1). ফজরের নামাজ:
আদম আ. যখন জান্নাতের নিষিদ্ধকৃত ফল খেয়ে ফেললেন তখন আল্লাহ'তা আলা তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন৷ আর তখন পৃথীবি ছিল অন্ধকার। আদম আ. জান্নাতে কখনো অন্ধকার দেখেন নি তাই তিনি দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছিলেন৷ আল্লাহ আদম আ. এর দোয়া কবুল করেন। তখন আদম আ. দেখলেন আস্তে আস্তে আলো ফুটে উঠছে। মানে সুবহে সাদিক হচ্ছে৷ তখন তিনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে দু'রাকাত নামাজ আদায় করেন যা পরবর্তীতে উম্মতে মুহাম্মদের উপর ফরজ করা হয়।
এছাড়াও ফজর নামাজ হচ্ছে মুমিন মুসলমানদের আলাদা করার নামাজ। আল্লাহকে বিশ্বাসী ব্যাতিত কেওই এত সকালে উঠে নামাজ আদায় করবে না, আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করবে না। এজন্য ফজরের নামাজকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
2). যোহরের নামাজ:
ইব্রাহিম আ. শৈশবে থাকাকালীনই তার স্রষ্টা নিয়ে ভাবতেন। রাতের আধারে নক্ষত্র দেখে ভাবতেন এ আমার প্রভু তারপর যখন তা মিলিয়ে যেতো তখন তিনি চাঁদকে ভাবলেন এ হয়তো আমার প্রভু হবে কিন্তু চাঁদও যখন স্থায়ী হয় নি তখন তিনি ভাবলেন সূর্য তো সবার বড়, সবচেয়ে তাপ দেয় এ নিশ্চয় আমার প্রভু৷ কিন্তু সূর্যও যখন দুপুরের পর আস্তমিত হওয়া শুরু করলো তখন তিনি তার থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিলেন বললেন আমি শিরক থেকে মুক্ত৷ আমি এদের থেকে আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকারির এক আল্লাহর দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। তারপর তিনি, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে চার রাকাত নামাজ আদায় করেন। আল্লাহ এতে খুশি হন। আর এ ঘটনার প্রেক্ষিতে যোহর নামাজ চার রাকাত যা আমাদের উপর ফরজ করা হয়েছে।
কুরআন কারীমে এর বর্ণনা এসেছে- যখন রজনীর অন্ধকার তার উপর সমাচ্ছন্ন হল, তখন সে একটি তারকা দেখতে পেল। বলল এটি আমার প্রতিপালক। তারপর যখন তা অস্তমিত হল, তখন বলল, আমি অস্তগামীদেরকে ভালবাসিনা। (সূরা আনয়াম, আয়াত: ৭৬)
আল্লাহ তায়ালা ইবরাহীম আ.-এর কথা ও নামায খুবই পছন্দ করলেন। যেভাবে তাঁর কুরবানী, পানির জন্য হাজেরা আ. এর দৌঁড়াদৌঁড়ি এবং তাওয়াফকে পছন্দ করলেন। এজন্যই সেই বিখ্যাত একত্ববাদী ব্যক্তি ইবরাহীম আ. এর স্মরণে সূর্য ঢলার পর যোহরের নামায ফরয করে দেয়া হয়েছে, যাতে যোহর আদায়কারীদের হাশর ইবরাহীম আ. এর সাথে হয়। কেননা, কেয়ামতের দিন তাঁর অনুসারীরাই তাঁর সাথে থাকবেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- মানুষদের ভেতর ইবরাহীমের সাথে (ঘনিষ্ঠবান) সম্পর্কেও বেশী অধিকার তো আছে সে সব লোকের, যারা তার অনুসরণ করেছে। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬৮)
3). আসরের নামাজ:
হযরত ইউনুস আ. কে আল্লাহ চার ধরনের অন্ধকারে বন্দী করেছিলেন,
১. সমুদ্রের অন্ধকারে
