প্রশ্নে উল্লিখিতদেরকে মূলত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথমে সুন্নি মুসলিমদের বিষয়ে লেখা যাক। প্রশ্নে উল্লেখিতদের মধ্যে হানাফি, সালাফি, হানবালি,আশআরী, মাতুরিদী, আছারী (এই দুটি প্রশ্নে নেই তবে প্রাসঙ্গিক), ওয়াহাবি, আহলে হাদিস, বারেলভি, দেওবন্দী, শাফেয়ী (শাফি), মালিকী, তাবলীগ জামাতি – এরা সবাই সুন্নি মুসলমান।
এদের মধ্যে ইসলামের মৌলিক বিষয়ে তেমন কোনো বিরোধিতা নেই। যেমন এরা সকলেই বিশ্বাস করে আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়, আল্লাহর কোনো শরিক নেই, আল্লাহ সব বিষয়ে জানেন, সবকিছুর উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখেন। তারা মুহাম্মাদ (সাঃ) কে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসেবে মানে, নামায, রোযা, হজ্ব ইত্যাদি ইবাদত ফরয হিসেবে মনে করে। পূর্ববর্তী নবী-রাসুল ও আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস রাখে। নবীগণ নিষ্পাপ, এই বিশ্বাস রাখে। নবীগণ ব্যতীত অন্য কেউ নিষ্পাপ (মাসুম) নয় এই বিশ্বাসও রাখে। আখিরাত ও তাকদীরের উপর বিশ্বাস রাখে। আল্লাহ, আল্লাহর রাসুল এবং সাহাবায়ে কেরাম (মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাথী) দেরকে মহব্বত করে। মুহাম্মাদ (সাঃ) এর শরীয়তকে আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ জীবনবিধান (দ্বীন) হিসেবে মেনে নেয়।
তবে এদের মধ্যে ইসলামের শাখাগত বিষয়ে মতভেদ আছে। উদাহরণস্বরূপ হানাফি, মালিকী, শাফেয়ী, হানবালি, সালাফি, আহলে হাদিস এদের মধ্যে নামাযের নিয়ম কানুনের বিষয়ে মতভেদ আছে। এছাড়াও আরো বিভিন্ন বিষয়ে মতভেদ আছে। আবার বেরেলভিরা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি মহব্বত ও সম্মান প্রদর্শনের জন্য মিলাদ-কিয়ামকে সুন্নাত মনে করে। কিন্তু বাকিরা আবার একে বিদআত (শরীয়তের মধ্যে নতুন উদ্ভাবন) মনে করে। তেমনিভাবে আশআরী, মাতুরিদী ও আছারীদের মধ্যেও কিছু বিষয়ে মতভেদ আছে। যেমন আশআরীদের মতে নবী প্রেরণের পূর্বে ঈমান ওয়াজিব নয় অর্থাৎ জ্ঞানের মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয় লাভ করা ওয়াজিব নয়। অপরদিকে মাতুরিদীদের মতে জ্ঞানের মাধ্যমে আল্লাহর অস্তিত্বের পরিচয় লাভ করা যেতে পারে তবে জ্ঞান দ্বারা স্থায়ীভাবে শরীয়তের আহকামের পরিচয় লাভ সম্ভব নয়। একজন মুসলমান সাধারণত হানাফী, মালিকী, শাফেয়ী, হানবালি, আহলে হাদিস, সালাফি এর মধ্যে যেকোনো একটার এবং আশআরী, মাতুরিদী বা আছারীদের মধ্যে একটার অনুসারী হয়। আলেমরা ব্যতীত সাধারণ মুসলমানরা আকীদাগত মতভেদ সম্পর্কে জানে না বললেই চলে।
আর তাবলীগ জামাত হল এমন একটা দল (জামাত) যারা মুসলমানদেরকে পরিপূর্ণরূপে ইসলাম মানার দিকে এবং অমুসলিমদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়। এদেরকে মুসলিম মিশনারি বলা যেতে পারে। একজন মুসলমান যে তাবলীগ জামাতের সাথে সম্পৃক্ত, সে হানাফী, মালিকী, শাফেয়ী, হানবালি, সালাফি অথবা আহলে হাদিস - এদের কোনো একটা হবে। সাথে আশআরী, মাতুরিদী, আছারীর যেকোনো একটা হবে। একথা দেওবন্দী আর ওয়াহাবীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আর দেওবন্দী বলতে বুঝায় মূলত ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ এবং তার অনুসারী যেসকল মাদরাসা আছে তার ছাত্রদেরকে (যেমন বুয়েটের ছাত্রদেরকে বুয়েটিয়ান বলা হয় –অনেক কিছুই অবশ্য এই উদাহরণের সাথে মিলবে না)। দেওবন্দীরা সাধারণত হানাফী মাযহাবের অনুসারী হলেও কম বেশি অন্য মাযহাবেরও আছে।
