বাহাই ধর্ম বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম(শতাংশ হিসেবে।সংখ্যা হিসেবে ইসলাম বর্তমানে)Bahai Faith এর উৎপত্তি পারস্যে হলেও এই ধর্ম ভারত বাংলাদেশ থেকে আফ্রিকায়ও পৌছে গেছে।আমেরিকার ক্যারোলাইনায় এটা দ্বিতীয় জনপ্রিয় ধর্ম।
অনেকের মতে পৃথিবীতে আব্রাহামিক ধর্ম মাত্র তিনটি।ইসলাম,ইহুদি,খ্রিস্টান👇
কিন্তু বাস্তবে আরো আব্রাহামিক ধর্ম বিদ্যমান👇
১।বাবিজম
২।বাহাই
৩।দ্রুজ
৪।রাস্তাফারি
৫।সাবাকিজম
৬।মান্দাইজম
৭।Manichaeism
৮।ইয়াজিদি
৯।সামারটারিজম
বাংলাদেশে বাহাই ধর্মের মন্দির👇
বাহাই ধর্মের প্রবর্তক বাহাউল্লাহ👇
বাহাই ধর্ম ইসলাম,হিন্দু(সনাতন),খ্রিস্টান,ইহুদি,বৌদ্ধ,জরাথুস্ট্রবাদ, বাবিজম ধর্মগুলোর মিশ্রণে নির্মিত।এই ধর্ম পৃথিবীর সকল ধর্মমতকে বৈধতা দেয়👇
তাদের মতে প্রদীপ আলাদা হলেও আলো একই।তাদের মতে পৃথিবীর কোনো ধর্মই মিথ্যা নয় বরং সকল ধর্ম এক ঈশ্বরের পথ দেখায়।বাহাই ধর্মের মূলনীতি👇
বিভিন্ন দেবতা,অবতার,ধর্মপ্রচারক,নবী একই ধর্ম ও এক ঈশ্বরের বাণীই প্রচার করেছেন👇
বাহাই ধর্মের উৎপত্তির ইতিহাস👇
ইসলামের শিয়া মতাদর্শে হযরত ফাতেমা(রা) ও আলী(রা) থেকে চলমান মহানবী(স) এর রক্তধারা থেকে আসা ইমামগণ মুসলিম খিলাফতের প্রকৃত অধিকারী এবং শেষ ইমাম হচ্ছেন ইমাম মাহদী।কিন্তু ফাতেমা(রা) থেকে আসা রক্তধারা থেকে ফাতেমীয় খিলাফত পতন হলে এই রক্তধারা লুকিয়ে পরে লোকচক্ষুর আড়ালে।কিন্তু শিয়াদের ইমাম এর অভাব পুরণে তারা নতুন ধারণা "বাব" নিয়ে আসে।বাব অর্থ দরজা।বাব মূলত ইমামের সাথে গায়েবী সম্পর্ক রাখে আর ইমাম গায়েবী সম্পর্ক রাখে আল্লাহর সাথে।
কিন্তু বাবরা বাস্তবে গায়েবের খবর রাখতে পারে না।তাই বেশিদিন এ ধারণা চলেনি।কিন্তু এরপর আসে টুইস্ট।
মির্যা আলী মুহাম্মদ নামক এক ব্যক্তি হঠাৎ নিজেকে বাব দাবী করে।পরবর্তীতে সে নিজেকে ইমাম মাহদী ও ঈসা(আ) দাবী করে ও নতুন ধর্মপ্রচার করতে শুরু করে👇
কিন্তু এর ফলাফল হয় নৃশংস।বাবকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।তাদের অনুসারীদের গ্রেফতার করে পারস্য সরকার।
এবার শুরু আসল কাহিনী।গ্রেফতারকৃত এক অনুসারীদের মধ্যে একজন ছিলেন বাহাউল্লাহ।সে নিজেকে নবুয়তপ্রাপ্ত নতুন নবী দাবী করে,যদিও সে কোনোদিন বাবের সাথে দেখা করেননি।
সে পারস্যের একবড় মন্ত্রীর ছেলে ছিলেন।পরবর্তীতে ব্রিটিশদের চাপে বাহাউল্লাকে ছেড়ে দেশ থেকে নির্বাসন দেয়া হয়।
তার প্রচারিত ধর্মমতই হচ্ছে বাহাই ধর্ম।যদিও বাবের অনেক অনুসারী বাহাউল্লাহকে ভণ্ড নবী দাবী করে ও তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেনি।তাদের ধর্মের নাম Babism👇
বাবিজমের অনুসারী কিন্তু বাহাই ধর্মের তুলনায় কম নয়।
বাহাই ধর্মের বৈশিষ্ট্য ও মতামত👇
১।বাহাউল্লাহ ইসলামী শরীয়তকে রহিত বলে ঘোষণা করেছেন।
২।তার রচিত ধর্মগ্রন্থের নাম কিতাব ই আকদাস বা কিতাবে ঈক্কান। বাহাই ধর্ম মতে কিতাবে ঈক্কান একটি আসমানী গ্রন্থ।
৩।তারা ইসলামের মৌলিক বিধান হাশর নাশর, জান্নাত জাহান্নাম, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদিকেও অস্বীকার করে।
৪।বাহাউল্লাহর দাবি মোতাবেক তিনিও অবতার রূপে খোদা। তার লেখা ও বানী ঐশী তুল্য।
