যেভাবে পর্দা করা শুরু করবো

 

যেভাবে পর্দা করা শুরু করবো

সবাই-ই বলে পরীক্ষায় ভালো করতে হলে,পড়তে হবে এবং অনেক পড়তে হবে।কিন্তু একজন সেই পড়া শুরু করবে কিভাবে এবং কোথা থেকে,যখন সে জানেই না পড়ার সিলেবাস টা কি!কেউ যখন জানবেই না কোন পড়া গুলো গুরুত্বপূর্ণ আর কোন টেকনিকে সেসব পড়া যায় তাহলে সে আগাবে কীভাবে!

আমাদের আশেপাশে অনেকেই আছে যারা পরিপূর্ণভাবে পর্দা করেন।বেপর্দা চলাফেরা করা বোনেরা হয়তো চাইলেও সহজে যোগাযোগ করতে পারেননা পর্দানশীলদের সাথে বা এগিয়ে গিয়ে কথা বলার সাহস পায়না।কথা বলতে গেলে সে কী বলবে বা তার রিয়্যাক্ট কী হবে বেপর্দা ব্যক্তিকে দেখে!এসব কথা ভাবতে ভাবতে আর যাওয়াই হয়না। লজ্জা বা ইগোর কারণে আর পর্দা নিয়ে জানা হয়না তাদের।তারা অন্ধকারেই থেকে যায় আজীবন।
বোন,যারা পর্দা করেন,তাদের আল্লাহর পক্ষ থেকে দায়িত্ব হলো আপনার হেদায়েতের এই বানী ছড়িয়ে দেওয়া সর্বত্র।কারণ আপনি একা হেদায়েতের পথে চললে হবেনা।আপনার আশেপাশের মানুষকে আপনি দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন কিনা এ সম্পর্কেও আল্লাহ সুবহানা তায়ালা আপনাকে প্রশ্ন করবেন। যাদের কাছে আপনি পৌঁছাননি আল্লাহর বানী,তাদের কাছ থেকে সাক্ষ্য নিবেন বিচার দিবসে। আমি জানি, তাদেরকে বলতে গিয়ে আপনি বহু কথার সম্মুখীন হন।কারণ আমি নিজেও ক্ষত-বিক্ষত হয়েছি অনেকবার।কিন্তু আপনি তাদের সন্তুষ্টির জন্য নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এরকম করবেন। তারা হয়তো না বুঝে এমন ব্যবহার করেন।একটু ধৈর্য ধরে দোয়া করে যান,দাওয়াত দিয়ে যান।একটু কথা না হয় শুনলেন, আল্লাহ এর প্রতিদান নিশ্চয়ই দিবেন ইন শা আল্লাহ।
এবার আসি বেপর্দা বোনদের কথায় -
বোন,আপনার কাছে নিশ্চয়ই সতর্ককারী কেউ এসেছেন। কিংবা যদি নাও এসে থাকেন আল্লাহর পর্দার বিধান মানতে গিয়ে কোনো মানুষের কাছে জানতে যেতে হয়,তবে লজ্জা বা ইগোর ভয়ে থেমে রইবেন না। কারণ আপনি তার কথা কিংবা কয়েকটা খোঁটা শুনেও যদি তার কাছ থেকে হেদায়েতের বুঝ পান এবং আল্লাহর প্রিয় পাত্র হতে পারেন।তাতে মন্দ কি?!!
একবারেই কেউ পরিপূর্ণভাবে পর্দা শুরু করতে পারবেন,ব্যপারটা এমন নাও হতে পারে।তো, কীভাবে শুরু করব আমরা?
১.আপনি প্রথমেই হিজাব নিকাবে যেতে না পারলে, ওড়নার মাধ্যমে বেঁধে চুল ঢাকার এবং আপনার দেহ ঢাকার উদ্দেশ্য পূরন করুন।তবে সেক্ষেত্রে মনে রাখবেন পর্দার উদ্দেশ্য নিজেকে আড়াল করা। এমন পোশাক পরা উচিত নয় যা আপনাকে আরও বেশি প্রকাশ করবে।
২.পর্দা করার পিছনে আপনার মূল উদ্দেশ্য যাচাই করে নিন,বোন।কারণ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হলে,আপনি প্রোগ্রামের দিন হিজাব ছাড়তে আল্লাহ ভীতিতে ভুগবেন না।নিয়তকে পরিশুদ্ধ করুন, তবেই লোকের কথায় আপনি আর হিজাব ছাড়ার মতন ভুল করবেন না ইন শা আল্লাহ।
৩.অনেকজন অনেক কথা বলে আপনাকে পিছিয়ে দিতে চাইবে,কিন্তু আপনি একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার কথা ছাড়া আর কাউকে প্রাধান্য না দেওয়ার জায়গায় অটল থাকবেন ইন শা আল্লাহ।
৪. আপনার ছবি তুলা কমিয়ে দিন। আস্তে-ধীরে আপনার প্রোফাইলের ছবি গুলো ডিলিট করতে থাকুন৷ একদিন এরকম করে সব ছবি ডিলিট করে আপনার প্রোফাইলে আল্লাহর বানী যুক্ত করে দিন। নিজের প্রোফাইল থাকবে সাদকায়ে জারিয়ায় অংশ, এভাবেই গড়ে তুলুন নিজেকে।
