলনায় অন্তত চার থেকে ছয় ইঞ্চি উঁচু করতে হবে। এটা মাথার নিচে অতিরিক্ত বালিশ দিয়ে অথবা মাথার দিকের খাটের পায়ার নিচে ইট বা কাঠের টুকরা ঢুকিয়ে করা যায়।

• রাতে শুতে যাবার অন্তত দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা আগেই খাবার পাঠ চুকিয়ে ফেলুন। তা না হলে যদি শোবার ঠিক আগে আগেই খাবার খান, তাহলে ভরপেট এবং গ্র্যাভিটি দুটো মিলে অম্লরসকে খাদ্যনালি দিয়ে ঠেলে উপরে তুলবে। এতে বুক জ্বালা করবে।

• মানসিক চাপে যেহেতু পাককস্থলীতে অম্লরস বাড়ে, তাই যতটা সম্ভব চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো নানা কৌশল অবলম্বন করে শিথিল করতে হবে।

• রাতে শুতে যাবার সময় কোমরের বাঁধন শিথিল করে শোবেন।

• কোনোকিছু টেনে তুলবার সময় হাঁটু ভাঁজ করে তুলুন। পেট ভাঁজ করে তুলতে গেলে পেটে চাপ পড়ার কারণে অম্লরস ওপরের দিকে উঠে যাবার সুযোগ থাকে।

• প্রয়োজন হলে খাবার পর তিন চা চামচ করে অ্যান্টাসিড জাতীয় সিরাপ যেমন- ফ্ল্যাটামিল ডি এস/ এন্টাসিড প্লাস ইত্যাদি খেতে পারেন। এ ছাড়া অনেক সময় রেনিটিডিন অথবা ফেমোটিডিন জাতীয় অন্যান্য ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। তবে এগুলো শুরু করার আগে চিকিৎসককে দেখিয়ে নেওয়াই ভালো।

কী করবেন না?

• চর্বিওয়ালা মাংস, দুগ্ধজাত দ্রব্য খাবেন না বা খেলেও কম খাবেন, কেননা এ জাতীয় খাবার পাকস্থলীতে বেশিক্ষণ অবস্থান করে। এতে বাড়তি অম্লরস তৈরি হয়।

• ঝালমরিচ, আগ্নেয় মশলা যাদের ক্ষেত্রে বুক জ্বলুনি ঘটায় তাঁরা এগুলো খাবেন না।

• ধূমপান নিজেও করবেন না, অন্যকেও করতে দেবেন না।

• ক্যাফিন সমৃদ্ধ পানীয় যেমন : চা, কোলা এগুলো খাদ্যনালির ক্ষতি করে, তাই এগুলো এড়িয়ে চলুন। চকোলেটও বেশ ক্যাফিন আছে, তাই এটি খাওয়াও বাদ দিন।

অম্লখাবার যেমন : কমলা, লেবু এগুলোতে যে পরিমাণ অম্লরস আছে তা পাকস্থলীর তুলনায় কিছুই না, তাই ভয় পেয়ে এগুলো খাওয়া বাদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

লেখক : ডা. সজল আশফাক,সহযোগী অধ্যাপক, হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ

ফ্যাটি লিভার লিভারের সমস্যা,বূকজ্বালাপোড়ার কোন‌ সমস্যা এজন্য হয়না।

উপসর্গ

ফ্যাটি লিভারের সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না। রুটিন চেক আপ বা অন্য কোনো কারণে পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে গিয়ে ফ্যাটি লিভার ধরা পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে তখন রোগটি অনেক অগ্রসর হয়ে যায়। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে পেট ব্যাথা, দুর্বল লাগা ইত্যাদি।

চিকিৎসাফ্যাটি লিভার আসলে দুই ধরনের। একটা হলো অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজ, যারা মদ্যপান করেন তাদের হয়। তাদের জন্য অ্যালকোহল বর্জনীয়। অন্যটি নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। এটাই বেশি দেখা যায় আমাদের দেশে।

শর্করা ও ফ্যাট বিপাকক্রিয়ায় নানা ধরনের অসামঞ্জস্যের কারণে এ রোগ হয়। ওজনাধিক্য, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ট্রাইগ্লিসারাইড ইত্যাদি এর জন্য দায়ী।

অবশ্য চর্বির চেয়ে ফ্যাটি লিভারের জন্য বেশি দায়ী চিনি বা শর্করা। অতিরিক্ত শর্করাই চর্বি হিসেবে যকৃতে জমা হয়। তাই এদের উচিত হবে শর্করাজাতীয় খাবার, বেশি চিনি, কোমল পানীয়, জুস, শরবত, মিষ্টি ইত্যাদি পরিহার করা। ভাত কম খেয়ে বরং রুটি, ওটমিল ও জটিল শর্করা গ্রহণ করা।

ওমেগা ৩ তেলযুক্ত মাছ, যেমন—ইলিশ, রুপচাঁদা, স্যামন, টুনা লিভারের চর্বি শোধনে সহায়ক। এর বাইরে নানা ধরনের বাদাম বিশেষ করে আখরোট ফ্যাটি লিভারের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। প্রচুর পরিমাণে আঁশ আছে এমন শাকসবজি ও তাজা ফলমূল খেতে হবে। ফুলকপি, ব্রকলি, সবুজ শাক, অঙ্কুরোদগমসহ ছোলা বীজ ভালো। খেতে হবে আমিষের উৎস হিসেবে নানা ধরনের ডাল ও লো ফ্যাট দুধ।

ব্ল্যাক কফি ও সবুজ চা লিভারে চর্বি কমায় বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে। ইদানীং ভিটামিন ডি-এর অভাবের সঙ্গে ফ্যাটি লিভারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাই ত্বকে সূর্যালোক লাগানো ভালো।

ডা. আ ফ ম হেলালউদ্দিন

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ

আগে ফ্যাটি লিভারকে খুব হালকাভাবে দেখা হতো। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে, ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার সিরোসিস এমনকি লিভার ক্যানসারও হতে পারে। এছাড়া ফ্যাটি লিভার রোগীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই যাদের ফ্যাটি লিভার আছে তাদের উচিত রোগটি সম্পর্কে জানা এবং চিকিৎসা গ্রহণ করা।

Post a Comment

Previous Post Next Post