আমাদেরকে অবশ্যই ভুললে চলবে না যে, পবিত্র কোরআনই হলো মানব জাতির জন্য মহান স্রষ্টা প্রেরিত ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্যকারী সর্বশেষ জীবনবিধান, যা মানুষকে আঁধার জগতে হাতছানি থেকে বের করে আলোর দিকে নিযে যায়।
কোরআন (০৭:০২) এটি একটি গ্রন্থ, যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে করে তুমি এর মাধ্যমে ভীতি-প্রদর্শন কর। অতএব, এটি পৌছে দিতে তোমার মনে কোনরূপ সংকীর্ণতা থাকা উচিত নয়। আর এটিই বিশ্বাসীদের জন্যে উপদেশ।
(০৭:০৩) তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য অভিভাবকদের অনুসরণ করো না। তোমরা তো খুব কম সংখ্যকই উপদেশ গ্রহণ কর।
বাপ দাদারা অতিত থেকে যা করে এসেছে তা কি ভুল ছিলো?
কোরআন বলে : যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা ঐ জিনিসের অনুসরণ কর যা আল্লাহ নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে, বরং আমরা তারই উপর চলব, যার উপর আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি, যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছুই বুঝত না এবং সঠিক পথে চলত না তবুও। সুরা বাকারা আয়াত ১৭০
আজও যদি বিদআতীদেরকে বুঝানো হয় যে, এই বিদআতগুলোর দ্বীনে কোন ভিত্তি নেই, তবে তারা এই উত্তরই দেয় যে, এই প্রথাগুলো তো আমাদের পূর্বপুরুষদের নিকট থেকেই চলে আসছে। অথচ হতে পারে যে, পূর্বপুরুষরাও দ্বীনী ব্যাপারে অজ্ঞ এবং হিদায়াত থেকে বঞ্চিত ছিল। কাজেই শরীয়তের দলীলের মোকাবেলায় বাপ-দাদার (অন্ধ) অনুকরণ বা ইমাম ও আলেমদের অনুসরণ করা ভুল। মহান আল্লাহ মুসলিমদেরকে (ভ্রষ্টতার) এই কর্দম থেকে বের করুন! (আমীন)
.
.
অধিকাংশ লোক যা করছে তা কি ভুল হতে পারে? আমরা সেটাই করবো।
কোরআন বলে : তুমি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের অনুসরণ কর তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে ফেলবে, তারা তো কেবল আন্দাজ-অনুমানের অনুসরণ করে চলে, তারা মিথ্যাচার ছাড়া কিছু করে না। ৬:১১৬কুরআনে বর্ণিত এই সত্যের বাস্তব চিত্র প্রত্যেক যুগে লক্ষ্য করা যেত এখন আছে । অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, {وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ} অর্থাৎ, তোমার আগ্রহ সত্ত্বেও অধিকাংশ লোক বিশ্বাসী নয়। (সূরা ইউসুফ ১০৩) এ থেকে জানা গেল যে, ন্যায় ও সত্য পথের পথিকদের সংখ্যা সব সময় কমই হয়। আর এ থেকে এটাও সাব্যস্ত হয় যে, হক ও বাতিলের মাপকাঠি হল দলীল ও প্রমাণাদি, অনুসারীদের সংখ্যায় বেশী হওয়া অথবা কম হওয়া এর মাপকাঠি নয়। অর্থাৎ, এমন নয় যে, যে কথাটা অধিকাংশ মানুষ অবলম্বন করেছে, সেটাই হক এবং যেটা অল্প সংখ্যক লোক অবলম্বন করেছে, সেটা বাতিল। বরং উল্লেখিত ঐ কুরআনী তত্ত্ব ও বাস্তবতার ভিত্তিতে এটাই বেশী সম্ভবপর যে, হকপন্থীরা সংখ্যালঘু এবং বাতিলপন্থীরা সংখ্যাগুরু হবে।
.
