কুরআন থেকে নামায !

কুরআন থেকে  নামায !


পবিত্র কোরআন অনুসারে সালাত অর্থাৎ নামাজ । আল কোরআনে কত ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে বলা হয়েছে তা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। ইসলামের মৌল গ্রন্থ কোরআনে এ বিষয়ে কোন স্পষ্ট নির্দেশনা আছে কিনা তা সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

ইমানদার হওয়ার পরও ছোটখাট মতভেদের কারনে কঠিন ভেবে অনেকে নামাজ থেকে পালিয়ে বেড়ান। তাই নামাজ কায়েমের পদ্ধতিকে ভীতিপ্রদ ও জটিল নয়, বরং রাসূলের (সাঃ) প্রদর্শিত সহজ-সরল পন্থায় সবার সামনে উপস্থাপন করা চাই। তাই নামাজ কায়েমের পদ্ধতিকে ভীতিপ্রদ ও জটিল নয়, বরং রাসূলের (সাঃ) প্রদর্শিত সহজ-সরল পন্থায় সবার সামনে উপস্থাপন করা চাই। 

আল-কোরআন অনুসারে বুঝে শুনে হাদিছ মানার বিষয়ে বক্তব্য পেশ করায় আমাকে অনেক সময় আল-কুরানি ও হাদিছ অস্বীকারকারী হিসেবে আখ্যা দেযা হয়ে থাকে। আমি কত ওয়াক্ত সালাত আদায় করি তা নিয়েও প্রায়শই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। ইসলামের মৌল গ্রন্থ আল-কোরআনে সালাত/ নামাজ সম্পর্কে কোন স্পষ্ট নির্দেশ আছে কিনা সে বিষয়ে এবং সেই সাথে সালাত সম্পর্কে আমি যা জানি, বিশ্বাস করি ও মানি তা সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

সালাত নাকি  নামাজ নাম নিয়ে মতবিরোধ ! 

প্রথমেই লক্ষণীয় কিছু বিষয় উল্লেখ করা যাক। ইসলাম-পূর্ব আরবেও আল্লাহ নামের ব্যবহার খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু তা কেবল সৃষ্টিকারী বুঝাতে ব্যবহার করা হতো।[১২][১৩] আল্লাহ সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন ধারণা থাকলেও পৃথিবীর প্রধান তিনটি ধর্মের অনুসারীদের অর্থাৎ মুসলমান, ইহুদী ও খ্রিস্টানদের কাছে আল্লাহ একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, অদ্বিতীয়, একমাত্র অভিভাবক এবং একমাত্র আরাধনাযোগ্য, একই সঙ্গে আদি-অন্তহীন, অবিনশ্বর এবং সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।

 “আল্লাহ” নামবাচক শব্দটি সরাসরি কোরআন থেকে এসেছে। অন্যদিকে “খোদা” হচ্ছে ফার্সি  শব্দ। কিন্তু ইরান ও উপমহাদেশের মুসলিমরা যখন “খোদা” বলে তখন সকলেই কোরআনের আল্লাহকেই বুঝিয়ে থাকে, অন্য কাউকে নয়। এমনকি বাংলাভাষী মুসলিমরা যখন “স্রষ্টা” বা “সৃষ্টিকর্তা” বা “ঈশ্বর” বলে তখনও সবাই কোরআনের আল্লাহকেই বুঝে থাকে। “সাওম” হচ্ছে কোরআনিক শব্দ। অন্যদিকে “রোজা” সম্ভবত ফার্সি বা উর্দু শব্দ। কিন্তু উপমহাদেশের মুসলিমরা যখন “রোজা” বলে তখন সবাই কোরআনের সাওমকেই বুঝে থাকে, অন্য কিছুকে নয়। “মুসলিম” হচ্ছে কোরআনিক শব্দ। অন্যদিকে “মুসলমান/মোসলমান” সম্ভবত পার্সী বা সংস্কৃত শব্দ। কিন্তু মুসলিমরা যখন “মুসলমান/মোসলমান” বলে তখন সবাই ইসলামে বিশ্বাসীকেই বুঝে থাকে, অন্য কোনো ধর্মে বিশ্বাসীকে নয়।

একই ভাবে , “সালাত” হচ্ছে কোরআনিক শব্দ। অন্যদিকে “নামাজ” সম্ভবত ফার্সি শব্দ। কিন্তু মুসলিমরা যখন নামাজের কথা বলে তখন সবাই কোরআনের সালাতকেই বুঝে থাকে, অন্য কোনো সম্প্রদায়ের উপাসনা পদ্ধতিকে নয়। একদিকে ফার্সিয়ান ধর্মান্তরিত মুসলিমদের প্রভাব অন্যদিকে উপমহাদেশে ধর্মান্তরিত মুসলিমদের কারণে কিছু কিছু এলাকাতে শুধু নাম পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু বিশ্বাস বা চর্চায় কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে গৌণ পর্যায়ে একটু-আধটু এদিক-সেদিক হতেও পারে – সেটা আলাদা। অধিকন্তু, সৌদি আরব-সহ আফ্রিকা-মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ও আমেরিকা-ইউরোপের মুসলিমরা কিন্তু খোদা, নামাজ, রোযা, মুসলমান, মোসলমান, ইত্যাদি শব্দগুলো ব্যবহার করে না। শুধুমাত্র ফার্সি ও উর্দু-প্রভাবিত এলাকাগুলোতেই এই শব্দগুলোর প্রচলন দেখা যায়, যদিও সেই এলাকাগুলোতেও সবাই এই শব্দগুলো ব্যবহার করে না।

যাহোক, বাংলাদেশী মুসলিমরা দেশে যেভাবে “নামাজ” পালন করে, সৌদি আরব বা আমেরিকাতে যেয়ে তাদের সাথে কিন্তু একইভাবে “সালাত” পালন করে! ইন্দোনেশিয়ান-মালয়েশিয়ান মুসলিমরাও সৌদি আরব বা আমেরিকাতে যেয়ে একই নিয়মে “সালাত” পালন করে। ফলে মুসলিমদের কাছে “নামাজ” আর “সালাত” এর মধ্যে কোনোই পার্থক্য নেই,  বাঙ্গালীদের কাছে যেমন যাহাই জল তাহাই পানি, তেমনি বাঙ্গালী মুসলিমদের কাছে যাহাই নামাজ তাহাই সালাত। অথচ এই সর্বজনবিদিত ও সমার্থক দুটি শব্দ নিয়ে বিভ্রান্তি । দেশ-কাল-জাতি নির্বিশেষে সারা বিশ্ব জুড়ে মুসলিমরা সার্বিকভাবে প্রতিদিন সালাত পালন করে। প্রচলিত সালাতের মধ্যে যে মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান সেগুলো হচ্ছে:

১) অজু তথা শরীরের কিছু অংশ ধৌতকরণ।

২) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোষাক পরিধান।

৩) আযান দেওয়া।

৪) কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো।

৫) কোরআনের কিছু অংশ তেলওয়াত করা।

৬) রুকু এবং সিজদা করা।

১) নামাজের আগে অজু যে ভাবে করবেন 

 یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا قُمۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ فَاغۡسِلُوۡا وُجُوۡهَکُمۡ وَ اَیۡدِیَکُمۡ اِلَی الۡمَرَافِقِ وَ امۡسَحُوۡا بِرُءُوۡسِکُمۡ وَ اَرۡجُلَکُمۡ اِلَی الۡکَعۡبَیۡنِ ؕ وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوۡا ؕ وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡهِکُمۡ وَ اَیۡدِیۡکُمۡ مِّنۡهُ ؕ مَا یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیَجۡعَلَ عَلَیۡکُمۡ مِّنۡ حَرَجٍ وَّ لٰکِنۡ یُّرِیۡدُ لِیُطَهِّرَکُمۡ وَ لِیُتِمَّ نِعۡمَتَهٗ عَلَیۡکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ

হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দন্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও। আর যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা যদি তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা যদি স্ত্রী সহবাস কর অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ কর। আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নিআমত তোমাদের উপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। সুরা আল মায়েদা আয়াত ৬ 

২) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোষাক পরিধান।

 یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ خُذُوۡا زِیۡنَتَکُمۡ عِنۡدَ کُلِّ مَسۡجِدٍ وَّ کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ۚ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ

হে বনী আদম, তোমরা প্রতি সালাতে তোমাদের বেশ-ভূষা গ্রহণ কর এবং খাও, পান কর ও অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। সুরা আর'আফ আয়াত ৩১ 

 (1) আয়াতে (زِينَة) (সৌন্দর্য) বলতে পোশাক বুঝানো হয়েছে। এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণও হল মুশরিকদের উলঙ্গ তাওয়াফ করা। তাই তাদেরকে বলা হল, পোশাক পরে আল্লাহর ইবাদত ও তাওয়াফ কর।

2) (إِسْرَافٌ) (অপচয় করা) প্রত্যেক জিনিসেই এমন কি পানাহারেও অপছন্দনীয়। একটি হাদীসে নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, “যা ইচ্ছা খাও, যা ইচ্ছা পরিধান কর। তবে দুটি জিনিস থেকে অবশ্যই বেঁচে থাক। অপচয় ও অহংকার থেকে।” (বুখারী, লিবাস অধ্যায়)

আয়াতের শানে নুযুল হিসেবে এসেছে যে, আরবের মুশরিকরা জাহেলিয়াতে মসজিদে হারামে কাবার তাওয়াফ করার সময় উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করত। এ ব্যাপারে তাদের দর্শন ছিল, যে কাপড় পরে গুণাহ করেছি তা দিয়ে তাওয়াফ করা যাবে না। বিশেষতঃ কুরাইশরা এ বিধিবিধানের প্রবর্তন করে। তারাই শুধু তাওয়াফের জন্য কাপড় দিতে পারবে। এতে করে তারা কিছু বাড়তি সুবিধা আদায় করতে পারত। এমনকি মহিলারাও উলঙ্গ তাওয়াফ করত। শয়তান তাদেরকে এভাবে ইবাদাত করতে উদ্বুদ্ধ করত এবং এ কাজকে তাদের মনে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে দিত। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ মহিলা উলঙ্গ অবস্থায় কা'বার তাওয়াফ করত আর বলত, কে আমাকে তাওয়াফের কাপড় ধার দেবে? যা তার লজ্জাস্থানে রাখবে। আরও বলতঃ আজ হয় কিছু অংশ প্রকাশ হয়ে পড়বে নয়ত পুরোটাই। আর যা আজ প্রকাশিত হবে তা আর হালাল করব না। তখন এ আয়াত নাযিল হয়- “তোমরা তোমাদের মাসজিদ তথা ইবাদাতের স্থানে সুন্দর পোষাক পরবে।” [মুসলিমঃ ৩০২৮]

৩) আযান দেওয়া।
 وَ اِذَا نَادَیۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ اتَّخَذُوۡهَا هُزُوًا وَّ لَعِبًا ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّهُمۡ قَوۡمٌ لَّا یَعۡقِلُوۡنَ
আর যখন তোমরা সালাতের দিকে ডাক, তখন তারা একে উপহাস ও খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করে। তা এই কারণে যে, তারা এমন কওম, যারা বুঝে না।সুরা মায়েদা আয়াত ৫৮ 

৪) কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো।

وَ مِنۡ حَیۡثُ خَرَجۡتَ فَوَلِّ وَجۡهَکَ شَطۡرَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ ؕ وَ حَیۡثُ مَا کُنۡتُمۡ فَوَلُّوۡا وُجُوۡهَکُمۡ شَطۡرَهٗ ۙ لِئَلَّا یَکُوۡنَ لِلنَّاسِ عَلَیۡکُمۡ حُجَّۃٌ ٭ۙ اِلَّا الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا مِنۡهُمۡ ٭ فَلَا تَخۡشَوۡهُمۡ وَ اخۡشَوۡنِیۡ ٭ وَ لِاُتِمَّ نِعۡمَتِیۡ عَلَیۡکُمۡ وَ لَعَلَّکُمۡ تَهۡتَدُوۡنَ
আর তুমি যেখান থেকেই বের হও, তোমার চেহারা মাসজিদুল হারামের দিকে ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক, তার দিকে তোমাদের চেহারা ফিরাও, যাতে তোমাদের বিপক্ষে মানুষের বিতর্ক করার কিছু না থাকে। তবে তাদের মধ্য থেকে যারা যুলম করেছে, তারা ছাড়া। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, আমাকে ভয় কর। আর যাতে আমি আমার নিআমত তোমাদের উপর পূর্ণ করতে পারি এবং যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।- ২:১৫০

আলোচ্য আয়াতে কেবলা পরিবর্তনের বিষয়টি বলতে গিয়ে (فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ) বাক্যটি তিনবার এবং (وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ) বাক্যটি দু'বার করে পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এর একটা সাধারণ কারণ এই যে, কেবলা পরিবর্তনের নির্দেশটি বিরোধীদের জন্য তো এক হৈ-চৈ এর ব্যাপার ছিলই, স্বয়ং মুসলিমদের জন্যও তাদের ইবাদাতের ক্ষেত্রে ছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কাজেই এ নির্দেশটি যদি যথার্থ তাকীদ ও গুরুত্ব সহকারে ব্যক্ত করা না হত, তাহলে মনের প্রশান্তি অর্জন হয়ত যথেষ্ট সহজ হত না। আর সেজন্যই নির্দেশটিকে বার বার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। তদুপরি এতে এরূপ ইংগিতও রয়েছে যে, কেবলার এই যে পরিবর্তন, এটাই সর্বশেষ পরিবর্তন। এরপর পুনঃপরিবর্তনের আর কোন সম্ভাবনা নেই।

৫) কোরআনের কিছু অংশ তেলওয়াত করা।
নিম্নের আয়াতগুলোর উপর ভিত্তি করে মুসলিমরা চৌদ্দশ’ বছর ধরে সালাতের সময় সূরা আল ফাতিহা ও কোরআনের কিছু আয়াত তেলওয়াত করে আসছে।
আর আমি তো তোমাকে দিয়েছি পুনঃপুনঃ পঠিত সাতটি আয়াত ও মহান কুরআন। ১৫:৮৭