ওয়াহাবী বলা হয় সৌদি আরবের একজন আলেমের অনুসারীদেরকে। তাঁর নাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব। তিনি বিদআতের বিরুদ্ধে খুবই কঠোর ছিলেন। বর্তমান সৌদি রাজপরিবার তাঁর অনুসারী।
এরপর আসা যাক শিয়াদের বিষয়ে। প্রশ্নে উল্লেখিতদের মধ্যে যায়িদী, ইসমাইলি, দ্বাদশী (Twelver - ইমামিয়া বা ইছনে আশারিয়্যা নামে পরিচিত) – এরা শিয়া।
শিয়াদের উৎপত্তি মূলত হযরত আলী (রাযিঃ) এর খিলাফতকালীন সময়ে।
শিয়াদের সবচেয়ে বড় দল হল ইমামিয়া (দ্বাদশী)। বর্তমান ইরানের প্রধান ধর্মীয় নেতা এই দলেরই অন্তর্ভুক্ত।
ইসমাইলিরা দ্বিতীয় বৃহত্তম শিয়াগোষ্ঠী। আগা খান নামে যাদেরকে আমরা চিনি তারা ইসমাইলি শিয়া। চতুর্থ আগা খান হলেন ইসমাইলিদের প্রধান শাখার বর্তমান ইমাম।
যায়িদীরা হল সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে ছোট শিয়া দল। ইরানের হুতি জনগোষ্ঠীর সদস্যরা প্রধাণত যায়িদী। অন্যান্য শিয়াদের চেয়ে তাদের সাথেই সুন্নিদের সবচেয়ে বেশি মিল পাওয়া যেত।
শিয়ারা মনে করে যে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর ওফাতের পর খিলাফতের হকদার ছিলেন আলী (রাযিঃ)। মূলত এই বিশ্বাস থেকেই তাদের উৎপত্তি। পরবর্তীতে এর সাথে তাদের আরও অনেক বিশ্বাস যুক্ত হয়। যেমন তারা ইমামতে বিশ্বাস করে। অর্থাৎ তারা মনে করে যে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর ওফাতের পর মানুষের হেদায়েত (সঠিক পথ প্রদর্শন) ও নেতৃত্বের জন্য আল্লাহ ইমাম মনোনীত করেন। ইমামিয়া (দ্বাদশী) শিয়ারা মনে করে আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত এই ইমামের সংখ্যা বারোজন। এর মধ্যে বারোতমজন একদম অল্পবয়সে আত্মগোপনে চলে যান এবং শেষ যমানায় তিনি ইমাম মাহদীরূপে আবির্ভূত হবেন।
ইসমাইলিরা ৬ষ্ঠ ইমাম পর্যন্ত ইমামিয়ারা যাদেরকে ইমাম হিসেবে মানে, তারাও (ইসমাইলি) তাদেরকেই মানে। তবে ৭ম ইমামতে এসে ইমামিয়ারা যেখানে মুসা কাযিমকে (৬ষ্ঠ ইমাম জাফর সাদিকের ছোট পুত্র) তাদের ইমাম বলে মনে করে সেখানে ইসমাইলিরা জাফর সাদিকের বড় পুত্র ইসমাইলকে ইমাম হিসেবে মানে।
অপরদিকে যায়িদীরা ৪র্থ ইমাম পর্যন্ত ইমামিয়াদের (এবং ইসমাইলিদের) সাথে একমত। তবে ৫ম ইমামে এসে যায়িদীরা ৪র্থ ইমাম জয়নুল আবিদীন এর দ্বিতীয় পুত্র যায়েদকে ইমাম হিসেবে মানে যেখানে ইমামিয়ারা (এবং ইসমাইলিরা) জয়নুল আবিদীন এর বড় পুত্র বাকেরকে ইমাম মনে করে।
ইমামদের বিষয়ে শিয়াদের যেসকল বিশ্বাস রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল ইমামদের মর্যাদা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সমান ও অন্যান্য নবী রাসূলদের চেয়ে বেশি, ইমামরা কুরআন হাদীসের বাইরেও অনেক বাতিন (গোপন) বিষয়ে জ্ঞান রাখেন, ইমামদের অতীত ও ভবিষ্যতের জ্ঞান ছিল ইত্যাদি।
শিয়াদের অন্যান্য বিশ্বাসের মধ্যে রয়েছে – তারা মনে করে আলী (রাযিঃ), সালমান ফারসি (রাযিঃ), আম্মার (রাযিঃ) সহ আহলে বাইতের (মুহাম্মাদ (সাঃ) এর পরিবার) কিছু সদস্য ব্যতীত বাকি সব সাহাবী কাফির হয়ে গেছে! এই সকল সাহাবীরা (বিশেষত আবু বকর, উমর ও উসমান (রাযিঃ)) জাহান্নামী!
