আজকাল কার ছোট ছোট পোলাপাইনদের প্রেম-ভালোবাসা (ব্যভিচার) দেখে মনে হয় এদের মধ্যে আল্লাহতায়ালার ভয় নেই। এরা জানেই না এরা কতবড় পাপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে । ব্যভিচারের শাস্তি কি তুমি জান??
কুরআন শরীফে বলা হয়েছে, ”লা তাকরাবুয যিনা” যার অর্থ “তোমরা যিনার (ব্যভিচার) ধারে-কাছেও যেও না।”
ব্যভিচার বা যিনা কোনগুলো সেগুলো জেনে আসিঃ
১। কোন বেগানা নারী অথবা পুরুষের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া চোখের জিনা।
২। যৌনতা সম্পর্কিত অশ্লীল কথাবার্তা বলা জিহ্বার জিনা।
৩। বিবাহ সম্পর্ক ছাড়া অবৈধভাবে কাউকে স্পর্শ করা হাতের যিনা।
৪। ব্যাভিচারের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাওয়া পায়ের যিনা।
৫। সে সম্পর্কিত খারাপ কথা শোনা কানের জিনা।
৬। যিনার কল্পণা করা ও আকাংখা করা মনের জিনা।
৭। অতঃপর লজ্জাস্থান একে পূর্ণতা দেয় অথবা অসম্পূর্ণ রেখে দেয়।
[বুখারী,মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে আন-নাসাঈ]
অথচ আমরা কেবল সর্বশেষ ধাপটিকেই যিনা মনে করে থাকি!!
আল্লাহ তায়ালা জিনাকে(ব্যভিচার)হারাম ঘোষণা করে বলেনঃ
তোমরা যিনার ধারে কাছেও যাবে না। কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জ এবং খারাপ কাজ।
[বনী-ইসরাঈল: ৩২]
এখন ব্যভিচারের শাস্তি সম্পর্কে জেনে আসি,
“আর যারা আল্লাহ ব্যতীত অপর কোন ইলাহের ইবাদত করে না, আল্লাহর নিষিদ্ধকৃত প্রাণী যথার্থ কারণ ব্যতীত হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যে ব্যক্তি এসব কাজ করে, সে শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে হীন অবস্থায় চিরস্থায়ী হবে। তবে তারা নয়- যারা তাওবা করে এবং সৎ কাজ করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কাজগুলো ভালকর্ম দিয়ে পরিবর্তন করে দেন, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াশীল”। সূরা আল-ফুরকান (৬৮–৬৯)
“ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে এক’শ ঘা করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকরী করবে এদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের অভিভূত না করে। যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাক। ঈমানদারদের একটি দল যেন এদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে”।
সূরা আন নূর ২
এগুলো হচ্ছে ব্যাভিচারকারী মানুষের ইহকালীন শাস্তি।যদি ও বর্তমানে এইসব শাস্তি আমরা দি না,এর কারোণ সংবিধান মতে বলা আছে, এইসব মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ,এই বিষয়ে পরে বিস্তর আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
এখন পরকালীন শাস্তি সম্পর্কে কিছু জেনে আসি,
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
আমি স্বপ্নে একটি চুলা দেখতে পেলাম যার উপরের অংশ ছিল চাপা আর নিচের অংশ ছিল প্রশস্ত আর সেখানে আগুন উত্তপ্ত হচ্ছিল, ভিতরে নারী পুরুষরা চিল্লাচিল্লি করছিলো।
আগুনের শিখা উপরে আসলে তারা উপরে উঠছে, আবার আগুন স্তিমিত হলে তারা নিচে যাচ্ছিলো, সর্বদা তাদের এ অবস্থা চলছিলো।
আমি জিবরাঈল (আঃ) কে জিজ্ঞেস করলামঃ এরা কারা?