 اِنَّ رَبَّکَ یَعۡلَمُ اَنَّکَ تَقُوۡمُ اَدۡنٰی مِنۡ ثُلُثَیِ الَّیۡلِ وَ نِصۡفَهٗ وَ ثُلُثَهٗ وَ طَآئِفَۃٌ مِّنَ الَّذِیۡنَ مَعَکَ ؕ وَ اللّٰهُ یُقَدِّرُ الَّیۡلَ وَ النَّهَارَ ؕ عَلِمَ اَنۡ لَّنۡ تُحۡصُوۡهُ فَتَابَ عَلَیۡکُمۡ فَاقۡرَءُوۡا مَا تَیَسَّرَ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ ؕ عَلِمَ اَنۡ سَیَکُوۡنُ مِنۡکُمۡ مَّرۡضٰی ۙ وَ اٰخَرُوۡنَ یَضۡرِبُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ یَبۡتَغُوۡنَ مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ ۙ وَ اٰخَرُوۡنَ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ ۫ۖ فَاقۡرَءُوۡا مَا تَیَسَّرَ مِنۡهُ ۙ وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَ اَقۡرِضُوا اللّٰهَ قَرۡضًا حَسَنًا ؕ وَ مَا تُقَدِّمُوۡا لِاَنۡفُسِکُمۡ مِّنۡ خَیۡرٍ تَجِدُوۡهُ عِنۡدَ اللّٰهِ هُوَ خَیۡرًا وَّ اَعۡظَمَ اَجۡرًا ؕ وَ اسۡتَغۡفِرُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
নিশ্চয় তোমার রব জানেন যে, তুমি রাতের দুই তৃতীয়াংশের কিছু কম, অথবা অর্ধরাত অথবা রাতের এক তৃতীয়াংশ সালাতে দাঁড়িয়ে থাক এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের মধ্য থেকে একটি দলও। আর আল্লাহ রাত ও দিন নিরূপণ করেন। তিনি জানেন যে, তোমরা তা করতে সক্ষম হবে না। তাই তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন। অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে পৃথিবীতে ভ্রমণ করবে, আর কেউ কেউ আল্লাহর পথে লড়াই করবে। অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়। আর সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। আর তোমরা নিজদের জন্য মঙ্গলজনক যা কিছু অগ্রে পাঠাবে তোমরা তা আল্লাহর কাছে পাবে প্রতিদান হিসেবে উৎকৃষ্টতর ও মহত্তর রূপে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [৭৩:২০] 

 قُلِ ادۡعُوا اللّٰهَ اَوِ ادۡعُوا الرَّحۡمٰنَ ؕ اَیًّامَّا تَدۡعُوۡا فَلَهُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی ۚ وَ لَا تَجۡهَرۡ بِصَلَاتِکَ وَ لَا تُخَافِتۡ بِهَا وَ ابۡتَغِ بَیۡنَ ذٰلِکَ سَبِیۡلًا
বল, ‘তোমরা (তোমাদের রবকে) ‘আল্লাহ’ নামে ডাক অথবা ‘রাহমান’ নামে ডাক, যে নামেই তোমরা ডাক না কেন, তাঁর জন্যই তো রয়েছে সুন্দর নামসমূহ। তুমি তোমার সালাতে স্বর উঁচু করো না এবং তাতে মৃদুও করো না; বরং এর মাঝামাঝি পথ অবলম্বন কর। আল-বায়ান[ ১৭:১১০] 

এ আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ হিসেবে এসেছে যে, মক্কায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করতেন, তখন মুশরিকরা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত এবং কুরআন, জিবরীল ও স্বয়ং আল্লাহ্ তাআলাকে উদ্দেশ্য করে ধৃষ্টতাপূর্ণ কথাবার্তা বলত এর জওয়াবে আয়াতের শেষাংশ অবতীর্ণ হয়েছে। [বুখারীঃ ৪৭২২, মুসলিমঃ ৪৪৬] এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সশব্দ ও নিঃশব্দ উভয়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কেননা, মধ্যবর্তী শব্দে পাঠ করলেই প্রয়োজন পূর্ণ হয়ে যেত এবং সশব্দে পাঠ করলে মুশরিকরা নিপীড়নের যে সুযোগ পেত, তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।


৬) রুকু এবং সিজদা করা।
নিম্নের আয়াতের উপর ভিত্তি করে মুসলিমরা চৌদ্দশ’ বছর ধরে সালাতের সময় রুকু আর সিজদা করে আসছে (সিজদা হচ্ছে সালাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বাইবেল অনুযায়ীও যীশু তথা ঈসা (আঃ) ভূমিতে মাথা রেখে সিজদা করতেন)।
 یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا ارۡکَعُوۡا وَ اسۡجُدُوۡا وَ اعۡبُدُوۡا رَبَّکُمۡ وَ افۡعَلُوا الۡخَیۡرَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
হে মুমিনগণ, তোমরা রুকূ‘ কর, সিজদা কর, তোমাদের রবের ইবাদাত কর এবং ভাল কাজ কর, আশা করা যায় তোমরা সফল হতে পারবে।[সাজদাহ] (Quran 22:77)

আর স্মরণ কর, যখন আমি কাবাকে মানুষের জন্য মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান বানালাম এবং (আদেশ দিলাম যে,) ‘তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর’। আর আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে, ‘তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ‘ইতিকাফকারী ও রুকূকারী-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর’। Quran 2:125)

মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকূকারী, সিজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সিজদার চি‎হ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইনজীলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মত, যে তার কঁচিপাতা উদগত করেছে ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়েছে ও স্বীয় কান্ডের উপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষীকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ওয়াদা করেছেন। (Quran 48:29)

প্রচলিত নামাজ তথা সালাতের ভিত্তি হচ্ছে স্বয়ং কোরআন। “সালাত” মানে প্রচলিত সালাত বা নামাজ ব্যতীত অন্য কিছু হতে পারে না, যদিও সালাতের একাধিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। যেমন, সালাতের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা, চরিত্র সংশোধন, ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ হওয়া, ইত্যাদি।


       সালাতের ওয়াক্ত  

নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর 'মাওকুতা' (ওয়াক্ত এর মূল ভাব) নির্দিষ্ট সময়ে ফরয। (৪ঃ১০৩)

(১) সালাতুল ফজরঃ
সালাত কায়েম কর দিবসের দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথম অংশে -১১ঃ১১৪/২৪ঃ৫৮/৪৮ঃ৯/৩০ঃ১৭/৩৩ঃ৪২/১৭ঃ৭৯/২ঃ১৮৭/৫২ঃ৪৮.

(২) সালাতুল যোহর/দুলুকিশ শামসঃ

আর অপরাহ্নে ও যুহরের সময়ে; আর আসমান ও যমীনে সকল প্রশংসা একমাত্র তাঁরই।
-৩০ঃ১৮/১৭ঃ৭৮/২ঃ২৩৮/২০ঃ১৩০.

(৩)সালাতুল আসর/আশিয়্যাঃ

আর তুমি তাড়িয়ে দিয়ো না তাদেরকে, যারা নিজ রবকে সকাল ও আসরের সময় ডাকে, তারা তার সন্তুষ্টি চায়।
-৬ঃ৫২/৩৩ঃ৪২/৩৮ঃ৩১-৩৩/৫০ঃ৩৯/১০৩ঃ১/৩০ঃ১৮/২০ঃ১৩০.

(৪)সালাতুল মাগরিব/আছীলঃ

তুমি নিজ মনে আপন রবকে স্মরণ কর সকাল-সন্ধ্যায় অনুনয়-বিনয় ও ভীতি সহকারে এবং অনুচ্চ স্বরে। -৭ঃ২০৫/১৩ঃ১৫/২৪ঃ৩৬/৪৮ঃ৯/৭৬ঃ২৫/১১ঃ১১৪/২৫ঃ৫/৩৩ঃ৪২/

(৫)সালাতুল এশাঃ
ফজরের সালাতের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা তোমাদের পোশাক খুলে রাখ, এবং ‘ইশার সালাতের পর।
-২৪ঃ৫৮/৫০ঃ৫০/১১ঃ১১৪/১২ঃ১৬/৫২ঃ৪৯.

(৬)সালাতুল তাহাজ্জুদ/কিয়ামুল লাইল/শেষ রাত/গাসাকিল লাইল/আসহার/লাইলান ত্ববীলাঃ

আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় কর তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে।
-১৭ঃ৭৯/৭৩ঃ১-৩,২০/৩ঃ১৭,১১৩/২০ঃ১৩০/৩৯ঃ৯/৫১ঃ১৮/২৫ঃ৬৪/৭৬ঃ২৬/৫২ঃ৪৯.


সালাতে অঙ্গ বিন্যাস

আনুষ্ঠানিক সালাতের উদাহরন আমরা দেখতে পাই ৪:১০২ আয়াতে। কোরানের আয়াতগুলো থেকে আমরা সালাতে ৩ টি পজিশান বা শারীরিক অবস্থানের কথা জানতে পারি। দাড়ানো , রুকু ও সেজদা।
৪:১০২ নং আয়াত থেকে এটা পরিস্কার , সালাত শুরু হবে দাড়ানোর মাধ্যমে এবং শেষ হবে সেজদার মধ্য দিয়ে।

দাড়ানো
২:২৩৮ সমস্ত নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে।
আর আল্লাহর সামনে একান্ত
আদবের সাথে দাঁড়াও।

রুকু
২:৪৩ আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং সালাতে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়। ( যেটাকে আমরা রুকু বলে জানি ﻭَﺍﺭْﻛَﻌُﻮﺍْ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺮَّﺍﻛِﻌِﻴﻦَ )
৯:১১২ তারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগোযার, (দুনিয়ার সাথে) সম্পর্কচ্ছেদকারী, রুকু ও সিজদা আদায়কারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেওয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী। বস্তুতঃ সুসংবাদ দাও ঈমানদারদেরকে।

সেজদা
৪:১০২ যখন আপনি তাদের মধ্যে থাকেন, অতঃপর নামাযে দাঁড়ান, তখন যেন একদল দাঁড়ায় আপনার সাথে এবং তারা যেন স্বীয় অস্ত্র সাথে নেয়। অতঃপর যখন তারা সেজদা সম্পন্ন করে , তখন আপনার কাছ থেকে যেন সরে যায় এবং অন্য দল যেন আসে, যারা নামায পড়েনি। অতঃপর তারা যেন আপনার সাথে নামায পড়ে এবং আত্মরক্ষার হাতিয়ার সাথে নেয়। কাফেররা চায় যে, তোমরা কোন রূপে অসতর্ক থাক, যাতে তারা একযোগে তোমাদেরকে আক্রমণ করে বসে। যদি বৃষ্টির কারণে তোমাদের কষ্ট হয় অথবা তোমরা অসুস্থ হও তবে স্বীয় অস্ত্র পরিত্যাগ করায় তোমাদের কোন গোনাহ নেই এবং সাথে নিয়ে নাও তোমাদের আত্নরক্ষার অস্ত্র। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদের জন্যে অপমানকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।


>> সালাতে কি বলতে হবে?

সালাতে আমরা যেটাই বলিনা কেন , সেটা বুঝে বলতে হবে এবং মধ্যম স্বরে বলতে হবে। মনে মনে ও না বা চেচিয়ে পাড়া মাথায় করাও না। এটাই কোরানিক নির্দেশ। ১৭:১১০ আয়াত যেহেতু সালাত সংক্রান্ত , সেহেতু ১৭:১১১ আয়াতেও সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেই ধরে নেয়া যেতে পারে। সালাতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর স্মরন করি , তার সাহায্য প্রার্থনা করি , তার প্রশংসা করি সর্বপরি তার উপাসনা করি। সুরা ফাতেহার ৭ টি আয়াতের মাধ্যমে এগুলোর সবি করা সম্ভব। 
ধারনা করা হয় ১৫:৮৭ আয়াতে সুরা ফাতেহার কথাই বলা হয়েছে (আল্লাহই ভাল জানেন)। আল্লাহ কোরানে তার পবিত্রতা ঘোষনা করতে বলছেন , যেটা আমরা করে থাকি রুকু ও সেজদাতে।
সালাতে মধ্যম স্বর
১৭:১১০ বলুনঃ আল্লাহ বলে আহবান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই। আপনি নিজের নামায আদায়কালে স্বর উচ্চগ্রাসে নিয়ে গিয়ে পড়বেন না এবং নিঃশব্দেও পড়বেন না। এতদুভয়ের মধ্যমপন্থা অবলম্বন করুন।

তাকবীর বা আল্লাহর মহত্ব বর্ণনা করা
১৭:১১১ বলুনঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর
যিনি না কোন সন্তান রাখেন, না তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন শরীক আছে এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তাঁর কোন সাহয্যকারীর প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং আপনি স-সম্ভ্রমে তাঁর মাহাত্ন ( ﻭَﻛَﺒِّﺮْﻩُ ﺗَﻜْﺒِﻴﺮًﺍ ) বর্ণনা করতে থাকুন।
কোরান থেকে পাঠ করা
২৯:৪৫ আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম করুন।
সূরা ফাতেহা
১৫:৮৭আমি আপনাকে সাতটি বার বার পঠিতব্য আয়াত এবং মহান কোরআন দিয়েছি।
রুকু ও সেজদাতে তাসবীহ
৫৬:৭৪
ﻓَﺴَﺒِّﺢْ ﺑِﺎﺳْﻢِ ﺭَﺑِّﻚَ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ
অতএব, আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামে পবিত্রতা ঘোষণা করুন।
৮৭:১
ﺳَﺒِّﺢِ ﺍﺳْﻢَ ﺭَﺑِّﻚَ ﺍﻟْﺄَﻋْﻠَﻰ
আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন
৫০:৪০ রাত্রির কিছু অংশে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং নামাযের পশ্চাতেও ( ﺍﻟﺴُّﺠُﻮﺩِ )।
শাহাদা
৩:১৮ আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। ফেরেশতাগণ এবং ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।



 সালাতের ইতিহাস

ইব্রাহিমের সালাত।
২:১২৫ যখন আমি কা’বা গৃহকে মানুষের জন্যে সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে সালাতের ( ﻣُﺼَﻠًّﻰ ) জায়গা বানাও এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ।

মূসা ও হারুনের সালাত।
১০:৮৭ আর আমি নির্দেশ পাঠালাম মূসা এবং তার ভাইয়ের প্রতি যে, তোমরা তোমাদের জাতির জন্য মিসরের মাটিতে বাস স্থান নির্ধারণ কর। আর তোমাদের ঘরগুলো বানাবে কেবলামুখী করে এবং সালাত কায়েম কর আর যারা ঈমানদার তাদেরকে সুসংবাদ দান কর।

ঈসার সালাত।
১৯:৩১ আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামায ও যাকাত আদায় করতে।