আলেমরা যা বলছে বা করছে তা কি ভুল হতে পারে? আমরা আলেমদেরটাই মানবো।
কোরআন বলে : তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগীদের*(‘আলিম আর দরবেশদেরকে) রব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামপুত্র মাসীহকেও। অথচ তাদের প্রতি শুধু এই আদেশ করা হয়েছে যে, তারা শুধুমাত্র এক মা‘বূদের ইবাদাত করবে । তিনি ব্যতীত সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই। তারা যে শরীক করে তিনি তা থেকে পবিত্র। ৯:৩১ ধর্মীয় বিধান হিসেবে কারো কথা বিনা যাচাইয়ে মেনে নেয়া বা কাউকে নিজে থেকে ধর্মীয় বিধান দিতে পারার অধিকারী মনে করার অর্থ হলো তাকে বিধাতা বানিয়ে নেয়া।
ইয়াহুদী-নাসারাগণ তাদের আলেম ও যাজক শ্রেণীকে আল্লাহর পরিবর্তে রব ও মাবুদ সাব্যস্ত করে রেখেছে। অনুরূপ ঈসা আলাইহিস সালামকেও মা’বুদ মনে করে। তাকে আল্লাহর পুত্ৰ মনে করায় তাকে মা’বুদ সাব্যস্ত করার দোষে যে দোষী করা হয়, তার কারণ হল, তারা পরিষ্কার ভাষায় ওদের মা’বুদ না বললেও পূর্ণ আনুগত্যের যে হক বান্দার প্রতি আল্লাহর রয়েছে, তাকে তারা যাজক শ্রেণীর জন্যে উৎসর্গ রাখে। অর্থাৎ তারা যাজক শ্রেণীর আনুগত্য করে চলে; যতই তা আল্লাহর নির্দেশের বিরোধী হোক না কেন? বলাবাহুল্য পাদ্রী ও পুরোহিতগণের আল্লাহ বিরোধী উক্তি ও আমলের আনুগত্য করা তাদেরকে মা’বুদ সাব্যস্ত করার নামান্তর, আর এটি হল প্রকাশ্য কুফরী ও শির্ক।
আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, ইয়াহুদী-নাসারারা তো নিজেদের আলেমদের কখনো ইবাদত করেনি, তাহলে এটা কেন বলা হয়েছে যে, তারা তাদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছে?
এ কথা ঠিক যে, তারা তাদের ইবাদত করেনি। কিন্তু এটা তো সঠিক যে, তাদের আলেমরা যা হালাল করেছে তাকে তারা হালাল এবং যা হারাম করেছে তাকে তারা হারাম বলে মেনে নিয়েছে। তাদের কথাই ধর্মীয় বিধান হিসাবে মেনে নিয়েছে । আর এটাই হল তাদের ইবাদত করা।
কোনো নবী-রসূল তাঁদের উপর আল্লাহ কিতাবের মাধ্যমে যে বিধি-বিধান নাযিল করেছেন তার বাহিরে কোনো বিধি-বিধান দেননি।
অর্থাৎ আল্লাহর কিতাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়া সত্ত্বেও রসূলুল্লাহ ঈসা কোনো কথা বলতে পারেন বলে মেনে নেয়ার অর্থ হলো তাঁকে বিধাতা হিসেবে মেনে নেয়া, যদিও এজন্য তিনি নিজে দায়ী নন, কারণ বাস্তবে তিনি এরূপ কোনো কথা বলে যাননি, যা আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাবের সাথে সঙ্গতিহীন। এ আয়াতে আহলে কিতাবের প্রসঙ্গে যা উল্লেখ করা হয়েছে একই শিক্ষা সর্বকালে প্রযোজ্য, অর্থাৎ বর্তমানেও যদি কেউ আলিমদের কথা বা রসূলের নামে প্রচারিত কথা আল্লাহর কিতাবের সাথে সঙ্গতিহীন হলেও মেনে নেয়, তাহলে তার অর্থ হলো আলেমদেরকে রব বা বিধাতা বানানো এবং তাদের ইবাদাত-দাসত্ব করা।
তোমাদের কথা সঠিক হলে পূর্বে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের কী হবে?
