এমন বহু প্রচারনা ফেসবুকের বুকে ধারন করা।এগুলোর ভিত্তি না কুরআনের কোন আয়াত,না সহীহ হাদীসের কোন রেফারেন্স আর না ফকীহগণের কোন বিশুদ্ধ মত।এমন কথা শুধু ঈমানের জন্যই বিধ্বংসী নয় কারো সারা জীবনের আমল বরবাদও করে দিতে পারে।এমনকি দ্বীন ও ইবাদাতের ব্যাপারে স্থায়ীভাবে পংগু বানিয়ে দিতে পারে।বংশ পরম্পরা কোন জাতিকে বেনামাজীকরনের জন্য এমন একটি প্রচারনাই যথেষ্ট।
যদি ভাবা হয় যে একটি যাদুকরি দোআর দ্বারা ছয়শত,সাতশত কিংবা এক হাযার বছরের সকল কাজা নামাজ আদায় হয়ে যাবে,তাহলে স্বাভাবিক নামাজীও অস্বাভাবিক এই সুযোগ নিবে।আরো আশ্চর্যজনক যে যেহেতু সে এতো বছর হায়াত পাবেনা তাহলে বাকী বছর বাপ দাদা,তার বাপ দাদা এভাবে পূরো বংশের কাজা আদায় হয়ে যাবে।বলুন,তাহলে যারা কষ্ট করে নামাজ পড়ছেন,কোনভাবে জীবনে এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা না হয় সেজন্য জানপ্রাণ দিচ্ছেন তারাও তো দোআর বরকত নিতে পারেন।দোয়া কি তবে নামাজের কমপেনসেশান !!
শরীয়ার মতে কোন ওয়াক্তের নামাজ ছুটে গেলে সেটা ঐ নামাজ পরবর্তীতে কাজা আদায় করে পূর্ণ করতে হবে।এর বাইরে কোন অপশান নেই।খোদ নবীজী সা:ও কাজা আদায় করেছেন।
এক রাতে নবীজি (সা.) তাঁর সাহাবিদের নিয়ে সফর করছিলেন। শেষ রাতে বিশ্রামের উদ্দেশে সফর বিরতি দিলেন। হজরত বিলাল (রা.)-কে ফজরের নামাজের জন্য জাগিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দিলেন। এর পর সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন। এদিকে হজরত বিলাল (রা.)ও তন্দ্রাবিভূত হয়ে গেলেন। ফলে সবার ফজরের নামাজ কাজা হয়ে গেল। নবীজি (সা.) ঘুম থেকে জেগে সূর্য ওঠার কিছুক্ষণ পর সবাইকে নিয়ে ফজরের নামাজ কাজা করলেন। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ঘুম বা বিস্মৃতির কারণে যার নামাজ ছুটে গেল, যখন সে জাগ্রত হবে, তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। (বুখারি : ৫৯৭, মুসলিম : ৬৮১)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সেই দুই রাকআত যা নবীজি (সা.) কাজা হিসেবে আদায় করেছেন, আমার কাছে তা গোটা দুনিয়ার মালিকানা লাভ করার চেয়েও অধিক পছন্দনীয়। (মুসনাদে আহমাদ : ৪/১৮১, মুসনাদে আবী ইয়ালা : ৩/২২-২৩, ২৩৭১)
খন্দকের যুদ্ধ থেকে ফেরার দিন নবীজি (সা.) তাঁর সাহাবিদের বনু কোরাইজা অভিমুখে পাঠানোর সময় বললেন, 'তোমাদের কেউ যেন বনি কোরাইজায় না পৌঁছে আসরের নামাজ না পড়ে।' (সহিহ বুখারি: ১/১২৯, ৪১১৯, সহিহ মুসলিম : ২/৯৬) সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রওনা হলেন। পথে আসরের নামাজের সময় অতিবাহিত হওয়ার উপক্রম হলে কিছু সাহাবি পথেই সময়ের ভেতর আসর পড়ে নেন। আর কিছু সাহাবি বনি কোরাইজায় পৌঁছার পর আসরের নামাজ কাজা পড়েন। নবীজি (সা.) এই ঘটনা শুনলেন। কিন্তু পরে কাজা আদায়কারীদের এ কথা বলেননি যে নামাজ শুধু নির্ধারিত সময়েই আদায়যোগ্য। সময় অতিবাহিত হওয়ার পর এর কোনো কাজা নেই।