শুয়েবের সালাত।
১১:৮৭ তারা বলল-হে শোয়ায়েব (আঃ) আপনার সালাত কি আপনাকে ইহাই শিক্ষা দেয় যে, আমরা ঐসব উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করব আমাদের বাপ-দাদারা যাদের উপাসনা করত? অথবা আমাদের ধন-সম্পদে ইচ্ছামত যা কিছু করে থাকি, তা ছেড়ে দেব? আপনি তো একজন খাস মহৎ ব্যক্তি ও সৎপথের পথিক।
জাকারিয়ার সালাত।
৩:৩৯ যখন তিনি কামরার ভেতরে সালাতে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন ফেরেশতারা তাঁকে ডেকে বললেন যে, আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ইয়াহইয়া সম্পর্কে, যিনি সাক্ষ্য দেবেন আল্লাহর নির্দেশের সত্যতা সম্পর্কে, যিনি নেতা হবেন এবং নারীদের সংস্পর্শে যাবেন না, তিনি অত্যন্ত সৎকর্মশীল নবী হবেন।

মারিয়ামের সালাত।
৩:৪৩ ‘হে মার্‌ইয়াম! আপনার রবের অনুগত হন এবং সিজদা করুন আর রুকু‘ কারীদের সাথে রুকূ‘ করুন।’

বণী ইস্রাইলের সালাত।
২:৪৩ আর সালাত কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং সালাতে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়।

লুকমানের সালাত।
৩১:১৭ হে বৎস, সালাত কায়েম কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ।

রসূলের সমসাময়িক কাফেরদের সালাত।
৮:৩৫ আর কা’বার নিকট তাদের সালাত শিস দেয়া আর তালি বাজানো ছাড়া অন্য কোন কিছুই ছিল না। অতএব, এবার নিজেদের কৃত কুফরীর আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর।
আল্লাহর নিকটবর্তি হওয়ার আশায় শরীকদের জন্য উপাসনা।
৩৯:৩ জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদত আল্লাহরই নিমিত্ত। যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।

সুতরাং 'সালাত' সেইভাবে বুঝুন যেভাবে 'সালামুন আলা মুহাম্মদ বুঝিয়ে, দেখিয়ে ও শিখিয়ে দিয়ে গেছেন।।।


(১৬ঃ৪৯) আর আল্লাহ্‌কেই সিজদা করে যা কিছু আছে আসমানসমূহে ও যমীনে, যত জীবজন্তু আছে সেসব এবং ফিরিশতাগণও, তারা অহংকার করে না।
(২২ঃ১৮) আল্লাহকে সিজদা করে যারা আছে আসমানসমূহে ও যারা আছে যমীনে , আর সূর্য, চাঁদ, নক্ষত্রমণ্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং সিজদা করে মানুষের মধ্যে অনেকে?
(৫৫ঃ৬) আর তৃণলতা ও বৃক্ষাদি সিজদা করছে।
(১৭ঃ৪৪) সাত আসমান ও যমীন এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছু তাঁর তাসবীহ পাঠ করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর প্রসংশায় তাসবীহ পাঠ করে না;
কিন্তু তাদের তাসবীহ তোমরা বুঝ না।
(আবার পড়েন, তাদের তসবীহ তোমরা বুঝনা)

অর্থাৎ প্রত্যেকের 'সেজদাহ' বা ইবাদত পদ্ধতি আলাদা, এক জনেরটা অন্যজন বুঝবে না।

ইচ্ছাগত তাসবীহ তো শুধু ফেরেশতা এবং ঈমানদার জিন ও মানবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু সৃষ্টিগতভাবে আল্লাহ্ তাআলা জগতের প্রত্যেকটি অণু-পরমাণুকে তাসবীহ পাঠকারী বানিয়ে রেখেছেন
কিন্তু তাদের এই সৃষ্টিগত ও বাধ্যতামূলক তাসবীহ সাধারণ মানুষের শ্রুতিগোচর হয়না। এ আয়াতেই বলা হয়েছে, (وَلَٰكِنْ لَا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ) এ উক্তি এ কথা প্রমাণ করে যে, প্রত্যেক বস্তুর সৃষ্টিগত তাসবীহ এমন জিনিস, যা সাধারণ মানুষ বুঝতে সক্ষম নয়। অবস্থগত তাসবীহ তো বিবেকবান ও বুদ্ধিমানরা বুঝতে পারে। এ থেকে জানা গেল যে, এই তাসবীহ পাঠ শুধু অবস্থাগত নয়, সত্যিকারের; কিন্তু আমাদের বোধশক্তি ও অনুভূতির ঊর্ধ্বে।

উদাহরণতঃ সূরা ছোয়াদে দাউদ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “আমি পাহাড়সমূহকে আজ্ঞাবহ করে দিয়েছি। তারা দাউদের সাথে সকাল-বিকাল তাসবীহ পাঠ করে”। [সূরা ছোয়াদঃ ১৮] সূরা আল-বাকারায় পাহাড়ের পাথর সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “কতক পাথর আল্লাহর ভয়ে নীচে পড়ে যায়” [সূরা আল-বাকারাহ্‌ঃ ৭৪]। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, পাথরের মধ্যেও চেতনা, অনুভূতি ও আল্লাহর ভয় রয়েছে। সূরা মারইয়ামে নাসারা সম্প্রদায় কর্তৃক ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর পুত্র আখ্যায়িত করার প্রতিবাদে বলা হয়েছেঃ “তারা বলে, ‘দয়াময় সন্তান গ্ৰহণ করেছেন। তোমরা তো এমন এক বীভৎস বিষয়ের অবতারণা করছ; যাতে আকাশমণ্ডলী বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খণ্ড-বিখণ্ড হবে ও পর্বতমণ্ডলী চূৰ্ণ-বিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে, যেহেতু তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের শোভন নয়!”।[সূরা মার্‌ইয়ামঃ ৮৮-৯২] বলাবাহুল্য, এই ভয়-ভীতি তাদের চেতনা ও অনুভূতির পরিচায়ক। চেতনা ও অনুভূতি থাকলে তসবীহ পাঠ করা অসম্ভব নয়।

অর্থাৎ, সকলেই তাঁর অনুগত এবং তারা স্ব স্ব নিয়মে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণায় ও প্রশংসায় লিপ্ত আছে। যদিও আমরা তাদের পবিত্রতা ঘোষণা ও প্রশংসা করার কথা বুঝতে পারি না। এর সমর্থন কুরআনের আরো কিছু আয়াত দ্বারাও হয়। যেমন, দাঊদ (আঃ)-এর সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন,﴿إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ﴾  অর্থাৎ, আমি পর্বতসমূহকে তাঁর অনুগামী করে দিয়েছিলাম, তারা সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করত। (সূরা সাদ ১৮ আয়াত) কোন কোন পাথরের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَهْبِطُ مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ﴾ অর্থাৎ, কোন কোন পাথর আল্লাহর ভয়ে খসে পড়ে।

 (সূরা বাকারাহ ৭৪ আয়াত) কোন কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত যে, তাঁরা রসূল (সাঃ)-এর সাথে খাবার খাওয়ার সময় খাবার থেকে ‘তসবীহ’ পড়ার ধ্বনি শুনেছেন। (বুখারী, কিতাবুল মানাকিব ৩৫৭৯নং) অপর একটি হাদীসে এসেছে যে, পিঁপড়েরাও আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। (বুখারী ৩০১৯, মুসলিম ১৭৫৯নং) অনুরূপ খেজুর গাছের যে গুঁড়িতে হেলান দিয়ে রসূল (সাঃ) খুৎবা দিতেন, যখন কাঠের মিম্বর তৈরী হল এবং সেই গুঁড়িকে তিনি ত্যাগ করলেন, তখন তা থেকে শিশুর মত কান্নার শব্দ এসেছিল। (বুখারী ৩৫৮৩নং) মক্কায় একটি পাথর ছিল, যে রসূল (সাঃ)-কে সালাম দিত।

(মুসলিম ১৭৮২নং) এই আয়াত এবং হাদীসসমূহ হতে স্পষ্ট হয় যে, জড় পদার্থ এবং উদ্ভিদ জিনিসের মধ্যেও এক বিশেষ ধরনের অনুভূতি (জীবন) আছে, যদিও তা আমরা বুঝতে পারি না। তারা কিন্তু এই অনুভূতির ভিত্তিতে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ, প্রামাণ্য তসবীহ। অর্থাৎ, এই জিনিসগুলো প্রমাণ করে যে, সমগ্র বিশ্বের স্রষ্টা এবং সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান কেবল মহান আল্লাহ। وَفِي كُلِّ شَيْءٍ لَهُ آيَةٌ * تَدُلُّ عَلَى أَنَّهُ وَاحِدٌ ‘প্রত্যেক জিনিসের মধ্যে রয়েছে নিদর্শন, যা প্রমাণ করে যে, তিনি এক ও অদ্বিতীয়। (শুআবুল ঈমান বাইহাকী) তবে সঠিক কথা এটাই যে, ‘তসবীহ’ তার প্রকৃত ও মূল অর্থে ব্যবহার হয়েছে।



সিজদাহ্ কিভাবে দিতে হবেঃ
'সেজদাহ' আদায় করতে ৩ টি জিনিস লাগবে,
১. লুটিয়ে পড়তে হবে, ২. উঠা-বসা থাকতে হবে, ৩. কপালে চিহ্ন থাকবে।

১. সিজদাহ্ দিতে উপর থেকে নিচে লুটিয়ে পড়তে হবেঃ
(৩২ঃ১৫) কেবল তারাই আমার আয়াতসমূহ বিশ্বাস করে,
যাদেরকে ওর দ্বারা উপদেশ দেওয়া হলে তারা সিজদায় লুটিয়ে (খাররু) পড়ে।
(১৯ঃ৫৮) তাদের নিকট পরম করুণাময়ের আয়াত আবৃত্তি করা হলে, তারা ক্রন্দন করতে করতে সিজদায় লুটিয়ে (খাররু) পড়ত।

২. সিজদাহ্ দিতে উঠা-বসা থাকতে হবেঃ
(২৬ঃ২১৯) এবং তোমাকে দেখেন সিজদাকারীদের সাথে উঠতে-বসতে (ওতাকাললুবাকা)।

৩. সিজদাহ্ আদায়কারীদের মুখমণ্ডল/চেহারায় চিহ্ন থাকেঃ
(১৭ঃ১০৭) তাদের নিকট যখন এটা পাঠ করা হয়, তখনই তারা চেহারা/মুখমণ্ডল (লিলআজকানী) লুটিয়ে (ইয়াখিরুনা) সিজদায় পড়ে।
(১৭ঃ১০৯) আর তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে চেহারা/মুখমণ্ডল (লিলআজকানী) লুটিয়ে (ওতাখিরুনা) পড়ে এবং এ (কুরআন) তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।’
(৪৮ঃ২৯) তুমি তাদেরকে রুকু ও সিজদায় অবনত অবস্থায় আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করতে দেখবে।
তাদের মুখমন্ডলে সিজদার চিহ্ন (সীমাহুম) থাকবে।

'সেজদাহ' আদায় না করার পরিনামঃ
(৬৮ঃ৪২) সে দিন পায়ের গোছা উন্মোচন করা হবে। আর তাদেরকে সিজদা করার জন্য আহবান জানানো হবে, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না।
(৩২ঃ১২) যখন অপরাধীরা তাদের রবের সামনে মাথানত হয়ে থাকবে! (তারা বলবে) ‘হে আমাদের রব, আমরা দেখেছি ও শুনেছি, কাজেই আমাদেরকে পুনরায় পাঠিয়ে দিন, আমরা সৎকর্ম করব। নিশ্চয় আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী’।


"শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাঁধা দিতে। তবে কি তোমরা বিরত হবে না?"
(সূরা মায়িদাহ আয়াত ৯১)
তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। কাজেই অচিরেই তার ক্ষতিগ্রস্ততার সম্মুখীন হবে।"
(সূরা মারিয়াম, আয়াত ৫৯)

👉সালাত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে এটি তরখ করার উপায় নাই,
✔সফর অবস্থায় সালাতের হুকুমঃ-
সূরা নিসা, আয়াত ১০১
✔ এমন কি যুদ্ধের ময়দানে থাকলেও সালাতের বিধানঃ-
সূরা নিসা, আয়াত ১০২
✔ সালাত নির্দিষ্ট সময় কায়েম হবে (প্রয়োজনে দাড়িয়ে, শুয়ে বা বসে)
(সূরা নিসা, আয়াত ১০৩)
✔সালাত কায়েম না করলে দান খয়রাত গ্রহনযোগ্য হয় নাঃ-
সূরা তাওবাহ, আয়াত ৫৪
✔সালাত কায়েম না করলে সরাসরি জাহান্নামঃ-
‘তোমাদেরকে কিসে সাক্বার (জাহান্নাম)এ নিক্ষেপ করেছে?’
তারা বলবে,
‘আমরা সালাত কায়েমকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।
(সূরা মুদ্দাসিসর, আয়াত ৪২-৪৩)
✔সালাত কায়েম করলে জান্নাতঃ
আর যারা নিজদের সালাতের হিফাযত করে,
তারাই জান্নাতসমূহে সম্মানিত হবে। (৭০ঃ৩৪-৩৫)
সুতরাং আমরা নিজে নিজে কোরআন বুঝে পড়ার চেষ্টা করি তা ভালো, কিন্তু এমন কিছু নতুন আবিষ্কার না করি, যেটা পূর্বেকার সালাতে ছিলোনা। কারণ আল্লাহ বলছেনঃ
(৫ঃ৩) আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং
তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম।



কিছু ভিন্ন আলোচনা > 

(১৭ঃ৭৮-৭৯) সূর্য হেলে পড়বার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম কর
এবং (কায়েম কর) ফজরের কুরআন (সালাত);
নিশ্চয় ফজরের কুরআন (সালাত) পরিলক্ষিত হয় বিশেষভাবে।
আর রাত্রির কিছু অংশে তা দিয়ে তাহাজ্জুদ পড়;
এটা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য।
আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে।
এটা কি পরিস্কার নয় যে এখানে ৪ টা সময়ে সালাত কায়েম করার কথা বলা হচ্ছে না?
১. সূর্য্য হেলে পড়ে মাগরীব
২. রাতের ঘন অন্ধকারের আগ পর্যন্ত 'এশা'
৩. ফরজ এর সালাত (-১১ঃ১১৪/২৪ঃ৫৮/৪৮ঃ৯/৩০ঃ১৭/৩৩ঃ৪২/১৭ঃ৭৮/২ঃ১৮৭/৫২ঃ৪৮) সাথে কোরআন পাঠ করাও।
৪. তাহাজ্জুদ এর সালাত (যেটা অতিরিক্ত)