২. মৎস উদরের অন্ধকারে
৩. আবার উক্ত মৎসকে যে বড় মৎস গিলেছিল তার অন্ধকারে
৪. রাতের অন্ধকারে।
হযরত ইউনুস আ. প্রচুর অন্ধকারে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে মাছের পেটের ভিতর দোয়া ইউনুস পাঠ করা শুরু করে দিলেন। এটি পড়ার দরুন মাছ তাঁকে জমির ওপর বের করে দিতে আদিষ্ট হল। কুরআন বলছে- যদি তিনি তাসবীহ না পড়তেন, কেয়ামত পর্যন্ত মৎস উদরেই থেকে যেতেন। তাই মাছ তাঁকে স্থলভাগে এসে উগরে দিল। (তাফসীর, সূরা সাফফাত, আয়াত ১৪৩ ও ১৪৪)
আসরের সময় তিনি চার ধরনের অন্ধকার থেকে মুক্তি পাওয়ার ওপর শুকরিয়া স্বরূপ চার রাকাত নামায পড়েছিলেন, এজন্য আল্লাহ তাআলা আমাদের ওপর এই সময়ে চার রাকাত নামায ফরয করে দিয়েছেন। যাতে ইউনুস আ. এর বিপদের কথা স্মরণ থাকে ও আল্লাহর নাম এবং তাঁর তাসবীহ’র শক্তিমত্তার কথা খেয়াল থাকে। আর নামাযের বরকতে ইউনুস আ. এর মত সর্বপ্রকার বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত থাকা যায়।
4). মাগরিবের সময়:
ইয়াকুব আ. প্রায় ৪০-৮০ বছর পর্যন্ত বছর ইউসুফ আ. এর শোকে আধীর ছিলেন তখন তার কাছে একদিন এক বাহক ইউসুফ আ. এর জামা এনে দিলেন। তা ইয়াকুব আ. এর মুখের উপর রাখার পর উনার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। তখন তিনি বাহককে জিজ্ঞাসা করেন ইউসুফ আ. কোন ধর্মের উপর আছে?? বাহক উত্তর দেয় যে তিনি ইব্রাহিমের দ্বীনের উপরেই রয়েছে। তখন ইয়াকুব আ. আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে তিন রাকাত নামাজ আদায় করেন। প্রথম রাকাত আদায় করেন তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য, দ্বিতীয় রাকাত আদায় করেন ইউসুফ আ. বেঁচে আছে বলে আর তৃতীয় রাকাত আদায় করেন ইউসুফ আ. ইব্রাহিমের দ্বীনের উপরে অটল আছে বলে৷ আর সে সময়টা ছিল সূর্যাস্তের পর পর৷ মানে মাগরিবের সময়৷ এ ঘটনা থেকে মুহাম্মদ সা. এর উম্মতদের উপর তিন রাকাত নামাজ ফরজ করা হয়৷
5). এশার নামাজ:
মূসা আ. তার লোকদের নিয়ে নীল নদ।পার হওয়ার সময় চার ধরনের চিন্তা করতে লাগলেন। *নিজে সুস্থভাবে পার হওয়া। *স্বজাতিকে পার করা৷ *ফেরাউনকে পরাজিত করা। *ফেরাউনকে ধ্বংশ করা।
আল্লাহর সাহায্যে যখন তিনি নীল নদ পার হলেন আর চিন্তামুক্ত হলেন তখন কৃতজ্ঞতা স্বরুপ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে চার রাকাত নামাজ আদায় করলেন। আর সে সময়টা ছিল সূর্যাস্তের অনেকটা সময় পরে মানে এশার ওয়াক্ত। এ থেকেই এশার নামাজ চার রাকাত ফরজ করা হয়েছে।
অতএব আল্লাহ তায়ালা এশারের সময় তাঁকে এ চার ধরণের চিন্তা থেকে মুক্তি দিলেন। কুরআন কারীমে এর বর্ণনা এসেছে- আর আমি ফেরাউন এবং তার পুরো বাহিনিকে সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম। (সূরা বাকারা, আয়াত ৫০)
তথ্যসূত্র: মেরি নামাজ ; মাওলানা মোহাম্মদ ইদ্রিস (রহ)
এ তথ্যগুলো ইতিহাসনির্ভর। হাদিস থেকে এর প্রমান করা দুষ্কর। এ সম্পর্কে আল্লাহই অধিক অবগত৷