১. যুদ্ধবন্দী নারীদের যাই দেওয়া হোক না কেন, সেটা "ভোগ" করার বিনিময়ে নয়
দাসপ্রথা ইসলামের উদ্ভাবন নয়। কৃষি বিপ্লবের সময় থেকেই এর প্রচলন। অর্থাৎ, প্রায় ১১, ০০০ বছর পূর্বে এর আবির্ভাব।
👉 ইসলামে একমাত্র বৈধ দাস-দাসী পাবার উপায় হলো যুদ্ধবন্দী। সেই যুদ্ধটিও শুধুমাত্র প্রতিরোধমূলক হিসেবেই বৈধ। ইতিহাসে দাস-দাসী রাখার প্রধান কারণ ছিল তাদের দিয়ে কাজকর্ম করানো। কৃষিকাজ, অবকাঠামোগত কাজ, গৃহস্থ কর্ম, মালিকের বিনোদনের উদ্দেশ্যে নাচ-গান ইত্যাদি।
এর বিনিময়ে দাস-দাসীকে কি দেওয়া হবে তা নিয়ে মাথা ঘামানো ছিল একদমই অপ্রয়োজনীয় বিষয়। বলা যায়, নিতান্তই বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হত। কিন্তু, ইসলাম বলে 👇
তোমাদের গোলামেরা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করেছেন, কাজেই কারো ভাই যদি তার অধীনে থাকে তবে সে যা খায়, তা হতে যেন তাকে খেতে দেয় এবং সে যা পরিধান করে, তা হতে যেন পরিধান করায় এবং তাদের সাধ্যাতীত কোন কাজে বাধ্য না করে। তোমরা যদি তাদের শক্তির ঊর্ধ্বে কোন কাজ তাদের দাও তবে তাদের সহযোগিতা কর।
[বুখারী ২৫৪৫]
তোমাদের কারো খাদিম খাবার নিয়ে হাযির হলে তাকেও নিজের সাথে বসানো উচিত। তাকে সাথে না বসালেও দু’ এক লোকমা কিংবা দু’ এক গ্রাস তাকে দেয়া উচিত। কেননা, সে এর জন্য পরিশ্রম করেছে।
[বুখারী ২৫৫৭]
👉 আর কেবল দাসীদের ভরণপোষণের কথা বললেন না?
কারো যদি একটি বাঁদী থাকে আর সে তাকে প্রতিপালন করে, তার সাথে ভাল আচরণ করে এবং তাকে মুক্তি দিয়ে বিয়ে করে, তাহলে সে দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ করবে।
[বুখারী ২৫৪৪]
👇 আরো দেখুন, দাস-দাসীকে কেমন চোখে দেখা হয় -
তোমাদের কেউ যেন এমন কথা না বলে ‘‘তোমার প্রভুকে আহার করাও’’ ‘‘তোমার প্রভুকে অযু করাও’’ ‘‘তোমার প্রভুকে পান করাও’’ আর যেন (দাস ও বাঁদীরা) এরূপ বলে, ‘‘আমার মনিব’’ ‘আমার অভিভাবক’, তোমাদের কেউ যেন এরূপ না বলে ‘‘আমার দাস, আমার দাসী’’। বরং বলবে- ‘আমার বালক’ ‘আমার বালিকা’ ‘আমার খাদিম’।
[বুখারী ২৫৫২]
আরো -
যদি কেউ তার ক্রীতদাসকে হত্যা করে আমরা তাঁকে হত্যা করবো, আর কেউ যদি তার ক্রীতদাসের নাক কেটে দেয়, আমরাও তার নাক কেটে দেবো।
[আবু দাউদ ৪৫১৫]
👆 এগুলো হাদিসের নির্দেশ। এছাড়াও আমরা উমার (রা.) এর উটের পিঠে দাসকে বসিয়ে নিজে পায়ে হেটে যাওয়ার কথা জানি। আমরা জানি সেসব সাহাবিদের কথা যাদের দাসকে পাশাপাশি দেখে বোঝা যেত না তারা কারো অধীন।
