ইসলামী ব্যাংকিংয়ের কয়েকটি জনপ্রিয় পদ্ধতি –শাইখ তাকী উসমানী (হাফিযাহুল্লাহ).
মুশরাকা :
মনে রাখবেন, Interest এর বিকল্প 'কর্জে হাসানা' নয় যে, আপনি কাউকে এমনিতেই ঋণ দিয়ে দেবেন। বরং এর বিকল্প হলো- 'মুশরাকা' (অংশীদারিত্ব)। অর্থাৎ কেউ যদি ঋণ দেয়, তা হলে ঋণদাতা এ কথা বলতে পারে, আমি আমার ব্যবসায় অংশীদার হতে চাই। ব্যবসায় যদি তোমার লাভ হয়, তা হলে তাঁর একটি অংশ আমাকে দিতে হবে। আর যদি ক্ষতি হয়, তা হলে আমি তাতেও তোমার অংশীদার হবো। এভাবে ঋণদাতা এই ব্যবসার লাভ-লোকসানে অংশীদার হয়ে যাবে এবং ব্যবসাটি অংশীদারিত্বের ব্যবসায় পরিণত হবে। এই হলো Interest এর বিকল্প পদ্ধতি। অংশীদারিত্বের তাত্ত্বিক দিকটি আমি আপনাদের সম্মুখে আগেও উপস্থাপন করেছি যে, Interest পদ্ধতিতে সম্পদের অতি সামান্য অংশ ডিপোজিটারদের হাতে যায়। কিন্তু যদি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কারবার পরিচালনা করা হয় এবং অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পুঁজি বিনিয়োগ (Financing) করা হয়, তা হলে এই পদ্ধতিতে সম্পদের বণ্টন উপরের দিকে যাওয়ার পরিবর্তে নিচের দিকে আসবে।
ইজারা :
আল্লাহ পাক ইসলামের আদলে আমাদেরকে এমন একটি দ্বীন দান করেছেন, যার মধ্যে 'অংশীদারিত্ব' ছাড়াও ব্যাংকিং ও ফাইনেন্সিং -এর আরো বহু পদ্ধতি আছে। যেমন- একটি পদ্ধতি আছে 'ইজারা' (Leasing) পদ্ধতিটি হলো, এক ব্যক্তি বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকে আবেদন জানাল। ব্যাংক তাকে জিজ্ঞেস করল, আপনার কোন কাজে টাকা দরকার? তিনি বললেন, কারখানার জন্য আমার বিদেশ থেকে একটি মেশিন আমদানি করতে হবে। ব্যাংক তাকে টাকা দিল না। বরং নিজেরা মেশিন কিনে ভাড়ার চুক্তিতে তাকে দিয়ে দিল। পরিভাষায় এই কাজটিকে বলা হয়, 'ইজারা' (Leasing)। কিন্তু আজকাল ফাইন্যান্সিং প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলোতে 'ফাইন্যান্সিং লিজিং' এর যে পদ্ধতিটি চালু আছে, তা শারীয়্যাহ-সম্মত নয়। এর এগ্রিমেন্টে অনেকগুলো ধারা (Clauses) শারীয়্যাহ পরিপন্থী। তবে একে খুব সহজেই শারীয়্যাহ সম্মত বানিয়ে নেওয়া যায়। পাকিস্তানে একাধিক ফাইন্যান্সিং প্রতিষ্ঠান এমন আছে, যেগুলোর লিজিং এগ্রিমেন্ট শারীয়্যাহ-সম্মত।
মুরাবাহা :
অনুরূপ আরও একটি পদ্ধতি আছে, আপনারা যার নাম শুনে থাকবেন। সেটি হলো, 'মুরাবাহা ফাইন্যান্সিং'। এটিও অপরের সাথে লেনদেন করার একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে লাভের ভিত্তিতে পণ্যটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। মনে করুন, এক ব্যক্তি কাঁচামাল ক্রয়ের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণের আবেদন জানাল। কিন্তু ব্যাংক তাকে অর্থ না দিয়ে সেই পণ্যটি লাভের ভিত্তিতে তাঁর কাছে বিক্রি করে দিল। ইসলামে এই পদ্ধতিও জায়িয। অনেকে মনে করেন, এই পদ্ধতিতে তো হাত ঘুরিয়ে কান ধরার মতো হয়ে গেল। কারণ, এখানে ব্যাংক এক পদ্ধতির পরিবর্তে আরেক পদ্ধতিতে মুনাফা আদায় করে নিল। কিন্তু তাদের এই বক্তব্য সঠিক নয়। কারণ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'য়ালা বলছেন–
وَأَحَلَّ ٱللَّهُ ٱلۡبَيۡعَ وَحَرَّمَ ٱلرِّبَو
"আল্লাহ ক্রয়-বিক্রকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।"
[সূরা আল বাক্বারাহ (২), আয়াত: ১৭৫]
ক্রয়-বিক্রয় হালাল এবং সুদ হারাম, এটাই আল্লাহ তা'য়ালার সিদ্ধান্ত। কাজেই এখানে মানুষের প্রশ্ন তুলবার কোনো সুযোগ নেই। তা ছাড়া মক্কার মুশরিকরাও এই যুক্তির অবতারণা করত। তাঁরা বলত, ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের মতোই। ক্রয়-বিক্রয়েও মানুষ মুনাফা অর্জন করে, সুদেও মানুফা অর্জন করে! কাজেই দুইয়ের মাঝে পার্থক্যটা কোথায়? পবিত্র কুরআন তাদের একটিই উত্তর দিয়েছিল যে– এটি আমার বিধান, সুদ হারাম ক্রয়-বিক্রয় হালাল। এর অর্থ হলো, অর্থের উপর অতিরিক্ত মুনাফা নেওয়া যায় না। কিন্তু মধ্যখানে যদি কোনো বস্ত কিংবা ব্যবসায়িক পণ্য এসে পড়ে এবং সেই পণ্য বিক্রি করে মুনাফা করে, তা হলে আমি তাকে হালাল ঘোষণা করলাম। আর মুরাবাহা পদ্ধতিতে মধ্যখানে পণ্য আসছে। এজন্য ইসলামী আইনে এই ক্রয়-বিক্রয় বৈধ।