কোরআন বলে : ২০:৪৯-৫২ :: ফিরআউন বললো, হে মূসা, কে তোমাদের প্রতিপালক। মূসা বললো, আমাদের প্রতিপালক তিনি, যিনি প্রত্যেক সত্তাকে আকৃতি দান করেছেন, তারপর পথনির্দেশ করেছেন।ফিরআউন বললো, তাহলে যারা পূর্বযুগে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের কী হবে? মূসা বললো, এর জ্ঞান আমার প্রতিপালকের নিকটে কিতাবে লেখা আছে। তিনি ভুল করেন না এবং ভুলেও যান না।
২:১৩৪, ২:১৪১ :: তা ছিলো এক উম্মাহ, তা অতীত হয়েছে। তারা যা (যে পাপ বা পুণ্য) উপার্জন করেছে তা তাদের, তোমরা যা (যে পাপ বা পুণ্য) উপার্জন কর তা তোমাদের। তারা যা করতো সে সম্বন্ধে তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে না।
১৭:১৫ :: যে পথনির্দেশ গ্রহণ করবে সে পথনির্দেশ গ্রহণ করে নিজেই কল্যাণপ্রাপ্ত হবে এবং যে পথভ্রষ্টতা অবলম্বন করবে তবে নিশ্চয় সে পথভ্রষ্টতা অবলম্বন করে নিজেই অকল্যাণপ্রাপ্ত হবে। এবং কেউ কারো ভার গ্রহণ করবে না। আমি রসূল প্রেরণ ছাড়া কাউকে শাস্তিদানকারী নই।
.
আমাদের মনে হয় তোমরা আমাদের দ্বীন ও ইবাদাত নষ্ট করতে চাও, আমরা তোমাদেরকে পছন্দ করি না।
কোরআন বলে : ৩৪:৪৩ :: আর যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হত তখন তারা বলত, ‘এতো এমন এক ব্যক্তি যে তোমাদের বাধা দিতে চায় তা থেকে যার ইবাদাত তোমাদের পিতৃপুরুষগণ করত’। তারা আরও বলে, ‘এটি বানোয়াট মিথ্যা বৈ কিছু নয়।’ আর কাফিরদের নিকট যখনই সত্য আসে তখন তারা বলে, ‘এতো কেবল এক সুস্পষ্ট যাদু (সম্মোহন)।’
৭:৭৯ :: অতঃপর সে (রসূলুল্লাহ সালেহ) তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল, ‘হে আমার কওম, আমি তো তোমাদের নিকট আমার রবের রিসালাত পৌঁছে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য কল্যাণ কামনা করেছি; কিন্তু তোমরা কল্যাণকামীদেরকে পছন্দ কর না’।
.
আমরা মনে করি তোমরা ধর্মের নামে বানিয়ে বলছো। আমরা তোমাদেরকে বিভ্রান্ত মনে করি।
কোরআন বলে : ২৮:৫০ :: তারা যদি তোমার আহবানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখ, তারা তো নিজদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে। আর তার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট-বিভ্রান্ত কে আছে যে ব্যক্তি আল্লাহর হিদায়াত বাদ দিয়ে নিজের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়াত করেন না।
আল্লাহ কুরআন নাযিল করেছেন হিদায়াত, হিদায়াতের স্পষ্ট প্রমাণ ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী মানদণ্ড হিসেবে এবং রসূলকে নির্দেশ দিয়েছেন কুরআন দ্বারা সতর্ক করতে। সুতরাং কে সঠিক, কে ভুল বা কে বিভ্রান্ত এবং কে পথপ্রাপ্ত সে বিষয়ে সতর্কতাস্বরূপ কুরআন দ্বারাই যাচাই করে নিতে হবে।
.
আমরা অনুমান করি যে, আলেমরা ঠিক কথা বলছেন। তাঁরা কিতাবের কথা বলছেন না তোমরা কিতাবের কথা বলছো কিভাবে বুঝবো?