এখানেই শেষ নয়, আমরা আরো জানি সেই দাসীটির কথা, যার আরেকটি দাসের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল এবং বিয়ে হবার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সে মুক্তি পেয়ে যায় এবং অহংকারবশত সে আর দাসকে বিয়ে করতে রাজি হয় না। রাসুল (সা.) তাকে অনুরোধ করেন এবং সে তা প্রত্যাখ্যান করে। সে বিয়েটা করেনি, রাসুল (সা.) বা ইসলামও তার উপর অধীনস্থ বলে কিছু চাপিয়ে দেয়নি।
👉 এতগুলো কথা বলার মূল কারণ হলো, ইসলামে দাস-দাসী রাখার প্রধান কারণ তাদের ভোগ করা কখনোই ছিল না। আর দশটা সভ্যতার মত এখানেও কাজ করানোর জন্য রাখা হত। পার্থক্য হলো, ইসলাম বিষয়টাকে অনেক বেশি মানবিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে।
আমি জানি, আমি যদি শুধু সরাসরি উত্তরটুকু দিয়ে সমাপ্তি দেই, তাহলে কমেন্টে নাস্তিকরা ও প্রশ্নকারী আক্রমণের মেলা বসাবে। কাজেই, এর পর যে প্রশ্নগুলো আসবে সেগুলো আমি যোগ করে দিব।
২. কেন দাসীদের সাথে যৌন সম্পর্ক রাখতে হবে? এটা কি যৌনদাসী নয়?
যৌনদাসী এবং দাসী, দুটোর মাঝে পার্থক্য আছে।
sex slavery, condition in which one human being is owned by another and is forced or otherwise coerced into working in the sex trade.
আধুনিক যৌনদাসত্ব থেকে শুরু করে প্রাচীন সমাজের দিকে তাকালে, যেসব ক্ষেত্রে দাসীদের শুধুমাত্র যৌন সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয়, তারাই যৌনদাসী। আধুনিক বিশ্বে পতিতা, পর্নোগ্রাফি সবটাই এর অন্তর্ভুক্ত।
👉 আমরা আগেই দেখলাম, ইসলামে শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যে দাসী রাখার কথা কখনো বলা হয়নি। ইউরোপিয়ান সভ্যতাগুলোতে যৌনদাসীদের অবস্থা ছিল এমন -
- দাসী পুরো সমাজের জন্য উন্মুক্ত ছিল। যে কেউ ইচ্ছেমত তাকে ভোগ করতে পারত
- দাসীর নিজস্ব কোনো পরিচয় থাকত না
- গ্রিস, চীন ও জাপানে আদিবাসীদের ধরে নিয়ে বিক্রি করা হত। এরা সমাজে গ্রুপ আকারে থাকত, এবং পুরুষদের চাহিদা মেটাতে বাধ্য করা হত।
- মালিক দাসীকে পতিতা হিসেবে নিয়োগ দিতে পারত। এর বিনিময়ে আসত 💸💸
- দাসীদের সন্তানেরও কোনো পরিচয় থাকত না
- দাস-দাসীদের সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হত। তাদের কোনো নাগরিক অধিকার থাকত না।
- বিভিন্ন যুদ্ধ ক্ষেত্রে দাসীদের ব্যবহার করা হত। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্যে বা "কমফোর্ট উইমেন" হিসেবে।
👇 আর ইসলাম?