 অনুবাদের ক্ষেত্রে ২ টি বিষয়ে দৃষ্টিপাত করছি।
উদাহরণ#1ঃ
1) গান্ধীজী হত্যায় আরএসএস এর *হাত* ছিল।
2) মুহাম্মাদ (সা) এর লালনপালনে আবু তালিবের *হাত* ছিল।
3) চুরী করার কারণে চোরের *হাত* কাটা হয়েছিল।
উপরের তিনটি *হাত* এর অর্থ আক্ষরিক ভাবে একই। কিন্তু প্রেক্ষাপট অনুসারে ভিন্ন।
1) হাত- অর্থ চক্রান্ত
2) হাত- সাহায্য-সহযোগিতা
3) হাত- মানব শরীরের অঙ্গ
বাঙালী হিসাবে আমরা অতটা ভাষা জ্ঞান না রাখলেও কোথায় *হাত* এর আক্ষরিক অর্থ করতে হবে ও কোথায় প্রেক্ষাপট অনুসারে অর্থ করতে হবে সেটা সহজেই বুঝতে পারছি। এটাও বুঝতে পারছি যে, সকল *হাত* -এর অর্থ নিজের ইচ্ছামত আক্ষরিক করা যাবে না।
*যেমন*
কেউ যদি 2 নম্বর হাত- এর অর্থ 1 নম্বর হাত-এর মত করে তাহলে 2 নম্বর বাক্যের অর্থ হবে
রাসূল (সা) এর লালনপালনে আবু তালিবের চক্রান্ত ছিল।
একবার ভাবুন তো নিজের ইচ্ছা অনুসারে অনুবাদ করলে কী ঘটছে।
আশা করি বুঝতে পারা যাচ্ছে যে, আক্ষরিক অর্থ বা নিজের ইচ্ছা অনুসারে প্রেক্ষাপট উপেক্ষা করে কোন লেখনীর অর্থ করলে সঠিক মনে হলেও আসলে কতটা বিপরীত হতে পারে।
উদাহরণ#2ঃ
টেনে পড়া ও টেনে না পড়ায় অর্থের ভিন্নতাঃ
আরবীতে 'লা' মানে না /না বোধক বুঝায়।
যেটা টেনে পড়তে হয়। 'লা---'
আর যদি 'লা' টেনে পড়া না হয়, সেটা হ্যাঁ/ হ্যাঁ বোধক অর্থে রুপান্তরিত হয়ে যায়।
যেমনঃ 'লা--- ইলাহা' অর্থ 'কোন উপাস্য নাই'
আর যদি এভাবে পড়া হয় 'লা ইলাহা' তবে অর্থ দাড়াঁয় 'উপাস্য আছে'।
দ্বিতীয় উদাহরণঃ ছোট 'কাফ' আর বড় 'ক্বফ'
বাংলায় 'বাড়ী' বললে যেমন বাসা বুঝায়,
আবার 'বারি' বললে পানি বা বৃষ্টি ও বুঝায়।
তেমনি আরবীতে ছোট ও বড় হরফের উচ্চারণ গত ভিন্নতায় অর্থ বিকৃতি হয়ে যায়।
যেমনঃ ইখলাস সূরার প্রথমে আছে 'ক্বুল' অর্থ 'বলুন'
আর যদি উচ্চারণ করা হয় 'কুল' তবে অর্থ হয়ে যায় 'খাওয়া'।
সুতরাং আরবী উচ্চারণ ভিন্নতায় অর্থ বিকৃতি যেন না হয় আমাদের সেটা খেয়াল রাখা উচিৎ।।।



আরও >>>>  কিছু আলোচনা পর্যালোচনা যা অনেক সময় বিতর্কের কারন হয়ে দাড়ায় । 

একজন বলেছেন-

গত একবছরে আমার নামাজে যে পরিবর্তন গুলো হয়েছে, সেটা জানানোর জন্যই এই মন্তব্য।

১) আমি এখন আর কাবার দিকে ফিরে নামাজ পড়ি না। সাধারনত ইয়েমেনের দিকে ফিরে নামাজ পড়ি, মাঝে মাঝে যেকোন দিকে ফিরে নামাজ পড়ি। এর মূল কারন কোরানের ২:১৭৭ আয়াত। " সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে"

আমার জ্ঞান মতে কোরানে বর্ণীত জুলকার্নাইন ছাড়া প্রায় সকল নবী রসূলের জন্ম, মৃত্যু ও বাসস্থান ছিল বর্তমানের ইয়েমেন ও তার আশপাশের এলাকা।

২) নামাজে আল্লাহু আকবর না বলে শুধুই আল্লাহ বলি। কারন কোরানে কোথাও আল্লাহু আকবর শব্দদুটি একসাথে নেই। আল্লাহর সাথে কারো তুলনা করা উচিত নয়। আল্লাহ একক, তার সাথে কারো তুলনা চলে না।

আরো একটি কারন হলো, বর্তমানের কিছু মুসলমান নাম ধারী ইসলামের নামে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে  বোমা ফাটিয়ে তরবারি দিয়ে শিরোচ্ছেদ করে, কুপিয়ে নিরপরাধ মানুষ মারছে, যেটা আমাকে কোরানে বর্ণীত কাফেরদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যাদের এক দেবতা ছিল ‘আল্লাহু আকবর’ ও যার নামে তারা পুজা দিত, নেচে গেয়ে নামাজ পড়ত।

আমার জবাব-

আপনার ১ ও ২ নং বক্তব্য দুটির সত্যতা কি আপনি কোরআনের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে যাচাই করতে পেয়েছেন?

তিনি বললেন-

আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় – না, এটা সরাসরি কোরানে বলা নেই। তবে কোরান হাদিস ও প্রাচীন ইতিহাসের মাঝে যোগসুত্র করলে এমনটাই প্রতীয়মান হয়। এবং এগুলো যে ধ্রুব সত্য, এমন দাবী আমি করি না। যে কারনে মাঝে মাঝে আমি যেকোন দিকে ফিরে নামাজ পড়ি।

আমার জবাব-

মাঝে মাঝে বিশেষ করে যাত্রাপথে নামাজ কাজা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে বাহনের মধ্যেই আমি মোটামুটি আন্দাজ করে নিয়েই নামাজ শুরু করি। তখন অনেক সময়ই দিক এদিক সেদিক হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু আপনি তো প্রথমে বললেন- //আমি এখন আর কাবার দিকে ফিরে নামাজ পড়ি না।//

অথচ এখন আবার বলছেন- //যে কারনে মাঝে মাঝে আমি যেকোন দিকে ফিরে নামাজ পড়ি।//

তাহলে কি প্রথম বক্তব্যটি ভুল করেই বলে ফেলেছেন? যদি সঙ্গত কারণে মাঝে মাঝে যে কোন দিকে নামাজ পরেন, তাহলে তো আর কোন সমস্যা নেই। তবে বিশেষ করে ইয়েমেনের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করার ব্যাপারে আপনার দুর্বলতার কারণটি জানতে পারি কি? আশাকরি সত্যিটা স্পষ্ট করে বলবেন।

আর কোরআনে আছে কিনা তা স্পষ্টভাবে না জেনেই কে কি বলছে ও কি কি করছে তার অযুহাতে আপনি ‘আল্লাহু আকবার’ বলা ছেড়েই দিলেন! এটা কি ঠিক হলো?

তিনি এবার বললেন-

আমি যতটুকু বুঝেছি, নামাজের সাথে প্রচলিত কাবা বা কিবলার কোন সম্পর্ক নেই। নামাজ যে কোন দিকে ফিরে পড়া যায়। আপনার আর্টিকেলে দেয়া কোরানের আয়াতগুলোর অনুবাদে দেখুন কাবা শব্দটি ব্রাকেট বন্দি, অর্থাৎ কাবা শব্দটি মূল আরবি কোরানে নেই। এটা যারা অনুবাদ করেছে, তাদের নিজস্ব বুঝ অনুযায়ী ঢুকিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ যা বলেন নি, সেটাকে আল্লাহর কথা বলে চালানোর চেষ্টা করেছে।

You have to think out of box. কিবলা বলতে আপনি কি বোঝেন আমি জানি না। হাদিস ও প্রচলিত ধারনা মাথা থেকে দুর করে দিয়ে শুধু কোরান থেকে ২:১৩০ ও ২:১৫০ নং আয়াত পড়ুন। কোন আয়াতেই কিবলার সাথে সালাত (নামাজ) শব্দটি নেই বা সালাতের সাথে কিবলার কোন যোগসুত্র নেই।
আমার জবাব-

আপনি হয়ত জানেন যে, আমি সব হাদিছ অস্বীকার করিনা। আবার নিজের সুবিধা মতও গ্রহণ করিনা, বরং আল-কোরআনের সাথে সম্ঞ্জস্য থাকলে এবং যৌক্তিক কারণ থাকলে সহী হাদিছকে আমি অন্য সব কিছুর উপরে স্থান দেই।

ধরুন আপনি পরিবারের সকলকে নিয়ে জামাতে সালাত আদায় করতে চাইছেন। এ অবস্থায় আপনি কোন কিবলা/ দিককে বেশি প্রেফার করবেন? আর ইমামতি করলে তো ইমামকেই সবার ফলো করতে হবে, তাইনা? তেমনি একাকি সালাত আদায়ের সময় কোন ওজর না থাকলে কোরআনের নির্দেশকে (২:১৪২, ১৪৩, ১৪৪, ১৪৮, ১৪৯, ১৫০) উপেক্ষা করা কি ঠিক হবে? এক্ষেত্রে কোন দিকে মুখ কোরে সালাত আদায় করতে সাচ্ছন্দ বোধ করবেন। তাছাড়া মুসলিমের জন্য সালাত আদায় করাও একটি সৎকর্ম। সুতরাং এ সময় এই নির্দেশনাকে (০২:১৪৮) কেন আপনি গ্রহণ করবেন না?

আপনি বলেছেন- //আপনার আর্টিকেলে দেয়া কোরানের আয়াতগুলোর অনুবাদে দেখুন কাবা শব্দটি ব্রাকেট বন্দি, অর্থাৎ কাবা শব্দটি মূল আরবি কোরানে নেই।//

তাহলে (২:১৪৪) ও (২:১৪৯) নং আয়াতে উল্লেখিত মাসজিদে হারাম (l-masjidi l-ḥarāmi) বলতে আপনি কি বোঝেন? এটি কি কাবা নয়?

তিনি এবার বললেন-

২:১৪৯ আর যে স্থান থেকে তুমি বের হও, নিজের মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফেরাও-

না, মসজিদে হারাম কাবা নয়।

১) যে স্থান থেকে বের হওয়া অর্থ নামাজ পড়ার সময় নয়।

২) ধরুন আপনার বাড়ি পূর্ব বা দক্ষিন মূখী। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কিভাবে কাবা মুখী হবেন?

কিবলা বলতে আমি আল্লাহর দিকে ফেরাকে বুঝি, সেটা যে কোন দিকেই হতে পারে। যেহেতু কোরান অনুযায়ী পূর্ব পশ্চিম সহ সকল দিকই আল্লাহর সেহেতু আমি মাঝে মাঝে যেকোন দিকেই ফিরে নামাজ পড়ি। আর ইয়েমেনের দিকে প্রাধান্য দেয়ার কারন হলো আমার সর্বশেষ যৌক্তিক জ্ঞানমতে নবী ইব্রাহিমের জীবন কেটেছে ইয়েমেনে। আমি নামাজ পড়ি আল্লাহকে স্মরন করার জন্য। ইবাদত বলতে আমি বুঝি কোরানে বর্নীত আল্লাহর আদেশ নির্দেশ মেনে চলা ও সৎ কর্ম করা।

আমার জবাব-

(০২:১৪২) অর্থ- এখন নির্বোধেরা বলবে, কিসে তাদেরকে (মুসলমানদের) ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কেবলা থেকে, যার উপর তারা ছিল? তুমি বল, পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে চালান।

(২:১৪৩) এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় বানিয়েছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে এবং যাতে রসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য। আর আমি এ কেবলাটি (প্রার্থনার দিক) বানাতাম না যার উপর তুমি ছিলে, যদি না আমি প্রমাণ করতে চাইতাম- কে রসূলের অনুসারী থাকে আর কে পিঠটান দেয়। নিশ্চয় এটা কঠিনতম বিষয়, কিন্তু তাদের জন্য নয় যাদেরকে আল্লাহ পথপ্রদর্শন করেছেন। আর আল্লাহ তোমাদের ঈমান নিষ্ফল হতে দেবেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ, মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, করুণাময়।

(০২:১৪৪) অর্থ- নিশ্চয়ই আমি তোমাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি তোমাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে তুমি পছন্দ কর। এখন তুমি মসজিদুল-হারামের (কাবা) দিকে মুখ কর এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকেই মুখ কর। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই ঠিক পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে।

(২:১৪২) নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘এখন নির্বোধেরা বলবে, কিসে তাদেরকে (মুসলমানদের) ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কেবলা/ দিক থেকে, যার উপর তারা ছিল?’ – এখানে ‘ঐ কেবলা’ বলতে কোন দিক থেকে কোন দিকে ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং কেন?

(২:১৪৪) নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ কর’-  এখানে কি স্পষ্টভাবে কোন নির্দেশনা দেয়া হয় নাই? আবার, ‘তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকেই মুখ কর’- বলতে কখন এবং কি জন্য ‘মসজিদুল-হারামের’ দিকে মুখ করার কথা বলা হয়েছে?

এই প্রশ্নের উত্তরগুলো খোজার জন্য সহী হাদিছ অনুসরণের চেষ্টা করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়-

আপনি বলেছেন-

//১) যে স্থান থেকে বের হওয়া অর্থ নামাজ পড়ার সময় নয়।

২) ধরুন আপনার বাড়ি পূর্ব বা দক্ষিন মূখী। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কিভাবে কাবা মুখী হবেন?//

আপনার বাড়ি পূর্ব, দক্ষিন বা যেকোন মূখী হোক না কেন, সেই স্থান/ ঘর থেকে বের হয়ে সব সময়ের জন্য নয়, বরং বিশেষ কোন মূহুর্তেই যে মসজিদুল-হারামের দিকে অর্থাৎ কাবার দিকে মুখ করার নির্দেশনা এখানে দেয়া হয়েছে, সহী হাদিছ অনুসরণ করলে তা বুঝে ও বিশ্বাস করে নিতে কোন মুসলিমেরই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

এরপরও ইয়েমেনের দিককে ‘কিবলা’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ বলার ব্যাপারে খোলাসা কোরে আপনার আর কিছু বলার আছে কি?