শিয়াদের আরেকটি বিশ্বাস হল ‘তাকিয়্যা’, যার অর্থ হল মানুষ তার মান-মর্যাদা ও জান-মাল শত্রুর কবল থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে অন্তরে যা আছে মুখে তার বিপরীত প্রকাশ করবে।
শিয়াদের মধ্যে যায়িদীদের বিশ্বাস সুন্নীদের সবচেয়ে নিকটবর্তী। তারা সাহাবীদেরকে কাফের মনে করে না। ইমামতে বিশ্বাস করলেও ইমামদের বিষয়ে উপরে উল্লিখিত বিশ্বাসগুলো তাদের মধ্যে নেই। তারা তাকিয়্যাতেও বিশ্বাসী না।
প্রসঙ্গত, সুন্নিরা শিয়াদের ইমামদের (আমার জানামতে কমপক্ষে ৭ম ইমাম মুসা কাযিম পর্যন্ত) সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করে তা হল যে এরা সবাই ভালো আলেম (এবং আবেদ) ছিলেন, যেমন তারা অন্যান্য সুন্নি আলেমদের সম্পর্কে ধারণা রাখে।
আলী (রাযিঃ) এর খিলাফতের সময় তাঁকে কেন্দ্র করে দুইটি নতুন ধারার সৃষ্টি হয়। এরমধ্যে একটি (শিয়া) সম্পর্কে এতক্ষণ আলোচনা করা হল আরেকটি (খারিজী) সম্পর্কে এখন করা হবে।
খারিজীদের উৎপত্তি হয় সিফফীনের যুদ্ধের শেষের দিকে। সিফফীনের যুদ্ধ হয় আলী (রাযিঃ) এবং মুয়াবিয়া (রাযিঃ) এর মধ্যে। তাদের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি সালিসের আয়োজন করা হয়। খারিজীদের (তখনো তারা এই নামে পরিচিতি পায়নি) চাপের কারণেই আলী (রাযিঃ) এই সালিসে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু পরে তারাই আবার এর বিরোধিতা করতে থাকে এবং এই সালিস মেনে নেওয়ার কারণে আলী (রাযিঃ) এর উপর কুফরীর অভিযোগ আরোপ করে। এখান থেকেই তাদের উৎপত্তি হয়।
তারা পাপীদেরকে কাফির মনে করত, এক্ষেত্রে ছোট পাপ (সগীরা গুনাহ) বড় পাপের (কবীরা গুনাহ) মধ্যে তারা কোনো পার্থক্য করত না। তারা আলী (রাযিঃ), উসমান (রাযিঃ) সহ অন্য অনেক সাহাবীকে কাফির মনে করত।
তারা বেশ কয়েকশত বছর টিকে ছিল, ঐ সময়ে প্রায়ই তারা শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করত। বর্তমানে খারিজীদের মধ্যে শুধুমাত্র ইবাদিরাই (যদিও তারা নিজেদেরকে খারিজি মনে করে না) টিকে আছে।
(সুন্নি) আলেমদের অনেকে খারিজীদেরকে কাফির মনে করেন যেমন শায়েখ তকীউদ্দিন সুবকি, ইমাম তাবারী, কুরুতুবী, আবু বকর ইবনুল আরাবী প্রমুখ। অন্যদিকে আল্লামা খাত্তাবী, ইমাম গাযালী, কাযী ইয়াজ প্রমুখ আলেম তাদেরকে (খারিজী) ফাসেক মনে করেন।
খারিজীদের অনেকগুলো উপদল ছিল। এরমধ্যে সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় ছিল আজারিকারা। এরা খুবই কট্টর ছিল। বিশ্বাস করত, যে দেশ বা অঞ্চলের লোকেরা তাদের বিরোধিতা করবে সে দেশ দারুল কুফর। তারা ইসলামের কিছু শাস্তির বিধান অস্বীকার করত। তারা বিশ্বাস করত যে নবীরা নিষ্পাপ নয়, নবীদের দ্বারা সগীরা এমনকি কবীরা গুনাহও হতেও পারে
