যাকাত : কোরআনে যাকাত এর বিধান

যাকাত : কোরআনে যাকাত এর বিধান

 যাকাত : কোরআনে যাকাত এর বিধান ।
  যাকাত শব্দটি মূল য্বা, ক্বা, ফ থেকে উৎপত্তি, যাক্কা এবং যাক্কি শব্দ থেকে আগত। যাকাত শব্দের অর্থ পরিশুদ্ধ বা Purification হওয়া, অর্থাৎ আমার সম্পদের উপর গরীব দের যে হক রয়েছে, তা আল্লাহর নির্দেশিত খাতে বন্টনের মাধ্যমে সম্পদ কে পরিশুদ্ধ করে নেওয়াই হচ্ছে যাকাত।

জাকাত শব্দের আরবি অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা, ক্রমবৃদ্ধি, আধিক্য ইত্যাদি। জাকাত সম্পদকে পবিত্র করে, বিত্তশালীদের পরিশুদ্ধ করে, দারিদ্র্য মোচন করে, উত্পাদন বৃদ্ধি করে, অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করে এবং সমাজে শান্তি আনে।

কোরআন এ শুধু যাকাত শব্দটি ৫৯ বার এসেছে, সালাত এসেছে ৯৯ বার, এরমধ্যে সালাত ও যাকাত এর গুরুত্ব বুঝাতে এটি একসাথে এসেছে ২৪ বার, যেখানে বলা হয়েছে,
"তোমরা সালাত কায়েম কর, এবং যাকাত পরিশোধ কর"
(২ঃ৪৩/৮৩/১১০/১১৭/২৭৭) (৪ঃ৭৭/১৬২) (৫ঃ১২/৫৫) (৯ঃ৫/১১/১৮/৭১) (২১ঃ৭৩) (২২ঃ৪১/৭৮) (২৪ঃ৩৭/৫৬) (২৭ঃ৩) (৩১ঃ৪) (৩৩ঃ৩৩) (৫৮ঃ১৩) (৭৩ঃ২০) (৯৮ঃ৫)।

যাকাতের প্রতিশব্দ হিসেবে ২ টি শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে । 
১. সদাকা ২. দান বা ব্যয় 'ইয়ুনফিকু'।

যাকাত ; কেন যাকাত দিবো?
(৯২ঃ১৮) যে আত্মশুদ্ধির জন্য তার ধন-সম্পদ দান করে।
(৩৩ঃ৩৩) আল্লাহ তো কেবল তোমাদের মধ্য থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান।
(৯ঃ১০৩) আপনি তাদের সম্পদ থেকে ‘সদকা’ গ্রহন করুন, এর দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন।
(৫৯ঃ৭) যাতে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান শুধু তাদের মধ্যেই ঐশ্বর্য আবর্তন না করে।
আরো দেখুনঃ (৯ঃ১০৪) (৭৬ঃ৮-৯)(৯৮ঃ৫)(২৪ঃ৫৬)(১৬ঃ৯০)(২৮ঃ৭৮).

যাকাত ; দান করলে সম্পদ বাড়েঃ 
(৩০ঃ৩৯) আল্লাহ্র সন্তষ্টি লাভের জন্য যে যাকাত তোমরা দাও (তা-ই বৃদ্ধি পায়) সুতরাং তারাই সমৃদ্ধশালী।
(২ঃ২৬১) যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস্য-বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মে।
(৬৪ঃ১৭) যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তা বহুগুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন।
আরো দেখুনঃ (২৮ঃ৫৪)(২ঃ১১০)(৫৭ঃ৭)(৫৭ঃ১৮).

যাকাত ; দানের প্রতিফলন বা রেজাল্টঃ

(৩৪ঃ৩৯) তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার বিনিময় দেবেন।
(৮ঃ৬০) আল্লাহর পথে যা কিছু ব্যয় করবে, তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেওয়া হবে।
(৯ঃ১২১) তারা ছোট বা বড় যা কিছুই ব্যয় করে তা তাদের অনুকূলে (আমলনামায়) লিপিবদ্ধ হয়।
আরো দেখুনঃ (১৩ঃ২২)(২ঃ২৭২)(২৪ঃ৫৬)(৭৩ঃ২০).

দানের ব্যাপারে যাদের অনুসরণ করবোঃ

(৭ঃ১৫৬) যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় ও আমাদের অয়াতসমূহে ঈমান আনে।
(২২ঃ৪১) তারা এমন লোক যাদেরকে আমরা যমীনের বুকে প্রতিষ্ঠিত করলে সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে;
(৯৮ঃ৫) তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে এবং সালাত কায়েম করে ও যাকাত প্ৰদান করে। আর এটাই সঠিক দ্বীন।
আরো দেখুনঃ (২ঃ৪৩)(৫ঃ৫৫)(৪ঃ১৬২)(৯ঃ১১)(৯ঃ১৮)(৯ঃ৭১)(২৪ঃ৩৭)(২৩ঃ৪)(৪২ঃ৩৮)(৩২ঃ১৬)(২৮ঃ৫৪)(২২ঃ৩৫)(১৯ঃ৩১)(৬৪ঃ১৬)

যাকাত ; দান করার সামর্থ্য আল্লাহর থেকেই পাইঃ
(৪ঃ৩৯) আল্লাহ তাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করলে তাদের কি ক্ষতি হত?
(২৩ঃ৩৫) আমরা তাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সহযোগিতা করেছি,
(৩ঃ২৭) আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রিয্ক দান করেন। ’
আরো দেখুনঃ (৮ঃ৩)(৯ঃ৫৯)(৩ঃ১৭০)(১৬ঃ৫৫)(১৬ঃ৫৬)(১০ঃ৮৮)(১০ঃ১০৭)(৯ঃ৭৫)।

যাকাত ; কি ব্যয় করবো?
(২ঃ২১৯) তারা আপনাকে জিজ্জেস করে কি তারা ব্যায় করবে ? বলুন, ‘যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত’.