তিনি আবার বললেন-

*আমার এরূপ অবস্থানের মূল ভিত্তি হলো কোরান, যেটার কোন পরিবর্তন নেই এবং যেখানে হাদিসের কোন স্থান নেই।

তাহলে কেন এই পরিবর্তন? এই পরিবর্তন নুতন জ্ঞানার্জনের ফলে নিজেকে সংশোধন, যেটা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলতে থাকবে।

*কিবলা- কেন ইয়েমেন? কোরান থেকে আমরা জানি (২২:৭৮) নবী ইব্রাহিম প্রথম আল্লাহর অনুসারীদেরকে মুসলিম নাম করন করেছিলেন এবং (১৬:১২৩) কোরান যে নবীর উপরে নাযিল হয়েছিল তিনিও নবী ইব্রাহিমের অনুসারী ছিলেন। (২:১২৭) পুত্র ইসমাইলের সাথে যে গৃহের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, সেটা খুব সম্ভবত ইয়েমেনে।

৩:৮ হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা।   

আপনি যে প্রশ্ন করেছেন, ১৭:১১১ এর ভিত্তিতে তার জবাবেই আল্লাহর মহত্ব ঘোষনার কথা এসেছে। আমি যেমনটা বুঝি তেমনটাই বলেছি। তা ঠিক না বেঠিক আল্লাহই ভাল জানেন।

*আমার আপত্তি 'আকবর' শব্দটি নিয়ে, যা আল্লাহর সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে। শুধু আল্লাহ নিয়ে বা ভগবান নিয়ে বা God নিয়ে কোন সমস্যা নেই।   

১৭:১১০ বলুনঃ আল্লাহ বলে আহবান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই।

…………………………………..
আমার জবাব-

*আপনি বলেছেন- //কিবলা- কেন ইয়েমেন?……………….(২:১২৭) পুত্র ইসমাইলের সাথে যে গৃহের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, সেটা খুব সম্ভবত ইয়েমেনে।//

এই বিষয়টা যদি কোরআনের কষ্ঠিপাথরে যাচাই করেই থাকেন, তাহলে সেক্ষেত্রে 'খুব সম্ভবত' বলাটা কি ঠিক হলো? তার মানে অন্তত এ বিষয়ে এখনও আপনার জানাজানি ও বুঝের মাঝে কিছুটা ফাঁক আছে। আল কোরআন (২:১৪৩, ১৪৪, ১৪৯) ও সহী হাদিছের শিক্ষা অনুসারে সর্বশেষ নবী ও আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) উম্মত হিসেবে মুসলিমদের জন্য এখন মাসজিদুল হারাম অর্থাৎ পবিত্র মসজিদ- কাবার দিকে মুখ ফেরানোর স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু তারপরও আপনি শুধুমাত্র ঐতিহাসীক তথ্যের উপর ভর করেই যেকোন দিকে কিংবা ইয়েমেনের দিকে মুখ ফিরিয়ে নামাজ আদায় করতে বেশি আগ্রহী। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত ও তাঁর উপর নাযিলকৃত গ্রন্থ পবিত্র কোরআনের অনুসারী হিসেবে কি এমনটি করা ঠিক হচ্ছে? বিশ্বাসী হিসেবে বিনা কারণে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে না নেয়া ও পিঠটান না দেয়াই শ্রেয় নয় কি? 

*আপনি বলেছেন- //আমার আপত্তি 'আকবর' শব্দটি নিয়ে, যা আল্লাহর সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে। শুধু আল্লাহ নিয়ে বা ভগবান নিয়ে বা God নিয়ে কোন সমস্যা নেই।//

(১৭:১১০) নং আয়াতে মহান স্রষ্টা তাঁকে ডাকার জন্য প্রথমত দুটি নামের (আল্লাহ ও রহমান) উদাহরণ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে স্পষ্টভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁকে এরূপ যেকোন নামেই আহ্বান করা হোক না কেন তাতে শর্ত হলো সেই নামের অর্থ যেন সুন্দর হয় অর্থাৎ তাঁর মর্যাদার সাথে মানানসই হয়। সুতরাং নামের ব্যাপারে যে এখানে কোনরূপ বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয় নাই তা স্পষ্ট। আপনার বক্তব্য থেকে আমি যতটা বুঝতে পেরেছি তাতে মনে হয়েছে যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে যেহেতু হযরত ইব্রাহিমের (আঃ) ধর্ম ইসলাম অনুসরন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তাই হযরত ইব্রাহিমের (আঃ) নির্দেশনা অনুসরণ করার ব্যাপারে আপনার কোন দ্বিমত নেই। মহান আল্লাহই আমাদের পালনকর্তা। সুতরাং ইব্রাহিম (আঃ) যদি তাঁর রব অর্থৎ পালনকর্তার মাহাত্ম্য প্রকাশের জন্য 'আকবার' শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে তো নিশ্চয় 'আল্লাহু আকবার' বলাতে আপনার কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে পবিত্র কোরআনের মধ্য থেকেই শিখিয়ে দিয়েছেন। এবার নিচের আয়াতটি লক্ষ্য করুন-

সূরা আল আন-আম (মক্কায় অবতীর্ণ)

(০৬:৭৮) অতঃপর যখন সে (ইব্রাহিম) সূর্যকে আলোকোজ্জ্বল হতে দেখল, বলল, “এটি আমার পালনকর্তা, (hādhā akbaru) এটি সর্বশ্রেষ্ঠ/ মহান।” অতপর যখন তা ডুবে গেল, তখন বলল, “হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা যেসব বিষয়ে শরীক কর, আমি সেসব থেকে মুক্ত।”

সুতরাং এরপরও ‘আল্লাহু আকবার’ বলাতে আপনার কিংবা অন্য কোন মুসলিমের আপত্তি থাকাটা মোটেও সুবিবেচনার কাজ হবে কি?

*আপনি বলেছেন- //আমার এরূপ অবস্থানের মূল ভিত্তি হলো কোরান, যেটার কোন পরিবর্তন নেই এবং যেখানে হাদিসের কোন স্থান নেই।//

হাঁ আমিও একমত যে, কোরআনের কোন পরিবর্তন নেই। কিন্তু এই কোরআনের মাধ্যমেই যদি আগে থেকে চলে আসা কোন নিয়ম বা বিধানের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন করার নির্দেশনা দেয়া হয়, তাহলে তো সেটাও মানতে হবে।

আপনার রেফারেন্স অনুসারে ধরেই নিলাম যে, হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ইয়েমেনেই বাস করতেন। কিন্তু তাতে সমস্যা কোথায়? আপনি নিশ্চয় বিশ্বাস করেন যে, সর্বশেষ নবী ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আগমন ঘটে আরবের মক্কা নগরীতে। তাই সেই নগরীতেই মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায় মানবজাতির নেতা হযরত ইব্রহিম (আঃ) এর মাধ্যমে পবিত্র মাসজিদ কাবার ভিত্তি স্থাপন করানোর বিষয়টি একেবারে অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক ভাবাটা মোটেও ঠিক কি? আর এই বিষয়টি যে আহলে কিতাবদের মধ্যে অনেকেই জানতেন সে কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা জানি যে, সে সময় সাহাবিগণ (রাঃ) রাসূল (সাঃ) ও খলিফাগণের (রাঃ) নির্দেশে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার লক্ষ্যে পৃথিবীর দূর দূরান্তে দেশে দেশে ছড়িয়ে পরেছিলেন। সুতরাং আল্লাহর বন্ধু 'খলিলুল্লাহ' ইব্রাহিম (আঃ) এর ক্ষেত্রে তো মহান স্রষ্টার পথনির্দেশনা অনুসারে ইয়েমেন থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র মাসজিদ কাবার ভিত্তি স্থাপন করা কোন কঠিন বিষয়ই হতে পারেনা। ঘোড়ায় কিংবা উটের পিঠে চেপে এই পথ অতিক্রম করতে তার হয়ত খুব জোর তিন থেকে চার মাস সময় লেগেছিল। মহান আল্লাহর নির্দেশে মানবজাতির নেতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তার পুত্র ইসমাইল (আঃ) কে সাথে নিয়ে এই গুরু দায়িত্ব পালন করার জন্য জীবনের এই সময়টুকু যে অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দের সাথেই ব্যয় করেছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আর এই তথ্যগুলো যাচাইয়ের জন্য কোরআনের পর এর সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন সহী হাদিছের সাহায্য নেয়াই একজন মুসলিমের পরিচয় বহন করে। আর এই তথ্য থেকে যে সত্যটি বেরিয়ে আসে তা হলো, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর উম্মতের জন্য পূর্বের কিবালা থেকে মুখ ফিরিয়ে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর ভিত্তি দেয়া পবিত্র মাসজিদ কাবার দিকে মুখ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর সে কারণেই যে যখন যেখানেই থাক বা যেদিকেই মুখ করে থাক না কেন, বিশেষ করে সালাত আদায় ও হজ পালনের সময় মুসলিমরা আল্লাহর নির্দেশ অনুসারেই কাবার দিকে মুখ ফেরায়। স্বাভাবিক অবস্থায় এই নির্দেশনা অনুসরণের চেষ্টা করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অবশ্য পালনীয়। তবে এক্ষেত্রেও এমন কঠিন বাধ্যবাধকতা রাখা হয় নাই (২:১১৫) বলেই বিরূপ পরিস্থিতিতে (যেমন যাত্রা পথে যানবাহনে কিংবা দিক নির্ণয় করা একেবারেই অসম্ভব হলে) অপারগ অবস্থায় আল্লাহর নির্দেশনা স্মরণ করে যেকোন দিকেই মুখ করে সালাত আদায় করে নেয়ারও সুযোগ রয়েছে।  

একজন মুসলিম হিসেবে অপর এক ভাইয়ের প্রতি আবেদন, আশাকরি নিরহঙ্কার অন্তরে একটু ভেবে দেখবেন।

মহান আল্লাহতায়ালা যেন সকল না বুঝাবুঝির অন্ধকার থেকে বের করে আনার জন্য সত্যকে বোঝার মত আলো দান করেন এবং অভিশপ্ত শয়তানের ধোঁকা থেকে আমাদের সবাইকে রক্ষা করেন।


তিনি বললেন-

৬:৭৮ আয়াত থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে ভালই করেছেন। 'হাদা আকবারু' মানে সর্বশ্রেষ্ঠ নয়। বরং আকবারু দিয়ে সূর্যকে চন্দ্র ও তাঁরার থেকে বড় বলা হয়েছে। এবং সূর্যকে যখন রাব্বি বলেছিলেন তখনও ইব্রাহিম অজ্ঞ ছিলেন, রব্ব সম্পর্কে তার কোন ধারনাই ছিলনা।

আপনি বলেছেন- //আপনার রেফারেন্স অনুসারে ধরেই নিলাম যে, হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ইয়েমেনেই বাস করতেন। কিন্তু তাতে সমস্যা কোথায়? আপনি নিশ্চয় বিশ্বাস করেন যে, সর্বশেষ নবী ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আগমন ঘটে আরবের মক্কা নগরীতে। তাই সেই নগরীতেই মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায় মানবজাতির নেতা হযরত ইব্রহিম (আঃ) এর মাধ্যমে পবিত্র মাসজিদ কাবার ভিত্তি স্থাপন করানোর বিষয়টি একেবারে অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক ভাবাটা মোটেও ঠিক কি?// 

সমস্যা যে কোথায় এবং কেন ইব্রাহিম কখনো মক্কায় যাননি , সেটা জানতে হলে পড়তে হবে। পড়ার বিকল্প নেই। জানেন কি ইয়েমেন ও ইরাকে ও কাবা আছে? গুগল সার্চ দিন ছবি সহ পেয়ে যাবেন।


আমার জবাব-   

আপনি বলেছেন- //'হাদা আকবারু' মানে সর্বশ্রেষ্ঠ নয়। বরং আকবারু দিয়ে সূর্যকে চন্দ্র ও তাঁরার থেকে বড় বলা হয়েছে। এবং সূর্যকে যখন রাব্বি বলেছিলেন তখনও ইব্রাহিম অজ্ঞ ছিলেন, রব্ব সম্পর্কে তার কোন ধারনাই ছিলনা।//

আকবারু- (অর্থ)- সর্বশ্রেষ্ঠ- (কোরআনের অভিধান)- মুনির উদ্দীন আহমদ- পৃষ্ঠা ৬৯

না, হয় আপনার ধারনা ভুল, নয়ত আপনি কথা ঘুরিয়ে দিতে চাচ্ছেন।

সমাজে বিরাজিত অংশিবািদী প্রথার কারণে প্রথমত ইব্রাহিম (আঃ) চোখে দেখা প্রজ্জ্বলিত সূর্যকে প্রতিপালক হিসেবে অনুমান করেছিলেন মাত্র, তাই প্রতিপালক হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের মহিমা প্রকাশের জন্য স্রষ্টাকে উদ্দেশ্য করেই ‘আকবারু’ অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ/ মহান বলে উল্লেখ করেছিলেন। প্রতিপালক সম্পর্কে ধারণা ছিল বলেই তার চোখে দেখা সেই অনুমানটা যে সঠিক নয় তা তার অন্তর্চক্ষুতে সহজেই ধরা পরেছিল এবং তিনি তার সময়কার পথভ্রান্তদের শিরকে লিপ্ত দেখেও নিজে বিভ্রান্ত হন নাই। তার  বাপ, চাচা ও নিকটজনদেরকে চন্দ্র ও সূর্যকে উপাসনা করতে দেখেও মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের সাথে সেগুলোর পার্থক্যটা তিনি ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। আর তাই (৬:৭৮) সূর্যকে অস্তমিত হতে দেখে এবং প্রকৃত রব অর্থাৎ প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্বের সাথে সেটার অমিল লক্ষ্য করেই তিনি সর্বপ্রকার অংশিবাদ থেকে নিজেকে মুক্ত করে (৬:৭৯) মহান স্রষ্টার দিকেই মুখ ফিরিয়ে নেন।

সূরা আল আনকাবুত (মক্কায় অবতীর্ণ)

(২৯:৪৫) তুমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ কিতাব পাঠ কর এবং নামায কায়েম কর। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কর্ম থেকে বিরত রাখে এবং (waladhik'ru l-lahi akbaru) আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ; আর আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।  

সূরা আল আন-আম (মক্কায় অবতীর্ণ)

(৬:১৯) তুমি জিজ্ঞাসা কর, (akbaru shahādatan) সাক্ষ্যদাতা হিসেবে কোন জিনিষ সর্বশ্রেষ্ঠ? তুমি বলে দাও, আল্লাহ আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী। আমার প্রতি এ কোরআন অবর্তীর্ণ হয়েছে-যাতে আমি তোমাদেরকে এবং যাদের কাছে এ কোরআন পৌঁছে সবাইকে সাবধান করি। তোমরা কি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহর সাথে অন্যান্য উপাস্যও রয়েছে? তুমি বলে দাও, আমি এরূপ সাক্ষ্য দেই না। বল, তিনিই একমাত্র উপাস্য; আমি অবশ্যই তোমরা যা শিরক কর তা থেকে মুক্ত।

আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ সাক্ষী। তাই 'আল্লাহু আকবার' বলার ও স্মরণ করার মাধ্যমে বিশ্বাসীরা মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বই ঘোষণা করে থাকে।

আপনি কি তদানিন্তন ইয়েমেনের গভর্ণর আবরাহার কথা কইছেন? যে মক্কায় অবস্থিত কাবাঘর ধ্বংসের জন্য হস্তিবাহিনী প্রেরণ করেছিল। সে সান্নায় কাবার আদলে চার্চ নির্মাণ করেছিল এবং তার ধারণা ছিল মক্কার কাবা ধ্বংস করে দিলে মানুষ তার নির্মিত চার্চের দিকে মুখ ফেরাবে এবং এতে তার ব্যবসায়ীক ফায়দা হাসিল হবে। কিন্তু তার সেই দুরভিসন্ধি আল্লাহতায়ালা কিভাবে ব্যর্থ করে দেন তার বর্ণনা কোরআনেই (সূরা ফিল) রয়েছে। সুতরাং এটি নিয়ে নিজে বিভ্রান্ত হওয়া কিংবা অপরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা নির্বোধের কাজ হবে। সুতরাং সাবধান।

অনেক সময় মানুষ তার অপারগতা, প্রতিকুল অবস্থা কিংবা ক্ষোভের কারণে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু যে কারণেই হোক, মক্কার পবিত্র কাবার আদলে ইরাকে এবং ইরানে কিংবা পরবর্তীতে যেখানেই যত কাবাই নির্মাণ করা হোক না কেন, তা কি কখনই ইব্রাহীম (আঃ) এর ভিত্তি দেয়া মাসজিদুল হারাম অর্থাৎ পবিত্র মসজিদ- কাবার স্থান দখল করতে পারবে? নিশ্চয় এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত। নিত্য নতুন কাবার এজেন্টরা যতই চেষ্টা করুক- তারা ব্যর্থ হবেই।

আপনার মোকারি যে ক্রমান্বয়ে জোকারিতে রূপ নিচ্ছে তা যারা বোঝার ঠিকই বুঝে নেবেন। তারপরও সাক্ষী স্বরূপ কিছু জবাব রেখে দিলাম। যারা সত্য জানতে চান তারা যেন বিভ্রান্ত না হন এবং সঠিকটা খুঁজে ও বুঝে নিতে পারেন।


নামাজে বিসমিল্লাহ্  সূরা ফাতিহা পাঠ নিয়ে কিছু কথা 


নামাজে ও পবিত্র কোরআন পাঠের শুরুতে ”আয়ূযুবিল্লা’হি মিনাশশাইত’নির রাজীম বিসমিল্লা’হির রহমা’নির রহীম” বলা এবং সূরা ফাতিহা পাঠ অর্থাৎ তিলাওয়াত ও স্মরণ করা সম্পর্কে ইমামগণের অভিমত-

 ইমাম মালিক ও ইমাম আহমদ:- তাদের উভয়েরই মত হলঃ জাহরী নামাযে, যেমন- ফজর, মাগরিব ও এশায় ইমাম যখন কেরাত শব্দ করে জোরে জোরে পড়েন তখন মুক্তাদীদের জন্য ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পাঠ করার দরকার নেই। কিন্তু সিরী নামাযে, যেমন- যুহর ও আছরের সময় ইমাম যখন কেরাত চুপে চুপে পড়েন তখন মুক্তাদীদের জন্য সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে।

      ইমাম শাফীর মত অনুসারে- 'জাহরী ও সরী' উভয় জামাতে ইমাম ও মুক্তাদিদের জন্য সূরা ফাতিহা পাঠের গুরুত্বই প্রকাশ পেয়েছে।
\
    আমিও ইমাম মালিক, ইমাম আহমদ ও ইমাম শাফীর মতের সাথে সহমত পোষণ করি। কারন ‘জাহরী’ নামাযে ইমাম যখন কেরাত শব্দ করে জোরে জোরে পাঠ করেন, তখন মনযোগ দিয়ে শুনলে এবং অর্থ স্মরণ ও অনুধাবনের চেষ্টা করলেই তা পাঠ করার শামিল। আর ‘সিরী’ নামাযে ইমাম যখন নিচুস্বরে কেরাত পড়েন, তখন মুক্তাদি তা ঠিকমত শুনতে পারেন না। তাই এ সময় মুক্তাদির জন্যও মনে মনে সূরা ফাতিহা পাঠ/ তেলাওয়াত এবং অর্থ স্মরণ ও অনুধাবন করা আবশ্যক বৈকি।

    তবে কোন হাদিছের বক্তব্যের দ্বারা কারো কাছে যদি "ইমামের পেছনে মনে মনে সূরা ফাতিহাও পাঠ/ তেলাওয়াত এবং অর্থ স্মরণ ও অনুধাবন করার দরকার নেই"- এই মতটি বেশি নির্ভরযোগ্য মনে হয়, তাহলে তারা সেভাবে আমল করতে পারেন। এটা তাদের অভিরুচি।

    আমি আমার সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে আল-কোরআন থেকে দলিল উপস্থাপন করতে চাই –

    সূরা আল আ’রাফ (মক্কায় অবতীর্ণ)

    (০৭:২০৪) অর্থ- আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়।
    (০৭:২০৫) অর্থ- আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং এমন স্বরে যা চিৎকার করে বলা অপেক্ষা কম; সকালে ও সন্ধ্যায়। আর বে-খবর থেকো না।

    (০৭:২০৪) নং আয়াতটি আল- কোরআন পাঠের/ তেলাওয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট। নামাজের সময় তো বটেই, অন্য যে কোন সময় কোরআন পাঠ শুনতে পেলে সেখানে উপস্থিত মুসলিমের জন্য তাতে কান লাগিয়ে রাখা অর্থাৎ তা মনযোগ দিয়ে শ্রবণ করা চাই। মানুষ তখনই শুনতে পারে যখন মুখে শব্দ করে পাঠ/ তেলাওয়াত করা হয়। আবার কতটা শব্দ করা বাঞ্ছনীয় তা পরের আয়াতেই স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে।

    তবে (০৭:২০৪) নং আয়াতে নিশ্চুপ থাকার বিষয়টি লক্ষণীয়। এই আয়াতের শর্ত অনুসারে কাউকে মনে মনে বা মুখে শব্দ করে কোরআন পাঠ করতে দেখলে উভয় ক্ষেত্রেই নিশ্চুপ থাকা চাই যেন পাঠকারীর কোন অসুবিধা না হয়। যে কোন নামাজের সময় মুক্তাদিদের তো অবশ্যই নিশ্চুপ থাকতে হবে। অন্য সময়েও যারা পাঠকারীর নিকটে থাকবেন তাদেরও নিশ্চুপ থাকা চাই। সেই সাথে এর পরের (০৭:২০৫) নং আয়াতেই পরিষ্কার জানিয়ে দেয়া হলো যে, নিশ্চুপ অবস্থায় যেমন আপন মনে স্মরণ করতে হবে, তেমনি শব্দ করে পাঠ/ তেলাওয়াত করলেও স্মরণ করতে হবে। তবে শব্দ করে পড়ার সময় স্বরটা এমন রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন তা চিৎকার করার পর্যায়ে না যায়।

    সুতরাং কান লাগিয়ে শোনা অর্থাৎ মনযোগ সহকারে শোনার প্রশ্ন তখনই আসে যখন ইমাম/ পাঠকারী মুখে শব্দ করে পাঠ/ তেলাওয়াত করবেন। তবে নিশ্চুপ থাকার বিষয়টি শব্দ করে পাঠ/ তেলাওয়াত করা ও মনে মনে পাঠ/ তেলাওয়াত করা- এই উভয় অবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট।

    সূরা মুযযামমিল (মক্কায় অবতীর্ণ)

    (৭৩:২০) অর্থ- আপনার পালনকর্তা জানেন, আপনি এবাদতের জন্যে দন্ডায়মান হন রাত্রির প্রায় দু’তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ এবং আপনার সঙ্গীদের একটি দলও দন্ডায়মান হয়। আল্লাহ দিবা ও রাত্রি পরিমাপ করেন। তিনি জানেন, তোমরা এর পূর্ণ হিসাব রাখতে পার না। অতএব তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরায়ণ হয়েছেন। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশে-বিদেশে যাবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জেহাদে লিপ্ত হবে। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ ততটুকু আবৃত্তি কর। তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্যে যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে পাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।

    এই আয়াতটি যদিও সূরা ফাতিহা পাঠের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট নয়। তবে নামাজে আল-কোরআনের কোন না কোন অংশ যে পাঠ করতেই হবে সেই নির্দেশটি এখানে স্পষ্ট।

    সূরা বনী ইসরাঈল (মক্কায় অবতীর্ণ)

    (১৭:১১০) অর্থ- বল, আল্লাহ বলে আহবান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই। নামাযে স্বর উচ্চ করবে না এবং নিঃশব্দেও পড়বে না। এ দু'য়ের মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর।

     (১৭:১১১) অর্থ- বল, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেন নি, না তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন শরীক আছে এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তাঁর কোন সাহয্যকারীর প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং সসম্ভ্রমে তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা কর।

    (১৭:১১০) নং আয়াতটিকে যে শুধুমাত্র ইসলামের প্রাথমিক যুগে মক্কার মুশরিকদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচার কৌশল হিসেবে নাযিল করা হয়েছিল, এমনটি মনে করা ঠিক নয়। সেই সময়ের পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করলে হয়ত এমনটি ভাববার অবকাশ রয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে এর দিকনির্দেশনা শুধু সেই সময়কার জন্যই সীমাবদ্ধ নয়। এই শাশ্বত পথনির্দেশনা সর্বকালের সকল বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রেই সমভাবে প্রযোজ্য হতে পারে। মহান স্রষ্টার গুণকীর্তন ও মাহাত্ম্য ঘোষনা এবং অনুধাবন করার ও করাবার জন্য গলাবাজি ও উগ্রপন্থা নয়, বরং স্নিগ্ধ ও সাবলীল ভাষা ও স্বরে তা প্রকাশ উচিত অর্থাৎ মধ্যপন্থা অবলম্বনই যে শ্রেয়, এখানে মূলত এই ইংগিতই দেয়া হয়েছে।

    এবার নিচে প্রদত্ত (১৫:৮৭) নং আয়াত ও হাদিছের বক্তব্যের প্রতি লক্ষ করি-

     সূরা হিজর (মক্কায় অবতীর্ণ)

     (১৫:৮৭) অর্থ- আমি আপনাকে বার বার পঠিতব্য সাতটি আয়াত এবং মহান কোরআন দিয়েছি।

এবার ১০৯ পৃষ্ঠার ৭২০ নং হাদিছটি লক্ষ করুন-

    আলী ইবনে আবদুল্লাহ (র) .....উবাদা ইবন সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাতে সূরা ফাতিহা পড়ল না তার নামায হল না।

    'Characteristics of Prayer' of Sahih Bukhari.

[সূত্র-http://www.searchtruth.com/book_display.php?book=12&translator=1&start=19&number=717]  

    723: Narrated 'Ubada bin As-Samit: Allah's Apostle said, "Whoever does not recite Al-Fatiha in his prayer, his prayer is invalid."

    739: Narrated Abu Huraira: The Qur'an is recited in every prayer and in those prayers in which Allah's Apostle recited aloud for us, we recite aloud in the same prayers for you; and the prayers in which the Prophet recited quietly, we recite quietly. If you recite "Al-Fatiha" only it is sufficient but if you recite something else in addition, it is better.

    আল-কোরআনের (১৫:৮৭) নং আয়াত (বার বার পঠিতব্য সাতটি আয়াত) ও হাদিছের বক্তব্য অনুসারে আমরা জানতে পারি যে, নামাজে অন্ততপক্ষে সূরা ফাতিহার সাতটি আয়াত পাঠ করাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, সুরা ফাতিহা পাঠ/ তেলাওয়াত না করলে নামাজই হবে না। সালাতের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করাই যথেষ্ট, তবে জানা থাকলে (সকল ফরজ সালাতের ১ম ও ২য় রাকাতে) তার সাথে অন্য কোন সূরা বা কোরআনের বিশেষ কোন অংশ পাঠ করাই উত্তম। হাদিছ থেকে জানা যায় যে, রাসূল (সাঃ) জাহরী সালাতে মুখে শব্দ করে ও সরী সালাতে নিচু স্বরে কোরআন পাঠ করতেন। তাই জাহরী সালাতের সময় ইমাম মুখে শব্দ করে পাঠ করলে এবং তা শোনা গেলে মুক্তাদিদের জন্য সেই তেলাওয়াত মনযোগ সহকারে শোনার সাথে সাথে মনে মনে অর্থ স্মরণ ও অনুধাবনের চেষ্টা করাই যথেষ্ট। আর সরী সালাতে ইমাম নিচু স্বরে পাঠ করায় যেহেতু স্পষ্টভাবে শোনা সম্ভব নয়। তাই উপরে উল্লেখিত আল-কোরআনের বাণী এবং হাদিছের বক্তব্য অনুসারে জামাতে নামাজ আদায়ের সময় একবারে চুপটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে বরং মুক্তাদিদের জন্যও মনে মনে অন্তত সূরা ফাতিহা পাঠ/ তেলাওয়াত এবং অর্থ স্মরণ ও অনুধাবনের চেষ্টা করাই যুক্তিযুক্ত এবং শ্রেয়।

    এখন প্রশ্ন আসতে পারে- নামাজে ও পবিত্র কোরআন পঠের শুরুতে “আয়ূযুবিল্লা’হি মিনাশশাইত’নির রাজীম বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম” পড়তে হবে কিনা? আর পড়লে তা কিভাবে পড়তে হবে। উচ্চস্বরে নাকি নিঃশব্দে।

    এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে হলে প্রথমে আল্লাহর কিতাব পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে কি বলা আছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। এরপর সহী হাদিছের অনুসরণ করা যেতে পারে।

    পবিত্র কোরআনের (১৬:৯৮) ণং আয়াতে কোরআন পাঠের সময় অভিশপ্ত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে-

    সূরা নাহল (মক্কায় অবতীর্ণ)

    (১৬:৯৮) অতএব, যখন তুমি কোরআন পাঠ কর, (fa-is'taʿidh bil-lahi mina l-shayṭāni l-rajīmi) অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ কর।     