সুতরাং এ হাদিস থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল, কোনো কারণে নামাজ ওয়াক্তমতো না পড়তে পারলে সেই নামাজ অবশ্যই কাজা পড়তে হবে। এ কারণে যারা কাজা পড়েছিলেন নবীজি (সা.) তাদের সমর্থন করেছিলেন।
স্বয়ং নবীজি (সা.)-এর খন্দকের যুদ্ধের সময় কয়েক ওয়াক্ত নামাজ কাজা হয়ে গিয়েছিলে । তথা যুদ্ধের কারণে সময়মতো পড়া সম্ভব হয়নি। এসব নামাজ তিনি কাজা হিসেবে পড়ে নিয়েছিলেন। (বুখারি : ১/১৬২, ২/৩০৭)
কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেয়া হবে।ভাবছেন কি নামাজের একাউন্টস আপনি পৌছে দুই কেজি গম,দোআ বা কাফফারা দিয়ে মিলাবেন ? শুনুন,
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় কিয়ামতের দিন বান্দার (হক্বুক্বুল্লাহর মধ্যে) যে কাজের হিসাব সর্বপ্রথম নেওয়া হবে তা হচ্ছে তার নামাজ। সুতরাং যদি তা সঠিক হয়, তাহলে সে পরিত্রাণ পাবে। আর যদি (নামাজ) পণ্ড ও খারাপ হয়, তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি তার ফরজ (ইবাদতের) মধ্যে কিছু কম পড়ে যায়, তাহলে প্রভু বলবেন, ‘দেখ তো! আমার বান্দার কিছু নফল (ইবাদত) আছে কি না, যা দিয়ে ফরযের ঘাটতি পূরণ করে দেওয়া হবে?’ অতঃপর তার অবশিষ্ট সমস্ত আমলের হিসাব ঐভাবে গৃহীত হবে।
(আবু দাউদ ৮৬৪, তিরমিযি ৪১৩, ৪৬৫,৪৬৬, ৪৬৭, ইবন মাজাহ ১৪২৫, ১৪২৬, আহমদ ৭৮৪২, ৯২১০, ১৬৫০১, দারেমি ১৩৫৫)
আল্লাহ তা’আলা বলেন,কিয়ামতের দিন সবাইকে সিজদার আদেশ দেয়া হবে।যারা দুনিয়াতে নামাজের পাবন্দী করেছে কেবল তারাই সিজদা করতে পারবে,বাকীরা ব্যর্থ হবে।
يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ
স্মরণ কর সেই দিনের কথা, যেদিন পায়ের গোছা উন্মোচিত করা হইবে, সেই দিন উহাদেরকে আহ্বান করা হইবে সিজ্দা করিবার জন্য কিন্তু উহারা সক্ষম হইবে না।
(সূরা কলমঃ৪২)
নিশ্চয়ই দোআর অনেক ফযিলত ও মর্তবা রয়েছে।কিন্ত সেটি কোন না কোন কুরআনের আয়াত বা সহীহ হাদীস দ্বারা সমর্থিত হতে হবে।আল্লাহ নিজে কুরআনে বহু দোআ আমাদের শিখিয়েছেন।রাসুল সাঃ ও সাহাবাগণ রাঃ আমাদের বহু দোআ উপহার দিয়েছেন।কিন্ত কোথাও এমন যাদুর দোআর কথা বললেন না।কার কি মনে হলো আর সেটাই চালিয়ে দিলেন-এভাবে ইসলামের প্রাকটিচ হয়না,হবেনা।
Tags:
ধর্ম চিন্তা