যাকাত ; কিভাবে দান করবো?

(৬৫ঃ৭) বিত্তবান নিজ সমৰ্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ যা দান করেছেন তা থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে সামথ্য দিয়েছেন তার চেয়ে গুরুতর বোঝা তিনি তার উপর চাপান না।

(১৭ঃ২৯) তুমি তোমার হাত গলায় বেঁধে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণরূপে মেলেও দিও না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও আফসোসকৃত হয়ে বসে পড়বে।

(২ঃ২৭৪) যারা নিজেদের ধন-সম্পদ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাদের প্রতিদান তাদের রব-এর নিকট রয়েছে।

(২৫ঃ৬৭) যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না, কৃপনতাও করে না, আর তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।
(৩ঃ১৩৪) যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে।
আরো দেখুনঃ (১৩ঃ২২)(৩৫ঃ২৯)(৪ঃ১১৪)(২ঃ২৭১)(৩ঃ১৩৪)(১৬ঃ৭৫)(৫৭ঃ১০).

যাকাত ; কোন বস্তুটি দান করবো?

(৩ঃ৯২) তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো সওয়াব অর্জন করবে না। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবগত।
(৮ঃ৩) আমি তাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, তা থেকে দান করে।

যাকাত ; দান কেমন হওয়া উচিৎ 

(২ঃ২৬৭) হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি জমি হতে তোমাদের জন্য যা উৎপাদন করে থাকি, তা থেকে যা উৎকৃষ্ট, তা দান কর। এমন মন্দ জিনিস দান করার সংকল্প করো না, যা তোমরা মুদিত চক্ষু ব্যতীত গ্রহণ কর না।

যাকাত ; দানের ক্ষেত্রে ৩ টি উদাহরণঃ

(২ঃ২৬৪) হে মুমিনগণ, তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে তোমাদের সদাকা বাতিল করো না। সে ব্যক্তির মত, যে তার সম্পদ ব্যয় করে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে এবং বিশ্বাস করে না আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি। তার তুলনা সেই মসৃণ পাথরের মত,  যার উপর রয়েছে মাটি।  অতঃপর প্রবল বৃষ্টিপাত তাকে পরিষ্কার করে ফেলে। তারা স্বীয় কৃত কার্যের ফল কিছুই পাবে না; আল্লাহ কাফিরদেরকে পথপ্রদর্শন করেন না।

(২ঃ২৬৫) যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও নিজদেরকে সুদৃঢ় রাখার লক্ষ্যে সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা উঁচু ভূমিতে অবস্থিত বাগানের মত, যাতে পড়েছে প্রবল বৃষ্টি। ফলে তা দ্বিগুণ ফল-ফলাদি উৎপন্ন করেছে।
অর্থাৎ দানের প্রতিদান দ্বিগুণ যা কোন ভাবেই আল্লাহ নষ্ট করবেন না।

(২ঃ২৬৬)  এ আয়াতে বলা হয়েছেঃ লোক প্রদর্শন তথা সুনাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে কোন কাজ করার ক্ষতিসমূহের কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়ার জন্য এবং তা থেকে মানুষকে দূরে রাখার জন্য এখানে আরো একটি দৃষ্টান্ত পেশ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, যেমন কোন মানুষের একটি বাগান আছে। সে বাগানে সব রকমের ফল-ফসল হয়।

(অর্থাৎ, তাতে সম্পূর্ণ আয় হওয়ার আশা থাকে।) এখন এই লোকটি বার্ধক্যে পৌঁছে গেল। তার আছে ছোট ছোট সন্তান-সন্ততি। (অর্থাৎ, বার্ধক্য এবং বয়সের ভারের কারণে সে মেহনত-পরিশ্রম করা থেকে অক্ষম হয়ে গেছে। এখন এই ছোট ছোট দুর্বল সন্তান দ্বারা তার বার্ধক্যে সহযোগিতা পাওয়া তো দূরের কথা, তারা তো নিজেদের ভারই বহন করার ক্ষমতা রাখে না।) এমতাবস্থায় একটি ঘূর্ণিবায়ু এসে তার বাগানকে ভষ্মীভুত করে দিল।

 এখন না সে পুনরায় উক্ত বাগানকে আবাদ করার ক্ষমতা রাখে, আর না তার সন্তানরা। কিয়ামতের দিন লোককে দেখানোর জন্য ব্যয়কারীদের অবস্থা ঠিক এই রকমই হবে। মুনাফেক্বী ও কপটতার কারণে তাদের সমস্ত নেক আমল নষ্ট হয়ে যাবে; কোন উপকারে আসবে না। অথচ সেখানে নেকীর বড়ই প্রয়োজন হবে এবং পুনরায় নেকীর কাজ করারও কোন সুযোগ থাকবে না।

যাকাত ; সদকা কবুল হওয়ার দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে।

 (১) দান করে অনুগ্রহ প্রকাশ করতে পারবে না  । 
(২) গ্রহীতাকে ঘৃণিত মনে করা যাবে না। অর্থাৎ তার সাথে এমন কোন ব্যবহার করতে পারবে না, যাতে সে নিজেকে ঘৃণিত ও হেয় অনুভব করে কিংবা কষ্ট পায়।