    আর “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম”- বাক্যটিও কোরআনেরই অংশ। এ বাক্যটি সাবা নগরীর রানি বিলকিসের কাছে লেখা হজরত সুলায়মান (আ.) এর চিঠির শুরুতে ব্যবহৃত হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সুরা নামলের (২৭:২৮ - ৩০) নং আয়াতে সে চিঠির উল্লেখ রয়েছে-

    (২৭:২৮) তুমি আমার এই পত্র নিয়ে যাও এবং এটা তাদের কাছে অর্পন কর। অতঃপর তাদের কাছ থেকে সরে পড় এবং দেখ, তারা কি জওয়াব দেয়।

    (২৭:২৯) বিলকীস বলল, হে পরিষদবর্গ, অবশ্যই আমাকে একটি সম্মানিত পত্র দেয়া হয়েছে।

    (২৭:৩০) নিশ্চয় তা  সুলায়মানের পক্ষ থেকে এবং (وَإِنَّهُ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ) নিশ্চয় তা ‘আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু’-


    পবিত্র কোরআনের ৯৬ নম্বর সূরা 'আলাক'। এই সূরার মোট ১৯টি আয়াতের মধ্যে প্রথম পাঁচটি আয়াত সর্বপ্রথমে নাজিল হয় এবং ১ম আয়াতে মহামহিমান্বিত প্রতিপালকের নামে ঘোষণা/ প্রচার/ পাঠ শুরু করার বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে-   

    (৯৬:০১) পাঠ কর (এবং ঘোষণা/প্রচার কর) তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন-

    আবার (১৭:১১০) নং আয়াতে সালাতে কোরআন পাঠ করার ক্ষেত্রে উচ্চস্বরে কিংবা নিঃশব্দেও নয় বরং এ দু'য়ের মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। তাছাড়া এই আয়াতের শুরুতে আল্লাহ ও রহমান নামে আহ্বান করার বিষয়টিও এসেছে-

    (১৭:১১০) অর্থ- বল, আল্লাহ বলে আহবান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই। নামাযে স্বর উচ্চ করবে না এবং নিঃশব্দেও পড়বে না। এ দু'য়ের মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর।

    আল্লাহর পবিত্র কিতাব পাঠ করার শুরুতে কিংবা ভাল কথা কিংবা কাজের পূর্বে মহান প্রতিপালকের নাম নেয়ার বিষয়ে এবং স্রষ্টাকে ডাকার ক্ষেত্রে ’আল্লাহ ও রহমান’ এই নাম দুটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে, যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তাঁর সবগুলো নামই সুন্দর। এবার (২৭:৩০) নং আয়াতের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এখানে একটি বিশেষ ক্ষেত্রে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” বাক্যটি এসেছে। আল্লাহর রাস্তায় আহ্বান জানানোর সময় অর্থাৎ কোন শুভ কাজের প্রারম্ভে কিভাবে তাঁর নাম নিতে হবে তা এখানে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় যে, “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” বাক্যটির মধ্যে (১৭:১১০) নং আয়াতে উল্লেখিত ‘আল্লাহ ও রহমান’- এই দুটি নামই বিদ্যমান। সুতরাং নামাজের শুরুতে হোক বা নামাজের বাহিরেই হোক, আল্লাহর বাণী কোরআন পাঠ করার শুরুতে উচ্চস্বরে কিংবা নিঃশব্দে নয় বরং বিশ্বাসীদের জন্য এ দু'য়ের মধ্যমপন্থা অবলম্বন করেই অভিশপ্ত শয়তানের ওছওয়াছা থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করার জন্য কোরআনের নির্দেশনা অনুসারে “আয়ূযুবিল্লা’হি মিনাশশাইত’নির রাজীম বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” পাঠ করার বিষয়টি এখানে স্পষ্ট ।

    সুতরাং আল-কোরআনের বাণী, সহী হাদিছের বক্তব্য এবং চার ইমামের মতামত অনুসারে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যেতে পারে যে, জামাতে জাহরী সালাত আদায়ের সময় যেহেতু ইমাম স্বশব্দে অর্থাৎ মুখে শব্দ করে উম্মুল কোরআন অর্থাৎ সূরা ফাতিহা পাঠ শুরু করেন, তাই তার জন্য তখন সূরা ফাতিহার অংশ না হলেও কোরআনের নির্দেশনা অনুসারে “আয়ূযুবিল্লা’হি মিনাশশাইত’নির রাজীম বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” সেভাবে পাঠ করাই উত্তম। আর সরী সালাতের সময় যেহেতু ইমামকে নিচুস্বরে পাঠ করতে হয়, তাই সে সময় “আয়ূযুবিল্লা’হি মিনাশশাইত’নির রাজীম বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” সেভাবে পাঠ করাই যুক্তিযুক্ত। তবে একেবারে নিঃশব্দে পাঠ না করাই উত্তম।

    অনেকে প্রশ্ন করেন- জামাতে ওয়াক্তি সালাতের কোন রাকাত রুকু অবস্থায় পেলে তা আদায় হয়ে যাবে,  নাকি সেই রাকাতটি আবার আদায় কোরে নিতে হবে?

    আমরা আগেই দেখেছি যে, সালাতের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা কোরআন ও হাদিছ অনুসারে অব্শ্য পালনীয় এবং তা পাঠ না করলে নামাজই হবে না বলে হাদিছে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। সুতরাং জামাতে কোন রাকাতের রুকুতে সামিল হলে সূরা ফাতিহা শোনা/ স্মরণ করা সম্ভব হয়না, তাই সেই ওয়াক্তের সালাত জামাতে আদায়ের পূর্ণ সোয়াব পেতে হলে ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর পরে সেই মুক্তাদিকে অবশ্যই রুকুতে পাওয়া সেই রাকাতটি কিংবা না পাওয়া সকল রাকাতগুলি সূরা ফাতিহা পাঠ করা সহ পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করে নিতে হবে।

…………………………

    একজন প্রশ্ন করেছিলেন–

    *যেসব হাদীস সুরা ফাতিহা পড়তে নিষেধ করে, সেগুলোর কি ব্যাখ্যা দিবেন আপনি?

    *আর বড় বড় সাহাবীরা সবাই সুরা ফাতিহা পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। তবে তাঁরা কি ভুল বলেছেন?

    তাঁরাই তো হুজুরে পাক (সঃ) এর সবচেয়ে নিকটবর্তী ছিলেন এবং কোরআন হাদীস সবচেয়ে ভাল বুঝতেন।

    আমার জবাব –

    তাহলে কি দুই ইমামের (ইমাম মালিক ও ইমাম আহমদ) দেয়া মতটির কোন ভিত্তি নেই বলে আপনি মনে করেন!!??  

    অবশ্যই আছে। বড় বড় সাহাবীগণ ইমামের পিছনে কেরাত পড়া/ কোরআন তেলাওয়াত করাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন এবং আমিও তা অস্বীকার করছি না। তবে আমি মনে করি এই কেরাত পড়া/ কোরআন তেলাওয়াত করা বলতে নিশ্চয় মুখে শব্দ করে পড়ার কথাই বোঝানো হয়েছে। বিভিন্ন হাদিছের বক্তব্য অনুসারে বোঝা যায় যে, ইমামের পেছনে মুক্তাদিরা যেন স্ব-শব্দে কেরাত পাঠ না করে মূলত সেদিকেই ইংগিত দেয়া হয়েছে। কারন মুক্তাদিরা জামাতে ফিসফিসিয়ে কেরাত পাঠ করলেও তাতে ইমাম সহ সকল নামাজির অসুবিধা হতেই পারে। তাই এই নিষেধাজ্ঞার দ্বারা সুরা ফাতিহা মনে মনে পাঠ/ তেলাওয়াত এবং অর্থ স্মরণ ও অনুধাবন করা যাবেই না, এমনটি ভেবে নেয়া মোটেই ঠিক হবে না। তাই সিরী সালাতে ইমাম যখন নিচুস্বরে তেলাওয়াত করেন তখন মুক্তাদিদের জন্য সূরা ফাতিহা (জোরে নয়) মনে মনে পাঠ/ তেলাওয়াত এবং অর্থ স্মরণ ও অনুধাবন করাই শ্রেয় বলে আমি বিশ্বাস করি। ধন্যবাদ-

    …………………………

    একজন বলেছিলেন–

    তসবিহ দ্বারা যিকির করা সম্পর্কে আপনার মতামত কি?

    আমার জবাব-

    মহান আল্লাহর যিকির করার সময় কেন তসবিহ ব্যবহার করতে হবে তা আমার বোধগম্য নয়। একজন মুসলিমের কাজ হলো দিনে ও রাতে সদা সর্বদা আল্লাহর যিকিরে নিয়োজিত থাকা। তাসবিহ দানা ব্যবহার করে নামমাত্র যিকির করলে এই সদা চলমান সৎকর্মটি সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় এর মাধ্যমে লোকদেখানো মনোভাব জন্ম নিতে পারে। আর এরূপ যিকিরের মাধ্যমে উপকার তো নয় বরং কোন ফলই পাওয়া যাবেনা। তাছাড়া কোরআন ও সহী হাদিছে তসবিহ জপার স্পষ্ট কোন ইংগিত নেই। তাই এ থেকে বিরত থাকা চাই।

    ...................................

    একজন বলেছিলেন–

    মুসলিম শরীফে আছে, আবু হুরায়রা (রঃ) বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, যখন ইমাম তিলাওয়াত করে, শুন এবং চুপ থাক।

    বলুন, আপনি কেন এই হাদীস গ্রহণ করছেন না?

    আমার জবাব-

    আমি অবশ্যই এই হাদিছ মানি। আপনি অনুগ্রহ করে ভাল করে দেখুন। এখানকার বক্তব্যটি যখন ইমামের তেলাওয়াত শোনা যায় তার সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই জাহরী সালাতে যখন ইমামের তেলওয়াত শোনা যায় তখন আমিও চুপ থেকে তা শোনার ও স্মরণ করার কথাই বলেছি। আর উপরে উল্লেখিত 723 ও 739 নং হাদিছ মতে সরী নামাজে যখন ইমামের তেলাওয়াত স্পষ্টভাবে শোনা যায়না তখন মনে মনে সূরা ফাতিহা পাঠ/ স্মরণ ও অনুধাবন করা উচিত বলে বিশ্বাস করি । বাকিটা মহান আল্লাহতায়ালার হাতেই ন্যস্ত করতে চাই। আমার বোধ অনুসারে এর চেয়ে উত্তম অন্য কিছু হতে পারে না। ধন্যবাদ-

    …………………………
    একজন বলেছিলেন–

    হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি অযু করল, কিন্তু বিসমিল্লাহ পড়ল না, তার অযু শুদ্ধ হল না।

    তাহলে কি আপনি এখানেও বলবেন, বিসমিল্লাহ না পড়লে অযু হবে না।

    আর এক হাদীসে আছে, যে ব্যক্তির প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে, সে মুসলিম না।

    আর এক হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি ওয়াদা পূরণ করল না, সে মুসলিম না।

    এগুলো একই ধরণের হাদীস। একজন মানুষ ওয়াদা ভংগ করার পরও কিন্তু সে মুসলিম থাকে।

    আশা করি বিষযটি বুঝিয়ে বলবেন।

    আমার জবাব- জী ভাই, আপনি সালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন অন্য যে সব হাদিছের উল্রেখ করেছেন সেগুলো ভিন্ন প্রসঙ্গ এবং বক্তব্যও ভিন্ন। সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠের গুরুত্ব বোঝার ক্ষেত্রে এগুলো টেনে আনা মানে বক্তব্যকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়া। আমি যা খুবই অপছন্দ করি। কিন্তু তারপরও কিছু বলার চেষ্টা করছি-

    মুসলিম মাত্রই যেকোন ভাল কাজে 'বিসমিল্লাহ.....' পড়া চাই। কিন্তু ভুল বশত কেউ বিসমিল্লাহ না বলে খাওয়া সেরে ফেললে কি তার খাওয়া হবে না? নিশ্চয় হবে, তবে তা সুন্নাত মোতাবেক শুদ্ধ হবে না। পরবর্তীতে যেন এমনটি আর না হয় একজন মুসলিম হিসেবে তো সেদিকে খেয়াল রাখা চাই। তেমনি বিসমিল্লাহ না পড়লে ওযু শুদ্ধ হবে না বলায় যে ওযু একদমই হবে না, এমনটি ভাববার কোন কারন আছে কি? তবে ওযু হলেও তা যে একেবারে ত্রুটিমুক্ত হবে না, এখানে সে কথাই বোঝানো হয়েছে। অজ্ঞাতসারে বা ভুল বশত এরূপ ত্রুটিযুক্ত ওযু করে নামাজও হয়ে যাবে। কিন্তু ভাই, জানার পরও ইচ্ছাকৃত বার বার এ ধরনের ত্রুটিযুক্ত ওযু করা কি ঠিক হবে? মূলত এখানে বিসমিল্লাহ বলে ওযু শুরু করার গুরুত্বের প্রতিই ইংগিত দেয়া হয়েছে।

    একই ভাবে বলা যায়, কারও নিকটতম প্রতিবেশী দিনের পর দিন না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছে জেনেও নিজে ভোগ বিলাসিতায় মত্ত থেকে তার প্রতি অবজ্ঞা করা কি কোন মুসলিমের কাজ হতে পারে? জন্মসূত্রে ও নামে তার মুসলিম পরিচয়টা বহাল থাকলেও, তার কামটা কিন্তু প্রকৃত মুসলিমের পরিচয় বহন করে না। অর্থাৎ কর্মের দ্বারা তিনি সাচ্চা মুসলিম হতে ব্যার্থ হয়েছেন।

    আবার দিনের পর দিন বার বার ওয়াদা ভঙ্গ করা একজন সাচ্চা মুসলিমের পরিচয় বহন করে না। ধরুন কারো 'মুসলিম' নাম এবং পোষাক-আষাক দেখে মানুষ তাকে বিশ্বাস করল। কিন্তু ওয়াদা ভঙ্গ করা যদি সেই নামধারী লোকটির খাছিলত হয়ে থাকে এবং সে সরল মনের সুযোগ নিয়ে বার বার ওয়াদা ভঙ্গ করতে থাকে- তাহলে কি এই কর্মটি কোন মুসলিমের পরিচয় বহন করে? মুসলিম নামধারী হলেও তার কর্ম সাচ্চা মুসলিম হবার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বটে। কাজেই এক্ষেত্রে মুসলিম হিসেবে তার প্ররিচয়টা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