৫. পর্দা কেবল পোশাকে নয়৷ নন-মাহরামদের থেকে নিজেকে আড়াল করাও পর্দা। ছেলে বন্ধুদের সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা কমিয়ে দিন। কারণ হিজাব শুধু দেহের পর্দা নয়। আপনার কথাবার্তাও এরমধ্যে অন্তর্ভুক্ত। নিজের তাকওয়ার লেভেলকে আরও বেশি মজবুত করতে তাদেরকে প্রয়োজন না হলে প্রোফাইলেও রাখার দরকার নেই। এতে ফিতনার আশংকা কমবে।
৬. অন্যান্য ফরজ বিধানের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া শুরু করুন। কারণ নামাজ, রোজা, কুরআন তিলাওয়াত কিংবা ইসলামের অন্যান্য স্তম্ভ গুলো মানা মুসলিমের জন্য খুবই জরুরি। যদি এসব না শুরু করেন তাহলে শুধুমাত্র পর্দা করে কি লাভ হলো!
৭. হালাল, হারামের প্রতি নজর দেওয়া শুরু করুন। কারণ আপনি হিজাব নিকাব করেও হারাম প্রেম কিংবা হারাম গান-বাজনায় ডুবে থাকলে তা তো ইসলামের অবমাননা। কারণ আপনি ইসলামকে রিপ্রেজেন্ট করছেন আপনার আশেপাশের মানুষের কাছে। তাদেরকে বিভ্রান্ত করবেন না। নিজের নফসকে জিততে কখনোই দিবেন না।
৮. হেদায়েতের পথে আসাই শুধুমাত্র যথেষ্ট নয়। কারন আপনাকে ইসলাম আরও জানতে হবে। আশেপাশের সবাইকে জানাতে হবে। আপনার দায়িত্ব শেষ হয়নি, বরং আজ থেকে শুরু হলো আল্লাহর রাস্তায় চলার নতুন দায়িত্ব। আপনি ইলম অর্জন করবেন, দাওয়াত দিবেন, খারাপ কাজে বাঁধা দিবেন।
৯. পুরাতন সঙ্গ পরিবর্তন করে বরং নতুন সৎসঙ্গে জড়িত হবেন। কারণ বন্ধুরা অনেকটাই আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে। আপনি তার সাথেই থাকতে চেষ্টা করবেন যার থেকে একটা যিকির বেশি জানতে পারবেন কিংবা কিছু ভালো কথা কিংবা ভালো কাজ শিখতে পারবেন। আর আপনার আগের বান্ধুবিদের দাওয়াত দিবেন। আপনার ফিরে আসার গল্প বলবেন৷ তবে তাদের সাথে এতটা জড়িয়ে যাবেন না, যেন আবার ভুল পথে চলে না যান আপনি।
১০. প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে দো'আ করবেন যেন আল্লাহ আপনার অন্তরকে পরিবর্তন করে জাহেলিয়াতের দিকে ফিরিয়ে না নিয়ে যান। ক্ষুদ্র বিষয়গুলোতেও আল্লাহকে ভয় করুন, ইন শা আল্লাহ সহজ হবে।
স্কুল কলেজে থাকতে আমাদের সাথে কয়েকটি মেয়ে ছিল যারা নিকাব পরতো। কখনো তারা নিকাবের মর্যাদা ভালোভাবে বলেনি, আমিও কখনো বুঝতে চেষ্টা করিনি। এরপর দাওয়াতি বিভিন্ন গ্রুপ আমার হেদায়েতের মাধ্যম হয়েছিল। আল্লাহ-ই হেদায়েতের মালিক, তিনি চেয়েছিলেন দেখেই সম্ভব হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
উপরের ঘটনা টা এই কারণে বললাম যে, এতো কাছে থেকেও পরিপূর্ণভাবে পর্দা শুরু করার কোনো মাধ্যম তখনও পাইনি। অথচ আমার আশেপাশে অনেকেই ছিল এমন। কখনোই ভাববেন না যে, আপনি হেদায়েতের পথ পেয়েছেন তার মানে এখন আপনিই উত্তম। প্রকৃতপক্ষে, হেদায়েতের মাধ্যমে আল্লাহ আপনাকে নতুন দায়িত্ব দিয়েছেন। আপনি একজন ম্যাসেঞ্জার হবেন তাদের জন্য যারা ইসলামকে বুঝতে পারেননি ঠিকভাবে। আপনি দাওয়াত দিবেন হিকমাহর সাথে, আপনি এগিয়ে যাবেন আরও অনেক দূর। আপনি হবে এমন একজন যার মাধ্যমে আরেকটা মানুষ ফিরতে পারেন দ্বীনের পথে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের পথ চলা সহজ করে দিন।

Post a Comment

Previous Post Next Post