যাকাত ; কার্পণ্য করা যাবে না । 

(৪৭ঃ৩৮) তোমরাই তো তারা যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে বলা হচ্ছে অথচ তোমাদের অনেকে কৃপণতা করছে; যারা কার্পণ্য করে, তারা তো কার্পণ্য করে নিজেদের প্রতি। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত।
(৩ঃ১৮০) আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তাদের জন্য তা মঙ্গল, যেটাতে তারা কৃপণতা করবে কেয়ামতের দিন সেটাই তাদের গলায় বেড়ী হবে।
(৪ঃ৩৭) যারা কৃপণতা করে এবং মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয় এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন তা গোপন করে। আর আমরা কাফেরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।
আরো দেখুনঃ (৯ঃ৭৬)

যাকাত ; যে দান বাতিল হয়ঃ

(৪ঃ৩৮) আর যারা মানুষকে দেখাবার জন্য তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান আনে না। আর শয়তান কারো সঙ্গী হলে সে সঙ্গী কত মন্দ!
(১৭ঃ২৭) অপব্যয় কারী শয়তানের ভাই।
(৯ঃ৫৩) 'তোমার ইচ্ছাকৃত ব্যয় কর অথবা অনিচ্ছাকৃত, তোমাদের কাছে থেকে তা কিছুতেই গ্রহণ করা হবে না; নিশ্চয় তোমরা হচ্ছ ফাসিক সম্প্রদায়।’
আরো দেখুনঃ (৭৪ঃ৬)(৩ঃ১১৭)(৯ঃ৫৪)

অসামর্থ্য ব্যাক্তি দান না করলেও হবেঃ
(৯ঃ৯১) যারা দুর্বল, যারা পীড়িত এবং যারা অর্থ সাহায্যে অসমর্থ, তাদের কোন অপরাধ নেই, যদি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের হিতাকাঙ্খী হয়। মুহসিনদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন পথ নেই; আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(২ঃ২৮০) আর যদি সে অভাবগ্রস্থ হয় তবে সচ্ছলতা পর্যন্ত তা অবকাশ। আর যদি তোমরা সাদকা কর তবে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে।
আরো দেখুনঃ (৯ঃ৭৯)

দান না করেও দানের সওয়াব পাওয়াঃ

(৯ঃ৯২) আর ঐ লোকদেরও (বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন পথ)... তারা এমন অবস্থায় ফিরে গেল যে, তাদের চক্ষু হতে অশ্রু বইতে লাগল এ দুঃখে যে, তাদের কাছে ব্যয় করার মত কোন কিছুই নেই।

কাকে দান করবো?

(২ঃ২৭৩) অভাবগ্রস্ত লোকদের প্রাপ্য; যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, জীবিকার সন্ধানে ভূপৃষ্ঠে ঘোরা-ফেরা করতে পারে না। তারা কিছু চায় না বলে, অবিবেচক লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাদেরকে তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে; তারা লোকেদের কাছে নাছোড়বান্দা হয়ে যাচ্ঞা করে না।

যাকাত ; কি কি খাতে ব্যয় হবে?

(৯ঃ৬০) সদকা তো শুধু ফকীর, মিসকীন ও সদকা আদায়ের কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্য, যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তিতে, ঋণ ভারাক্রান্তদের জন্য, আল্লাহ্র পথে ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

(২ঃ১৭৭) সম্পদ দান করবে তার ভালবাসায় আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও দাসমুক্তির জন্য এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দিবে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করবে, অর্থ-সংকটে, দুঃখ-কষ্টে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করবে। তারাই সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকী।

(২ঃ২১৫) ‘যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় করবে তা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন এবং মুসাফিরদের জন্য। উত্তম কাজের যা কিছুই তোমরা কর আল্লাহ্ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত।

(৮ঃ৪১) যুদ্ধে যা তোমরা গনীমত হিসেবে লাভ করেছ ,তার এক-পঞ্চামাংশ আল্লাহ্র, রাসূলের, রাসূলের স্বজনদের, ইয়াতীমদের, মিসকীনদের এবং সফরকারীদের।
(৫৭ঃ৭) আল্লাহ্ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর রাসূলকে 'ফায়’ হিসেবে যা কিছু দিয়েছেন তা আল্লাহ্র, রাসূলের, রাসূলের স্বজনদের, ইয়াতীমদের, মিসকীন ও পথচারীদের।

(৪ঃ৮) সম্পত্তি বন্টনকালে আত্মীয়, ইয়াতীম এবং অভাবগ্রস্ত লোকদের উপস্থিত থাকলে তাদেরকে তা থেকে কিছু দিবে এবং তাদের সাথে সদালাপ করবে।

বন্টন পদ্ধতি বা পরিমানঃ
'গানিমতুম' থেকে 'গানিমা' অর্থ যেকোনো ইনকাম, উপার্যন বা সম্পদ বুঝায়।
'গনীমত' (৮ঃ৪১) 'যুদ্ধে যা তোমরা গনীমত হিসেবে লাভ করেছ ,তার এক-পঞ্চামাংশ' অর্থাৎ ১০০ টাকায় ২০ টাকা বা ২০%.
যুদ্ধলব্ধ সম্পদ অর্জন ৩ ভাবে কোরআন এ বর্নিত হয়েছে।

১. 'গনীমত' (৮ঃ৬৯) তোমরা যে গনীমত লাভ করেছ তা বৈধ ও উত্তম বলে ভোগ কর।

২. 'ফাই' বা যা বিনা যুদ্ধে বা চুক্তির মাধ্যমে অর্জিত,
(৫৭ঃ৭) আল্লাহ্ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর রাসূলকে 'ফায়’ হিসেবে যা কিছু দিয়েছেন তা আল্লাহ্র।

৩. 'আনফাল' (৮ঃ১) লোকেরা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে আনফাল (যুদ্ধ লব্ধ সম্পদ) সম্বদ্ধে; বলুন, ‘ যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আল্লাহ্ এবং রাসূলের।