কোরআন বলে : ১০:৩৬ :: তাদের অধিকাংশই অনুমানের অনুসরণ করে। অথচ সত্যের মোকাবেলায় অনুমান কাজে আসবে না। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে জ্ঞাত।
৩৭:১৫৫-১৫৭ :: তবে কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? তোমাদের কি কোনো সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণ আছে? তোমরা সত্যবাদী হলে তোমাদের কিতাব নিয়ে আসো।
৪:৮২ :: তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তাগবেষণা করে না? যদি এটি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো রচিত হতো তবে তারা এতে অনেক স্ববিরোধিতা পেতো।
কুরআন সবার সামনে বর্তমান রয়েছে। যারা কিতাবের তথা কুরআনের তথ্যের ভিত্তিতে কথা বলবে তারাই সঠিক কথা বলবে। সুতরাং নিজেদের উপলব্ধির সপক্ষে কুরআন থেকে রেফারেন্স দিতে হবে এবং এক্ষেত্রে কুরআনের কোনো তথ্যকে অন্য তথ্যের সাথে সঙ্গতি না রেখে ব্যাখ্যা করা যাবে না।
আলেমরা কি কোরআন বিকৃত করতে পারে?
কোরআন বলে : ২:৭৫ :: তোমরা কি মনে করো যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? যখন তাদের একদল আল্লাহর বাণী শুনে, তারপর তা বুঝার পরেও বিকৃত অথচ তারা (কিতাবের সঠিক তথ্য ও তাদের বিকৃতি সম্পর্কে) জানে।
৩:৭৮ :: তাদের মধ্যে একদল রয়েছে, যারা নিজদের জিহবা দ্বারা বিকৃত করে কিতাব পাঠ করে, যাতে তোমরা সেটা কিতাবের অংশ মনে কর, অথচ সেটি কিতাবের অংশ নয়। তারা বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, অথচ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। আর তারা আল্লাহর উপর মিথ্যা বলে, অথচ তারা জানে।
৩:৭৮ :: তাদের মধ্যে একদল রয়েছে, যারা নিজদের জিহবা দ্বারা বিকৃত করে কিতাব পাঠ করে, যাতে তোমরা সেটা কিতাবের অংশ মনে কর, অথচ সেটি কিতাবের অংশ নয়। তারা বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, অথচ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। আর তারা আল্লাহর উপর মিথ্যা বলে, অথচ তারা জানে।
৭৫-৭৮ আয়াতসমূহে কোরআন বিকৃত করতে পারে? তিন শ্রেণীর লোকের কথা উল্লেখ করেছেন। তাদের মধ্যে এক শ্রেণী হচ্ছে, আলেম সম্প্রদায় তাদের কাজ হলো আল্লাহর কালাম বিকৃত করা। আরেক দল হচ্ছে মুনাফিক। তারা মুমিনদের কাছে নিজেদেরকে মুমিন হিসেবে পেশ করে। আরেক শ্রেণী হচ্ছে, জাহেল মূৰ্খ গোষ্ঠী। তারা পড়ালেখা জানে না। তারা কেবল অন্যদের অন্ধ অনুসরণ করে থাকে।
.
.
আলেমরা কি আল্লাহর নামে মিথ্যা বলতে পারে
কোরআন বলে : ১০:৫৯ :: ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ তোমাদের জন্য যে রিয্ক নাযিল করেছেন, পরে তোমরা তার কিছু বানিয়েছ হারাম ও হালাল’। বল, ‘আল্লাহ কি তোমাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন, নাকি আল্লাহর উপর তোমরা মিথ্যা রটাচ্ছ’?
২:৭৯ :: সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব লিখে। তারপর বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, যাতে তা তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করতে পারে। সুতরাং তাদের হাত যা লিখেছে তার পরিণামে তাদের জন্য ধ্বংস, আর তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস।
.
আলেমরা কি কিতাবের বাহিরে কথা বলতে পারে?