    উপরের এই হাদিছগুলোর দ্বারা প্রকৃত অর্থে কর্মের ধরন অনুসারে তার গুরুত্বের প্রতি ইংগিত প্রদান করা হয়েছে। একই ভাবে 'সূরা ফতিহা পাঠ না করলে নামাজ হবে না' বলতে এখানে সূরা ফাতিহা পাঠের গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে। কজেই সালাতে ক্ষেত্র বিশেষে (জাহরী সালাতের ক্ষেত্রে জামাতে ইমাম এবং একাকী পড়লে নামাজিকে) সূরা ফাতিহা যেমন স্বশব্দে পাঠ করতে হবে, তেমনি একেবারে গাফেল না থেকে ক্ষেত্র বিশেষে (সরী সালাতের ক্ষেত্রে জামাতে ইমাম এবং মুক্তাদিদের)  নিচুস্বরে পাঠ/তেলাওয়াত ও স্মরণ করার গুরুত্ব সম্পর্কে ইংগিত প্রদান করা হয়েছে।

    …………………………
    একজন বলেছিলেন– অনেকে নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করা যাবে কিনা তা নির্ধারনের জন্য নিচের হাদিছগুলো দলিল হিসেবে পেশ করে থাকেন –

    ১/ জাবীর (রঃ) বর্ণনা করেন, “যার কোন ইমাম আছে, তার জন্য তার ইমামের কেরাতই যথেষ্ট।” (আল জাওহারুন নিকাহ ১৫৯ : ২, ই’লা’উস সুনান ৬১ : ৪, ইবনে আবি শাইবাহ ৩৭৭ : ১)

    ২/ আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ বর্ণনা করেন, “রসূলুল্লাহ (সঃ) আসর নামায পড়ালেন। একজন তাঁর (সঃ) পিছনে কেরাত পড়া আরম্ভ করল, এজন্য তার পাশে থাকা আরেকজন তাকে কনুই দিয়ে আঘাত করল (মৃদু ঠেলা দিল)।যখন সে নামায শেষ করল, তখন জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি কেন আমাকে কনুই দিয়ে আঘাত করলে?’ দ্বিতীয় ব্যক্তিটি উত্তর দিল, ‘রসূলুল্লাহ (সঃ) তোমার সামনে, অতএব আমি তোমাকে ইমামের পিছনে কেরাত পড়তে দিতে পারি না(বা অনুমোদন করি না)’।রসূলুল্লাহ (সঃ) এটি শুনলেন এবং বললেন, ‘যার কোন ইমাম আছে, ইমামের কেরাত তার জন্য তার যথেষ্ট ’। ” (মুয়াত্তা মুহাম্মদ ৯৮; ই’লা’উস সুনান ৭০ : ৪)

    ৩/ আবু হুরাইরা (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একদা রসূলুল্লাহ (সঃ) উচ্চস্বরে কেরাত পাঠের মাধ্যমে নামায আদায়ের পর পিছনে ঘুরলেন (আমাদের দিকে)। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘তোমাদের কেউ এখন আমার সাথে (নামাযের মধ্যে) কেরাত পাঠ করেছ কি?’ জবাবে এক ব্যক্তি বললেন, ‘হ্যাঁ, আল্লাহর নবী (সঃ)। ’তখন নবী করীম (সঃ) বলেন, ‘আমি অবাক হচ্ছিলাম (মনে মনে খুঁজছিলাম), আমার কি হল যে কোরআন পাঠের সময় আমার কষ্ট হচ্ছিল।’ রসূলুল্লাহ (সঃ) হতে এরূপ শোনার পর লোকেরা উচ্চস্বরে কেরাত পঠিত নামাযে তাঁর পিছনে কেরাত পড়া হতে বিরত থাকেন। (তিরমিযী ৭১ : ১; মালিক ৫১; নাসাঈ ১৪৬ : ১; আবু দাঊদ ১৪৬ : ১; ইবনে মাজাহ ৬১, বায়হাকী ১৫৭:২)

    ৪/ ইমরান ইবনে হুসাইন (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে যোহরের নামায পড়াচ্ছিলেন তখন একজন তাঁর পিছনে ‘সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা’ তিলাওয়াত করছিল। নামায শেষে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে আমার পিছনে সূরা ‘সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা’ পাঠ করেছ? এক ব্যক্তি বলল, আমি।তিনি বললেন, আমি অনুমান করেছি তোমাদের মধ্যে কেউ আমার কাছ থেকে (কুরআন) পাঠ ছিনিয়ে নিচ্ছ (আমার সাথে কুরআন পাঠে প্রতিযোগিতা করছ)।” (সহীহ মুসলিম শরীফ ১৭২ : ই’লা’উস সুনান ৫৬:৪)

    ৫/ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রঃ) বর্ণনা করেন যে, সাহাবীগণ রসূলুল্লাহ (সঃ) এর পিছনে তিলাওয়াত করতেন, তখন রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, তোমরা আমাকে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতে দ্বন্দে বা বিভ্রান্তিতে ফেলে দাও। (মজমা উয যাওয়াইদ ১ ১০ : ২; আল জাওহারুন নাকীহ ১৬২ : ১)

 

    আমার জবাব- প্রকৃত অর্থে এই হাদিছগুলোর মাধ্যমে সরী নামাযেও সূরা ফাতিহা পাঠ না করার পক্ষে কোন সিদ্ধান্তে আসা আদৌ যুক্তিসংগত বা সঠিক নয়।

    ১ নং হাদিছে ইমামের কেরাত বলতে যে শব্দ করে কেরাত পাঠের কথা বোঝানো হয়নি সেই বিষয়টি বোঝার চেষ্টা না করে সরী নামাযেও মুক্তাদিদের জন্য মনে মনেও সূরা ফাতিহা পাঠ করাকে নিষিদ্ধ করা ঠিক কি?

    ২, ৩, ৪ ও ৫ নং হাদিছের বক্তব্য অনুসারে জামাতে উপস্থিত কেউ কেউ যে রাসূলের (সাঃ) পেছনে দাঁড়িয়ে শব্দ করে কেরাত পাঠ করায় তিনি তা শুনতে পাচ্ছিলেন এবং সে কারনে তাঁর কেরাত পাঠে ব্যাঘাত ঘটছিল, সেই বিষয়টিই ফুটে ওঠে। ৪ নং হাদিছে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, একজন ‘সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা’ তিলাওয়াত করছিল। সেই মুক্তাদি ইমামের পিছনে এই সূরাটি জোরে জোরে পাঠ/ তেলাওয়াত করছিলেন বলেই তো তা শোনা যাচ্ছিল। তাই জামাতে ইমামের উপস্থিতিতে এভাবে জোরে জোরে পাঠ না করার কথাই বলা হয়েছে। বিভিন্ন সাহাবাদের উক্তি থেকেও বোঝা যায় যে, সালাতে ইমামের পিছনে মুক্তাদিদের জন্য স্ব-শব্দে কেরাত পাঠের নিষেধাজ্ঞাই প্রকাশ পেয়েছে। তাই বলে মনে মনেও সূরা ফাতিহা পাঠ/ তেলাওয়াত ও স্মরণ করা যাবেই না, এরূপ সিদ্ধান্তে আসা ঠিক নয়।

    বেশ কয়েকটি সহী হাদিছে জাহরী সালাতে ইমামের সূরা ফাতিহা পাঠ শেষ করার সাথে সাথে মুক্তাদিদেরকেও স্বশব্দে আমীন বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং এর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। ইমামের তেলাওয়াতের সাথে সাথে আমীন বলা তখনই সম্ভব হতে পারে, যদি মুক্তাদিরাও সেই তেলাওয়াত মনযোগ সহকারে শোনেন ও নিজেও মনে মনে পাঠ এবং স্মরণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু অনেকেই কোন্ যুক্তিতে স্বশব্দে আমীন বলতেও কুণ্ঠা বোধ করেন সেটা আমার বোধগম্য নয়। তাদের এরূপ আচরণে অবাক না হয়ে পারিনা। দলমত নির্বিশেষে অন্তত এই বিষয়টির প্রতি সবারই খেয়াল রাখা ও আমলে আনা জরুরী নয় কি?

    যে সালাতে ইমাম জোরে কোরআন পাঠ করেন সেই সালাতে মুক্তাদিদের জন্য জোরে কোরআন পাঠ/তেলাওয়াত করার কথা কেউই বলেন নাই। তবে যেহেতু অন্যান্য ইমামদের মত ও হাদিছ অনুসারে জামাতে মুক্তাদিদের জন্য ইমামের কেরাত যথেষ্ট বলে সিদ্ধান্ত এসেছে। তাই ওযর বশত, যেমন জামাতে একটু দেরি করে (কোন রাকাতের রুকুতে থাকা অবস্থায়) আসায় বা অমনযোগীতার কারনে ভুলে যাওয়ায় মনে মনে পাঠ/ স্মরণ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলে যে তাতে নামাজ হয়ে যাবে- এতে সন্দেহ নেই। তবে পূর্ণ সোয়াব পেতে হলে ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর পরে সেই মুক্তাদিকে অবশ্যই রুকুতে পাওয়া সেই রাকাতটি কিংবা না পাওয়া সকল রাকাতগুলি সূরা ফাতিহা পাঠ করা সহ পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করে নিতে হবে। আর ওযর না থাকলেও ইচ্ছাকৃতভাবে সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ/ স্মরণ করার সুযোগ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা মোটেই ঠিক হবেনা।

    মহান আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করেন-




স্বাভাবিক জীবনে আনুষ্ঠানিক সালাত


সালাতের পূর্ব শর্ত
মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া যাবে না।
৩০:৩১
৯৮:৫
নির্দিষ্ট সময়ে সালাত মুমিনদের জন্য ফরজ
৪:১০৩
সালাতে কোরআনের বাহিরে কিছুই পড়া যাবে না।
১৮:২৭
২৯:৪৫
৭৩:২০
ওযু/গোসল
৫:৬
মাসজিদে হারামের দিকে মুখ করা।
২:১৪৪
সালাত দাঁড়িয়ে আদায় করতে হবে।
৪:১০২
দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে অসুবিধা হলে বসে আদায় করা যাবে।
৫:৬
সালাতে সকল কিছু মধ্যম স্বরে পড়তে হবে।
১৭:১১০
----------------------------
পরিস্থিতি অনুযায়ী সালাত।
কোন কিছুর ভয়, পথচারী ও যানবাহনে ভ্রমণ অবস্থায় সালাত।
২:২৩৮,২৩৯
যুদ্ধের সময় সালাত
৪:১০২
------------------------------------------------------------------
স্বাভাবিক জীবনে আনুষ্ঠানিক সালাত।
সালাত শুরু
আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে হবে।
২৩:৯৭,৯৮
আল্লাহর নামে শুরু করতে হবে।
২৭:৩০
আল্লাহর প্রশংসা মূলক আয়াত পাঠ করতে হবে
১৭:১১১
তাকবীর দিয়ে সালাত শুরু করতে হবে।
৬:১৯
২৯:৪৫
সালাতে দাঁড়িয়ে পড়তে হবে
৬:৭৯
কুরআন তিলাওয়াত করা/বারবার আবৃত্তিযোগ্য সুরা মাজুন (সূরা ফাতিহা) পাঠ করা।
১৫:৮৭
দোয়ার আয়াত পাঠ করা
২:১৫৩
দোয়ার আয়াত জানা না থাকলে, যতটুকু আপনার কাছে সহজ, ততটুকু কুরআন তেলাওয়াত করা।
৭৩:২০
তাকবীর দিয়ে রুকু করা।
৬:১৯
২৯:৪৫
রুকু করা (নুয়ে যাওয়া, অবনত হওয়া, ঝুঁকে পরা)
২:৪৩
৩:৪৩
২২:৭৭
রুকুতে তাসবিহ পাঠ করা
২১:২৭
২৭:৮
৩:১৯১
৬:১০০
৭:১৪৩
৯:৩১
১৭:১০৮
২৩:৯১
২৮:৬৮
৩৬:৩৬ আরো আছে...
রুকু থেকে উঠে দাঁড়াতে হবে
৭:১২০
রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময় তাকবির দেওয়া।
৬:১৯
২৯:৪৫
সিজদা করা।
সিজদাহ কিভাবে করতে হবে?
১৭:১০৭,১০৮,১০৯
৭:১২০
সিজদা করার সময় তাকবীর দেওয়া
৬:১৯
২৯:৪৫
সিজদাহর তাসবিহ পাঠ করা
১৭:১০৮
সিজদা থেকে উঠার সময় তাকবীর দিয়ে বসা
৬:১৯
২৯:৪৫
২৬:২১৯
দুটি সিজদাহ করতে হবে
৫০:৪০
২৬:২১৭,২১৮,২১৯,২২০
একটি সালাত শেষ (প্রচলিত ১ রাকয়াত)।
উপরোক্ত নিয়মে আরো একটি সালাত (প্রচলিত ১ রাকাত) আদায় করতে হবে, এরপর
বৈঠকে বসতে হবে
২৬:২১৯
বৈঠকে বসে পড়তে হবে
৩:৫৩ অথবা ৭:২৩
তাকবির দিয়ে সালাত শেষ করতে হবে
৬:১৯
২৯:৪৫
প্রতি ওয়াক্ত সালাতের শেষে আল্লাহকে স্মরণ করা, সালাতের মতোই বাধ্যতামূলক।
৪:১০৩
প্রতি ওয়াক্তে দুটি সালাত (প্রচলিত ২ রাকয়াত)
৪:১০১,১০২,১০৩,১০৪
সব গুলো সালাত একই রকম হবে। (প্রচলিত ২ রাকয়াত)
২:২৩৮
সালাত কখনো ছাড়া যাবেনা, যে কোন অবস্থায় সময়মতো সালাত আদায় করতে হবে।
২:২৩৮,২৩৯
দৈনিক সালাতের ওয়াক্ত ৫ বার
গসাকিল লাইল (বর্তমান ফজর)
১৭:৭৮
(ফজরের কুরআন পাঠ, সালাতের মতোই বাধ্যতামূলক।
১৭:৭৮)
যোহর
৩০:১৮
আছর
১৭:৭৮
মাগরিব
১১:১১৪
এশা
১১:১১৪
জুময়া -দুইটি সালাত (প্রচলিত ২ রাকয়াত) আলাদা কোন সালাত নয়, তবে এই দিন নির্দিষ্ট সময় থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কাজকর্ম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
৬২:৯,
*যাদেরকে তওরাত দেয়া হয়েছিল, অতঃপর তারা তার অনুসরণ করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত সেই গাধা, যে পুস্তক বহন করে, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, তাদের দৃষ্টান্ত কত নিকৃষ্ট। আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।*
৬২:৫

              

Post a Comment

Previous Post Next Post