১. হযরত আদম (আঃ) – প্রথম মানব ও নবী
ইসলামের বিশ্বাস অনুযায়ী, হযরত আদম (আঃ) ছিলেন প্রথম মানব এবং প্রথম নবী। কুরআনে বলা হয়েছে:
"আমি আদমকে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর তাকে রূহ (প্রাণ) দিয়েছি।"
(সুরা সাদ: ৭১-৭২)
আদম (আঃ)-কে আল্লাহ মাটি থেকে সৃষ্টি করেন এবং তাঁকে জান্নাতে স্থান দেন। পরে ইবলিসের ধোঁকায় তিনি ও হাওয়া (আঃ) পৃথিবীতে প্রেরিত হন।
২. শুধু পৃথিবীতে মানবজাতি, নাকি অন্যত্রও সৃষ্টিজীব?
অনেক ইসলামী ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, কেবল পৃথিবীতেই মানবজাতি বিদ্যমান, তবে অন্যান্য সৃষ্টিজীবের সম্ভাবনা কুরআনের কিছু আয়াত ও হাদিস থেকে অনুমান করা যায়।
(ক) কুরআনের কিছু আয়াত যেগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, আরও সৃষ্টি থাকতে পারে:
"আল্লাহ সে সত্তা, যিনি সাত আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং অনুরূপভাবে পৃথিবীকেও।"
(সুরা তালাক: ১২)এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, শুধু পৃথিবী নয়, অন্যান্য স্থানে জীবন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
"আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর। আর তিনি অনন্য সৃষ্টিকর্তা।"
(সুরা শুরা: ২৯)"আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে" — এটি ইঙ্গিত দিতে পারে যে, অন্যান্য স্থানেও সৃষ্টিজীব থাকতে পারে।
(খ) হাদিসে কিছু ইঙ্গিত
একটি হাদিসে বলা হয়েছে:
"আল্লাহ তাআলা এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী প্রেরণ করেছেন।"
(মুসনাদে আহমাদ, সহিহ ইবনে হিব্বান)
এই হাদিস শুধুমাত্র পৃথিবীর জন্য নাকি আরও কোনো স্থানের জন্যও প্রযোজ্য, সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো বর্ণনা নেই।
৩. মহানবী (সাঃ) ও অন্যান্য সৃষ্টি বিষয়ে বক্তব্য
কিছু ব্যাখ্যাকারী বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং তাঁকে "রহমাতুল্লিল আলামিন" (সকল সৃষ্টির জন্য রহমত) বলা হয়েছে:
"আমি তোমাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।"
(সুরা আম্বিয়া: ১০৭)
যেহেতু এখানে "আল-আলামীন" শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, এটি শুধু পৃথিবীর জন্য নয় বরং সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্যও হতে পারে।
উপসংহার
১. হযরত আদম (আঃ) মানবজাতির আদি পিতা, এটি স্পষ্টভাবে কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
২. পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো বুদ্ধিমান সৃষ্টিজীব আছে কি না, সে বিষয়ে কুরআন সরাসরি কিছু বলেনি, তবে কিছু আয়াত থেকে অনুমান করা যায় যে, আল্লাহ আরও কিছু সৃষ্টি করে থাকতে পারেন।
৩. মহানবী (সাঃ) সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত— এটি বোঝায় যে, পৃথিবীর বাইরেও যদি কোনো সৃষ্টি থাকে, তবে তাদের জন্যও তিনি প্রেরিত হতে পারেন।
সংক্ষেপে:
আদম (আঃ) ছিলেন পৃথিবীর প্রথম মানব।
পৃথিবীর বাইরেও কোনো সৃষ্টিজীব থাকতে পারে, তবে তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।
মহানবী (সাঃ) শুধু পৃথিবীর জন্য নন, বরং সমস্ত সৃষ্টির জন্য রহমত।