প্রচুর বই পড়ার কারণে আপনার মনে কি প্রভাব পড়ে?

 একটা গল্পের কথা মনে পড়ে গেলো। কয়েকদিন আগে, English Quora তে পড়েছিলাম।

অনেক অনেক কাল আগে এক গুরু বাস করতেন, তাঁর শিষ্যদের সাথে। একদিন এক নতুন শিষ্য গুরুকুলে এসে জিজ্ঞেস করলো, গুরুদেব, আমরা এত বই পড়ি, কিন্তু কিছুই তো মনে থাকে না। সবই তো ভুলে যায়। তাহলে এত বই পড়ার কী দরকার?

গুরুদেব এ কথা শুনে কোনো উত্তর দিলেন না। চুপ করে রইলেন, তারপর বললেন, তুমি কাল সকাল সকাল এসো আমার কাছে।

নতুন শিষ্য পরদিন সকালে সূর্য ওঠার আগেই অনেক উৎসাহ নিয়ে গুরুকুলে চলে এলো।

গুরুদেব শিষ্যকে, একটি অনেক পুরোনো মরচে পড়া ঝাঁঝরি (চালুনি) এগিয়ে দিলেন। বললেন পাশের কুঁয়ো থেকে সেই ঝাঁঝরি দিয়ে জল আনতে। ব্যপারটা শিষ্যের পছন্দ হলো না, কিন্তু কী আর করা যাবে, গুরু বলেছেন, অমান্য করা যাবে না। তাই মরচে পড়া ঝাঁঝরি নিয়ে সে বেরিয়ে পড়লো কুঁয়োর দিকে ।

মরচে পড়ে থাকায় ঝাঁঝরির ফুটো গুলো বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে গেছিলো। তাই প্রথম প্রথম একটু জল আটকে থাকছিলো। কিন্তু গুরুদেবের ঘরের দিকে যেতে যেতে সেই জলটুকুও পড়ে যাচ্ছিলো। জল পড়তে পড়তে শেষ হয়ে হলে আবার কুঁয়োর দিকে যেতে হচ্ছিলো তাকে জল ভর্তি করার জন্যে।

যাই হোক, এই করতে করতে বেলা অনেক গড়িয়ে গেলো। সূর্য তখন মাথার উপরে। সেই সকাল থেকে চেষ্টা করছে। রেগেমেগে মাথাও গরম হয়ে গেলো খুব। ভাবলো গুরুদেব তাকে এ কেমন অর্থহীন কাজ দিয়ে দিয়েছেন। জল ছাড়াই ঝাঁঝরি হাতে আশ্রমের ঘরে পৌঁছলো। যখন গুরুদেব জলের কথা জিজ্ঞেস করলেন, তখন শিষ্য বললো, "গুরুদেব এই ফুটো পাত্রে তো জল থাকে না"।

গুরুদেব একটু হেসে বললেন, একবার ভালো করে পাত্রের দিকে তাকিয়ে দেখো শিষ্য। কিছু পার্থক্য বুঝতে পারছো?

শিষ্য এতক্ষন নজর দেয় নি। গুরুর কথা শুনে এবার খেয়াল করে দেখলো, ঝাঁঝরিটি একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে। চকচক করছে। প্রত্যেকবার জল তোলার সময়ে একটু একটু করে করে নোংরাগুলো ধুয়ে চলে গেছে।

গুরুদেব এবার বললেন। বই পড়াশুনা করা ব্যাপারটাও এরকম।

অব্যবহৃত পুরোনো ঝাঁঝরি = মানুষের মন

নদীর জল = বইয়ের জ্ঞান

নদী = বইসম্ভার

অনেক বই পড়লে আপাতদৃষ্টিতে কিছুই মনে থাকে না। তার জন্যে ভেবে লাভ নেই । পড়ার সময়ে মানুষের মনের শুদ্ধতা প্রাপ্তি হয়। মানুষের চেতনার অগোচরেই। প্রত্যেকটা বই পড়ার সময়ে মানুষের অবচেতন মনের উন্নতি হয় আসতে আসতে। একটু একটু ক'রে।

ধন্যবাদ।

সাবধানে থাকুন। সুস্থ থাকুন।

✍️ রশিদ (Rashid)

Post a Comment

Previous Post Next Post