যাকাত ; কখন যাকাত দিবো?
(৬ঃ১৪১) যখন ফলবান হবে তখন সেগুলোর ফল খাবে এবং ফসল তোলার দিন সে সবের হক প্রদান করবে।
অর্থাৎ যেদিন ইনকাম হবে সে দিন এর হক প্রদান করতে হবে, এটা প্রত্যহিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক হতে পারে অথবা বাৎষরীকও হতে পারে।

যাকাত ; স্বর্ন ও রৌপ্য প্রসঙ্গঃ
(৯ঃ৩৪) যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দাও।
অর্থাৎ ব্যাবহায্য ব্যতীত কোন স্বর্ন-রৌপ্য জমা রাখা যাবে না।

যাকাত ; সম্পদ জমা করা যাবে নাঃ

(১০৪ঃ২) যে সম্পদ জমায় ও তা বার বার গণনা করে।
(১০৪ঃ৪) সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায় (প্রজ্বলিত আগুন)
(২ঃ১৯৫) তোমরা আল্লাহ্র পথে ব্যয় কর এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না। আর তোমরা ইহ্সান কর, নিশ্চয় আল্লাহ্ মুহসীনদের ভালবাসেন।

যারা যাকাত অস্বীকার করে তারা আখেরাতও অস্বীকারকারীঃ

(৪১ঃ৭) যারা যাকাত প্ৰদান করে না এবং তারাই আখিরাতের সাথে কুফরিকারী।
(৪ঃ৩৯) আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান আনলে এবং আল্লাহ তাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করলে তাদের কি ক্ষতি হত?
(৩৬ঃ৪৭) যখন তাদেরকে বলা হয়, 'আল্লাহ্ তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় কর' তখন কাফিররা মুমিনদেরকে বলে, 'যাকে আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে খাওয়াতে পারতেন আমরা কি তাকে খাওয়াব? তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছ।'
(৯ঃ৯৮) তারা আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে তা জরিমানা গণ্য করে এবং তোমাদের বিপর্যয়ের প্রতীক্ষা করে।

যারা যাকাত পারিশোধ করে তারাই পরকাল বিস্বাসীঃ

(২৭ঃ৩) যারা সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় আর তারাই আখেরাতে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে।
(৪ঃ১৬২) সালাত প্রতিষ্ঠাকারী, যাকাত প্রদানকারী এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান আনয়নকারী, তাদেরকে অচিরেই আমরা মহা পুরস্কার দেব।
(৫ঃ১২) তোমরা যদি সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও, আমার রাসূলগণের প্রতি ঈমান আন, তাঁদেরকে সম্মান-সহযোগিতা কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর, তবে আমি তোমাদের পাপ অবশ্যই মোচন করব এবং অবশ্যই তোমাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতসমূহে, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত’।

ব্যয় কর, তোমাদের মৃত্যু আসার পূর্বে । 

(৬৩ঃ১০) আমি তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় কর, তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে। কেননা তখন সে বলবে, হে আমার রব, যদি আপনি আমাকে আরো কিছু কাল পর্যন্ত অবকাশ দিতেন, তাহলে আমি দান-সদাকা করতাম। আর সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।

লিমিটেশনঃ 'যাকাত', 'সাদাকাহ' এবং 'দান' এর মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য আছে কি না আমার জানা নাই।

আমি কোন মুফতি, শায়েখ বা কোন আলেম নই ,  তবুও নিজে কোরআন পড়ে যা উপলব্ধি করলাম, তা উপস্থাপন করেছি মাত্র।
ভুল ত্রুটি শুধরে দিলে 'সীরাতুল মুস্তাকীম' (সঠিক পথ) পেতে সহজ হবে।

পরিশেষে ; 

এখন আমরা বা সমাজে প্রচলিত জাকাত বন্টন হচ্ছে ,  ৪০ ভাগের একভাগ (২.৫০%) জাকাত 

জাকাত কিন্তু অন্য নবীদের জন্য ছিল /  ইসমাঈল (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সে তার পরিবার-পরিজনকে নামাজ ও জাকাতের নির্দেশ দিত।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৫৫)

ঈসা (আ.)-এর প্রসঙ্গে এসেছে, তিনি বলেছেন, ‘যেখানেই আমি থাকি না কেন, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যত দিন জীবিত থাকি তত দিন নামাজ ও জাকাত আদায় করতে।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৩১) তারা কিভাবে দিয়েছে কোন হাদিস আছে ?

জাকাত / সাদকা / দান শুধু রাসুল এর উপরে বা তার উম্মতের জন্য না ,  যাকাত , নামায , রোজা সব নবি রাসুল এর জন্নই ছিল  । 

>>> নিশ্চয় সদাকা হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। ৯:৬০

তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, এ দু’টোয় রয়েছে বড় পাপ ও মানুষের জন্য উপকার। আর তার পাপ তার উপকারিতার চেয়ে অধিক বড়। আর তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে। বল, ‘যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত’। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর। ২:২১৯

তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে? বল, ‘তোমরা যে সম্পদ ব্যয় করবে, তা পিতা-মাতা, আত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরদের জন্য। আর যে কোন ভাল কাজ তোমরা কর, নিশ্চয় সে ব্যাপারে আল্লাহ সুপরিজ্ঞাত’। ২:২১৫

তাদের সম্পদ থেকে সদাকা নাও। এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে। আর তাদের জন্য দো‘আ কর, নিশ্চয় তোমার দো‘আ তাদের জন্য প্রশান্তিকর। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। ৯:১০৩
তারা কি জানে না যে, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাওবা কবূল করেন এবং সদাকা গ্রহণ করেন। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবূলকারী, পরম দয়ালু।৯:১০৪

তাই পরিশেষে আমি জা বুজলাম ( ব্যক্তিগত ভাবে ) 