জিবরাঈল (আঃ) বললেনঃ
তারা হলো অবৈধ যৌনচারকারী নারী ও পুরুষ। (বুখারী)
যিনাকারীর লজ্জাস্থানের দূর্গন্ধে জাহান্নামবাসী অস্থির হয়ে উঠবে। সেদিন জিনাকারীকে পিপাসা মেটানোর জন্য এই পঁচা পানি দেওয়া হবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “কোন ব্যক্তি যখন ব্যভিচার করে তখন তার ভেতর থেকে ঈমান বেরিয়ে যায়,এরপর তা তার মাথার উপর ছায়ার মত অবস্থান করতে থাকে। এরপর সে যখন তা থেকে তওবা করে তখন তার ঈমান পুনরায় তার কাছে ফিরে আসে”। [আবু দাউদ]
হযরত আবু হুরায়রা বর্ণিত অন্য এক হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি ব্যভিচার করে অথবা মদ পান করে, আল্লাহ তার কাছ থেকে ঈমান ঠিক এমনভাবে কেড়ে নেন, যেমন কোন মানুষ তার মাথার উপর দিয়ে জামা খুলে থাকে”।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক কঠোর শাস্তি নির্ধারিত থাকবে। তারা হচ্ছে বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক এবং অহংকারী গরীব”।
[মুসলিম ও নাসায়ী]
হযরত ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বলেছিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় পাপ কি?
তিনি বললেন, আল্লাহর সমকক্ষ কাউকে নির্ধারণ করা।
আমি বললাম, এটা নিশ্চয়ই জঘন্যতম গুনাহ।
তারপর কি ?
তিনি বললেন; তোমার সন্তান তোমার সাথে আহারে বিহারে অংশ নিবে এ আশংকায় সন্তানকে হত্যা করা।
আমি বললাম, এরপর কি?
তিনি বললেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া।
[বুখারি ও মুসলিম]
মহান আল্লাহর বাণী; “জাহান্নামের সাতটি দরজা থাকবে”- এ আয়াতের তাফসীরে হযরত আতা (রহ) বলেন, “এ সাতটি দরজার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত, সবচেয়ে বেশি দুঃখে পরিপূর্ণ ও সবচেয়ে ভয়ংকর দরজা হবে যারা জেনে- শুনে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাদের দরজা”।
অন্য এক হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে মুসলমানগণ ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। মন্দ পরিণতি এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে,তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে, তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে, সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে”।
[বায়হাকী]
এইরকম আরো অসংখ হাদীস রয়েছে,
আমাদের সবার উচিত এইসব থেকে বিরত থাকা(যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে সুস্থ মানুষের পক্ষে এইসব থেকে বেচে থাকা একটু কঠিন ,তারপর ও যতটা সম্ভব বিরত থাকা উচিত)। জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে বাঁচতে চাইলে এখনি নিজেকে ফিরাও।নিজের আবেগ আর মনগড়া যুক্তি দিয়ে জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচা যাবেনা।
সবারই উচিত প্রেমিক-প্রেমিকা নামের এই শয়তানি সম্পর্ক চিহ্নিত করা এবং কৃত গোনাহ থেকে তাওবা করে ফিরে আসা।
কারণ, হাশরের ময়দানে এইসব শয়তানী সম্পর্ক থাকবেনা, থাকবে শুধুই আগুন। সেদিন কেউ কাউকে চিনবেও না, আর বলবে…
হায় আফসোস! আমি যদি রাসূলের দেখানো পথে চলতাম, অমুক বন্ধুর ডাকে সাড়া না দিতাম তাহলে আজ আমার এ দশা হতো না।”
[সূরা ফুরকান: ২৭-২৮]
যদি কেও না জেনে এই অপরাধ করে থাকে এবং খাস দিলে আল্লাহর কাছে তাওবা করে তবে আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করে দেবেন, ইনশা-আল্লাহ।
[সূরা ফুরকান :৬৮-৭০]
Tags:
সোশ্যাল পোস্ট