- দাসী শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র বৈধ উপায়ে ক্রয়কারী মালিকের জন্য বৈধ হবে।
- কিনে নেওয়া বা গনিমত হিসেবে পাওয়ার বাইরে কোনোরকম চুক্তি বা সম্পর্ক বৈধ হবে না, সেক্ষেত্রে পুরুষটিকে ব্যভিচারের শাস্তি দেওয়া হবে। দাসীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলে তার কোনো শাস্তি নেই।
- দাসীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সম্পর্ক হারাম
- দাসীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক থাকলে সে উপপত্নীর সম্মান পাবে। স্ত্রীর যে সকল অধিকার আছে, তাকেও প্রায় পুরোটাই দিতে হবে
- গর্ভবতী দাসীর সাথে সম্পর্ক এবং বেচাকেনা হারাম
- দাসীর বিয়ে হয়ে গেলে তার সাথে সম্পর্ক হারাম। বিবাহিত দাসী মালিকের জন্য সম্পূর্ণ হারাম।
- স্ত্রীর, ছেলের বা অন্য কোনো আত্মীয় এর দাসীর সাথে সম্পর্ক হারাম
- দাসীর সন্তান স্বাধীন এবং পিতৃপরিচয় পাবে।
👉 মনে রাখতে হবে, দাসপ্রথা বা দাসীর সাথে সম্পর্ক রাখা কোনোটাই ইসলামের অংশ নয়। এটি সমাজব্যবস্থার অংশ এবং ইসলাম এটিকে নিয়ন্ত্রণের মাঝে রেখেছে। উপরের তুলনার পর আমার মনে হয় না, দুটোর মধ্যে রিলেট করা সম্ভব।
৩. ইসলাম বিয়ে বহির্ভূত প্রেমের সম্পর্ক হারাম করল, কেন দাসীর সাথে সম্পর্ক হারাম করল না?
বিয়ে বহির্ভূত প্রেমের সম্পর্কে সন্তানের পিতৃপরিচয় ঠিক থাকে না (ইউজ ইওর ব্রেইন, ডিএনএ টেস্ট এসেছে গত শতাব্দীতে। এর পূর্বেও মানুষের অস্তিত্ব ছিল। এখনো সবার কাছে এই প্রযুক্তি সহজলভ্য নয়। ইসলাম ধর্ম সবার জন্য।)। একই ধরনের আইডিয়ায় মুতাহ বিয়েও হারাম করা হয়েছে। যেটার মূল উদ্দেশ্যই থাকে সাময়িক ফূর্তি করা! কাজ হয়ে গেলে, চুক্তিও শেষ, সম্পর্কও শেষ।
তাহলে, দাসী ও মালিক উভয়ের সম্মতিক্রমে, দায়িত্ব নিয়ে তারা নিজেরা কি করবে বা কি করবে না, মহান মুক্তমনা ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ব্যক্তিগণ, তাদের ব্যক্তিগত জীবনে ঢোকার আপনার প্রয়োজন আছে কি?
৪. যুদ্ধক্ষেত্রে কেন ধর্ষণ করত মুসলিমরা?
😒 সরাসরি মিথ্যাচার।
গনিমত ভাগের আগে ও নিশ্চিত হবার আগে কোনো যৌন সম্পর্ক জায়েজ না। এর উল্লেখ আগেই করেছি, এবার প্রমাণ দেখুন 👇
উমর ইবনুল খাত্তাব(রা.) খালিদ বিন ওয়ালিদ(রা.)-কে সৈন্যবাহিনীসহ প্রেরণ করেন এবং খালিদ (রা.) সৈন্যদলসহ জিরার ইবনুল আযওয়ারকে প্রেরণ করেন, আর তারা আসাদ গোত্রের একটি এলাকা দখল করেন। তারা একটি সুন্দরী নারীকে বন্দি করেন এবং জিরার তার প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি তার সঙ্গীদের থেকে তাকে (নারীটিকে) চাইলেন, তারা দিয়ে দিল এবং তিনি তার সাথে সঙ্গম করলেন। উদ্দেশ্য পূর্ণ হবার পর কৃতকর্মের জন্য তিনি অনুতপ্ত হলেন এবং খালিদ(রা.)এর নিকট গিয়ে এ সম্পর্কে বললেন। খালিদ(রা.) বললেন, অবশ্যই আমি তোমার জন্য এর অনুমোদন ও বৈধতা প্রদান করছি। জিরার বললেন, “না, উমরকে চিঠি না পাঠানো পর্যন্ত নয়।” উমর উত্তরে লিখলেন, তাকে রজম (প্রস্তারাঘাতে হত্যা) করতে হবে। কিন্তু চিঠি পৌঁছবার আগেই জিরার ইন্তেকাল করলেন। খালিদ(রা.) বললেন, “আল্লাহ জিরারকে অপমানিত করতে চাননি।”
বায়হাকি ১৮৬৬৫
আর সেখানে যুদ্ধক্ষেত্রে 🤣
৫. আযল কি অত্যাচার অনাচার নয়?