কোরআন বলে : ২২:৮ :: মানুষের মধ্যে কতক আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে কোন জ্ঞান ছাড়া, কোন হিদায়াত ছাড়া এবং দীপ্তিমান কিতাব ছাড়া।
.
ধর্মীয় নেতারা যা বলেছেন ও যেভাবে চলেছেন আমরা সেটাই অনুসরণ করবো। তাঁদের কথা ধরে আমাদের ভুল হলে তাঁদেরকে ধরা হবে, আমাদেরকে নয়।
জবাব: ৬:১২৩ :: আমি প্রতিটি জনপদে তার অপরাধীদের( কাফের ও ফাসেকদের বড় বড় ) সর্দারদেরকে ছেড়ে দিয়েছি, যাতে তারা সেখানে চক্রান্ত করে। কিন্তু এ চক্রান্তের ফাঁদে তারা নিজেরাই পতিত হয়, কিন্তু সেটা তারা উপলব্ধিই করতে পারে না।
২:১৬৬-১৬৭ :: যখন, যাদেরকে অনুসরণ করা হয়েছে, তারা অনুসারীদের থেকে আলাদা হয়ে যাবে এবং তারা আযাব দেখতে পাবে। আর তাদের সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে।আর যারা অনুসরণ করেছে, তারা বলবে, ‘যদি আমাদের ফিরে যাওয়ার সুযোগ হত, তাহলে আমরা তাদের থেকে আলাদা হয়ে যেতাম, যেভাবে তারা আলাদা হয়ে গিয়েছে’। এভাবে আল্লাহ তাদেরকে তাদের আমলসমূহ দেখাবেন, তাদের জন্য আক্ষেপস্বরূপ। আর তারা আগুন থেকে বের হতে পারবে না।
.
তোমরা যা বলো তা বিভ্রান্তিকর আমরা মনে করি, সবার পক্ষে কুরআন বুঝা সহজ নয়।
কোরআন বলে : ১১:৯১-৯২ :: তারা বলল, হে শুয়ায়েব, তুমি যা বল তার অনেক কথাই আমরা বুঝি না, আমরা আমাদের মধ্যে তোমাকে অবশ্যই দুর্বল দেখছি, তোমার গোত্র না থাকলে আমরা তোমাকে অবশ্যই পাথর নিক্ষেপ ক’রে মেরে ফেলতাম, আমাদের উপর তোমার কোনো ক্ষমতাই নেই।তিনি বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের কাছে কি আমার স্বজনবর্গ আল্লাহ্র চেয়ে বেশি শক্তিশালী? আর তোমরা তাকে সম্পূর্ণ পিছনে ফেলে রেখেছ। তোমরা যা কর আমার রব নিশ্চয় তা পরিবেষ্টন করে আছেন।’
৫৪:১১,২২,৩২,৪০ :: নিশ্চয় আমি কুরআনকে উপদেশ অনুধাবন ও পরিগ্রহণের জন্য সহজ করেছি। সুতরাং উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?
.
আলেমদের কথা মতোই চলতে হবে। নিজে কুরআন বুঝতে গেলে গোমরাহ হবার সম্ভাবনা আছে।
কোরআন বলে : ১৪:৪ :: আমি প্রত্যেক রসূলকেই তার কওমের ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের নিকট (তাদেরই ভাষায়) স্পষ্টভাবে বিবৃত করার জন্য। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা করেন সঠিক পথে পরিচালিত করেন। তিনি মহাশক্তিমান, মহাবিজ্ঞ।
আলোচনা: মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ও তাঁর ক্বওমের ভাষা আরবি হওয়ার কারণেই কুরআন আরবি ভাষায় নাযিল হয়েছে। কারণ এটাই যৌক্তিক যে, যারা দাওয়াতের প্রথম টার্গেট পিপল তাদের ভাষাতেই কিতাব নাযিল করা হবে।
.