সদকা মানে দান
জাকাত মানে ( সম্পদ ) পরিশুদ্ধ করা
জাকাত ( সম্পদ ) পরিশুদ্ধ করুন (সদকা )করে ।
সাদকা কাকে দিবেন কোথায় দিবেন তাও বলে দিয়েছে আল্লাহ্


কিন্তু  সমাজে প্রচলিত জাকাত বন্টন হচ্ছে  ৪০ ভাগের একভাগ (২.৫০%)
কিন্তু আল্লাহ্ বলতেছে , ‘যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত’ (২:২১৯)  সব দান বা সাদকা করে দিতে । 

আমি মনে করি , প্রত্যেককেই নিজ সামৰ্থ্য অনুযায়ী, সম্পদ(الۡمَالَযেসকল খাতে সম্পদ ব্যয় (یُنۡفِقُوۡنَ ),( یُؤۡتِیۡ مَالَهٗ)( اٰتَی الۡمَالَ) (الصَّدَقٰتُ) করতে হবে, (2:215,219),(65:7)(2:177) (51:19) (70:24-25) (90:13-16) (68:21-27) (69:34)(107:3)(74:44)(89:17,18) (76:7-9) (92:18) (9:60) (8:41)(47:36-38)

আবার দান এর ক্ষেত্রে , 
 তুমি একেবারে ব্যয়কুন্ঠ/বদ্ধমুষ্ঠি হয়ো না এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃত, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে। ১৭:২৯


সবশেষে যাকাত কিছু কথা ।  

‘যাকাত’ কী, কেনো?
ইসলামের প্রথাগত ঘরণায় (Traditionalist) অর্থাৎ প্রচলিত মোল্লাতান্ত্রিক ডিসকোর্সে ‘যাকাত’ বলতে বোঝায় অর্জিত সম্পদের উপর নির্দিষ্ট অনুপাতে (২.৫%) ধার্যকৃত আবশ্যকীয় দান/করা পরিশোধ করা। যাকাতের তাৎপর্য সংকীর্ণ অর্থে সম্পদের পরিশুদ্ধতার জন্যে, ব্যাপক অর্থে নফসের পরিশুদ্ধতার জন্যে। দানকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেখানে যাকাত হচ্ছে আবশ্যকীয় দান ও সাদাকা ঐচ্ছিক দান। তবে কুর’আনের যাকাত ও দান সম্পর্কিত আয়াতগুলি পাঠ করে যাকাতের এমন অর্থ যথার্থ মনে হয় না।

(২) কুর’আনে ‘যাকাত’ শব্দটি এসেছে অনেকবার, কিন্তু সম্পদের উপর নির্দিষ্ট অনুপাতে ধার্যকৃত আবশ্যকীয় করারোপ, বা দান হিসেবে একবারও উল্লেখ করা হয় নি। ব্যয় করা বা দান করা বোঝাতে সাদাকা ও 'আনফাক' শব্দটি এসেছে কুর'আনে। কল্যাণ কাজে নিজের অর্জিত সম্পদ থেকে ব্যয় বা দান করা প্রত্যেক স্বচ্ছল মুসলিমের জন্য আবশ্যকীয় মনে করাই উচিত কেননা তা আল্লাহ্‌র  নির্দেশ, এটি ঐচ্ছিক বিষয় নয়।  যাকাতের নামে যা দান করা হয়, তা মূলত সাদাকা বা আনফাক (ব্যয় করা)। যতোবার দানের কথা এসেছে তা ‘যাকাত’ নয় সাদাকা’, 'আনফাক' শব্দের সাথে বা তার আনুষঙ্গিক হয়ে এসেছে। কুর’আনে কোথাও আবশ্যকীয় বা ঐচ্ছিক রূপে বা অর্জিত সম্পদের উপর দার্যকৃত হারে দানের উল্লেখ নেই।

নিচের আয়াতগুলিতে কল্যাণ কাজে ব্যয় করা বা দান করা সংক্রান্ত, কিন্তু কোথাও 'যাকাত' শব্দটির উল্লেখ নেই, উল্লেখ আছে 'সাদাকা' ও 'আনফাক' শব্দগুলি।

‘তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে, কী তারা ব্যয় (আনফাক) করবে; বলো, কল্যাণের জন্য যা কিছু তোমরা ব্যয় করো, তা হবে পিতা-মাতা, আত্নীয়-পরিজন, অনাথদের জন্যে, দুঃস্থ-দরিদ্র ও পথচারী- মুসাফিরদের জন্যে; আর তোমরা যে সৎকর্মই করো, আললাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।’ (কুর’আন,২/২১৫)

'...আর তারা জিজ্ঞেস করে, তারা কী ব্যয় (ইউনফিকুনা) করবে (কী ব্যয় করা উচিত)? বলো, প্রয়োজনের অতিরিক্ত (যা কিছু); এভাবে আললাহ তাঁর আয়াত সমূহ তোমাদের কাছে স্পষ্ট করেন যাতে তোমরা উপলব্ধি করতে পারো।'(কুর’আন,২/২১৯ )

‘যারা নিজেদের ধনসম্পদ আললাহর (নির্দেশিত) পথে ব্যয় (আনফাক) করে, তাদের তুলনা একটি শস্যবীজের মতো, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়, প্রতিটি শীষে থাকে একশটি করে শস্যদানা; আললাহ যার প্রতি ইচ্ছা করেন তাকে বহুগুণ প্রবৃদ্ধি দান করেন; আললাহ অনন্ত প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’(কুর’আন,২/২৬১)

‘যারা আললাহর (নির্দেশিত)পথে ধনসম্পত্তি ব্যয় (আনফাক) করে আর এরপর দানের কথা প্রচার করে না ও কষ্টও দেয় না, তাদের পুরস্কার রয়েছে তাদের পালনকর্তার কাছে; আর তাদের কোনো ভয় নেই, তারা দুঃখিতও হবে না।’(কুর’আন,২/২৬২)