👉 এই পয়েন্ট নিয়ে নাস্তিকদের ভারি আপত্তি! আগে আযলের বিষয়টা বুঝে নেই।
আমি আবূ সাঈদ (রাঃ) কে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আমরা বনী মুস্তালিক যুদ্ধে কিছু আরব যুদ্ধ বন্দী আমাদের হস্তগত হল। তখন আমাদের স্ত্রীদের কথা মনে পড়ে (কেননা) দূর-নিঃসঙ্গ জীবন আমাদের জন্য পীড়াদায়ক হয়ে পড়েছিল। (সে সময়) আমরা আযল করতে চাইলাম (বাঁদী ব্যবহার করে)। এ সম্পর্কে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, এরুপ না করলে তোমাদের কোন ক্ষতি হবে না। কেননা কিয়ামত পর্যন্ত যাদের জন্ম নির্ধারিত রয়েছে, তারা আসবেই।
বুখারী ২৩৭৪
আযল একটি জন্ম-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। যেই নাস্তিকরা ইসলামে স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই বলে গলা ফাটিয়ে মুরগির মত চেঁচামেচি করে, তারাই আবার এখানে মিনমিন করে বলে, আযল ফাযল কোত্থেকে আইল।
রাসুল (সা.) একে উৎসাহিত করেননি আবার নিষেধও করেননি।
আমরা যুদ্ধকালীন সময় গনীমত হিসেবে কিছু দাসী পেয়েছিলাম। আমরা তাদের সাথে আযল করতাম। এরপর আমরা এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি উত্তরে বললেনঃ আরে! তোমার কি এমন কাজও করো? একই প্রশ্ন তিনি তিনবার করলেন এবং পরে বললেন, কিয়ামত পর্যন্ত যে রূহ পয়দা হবার, তা অবশ্যই পয়দা হবে।
বুখারী ৪৮৩০
👉 দাসীর গর্ভে সন্তান এলে তাকে বিক্রয় করা হারাম হয়ে যায়। এদিকে সবসময় দাসীর ভরণপোষণ সবার জন্য সম্ভব ছিল না। এজন্য তারা এ পদ্ধতি অবলম্বন করত। বলাই বাহুল্য, এটা ইসলামের কোনো অংশ নয়।
সারসংক্ষেপ
প্রথমত, প্রশ্নের দাবিটিই সঠিক নয়। আর ইসলামে দাস-দাসী দের প্রকৃত অবস্থা বর্ণনায় আরো সময় প্রয়োজন। তাই, সংক্ষেপে নাস্তিকদের দাবি আর আক্রমণগুলো নিয়েই আলোচনা করা হলো। যেহেতু প্রশ্নটা দাসীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে, তাই আর দাসব্যবস্থা নিয়ে কথার দরকার নেই।
এই ভিডিওটি দেখতে পারেন, যদিও খুব গভীরে যায়নি এবং সবগুলোর সাথে আমি একমত নই তবে কথাগুলো যুক্তিভিত্তিক
😏 ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানবে, আর চোর সাধুর কাছে গেলেও স্বভাব তার পিছু ধরবে। কোরার সেই নাস্তিক গ্রুপটি শীঘ্রই এখানে চলে আসতে পারে। আমি অবশ্য আহমেদ শরীফ aka আরিফুর রহমান aka পলাশ বড়ুয়া এবং তার জাতভাইদের মত ভীতু নই। তাই কমেন্টবক্স ওপেনই থাকবে।
👋 আর মুসলিম ভাই/বোনদের বলছি, নাস্তিকদের লেখা পড়ে আপনি বইয়ের কভারেই আটকে থাকবেন। ভেতরটা জানতে পারবেন না।
কোনো প্রশ্ন থাকলে জানাবেন, সানন্দে উত্তর দিব।
ধন্যবাদ!