কেরাটোসিস পিলারিস থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে?

মেডিক্যাল উত্তর লিখিনি কদিন হলো। আজকের বিষয় কেরাটোসিস পিলারিস (keratosis pilaris)। এটাও এমন একটা রোগ যাতে অনেকে ভোগেন কিন্তু জানেন না রোগটা কি। আসুন দেখে নিই।
কেরাটোসিস পিলারিস কি?
অনেক মানুষের দেখবেন কনুই, হাঁটু বা পায়ের পাতার কাছে গুটি গুটি উঁচু হয়ে আছে, নিচের ছবির মতন। একেই বলে কেরাটোসিস পিলারিস।
  • এটি জেনেটিক রোগ। ফ্যামিলি হিস্ট্রি থাকলে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  • বাচ্চাদের ও কিশোরবয়স্কদের দেখা যায়। অনেকসময় বয়ঃসন্ধিকালে প্রকাশ পায়।
  • এতে কনুইয়ের ও হাঁটুর আশেপাশে, এবং উরুতে, হেয়ার ফলিকলগুলি কেরাটিন জড়ো হয়ে উঁচু ও শক্ত হয়ে ওঠে। হাত দিলে গুটি গুটি শক্ত ছোট ছোট (১-৫ মিমি) দলা অনুভব করা যায়। মসৃণতা নষ্ট হয়ে যায়, খরখরে ভাব দেখা যায়।
  • অনেক সময় ফলিকলের সাথে ছোট চুলও দেখা যেতে পারে।
  • মেয়েদের একটু বেশি হয়, তবে ছেলেদেরও হয়।
  • শরীরে অন্য কোনো সমস্যা থাকেনা। জায়গাগুলি মাঝে মাঝে চুলকাতে পারে।
  • নিয়মিত ওয়াক্সিং, শেভিং করলে বেড়ে যেতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে মুখে দেখা যায় তখন এর নাম হয় ulerythema ophryogenes (😱😱)।
  • অনেকে জানেনই না যে এটা একটা রোগ বা এরও চিকিৎসা সম্ভব।
যদি আপনার এটি হয়, তো কি করবেন?
  • কেরাটোসিস পিলারিস বহু ক্ষেত্রে বয়সের সাথে অনেকটা নরম হয়ে যায়, মিলিয়েও যেতে পারে, বিনা চিকিৎসাতেই।
  • অনেকের ক্ষেত্রে অবশ্য ক্রনিক হয়ে যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।
  • বাড়িতে এরকম কিছু দেখলে আপনি জায়গাটি নরম রাখার চেষ্টা করুন। ময়েশ্চারাইজিং সাবান দিয়ে আলতো করে ১-২ বার দিনে পরিষ্কার করবেন, ছোবড়া বা ঝামা দিয়ে ঘষবেন না। ঘষলে কেরাটিন বেড়ে শক্ত হয়ে যাবে।
  • নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। একটু স্ট্রং ময়েশ্চারাইজার ডাক্তারের থেকে জেনে নিন। কিছু না পেলে সাদা প্যারাফিন, ভেসলিন পেট্রোলিয়াম জেলি বা নারকেল তেল লাগাতে পারেন। দিনে ২ বার বাধ্যতামূলক। শীতকালে শুকনো আবহাওয়ায় বেড়ে যেতে পারে, তখন আরও বেশি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
এর চিকিৎসা কি?
যদি নিজে থেকে না মিলায়, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটি কমানো যায়, কিন্তু পুরো দূর করা যায়না।
  • আলফা/বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড যুক্ত মলম বা লোশন লাগালে কেরাটিন কম রাখা যেতে পারে-যেমন ল্যাকটিক বা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড।
  • বেশি চুলকালে কিছুদিন প্রদাহ কমাতে স্টেরয়েড লাগাতে দেওয়া হয়।
  • রেটিনয়েড মলমও কেরাটিন কমাতে পারে, তবে শুষ্ক ভাব বেড়ে যায় তাই বেশি ময়েশ্চারাইজ করতে হয়।
  • শুধু কালো দাগ থেকে গেলে তার জন্য লাইটেনিং ক্রীম বা লোশন দেওয়া যেতে পারে।
  • লেজার হেয়ার রিমুভাল করলে সমস্যা কম থাকে।
  • রেটিনয়েড খেতেও দেওয়া যেতে পারে।
  • কেমিক্যাল পিল, ডার্মাব্রেশন ইত্যাদি দিয়ে ত্বক পাতলা করে নতুন ত্বক গজিয়ে এগুলো কমানো যেতে পারে। কিন্তু এগুলো নিয়মিত করিয়ে যেতে হবে।
কেরাটোসিস পিলারিস অনেকটাই নিরীহ রোগ এবং অনেকসময় নিজেই কমে যায়। তাই এটা নিয়ে বেশি চিন্তার প্রয়োজন নেই। যত্ন নিন ও প্রয়োজনে ডাক্তার দেখান।

Post a Comment

Previous Post Next Post