‘নম্র কথার মাধ্যমে ক্ষমাপরায়নতা অবলম্বন করা ঐ দানের (সাদাকা) চেয়ে উত্তম যার পরে কষ্ট দেয়া হয়।; আললাহ অভাবমুক্ত, সহনশীল।’(কুর’আন,২/২৬৩)

‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা দানের কথা প্রকাশ করে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দানকে (সাদাকা) ঐ ব্যক্তির ন্যায় নষ্ট করো না, যে তার ধন-সম্পদ শুধু লোক দেখানোর জন্য ব্যয় (আনফাক) করে, এবং আললাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না; তার দৃষ্টান্ত হলো একটি শিলাখন্ডের মতো, যার উপর কিছু মাটির আস্তরণ পড়েছিলো; এরপর প্রবল বর্ষণ হলো, একে ধুয়ে সম্পূর্ণ সাফ করে দিলো; তাদের উপার্জন তাদের কোনো কাজে এলো না; আর আললাহ সত্য অস্বীকারকারীদেরকে পথ দেখান না।’(কুর’আন,২/২৬৪)

‘আর যারা ব্যয় করে (আনফাক) আললাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়, আর তাদের অন্তরকে সুদৃঢ় করার জন্য,
তাদের দৃষ্টান্ত হলো, কোনো টিলায় অবস্থিত একটি বাগানের মতো, যেখানে মুষল ধারে বৃষ্টি হলে দ্বিগুণ ফল উৎপন্ন হয়, আর প্রবল বর্ষণ না হলেও হালকা ঝিরঝির বৃষ্টিই যথেষ্ট; আর তোমরা যাই করো আললাহ তা দেখেন।’ (কুর’আন,২/২৬৫)

‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যা অর্জন করো আর আমি তোমাদের জন্য জমিন থেকে উৎপন্ন করি, তা থেকে ভালো জিনিস ব্যয় করো (আনফাক), আর তা থেকে খারাপ জিনিস বেছে দান করতে যেও না, যখন চোখ বন্ধ না করে তোমরাই তা নিজেদের),আয়াত- জন্য গ্রহণ করবে না,আর জেনে রেখো আললাহ অভাব মুক্ত, প্রশংসিত।’(কুর’আন,২/২৬৭)
‘কল্যাণমূলক যা কিছু তোমরা ব্যয় করো (আনফাক) বা ব্যয় করার প্রতীজ্ঞা (মানত) করো, নিশ্চয় আললাহ তা জানেন; অন্যায়কারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’(কুর’আন,২/২৭০)

‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো (সাদাকা), তা ভালো, আর যদি তা গোপনে করো ও অভাবগ্রস্তদেরকে দাও, তা আরও ভালো, এতে(দানের কারণে)তোমাদের কিছু পাপমোচন হবে; আর তোমরা যা কিছু করো আললাহ তা জানেন।’ (কুর’আন,২/২৭১)

‘তাদেরকে সৎপথে আনার দায়িত্ব আপনার নয়, বরং আললাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালনা করেন;
আর যা কিছু ভালো তোমরা ব্যয় করো (আনফাক) সে তো নিজেদের কল্যাণের জন্যই করো, তোমরা আললাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করো না;
কল্যাণমূলক যা কিছু তোমরা ব্যয় করো তার প্রতিদান পুরোপুরি দেয়া হবে, আর তোমাদের প্রতি কোনো অন্যায় করা হবে না।’ (কুর’আন,২/২৭২)

‘(সাহায্য-দান) ঐ সমস্ত অভাবী মানুষের জন্য, যারা আললাহর পথে আবব্ধ হয়ে পড়েছে, অন্যত্র বিচরণ করতে পারে না, তাদের নিবৃত্তি(সংযম) দেখে নির্বোধেরা তাদেরকে স্বচ্ছল মনে করে; তোমরা তাদেরকে তাদের লক্ষণ দিয়ে চিনতে পারবে; তারা মানুষের কাছে কাকুতি-মিনতি করে সাহায্য চায় না; আর তোমরা কল্যাণকাজে(দাতব্য) যা কিছু ব্যয় করো, নিশ্চয় আললাহ তা জানেন।’ (কুর’আন,২/২৭৩

‘যারা নিজেদের সম্পদ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে (আনফাক), নিশ্চয় তাদের পুরষ্কার আছে তাদের প্রতিপালকের কাছে; আর তাদের কোনো ভয় নেই, তারা দুঃখিতও হবে না।’ (কুর’আন,২/২৭৪)
‘আললাহ সুদকে ক্ষয়িষ্ণু করেন, আর দানকে (সাদাকা) বর্ধিত করেন; আললাহ অকৃতজ্ঞ, অপরাধীকে ভালোবাসেন না।’ (কুর’আন,২/২৭৬)

‘যদি ঋণগ্রহী দুর্দশাগ্রস্ত হয়, তবে অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত তাকে সময় দাও, আর যদি দান (সাদাকা) হিসেবে মার্জনা করে দাও, তবে তা আরও উত্তম, যদি তোমরা তা উপলব্ধি করো।’(কুর’আন,২/২৮০)
‘প্রিয় বস্তু ব্যয় (আনফাক) না করলে তোমরা যথার্থ পূণ্য লাভ করতে পারবে না, তোমাদের ব্যয় করা বস্তু সম্পর্কে আললাহ ভালো জানেন।’ (কুর’আন,৩/৯২)