৫।মির্যা আলী মুহাম্মদ বাব হলেন ইমাম মাহাদি ও ঈসা মসীহ।
৬।শ্রীকৃষ্ণ, গৌতম বুদ্ধ এরাও ঈশ্বরের অবতার বা নবী।
৭।পৃথিবীর সব ধর্ম ও মতবাদই আল্লাহ প্রদত্ত ধর্ম বা দ্বীন।
৮।তাদের বিশ্বাস মতে নবুয়তের দরজা বন্ধ হয়ে যায়নি। যুগে যুগে আরো নবী আসবেন।
১০।বায়তুল্লাহর বা কাবাঘরের জিয়ারতকে বাহাই ধর্মে রহিত করে ইসরাইলে আকা হলো তাদের তীর্থস্থান। বাহাই ধর্মমতে বছরে ৯ দিন ইসরাইলের “ইউনিভার্সাল হাউজ অফ জাস্টিস” মন্দিরে তীর্থ করতে যাওয়া বাহাইদের জন্য ফরজ।
১১।তাদের বিশ্বাস পৃথিবীর সব জিনিসই পবিত্র।
১২।পৃথিবীর সব খাবারই জায়েজ।
১৩।বীর্যপাত ঘটলে কেউ অপবিত্র হয়না।
১৪।বাহাউল্লাহর মতে দুটো ও তার পুত্র আব্দুল বাহার মতে একাধিক বিবাহ নিষিদ্ধ।
১৫।ভিন্ন ধর্মালম্বীদের বিবাহ করা বৈধ।
১৬।বাহাইরা পরস্পর সাক্ষাতে আল্লাহ আবহা বলবে।
১৭।বাহাই মেয়েরা পিতার সম্পত্তি পাবেনা।
১৮।বাহাই ধর্মে ১৯ দিনে মাস, ১৯ মাসে বছর, ২১ মার্চ হলো বাহাই নববর্ষ।
১৯।বছরে ৫দিন তাদের নিকট অত্যন্ত বরকতময়।
২০।বাহাই ধর্মে পিতার স্ত্রী ছাড়া সকলকে বিবাহ করা জায়েজ।বোন, খালা, ফুফু, দুধ মা, মেয়ে ও নাতনী সহ সবাইকে বিবাহ করা জায়েজ। (কিতাবুল আকদাসঃ২৩৫)
২১।বাহাই ধর্মে অন্যরকম ভাবে নামাজ আদায় করা হয়। তারা ৩ ওয়াক্ত ৯ রাকআত নামাজ পড়ে।তিন ওয়াক্ত না পড়লেও চলবে তবে এক ওয়াক্ত পড়া ফরজ।
২২।এই ধর্মে নবী ১০ জন। যথা –
১।ইব্রাহীম
২।কৃষ্ণ
৩।গৌতম
৪।মুসা(আ)
৫।গৌতম বুদ্ধ
৬।জরাথ্রুষ্ট
৭।যিশু খ্রিস্ট বা ঈসা(আ)
৮।হযরত মুহাম্মদ(সা)
৯।মির্যা আলী মুহাম্মদ বাব
১০।বাহাউল্লাহ।
২৪।বাহাই ধর্মে নির্দিষ্ট কোনো কালেমা নেই। কেবল বাহাউল্লাহর উপর বিশ্বাস করলেই বাহাই বলে সাব্যস্ত হবে।
২৫।বাহাইদের ধর্ম মতে জিহাদ নিষিদ্ধ।
২৬।বাহাউল্লাহর কবরের দিকে মুখ করে প্রার্থনা করতে হবে।
২৭।তালাক ছাড়াই একজন স্ত্রী তার স্বামী পরিবর্তন করতে পারবে।
২৮।সমকামীতা এ ধর্মে নিষিদ্ধ।
এটা একটা বাহাই টেম্পল👇
ইসরায়েলে অবস্থিত “ইউনিভার্সাল হাউজ অফ জাস্টিস” বাহাউল্লাহর কবর ও বাহাইদের কাবা👇
ভারতে অবস্থিত Lotas Temple যা বাহাইদের মন্দির👇
বাংলাদেশের ঢাকার শান্তিনগরে অবস্থিত বাহাই হাউজ👇
আরেকটি বাহাই মন্দির👇
বাহাই ধর্ম মতে,কোনো ধর্মমত ১০০০ বছরের বেশি সময় অবিকৃত থাকে না।তাই নতুন নবী আসতে হয়।বাহাউল্লাহের ১০০০ বছর পর নতুন নবী আবার আসবে।
বাহাই ধর্মের সমালোচনা ও তুলনা👇
১।বাহাই ধর্মে বোন, খালা, ফুফু, দুধ মা, আপন মেয়ে ও নাতনী সহ সবাইকে বিবাহ করা বৈধ হওয়াটা সমালোচনাযোগ্য আর এই First Grade Incest ও থেকে জন্ম নেয়া সন্তানদের জেনেটিক প্রবলেম দেখা দেবার সম্ভাবনা অনেক বেশি👇
২।নারীদের পিতার সম্পদে উত্তরাধিকার না থাকা নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে না।
৩।পৃথিবী সকল খাবার বৈধ হলে তা বেশ শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ বাদুড় থেকে আসা করোনা ভাইরাস।
৪।জিহাদ না থাকাটা প্রশ্নবিদ্ধ।বর্তমানে মায়ানমারের রোহিঙ্গা,ইউক্রেন আর ফিলিস্তিন ইসরায়েল এর অবস্থা দেখে জিহাদের গুরুত্ব বুঝেছেন।
মহাত্মা গান্ধীর বাণী মধুর হলেও দিন শেষে সুভাষচন্দ্র বোষ is the real Legend!