১৬:১০৩ :: আর আমি অবশ্যই জানি যে, তারা বলে, তাকে তো শিক্ষা দেয় একজন মানুষ, যার দিকে তারা ঈঙ্গিত করছে, তার ভাষা হচ্ছে অনারবী। অথচ এটা হচ্ছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষা।
আলোচনা: মানুষের পক্ষে ভাষান্তর বা অনুবাদ দ্বারা নিজ ভাষার যাবতীয় বাগবিধি বা ভাষারীতি হুবহু রক্ষা করা যায় না। কারণ এক্ষেত্রে মূল রচনার প্রতি একটা দায়বদ্ধতা থাকে। তাই কুরআন স্পষ্ট আরবি ভাষায় হওয়ার প্রেক্ষিতে এটা স্পষ্ট যে, কাফিররা যে অনারব ব্যক্তি থেকে কথা শিখে নিয়ে রসূল সেটাকে কুরআন হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে তা ভিত্তিহীন।
.
৪৬:১২ :: পূর্বে (কুরআনের পূর্বে) ছিলো মূসার কিতাব, আদর্শ ও অনুগ্রহস্বরূপ। আর এই কিতাব (কুরআন) সেটার প্রত্যয়নকারী, আরবী ভাষায়, যেন ইহা (কুরআন) জালিমদেরকে সতর্ক করে এবং যারা সৎকর্ম করে তাদেরকে সুসংবাদ দেয়।
আলোচনা: এক ভাষায় লিখিত কিতাবের মাধ্যমে অন্য ভাষায় লিখিত কিতাবের প্রত্যয়ন করা সম্ভব।সুতরাং কুরআন আরবি ভাষায় নাজিল হওয়ার কারণে মানুষের দ্বারা অনারব ভাষায় করা অনুবাদকে ‘কুরআনে অনুবাদ’ বলা হবে, যেমন ‘বাংলা কুরআন’ বলা যাবে না, বরং বলতে হবে ‘কুরআনের বাংলা অনুবাদ’। যদি স্বয়ং আল্লাহ অনুবাদ করতেন বা প্রত্যেক ভাষায় আলাদাভাবে কুরআন নাযিল করতেন, তাহলে আমরা ‘বাংলা কুরআন’ পেতাম। ‘কুরআনের বাংলা অনুবাদ’কে ‘বাংলা কুরআন’ বলা যাবে না, তবে তার মাধ্যমে ‘কুরআনের অর্থ ও শিক্ষা’ জানা যাবে। আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র কিতাব দেয়ার এবং অনুরূপভাবে প্রত্যেক ভাষায় স্বতন্ত্র কুরআন নাযিল করার পদ্ধতি অবলম্বন করেননি।
.
৪১:৪৪ :: আমি যদি আজমী (অনারব) ভাষায় কুরআন নাযিল করতাম, তাহলে তারা বলত, “ইহার আয়াতগুলো বিশদভাবে বোধগম্যকরণ করা হয়নি কেন? কী আশ্চর্য যে, (কিতাবের ভাষা) আজমী (অনারব) অথচ (যে রসূলের উপর তা নাজিল হয়েছে তার ভাষা) আরবী! বলো, উহা (কুরআন) মু’মিনদের জন্যই পথনির্দেশ ও ব্যাধির প্রতিকার কিন্তু যারা ঈমান আনে না তাদের কানে রয়েছে (সত্য কথা শুনার ব্যাপারে অনাগ্রহজনিত) বধিরতা এবং উহা তাদের উপর অন্ধত্বস্বরূপ হয়ে থাকে (তারা উহাতে দেখার মতো কিছুই পায় না)। তারা এমন লোক, যেন তাদেরকে বহুদূর থেকে ডাকা হচ্ছে (সে কারণে তারা শুনছে না)।
আলোচনা: আরববাসী কুরআনের দাওয়াতের প্রথম টার্গেট পিপল হওয়ার কারণে তাদের জন্য অজুহাতের অবকাশ রাখা হয়নি এবং কুরআন আরবী ভাষায় নাজিল করা হয়েছে। সেই সাথে তাদের মনস্তাত্ত্বিক গঠন অনুসারে ভিন্ন ভাষার কিতাব দ্বারা উপদেশ দেয়া হলে সেক্ষেত্রে যে প্রশ্ন তারা করতো সেই সম্ভাব্য প্রশ্নের যে জবাব দেয়া হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট যে, বুঝা ও শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভাষা প্রতিবন্ধকতা নয়, বরং প্রকৃত প্রতিবন্ধকতা হলো সত্যের প্রতি ঈমান আনার মনোভাবের অভাব।
.
