খরগোশ খাওয়া কি হালাল ?

খরগোশ খাওয়া কি হালাল ?

 মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে রাসুল (সা.)-এর পরিচয় দিতে গিয়ে ইরশাদ করেন, ‘যিনি তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহ হালাল করবেন এবং নিকৃষ্ট বস্তুসমূহ হারাম করবেন। ‘ (সুরা আরাফ : ১৫৭)

খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে আল্লাহর বিশেষ একটি নেয়ামত হলো, আমিষজাতীয় খাবার। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর আল্লাহ তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন চতুষ্পদ জন্তু, এতে তোমাদের জন্য রয়েছে শীত থেকে বাঁচার উপকরণ, তা ছাড়া আরো বহু উপকার রয়েছে এবং তা তোমরা খাদ্যবস্তু হিসেবে গ্রহণ করো। ‘ (সুরা নাহল : ৫)

খরগোশের গোশত খাওয়া জায়েয। আনাস (রাঃ) বলেন, ‘মাররূয যাহরান’ নামক স্থানে আমরা একটি খরগোশ ধাওয়া করলাম। সাথের লোকজন অনেক চেষ্টা করে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। অবশেষে আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং আবু ত্বালহার নিকট নিয়ে গেলাম। তিনি সেটিকে যবহ করলেন ও তার রান দু’টি কিংবা তার সামনের পা দু’টি নবী করীম (ছাঃ)-এর জন্য হাদিয়া স্বরূপ পাঠিয়ে দিলেন। তিনি তা গ্রহণ করলেন’ (বুখারী , মুসলিম; মিশকাত হা/৪১০৯)

অন্য হাদীসে এসেছে, এক গ্রাম্য ব্যক্তি ভূনা করা খরগোশ ও রুটি নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলিহি ওয়াসাল্লামের সামনে পেশ করে বলল, আমি এর হায়েজ হতে দেখেছি। তখন সাল্লাল্লাহু আলিহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের বললেন, কোন সমস্যা নেই, তোমরা খাও! এবং গ্রাম্য ব্যক্তিকে বললেন, খাও!…..। (নাসায়ী, হাদীস নং ২৪২৭)

اعلم بالصواب

** বাস্তবতাঃ অনেকে বলেন, শুধু মাত্র বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট (ছাগল বা হরিণের পায়ের মত) খরগোশের গোস্ত খাওয়া হালাল,আর বিড়ালের পায়ের মত থাবা বিশিষ্ট খরগোশ হারাম। যা একটা প্রচলিত কুসংস্কার ব্যতীত আর কিছুই নয়। Canadian Executive Service Organization (CESO) এর বর্ণনা মতে, বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট খরগোশের অস্তিত্ব নিছক একটা কাল্পনিক ও ভৌতিক গল্প, তাদের মতে Lagomorphs শ্রেণীর ইউরোপিয়ান বন্য খরগোশের (Oryctolagus cuniculus) পা বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট নয়, থাবা বিশিষ্ট। প্রকৃতিগত ভাবেই খরগোশ বিভক্ত ক্ষুর

বিশিষ্ট প্রাণি নয়। প্রকৃত পক্ষে ছাগল বা হরিণের পায়ের মত বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট কোন জাতের খরগোশের অস্তিত্ব পৃথিবীতে নাই বা কোন কালে ছিলও না। প্রাকৃতিক ভাবে বা কৃত্রিম উপায়ে যদি হরিণের সঙ্গে খরগোশের মিলন ঘটানো (Species hybridization) হয়, তবেই কেবলমাত্র হরিণ ও খরগোশের মাঝামাঝি এক ধরনের বিভক্ত ক্ষুর।

বিশিষ্ট উদ্ভট প্রাণীর জন্ম হতে পারে, যা খচ্চর জাতীয় প্রাণীর মতই বন্ধ্যা হয় । অন্যদিকে, পৃথিবীর অনেক দেশের মত আমাদের দেশের বনজঙ্গলেও এক সময় ছোট জাতের হরিণ (Pudu) বাস করত যারা এরা শিকারী প্রাণির হাত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য কান দু’টো খাড়া