‘যারা ব্যয় করে (আনফাক), সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় আর তারা ক্রোধ দমন করে, আর ক্ষমা করে মানুষকে ; আললাহ সৎ কর্মশীলদের ভালোবাসেন।’(কুর’আন,৩/১৩৪)
‘আর সম্পদ বন্টনের সময় যদি নিকট আত্মীয়-স্বজন,এতিম,অভাবগ্রস্তরা উপস্থিত হয় তখন তা থেকে তাদেরকেও কিছু দিও,আর তাদের সাথে মহানুভবতার সঙ্গে কথা বলো।’ (কুর’আন,৪/৮)

‘তাদের গোপন শলা-পরামর্শের অধিকাংশের মধ্যেই ভালো কিছু নেই, তবে যে লোকজনের মাঝে দাতব্য (সাদাকা), মহানুভবতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নির্দেশ দেয় তার কথা ভিন্ন; যে আললাহর সন্তুষ্টির জন্য কল্যাণ কাজে নিয়োজিত থাকে আমি তাকে বড় পুরষ্কার দিবো।’ (কুর’আন,৪/১১৪)

‘ওহে বিশ্বাসীগণ!অনেক ধর্মীয় বুজুর্গ ও পন্ডিতবর্গ অন্যের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলেছে; এবং মানুষকে আল-লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত রাখছে। আর যারা সোনা-রূপা জমা করে রাখে, আললাহর পথে ব্যয় (আনফাক) করে না তাদেরকে এক কষ্টকর যন্ত্রণার শাস্তির সংবাদ দিন।’(কুর’আন,-৯/৩৪)

সদকা(দাতব্য)শুধু তাদের হক যারা গরীব, নিঃস্ব, যারা সংশ্লিষ্ট কর্মচারী,যাদের মন জয়ের প্রয়োজন, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের ঋণমুক্তির জন্য, আললাহর পথে সংগ্রামরতদের ও মুসাফিরদের জন্য; এটাই আললাহর বিধান; আললাহ সর্বজ্ঞ, জ্ঞানী।’(কুর’আন,৯/৬০)

‘বস্তুত, আত্ম-সমার্পণকারী(মুসলিম)পুরুষ ও আত্ম-সমার্পণকারী(মুসলিম)নারী, বিশ্বাসী (ইমানদার)পুরুষ ও বিশ্বাসী(ইমানদার) নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ ও ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল (সাদাকা) পুরুষ ও দানশীল নারী, সংযমী (সিয়াম পালণকারী) পুরুষ ও সংযমী (রোযা পালনকারী) নারী, সতীত্ব রক্ষাকারী পুরুষ ও সতীত্ব রক্ষাকারী নারী, অধিক হারে আল-লাহকে স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক হারে আল-লাহকে স্মরণকারী নারী; আললাহ তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহা পুরুষ্কার।’ (কুর’আন,৩৩/৩৫)


তাহলে আলাদাভাবে ‘যাকাত’ শব্দের উল্লেখ রয়েছে কেনো কুর’আনে?

যাকাতের বুৎপত্তি গত অর্থ পবিত্রতা, পরিশুদ্ধতা, আত্মশুদ্ধি। কুর’আনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সালাত প্রতিষ্ঠার সাথে যাকাতের নির্দেশনা এসেছে, যাকাত দেয়ার বিষয় হলে কাকে দেয়া হবে তার উল্লেখ নেই। কাজেই ‘ওয়াতুল যাকাতা’ ওয়াতুল মানে নির্দিষ্টভাবে ‘যাকাত দাও’ নয়, বরং ‘পরিশুদ্ধি অর্জন করো’, বা আনো’, । এ যাকাত নফসের পরিশুদ্ধতা অর্জনের জন্যে আল্লাহ্‌র  নির্দেশিত পথে কল্যাণ কাজে আত্মনিয়োগ করা, নির্দিষ্ট হারে বাৎসরিক কর প্রদান বা দান নয়।

পরিশুদ্ধি বা পবিত্রতা অর্থে 'যাকাত শব্দটির প্রয়োগ সুস্পষ্ট কুর'আনের কতিপয় আয়াতে, সেখানে দান বা অন্য অর্থের প্রয়োগ প্রাসঙ্গিক হয় না বা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না।-

'ও হে ইয়াহিয়া! এ গ্রন্থ দৃঢ়ভাবে ধরো, আর শৈশবেই আমি তাকে দান করেছিলাম প্রজ্ঞা, আর আমার সহানুভূতি ও পবিত্রতা (যাকাত); আর সে ছিলো ধার্মিক।' (কুর’আন,১৯/১২,১৩)

'হে যারা বিশ্বাসীরা! শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, আর যে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, বস্তুত সেতো অনৈতিক ও অন্যায় কাজেই প্ররোচিত করে; আর যদি তোমাদের উপর আললাহর করুণা ও ক্ষমা না থাকতো তবে তোমাদের মধ্যে কেউ কখনো পবিত্র/ পরিশুদ্ধ (যাকা/যাকাত) হতে পারতে না; আললাহ যাকে ইচ্ছা পরিশুদ্ধ করেন; আললাহ সব শোনেন, সব জানেন।'(কুর’আন,২৪/২১)

'ফেরাউনের কাছে যাও, নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘনকারী, আর তাকে বলো, তুমি কি আত্মশুদ্ধ (তাযাক্কা/যাকাত) হবে?'(কুর’আন,৭৯/১৭,১৮)

‘আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, আর পবিত্রতা অর্জন করো/পরিশুদ্ধ হও (যাকাত), আর যারা অবনত হয় তাদের সাথে অবনত হও।’ (কুর’আন,২/৪৩)