ইবাদিদের সম্পর্কে খুব কম গবেষণাই মুসলিম আলেমদের দ্বারা হয়েছে। বর্তমান ওমানের শাসকরা ইবাদি গোত্রভুক্ত। ইবাদিদের বড় অংশও ওমানে থাকে। তাদের কিছু চিন্তাধারা মুতাজিলাদের (তাদের আলোচনা সামনে হবে ইনশাআল্লাহ) সাথে মিলে, কিছু শিয়াদের সাথে আবার কিছু সুন্নীদের সাথে। ইবাদিদেরকে মডারেট খারিজী বলা যায়। সাহাবীদের বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি খারিজীদের সাথে কিছুটা মিলে যায়।
হারুরিস নাম সম্পর্কে কিছু জানতাম না। গুগলে হারুরিস সার্চ করে উইকিপিডিয়াতে Haruriyya নামে একটা আর্টিকেল পেলাম। ধরে নেই প্রশ্নকর্তা এদেরকেই বুঝিয়েছেন। এদের অন্য নাম হল আল মুহাককিমা আল ঊলা। তারাও খারিজীদের একটি উপদল। তারা আলী (রাযিঃ) এর বিরুদ্ধে সালিসীর সময় বিদ্রোহ করেছিল এবং পরে তার বিরুদ্ধে হারুরা নামক স্থানে একত্রিত হয়েছিল। তাদের ধর্মবিশ্বাস খারিজীদের ক্ষেত্রে যেরকম উল্লেখ করা হয়েছে তেমনই।
সুফরিস বা সাফারিয়্যারাও উপরের হারুরিসদের মত খারেজীদের একটি উপদল। তাদের বিশ্বাসও খারেজীদের সাধারণ বিশ্বাসের মতই। তবে তারা শিয়াদের মত তাকিয়্যাতেও বিশ্বাস করে।
সুতরাং বলা যায়, ইবাদি, হারুরিস, সুফরিস, আজারিকা – সবাই খারিজীদের অন্তর্ভুক্ত।
এখন আসা যাক মুতাজিলা মতবাদ সম্পর্কে। মুতাজিলীদের আবির্ভাব বিষয়ে বিভিন্ন মত আছে তবে সেগুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। মুতাজিলা মতবাদের সূচনা হয় উমাইয়্যা শাসকদের সময় আর তা তার সর্বোচ্চ শিখরে পৌছে আব্বাসী শাসকদের সময়। আব্বাসী খলিফা মামুনের সময় মুতাজিলীরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। মুতাজিলীরা মূলত যুক্তির নিরিখে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়কে দেখত। তারা এক্ষেত্রে গ্রীক ও ভারতীয় দর্শনকে ব্যবহার করত।
মুতাজিলীদের যে বিশ্বাস নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে তা হল যে, তারা বিশ্বাস করত কুরআন আল্লাহর মাখলুক (সৃষ্টি)। যা মুসলিম ইতিহাসে খালকে কুরআনের ফিতনা নামে পরিচিত।
প্রধানত মুসলমানরা এই বিশ্বাস রাখে যে আল্লাহ যেমন অনাদি ও চিরন্তন তেমনি তার বাণী কুরআনও। কুরআন কোনো সৃষ্টি নয়।
মুতাজিলীরা আল্লাহর বিভিন্ন সিফাত বা গুণাবলি অস্বীকার করত। তাদের অনেকে মুজিযাতেও বিশ্বাস করত না। মুতাজিলীদের বিভিন্ন বাতিল মতবাদ খণ্ডনে ইমাম আবুল হাসান আলী ইবনে ইসমাইল আল আশআরী বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
সুফি ব্যতীত বাকি যারা আছে তারা অমুসলিম, সুফিদের সম্পর্কে আমি খুবই কম জানি, তাই তাদের সম্পর্কে এখানে কিছু লিখব না।
প্রশ্নে উল্লিখিত আলারাইট নামেও কিছু খুঁজে পাইনি। তবে আলাওয়াইট আছে। এটা সম্পর্কেই লিখছি। আলাওয়াইটরা নুসাইরি নামেই মূলত মুসলিম সমাজে পরিচিত ছিল। নুসাইরিরা সিরিয়াতে ক্ষমতায় আসার পূর্বে কখনো নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবি করেছে, এমনকিছু আমার জানা নেই।
সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ এবং তার পিতা সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদ উভয়ই নুসাইরি সম্প্রদায়ের। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে হাফিজ আল আসাদ নুসাইরিদের মধ্যে মুসলমানদের সাদৃশ্য আনতে তৎপর হয়ে ওঠেন। এ উদ্দেশ্যে সে এমনকি নুসাইরিদের সকল ধরণের ধর্মীয় কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। নুসাইরিদের বিভিন্ন গ্রামে সুন্নিদের মত করে মসজিদ নির্মাণ করা হয়, নুসাইরিদেরকে হজ্ব করতে উৎসাহ দেয়া হয়।
নুসাইরিরা সবসময় তাদের ধর্মকে অন্যদের থেকে গোপন রাখতে তৎপর ছিল। এমনকি তাদের ধর্মের কিছু বিষয় শুধুমাত্র অল্প কিছু ব্যক্তিই জানতে পারত, সাধারণ নুসাইরিরাও তা জানতে পারত না। অবশ্য বর্তমানে তাদের ধর্ম সম্পর্কে বেশ কিছু বিষয় জানা গেছে। তাদের ধর্ম ইসলাম, খ্রিস্টবাদসহ বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদের মিশ্রণ। তাদের বিভিন্ন বিশ্বাসের অন্যতম হল পুনর্জন্মে বিশ্বাস। এমনকি তারা সৃষ্টিকর্তার পুনর্জন্ম হয় এরকম বিশ্বাসও রাখে। এছাড়া তারা খ্রিস্টধর্মে প্রচলিত কিছু বিষয়ও পালন করে।
যদিও অনেকে দ্রুজদেরকে মুসলিম মনে করে, প্রকৃতপক্ষে তারা একটি ভিন্ন ধর্মের অনুসারী। এই ধর্মের উৎপত্তি ইসমাইলি শিয়া থেকে হলেও অন্যান্য বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ থেকে বিভিন্ন বিষয় ধারণ করে তারা একটি স্বতন্ত্র ধর্মে পরিণত হয়েছে। দ্রুজরাও পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে।
এবারে আসা যাক কাদিয়ানীদের সম্পর্কে। কাদিয়ানীরা নিজেদেরকে আহমাদিয়া মুসলিম জামাত হিসেবে পরিচয় দেয়। এই মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। তিনি নিজেকে নবী ও রাসূল (যে নবীর কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব নাযিল হয়েছে) হিসেবে দাবি করেন।
একজন ব্যক্তি মুসলিম হতে হলে তাকে এই স্বীকৃতি দিতে হবে যে মুহাম্মাদ (সাঃ) সর্বশেষ নবী, যা সরাসরি কুরআনে এসেছে। কিন্তু গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে নবী হিসেবে মানার মাধ্যমে এই স্বীকৃতি আর থাকে না। এ সম্পর্কে কিছুটা বিস্তারিত জানতে এই লিঙ্কে যেতে পারেন।
পুরো আলোচনা থেকে যা বুঝা যায় তার সারমর্ম হলঃ
প্রশ্নে উল্লিখিত বিভিন্ন দলকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
সুন্নি মুসলিমঃ হানাফি, মালিকী, শাফেয়ী, হানবালি, সালাফি, আহলে হাদীস, বেরেলভি, দেওবন্দী, তাবলীগ জামাতী, ওয়াহাবী, আশআরী।
শিয়াঃ ইমামিয়া (ইছনে আশারিয়্যা / দ্বাদশী - Twelver), ইসমাইলি, যায়িদী। এদের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে (সুন্নি) আলেমরা অনেককে মুসলমান মনে করেন আবার অনেককে করেন না।
খারিজীঃ খারিজী, ইবাদি, হারুরিস (হারুরিয়্যা), সুফরিস, আজারিকা। (সুন্নী) আলেমদের অনেকে এদেরকে কাফির মনে করেন আবার অনেকে এদেরকে ফাসিক মনে করেন।
মুতাজিলাঃ এদেরও কিছু উপদল আছে তবে প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়নি।
অমুসলিমঃ আলাওয়াইট (নুসাইরী), দ্রুজ, আহমাদিয়া (কাদিয়ানী)। এরা সবাই নিঃসন্দেহে অমুসলিম। ক্রেডিট কোরা