রেখে সদা সতর্ক থাকত। এরা কখনো কখনো খরগোশের মতো চুপিসারে বসে বসে ঘাস, লতাপাতা খেত। এমতাবস্থায় দূর থেকে দেখে হয়তবা কেউ কেউ এদেরকে খরগোশ ভেবে ভুল করতে পারেন।

##সাম্প্রতিক কালে মারা নামের ইঁদুর গোত্রীয় এক ধরনের প্রাণির অস্তিত্ব মিলেছে, যাদের পিছনের পা বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট এবং দেখতে কিছুটা খরগোশের মত। যা হোক, কোন প্রাণির পায়ের গঠনের উপর ভিত্তি করে হারাম-হালাল নির্ধারিত হয় না।

##কেননা শুকরের পা বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানদের জন্য এর গোশ্ত খাওয়া হারাম করা হয়েছে।

মাছ ব্যতীত মৃত প্রাণির গোশ্ত, শুকর ও গৃহপালিত গাধার গোস্ত এবং প্রাণির রক্ত, ইত্যাদি খাওয়া হারাম (সূরা আল মায়েদা, আয়াত নং ৫৩)।

এছাড়াও যেসব হিংস্র পশু পাখি লম্বা ছেদন দাঁত বা বিষ দাঁত অথবা থাবা বা নখর দ্বারা অন্য পশু পাখি শিকার করে বা পঁচা গলা জীবজন্তু ভক্ষন করে বেঁচে থাকে তাদের গোশ্ত খাওয়া সম্পূর্ণ রূপে হারাম। এসব দিক থেকে বিবেচনা করলে খরগোশ একটা অত্যন্ত শান্ত ও নিরিহ প্রকৃতির প্রাণি যা মোটেই হিংস্র নয়। এরা ছাগল ভেড়া ও গরু মহিষের মতই সম্পূর্ণ তৃণভোজী প্রাণি অর্থাৎ ঘাস, লতাপাতা, গাছের কচি অংশ, শাক সবজি খেয়ে জীবন ধারণ করে। এরা কখনোই অন্য কোন পশু পাখি শিকার করে না, এমনকি পোকা মাকড় পর্যন্তও খায় না। সুতরাং উপরোক্ত যুক্তি প্রমাণাদি বিশ্লেষণে বলা যায় যে, ইসলামী শরিআহ্ মোতাবেক আল্লাহর নামে জবাই করা খরগোশের গোশ্ত খাওয়া সম্পূর্ণ হালাল।

##এবার খরগোশের জাত গুলো সম্বন্ধে জেনে নেইঃ

বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির খরগোশ দেখা যায়৷ তার মধ্যে সাদা, কালো, ডোরা এবং খয়েরী রংয়ের খরগোশ বেশী৷ বাংলাদেশে প্রাপ্ত জাতসমূহ হচ্ছে ডার্ক গ্রে (নেটিভ), ফক্স, ডাচ, নিউজিল্যান্ড লাল, নিউজিল্যান্ড সাদা, নিউজিল্যান্ড কালো, বেলজিয়াম সাদা এবং ছিনছিলা উল্লেখযোগ্য৷ তবে এর মধ্যে ক্ষুর বিশিষ্ট খরগোশের প্রমান মেলেনা।


সোর্সঃ শরয়ী দলীলঃ মাওলানা মুহাম্মাদ আরমান সাদিক.

ইফতা বিভাগ .

জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া।

প্রামান্যগ্রন্থাবলীঃ

১। নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং ২৪২৭

২। আল হিদায়া, ৪/৪৪১

৩। বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৫৩

৪। এমদাদুল আহকাম ৪/৩১০

৫। আপকে মাসায়েল ৫/ ৪৯৭

Post a Comment

Previous Post Next Post