‘আর যখন আমি বনী ইসরাইলের কাছ থেকে অংগীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল-লাহ ছাড়া অন্যের উপাসনা করো না, আর পিতা-মাতা, আত্নীয়-স্বজন, এতীম ও দরিদ্রদের সাথে ভালো আচরণ করো, আর মানুষজনের সাহতে ভালো কথা বলো, আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, আর পবিত্র/পরিশুদ্ধ হও (যাকাত); অতঃপর তোমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ছাড়া মুখ ফিরিয়ে নিলে, আর তোমরা অস্বীকারীই রয়েছো।’(কুর’আন,২/৮৩)

'আর সালাত প্রতিষ্ঠা করো আর পবিত্র/পরিশুদ্ধ হও (যাকাত); আর তোমরা নিজের জন্য আগে থেকে যতোটুকু সৎকর্ম প্রেরণ করবে, তা আল-লাহর কাছে খুঁজে পাবে; নিশ্চয়! তোমরা যা কিছু করো, আললাহ তা দেখেন।' (কুর’আন,২/১১০)

‘সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান (বিশ্বাস)আনবে আললাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই ভালোবাসায় (আললাহর সুন্তুষ্টির জন্য) আত্মীয়-স্বজন,এতিম গরীব, মুসাফির, সাহায্য প্রার্থী, ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য; আর যারা (নামায)প্রার্থণা প্রতিষ্ঠা করে, পবিত্র/পরিশুদ্ধ হয় (যাকাত), এবং যারা কৃতপ্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী ও অভাবে,রোগে শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী- তারাই হলো সত্যাশ্রয়ী,আর তারাই পরহেজগার (সঠিকপথপ্রাপ্ত/ধার্মিক)।’(কুর’আন,২/১৭৭)

‘তোমাদের অভিভাবক (বন্ধু) কেবল মাত্র আললাহ; আর তাঁর রাসুল, আর বিশ্বাসীগণ, যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, আর আত্মশুদ্ধ/ পরিশুদ্ধ হয় (যাকাত ), আর আললাহর সামনে বিনম্র(অবনত হয়)।’(কুর’আন,৫/৫৫)

'আর বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারী একে অপরের সাহায়ক বন্ধু। তারা ভালো কাজের উপদেশ দেয় এবং মন্দ কাজে নিষেধ করে। নিয়মিত প্রার্থণা(সালাত) করে, আত্ম-শুদ্ধ (যাকাত) হয়, আর আললাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মেনে চলে। তাদেরকেই, আললাহ তাদের উপর করুণা বর্ষণ করবেন। নিশ্চয় আললাহ সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী।'(কুর’আন,৯/৭১)

'তোমার সৃষ্টিকর্তা জানেন তুমি রাতের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ প্রার্থণায় জেগে থাকো, অথবা কখনো রাতের অর্ধেক, কখনো বা এক তৃতীয়াংশ, আর তোমার সাথের একটি দলও; আর আললাহ রাত ও দিনের পরিমাপ করেন। তিনি জানেন তোমরা সারা রাত জাগে থাকতে পারো না, তাই তিনি তোমাদের ক্ষমা করেছেন। তাই কুর’আনের যতোটুকু সহজ ততোটুকুই পড়ো, তিনি জানেন যে তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ আললাহর অনুগ্রহ পেতে ভিন দেশে যাবে, এমনকি অন্যরা আললাহর জন্য সংগ্রামে লিপ্ত হবে! কাজেই কুর’আনের যতোটুকু সহজ তাই পড়ো। নামায প্রতিষ্ঠা করো,আর পরিশুদ্ধ হও (যাকাত) এবং আললাহকে দাও উত্তম ঋণ, আর নিজের জন্য যা কিছু ভালো অগ্রীম পাঠাবে, ফেরত পাবে আল-লাহর থেকে তার চেয়ে উত্তম ও বর্ধিত আকারে পুরষ্কার হিসেবে। ক্ষমা চাও আললাহর কাছে, আললাহ ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু। '(কুর’আন,৭৩/২০)

‘আর তোমরা মানুষের ধন-সম্পদে বৃদ্ধি পাবে এ আশায় সুদে যা খাটাও,আললাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না; কিন্তু তোমরা পবিত্রতা থেকে (যাকাত) যা দান করো আললাহকে পাওয়ার আশায়,তাই বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।’(কুর’আন,৩০/৩৯)

এখানে নির্দিষ্টভাবে সম্পদ থেকে দান করার কথা বোঝানো হয়নি। 

‘যে তার সম্পদ দান করে আত্মশুদ্ধির জন্য, আর কারো কাছ থেকে (তার উপর) কোনো প্রতিদান-অনুগ্রহ পেতে নয়, শুধুমাত্র প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের আশা ছাড়া। সে নিশ্চয়ই তৃপ্ত হবে।’(কুর’আন,৯২/১৮-২১)


 এখন প্রশ্ন হলো, যদি যাকাতের প্রচলিত অর্থ ভুল হয়ে থাকে তবে এ বিভ্রান্তির কী কারণ? এ নিয়ে ঐতিহাসিক অনুসন্ধান করা উচিত। যেমন যাকাত নবী মোহাম্মদ (তার আত্মার প্রতি শান্তি) ও তাঁর পরিবার দান করেছেন, কিন্তু কখনো যাকাত দিয়েছেন, এমন তথ্য-প্রমাণ আমার জানা নেই। মদিনায় রাষ্ট্র কায়েমের পর থেকে খলিফাগণ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে সম্পদের একাংশ কর হিসেবে আরোপ করেন, এই করারোপ ছিলো স্বচ্ছলদের বাধ্যতামূলক। আর মুসলমান হিসেবে বাধ্যতামূলক এ দানের সাথে পরিশুদ্ধতার সম্পর্ক রচিত হয়। তখন থেকে কোনোভাবে যাকাত শব্দটি অর্থ-বিভ্রাটে আটকে পড়েছিলো কি? আল্লাহ্‌ ই ভাল জানেন । 

Post a Comment

Previous Post Next Post