স্বাভাবিকভাবেই আপনাকে কেউ আক্রমণ করে আপনার বোনকে ধর্ষণ করলে আপনি প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন না?অত্যাচারী শাসকদের প্রতিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে সম্ভব নয় তার দৃষ্টান্ত ভগৎ সিং।হিটলারের বিরুদ্ধে মহত্মা গান্ধীর অহিংস পদ্ধতিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলো কিছু কিশোর।তাদের লাশও খুজে পাওয়া যায়নি।
“মুহাম্মদ (সা) তোমাদের পুরুষদের কারো পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী এবং আল্লাহ সব জিনিষের ইলম রাখেন।
৬।গৌতম বুদ্ধ এর বৌদ্ধ ধর্ম ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার বা অবহেলা করে।তাকে কিভাবে এই একেশ্বরবাদী ধর্মে স্থান দেয়া হলো তা প্রশ্নবিদ্ধ।
৭।কুরআন এখনো বিকৃত হয়নি তবে কেন নতুন নবী আসবেন?
৮।বাহাই ধর্মে তালাক ব্যতীতই বিচ্ছিন্ন হওয়া যায় যা স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ককে দুর্বল করে দেয়।এক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মের ইদ্দত পালনের বিধানটি আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়।
৯।যদি এক নবীর ১ হাজার বছর পর পরবর্তী নবী আসে তাহলে বাব এর পর বাহাউল্লাহ আসতে ১ হাজার বছর পর আসার কথা।সাথে সাথে কিভাবে আসলো?
১০।যদি বাব ইমাম মাহদী আর ঈসা(আ) উভয়ই হয় তবে বাহাই ধর্মে ১০ জন না ৯ জন নবী হবার কথা।
১১।সকল ধর্মের বৈধতা হলে নবী মাত্র ১০ জন কেন?
১২।সকল ধর্ম বৈধ হলে আগামীকাল যদি আমি দাবী করি আমিই ঈশ্বর আর নতুন ধর্ম "অভ্রিজম" চালু করি তা প্রকৃত অর্থে তা সত্য ধর্ম হয়ে যাবে না।
১৩।জরাস্টুরবাদ ধর্মে আলো ও অন্ধকার(শয়তান)সমশক্তিধর।কিন্তু ইসলাম,ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মে শয়তান আল্লাহর নির্মিত এক সত্ত্বা এবং আল্লাহই পরম,সর্বেশ্বর ও সকল কিছুর ধারক।অন্যদিকে সনাতন ধর্মে শয়তানের কন্সেপ্টটিই নেই।
যারা জরাস্ট্রুবাদ ধর্মকে চিনছেন না এর অপর নাম পার্সিয়ান ধর্ম,অগ্নিপূজারী নামেও এরা পরিচিত।এটা পারস্যের এক সময়ের প্রধান ধর্ম।মোহাম্মদ আলী জিন্নাহের স্ত্রী,ইন্দিরা গান্ধীর স্বামী ফিরোজ গান্ধী(ইন্দিরা গান্ধীর সাথে মহত্মা গান্ধীর কোনো সম্পর্ক নাই),জন আব্রাহামের মা ও রতন টাটা ও টাটা পরিবার জরাথস্ট্রু ধর্মের অনুসারী!
পরিশেষে,খ্রিস্টান মিশনারী ও বাহাই ধর্ম প্রচারণায় বেশ সফল,সেখানে বাংলাদেশের আলেমগণের দৌড় ওয়াজ মাহফিল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।বাংলাদেশের উপজাতিদের মধ্যে বাহাই ধর্ম জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
মূলত বাহাউল্লাহর জীবিত অবস্থাতেই তার এক অনুসারী চট্টগ্রামে আসেন ও চট্টগ্রামের কিছু পরিবার বাহাই ধর্মগ্রহণ করে।