১৬। কুরআন বুঝতে হলে এর শানে নুযুল জানতে হবে। তাই শুধু অনুবাদ পড়ে কুরআন থেকে কথা বলা বিপজ্জনক।
জবাব: ১২:১ :: আলিফ লাম রা। এগুলো সুষ্পষ্ট কিতাবের আয়াত।
১৫:১ :: আলিফ লাম রা। এগুলো আল কিতাব ও সুস্পষ্ট কুরআনের আয়াত।
৩৯:২৮ :: (এই কুরআন) আরবি ভাষার কুরআন, বক্রতামুক্ত, যেন তারা আল্লাহ সচেতনতা অবলম্বন করে।
১১:১ :: আলিফ লাম রা। এই কিতাব এমন যে, মহাবিজ্ঞ সর্বজ্ঞ সত্তার পক্ষ থেকে এর আয়াতসমূহকে করা হয়েছে সুপ্রতিষ্ঠিত বিধানসম্বলিত, সেই সাথে স্বব্যাখ্যাত।
আলোচনা: কুরআন সুস্পষ্ট, বক্রতামুক্ত এবং স্বব্যাখ্যাত। এমতাবস্থায় কুরআনের আয়াতসমূহের পূর্বাপর অধ্যয়ন থেকে যে শানে নুযুল স্বত:সিদ্ধভাবে বুঝা যায়, তার বাহিরের কোনো শানে নুযুলকে সঠিক ধরে নেয়া এবং তার মাধ্যমে কুরআনের আয়াত থেকে সাধারণভাবে যা বুঝা যায় তার ব্যতিক্রম কোনো অর্থে সেটাকে সাব্যস্ত করার কোনো অবকাশ নেই। কুরআনের অনুধাবন কোনো ক্রমে কথিত শানে নুযুলের উপর নির্ভরশীল নয়।
.
অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্কর। বাংলা কুরআন পড়ে আলেমদের ভুল ধরা ঔদ্ধত্যের শামিল।
যে বিষয়ে যে পণ্ডিত সে বিষয়ে তার কথাই মানতে হয়। তাই ধর্মের বিষয়ে আলেমদের কথাই মেনে চলতে হবে। আমরা তো জানি না। তাই আলেমরা ভুল বলছে না তোমরা ভুল বলছো তা বুঝা আমাদের দ্বারা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে তোমাদের কথা শুনার পরিবর্তে আলেমদের কথা অন্ধভাবে মেনে নেয়াই নিরাপদ।
কোরআন বলে : ৩:৬৬ :: তোমরা তো সেইসব লোক, যে বিষয়ে তোমাদের সামান্য জ্ঞান আছে সে বিষয়ে তোমরা তর্ক করেছো, তবে কেন সেই বিষয়েও তর্ক করছো যে বিষয়ে তোমাদের কোনো জ্ঞান নেই। আল্লাহ জানেন (সুতরাং তাঁর কিতাবের তথ্যই সঠিক) এবং তোমরা জানো না (সুতরাং তোমাদের জ্ঞানগত ভিত্তি বিহীন ও অনুমান আশ্রয়ী দাবি সঠিক নয়)।
আলোচনা: কোনো ব্যক্তি নিজের অজানা বিষয়ে কোনো অনুমানকে ‘জানা’ এর মতো করে ধরে বিতর্ক করা অত্যন্ত আপত্তিকর। তেমনি যে বিষযে জানার পরিমাণ কার্যোপযোগী নয়, সে বিষয়ে জানার পরিমাণের চেয়ে বেশি কার্য সম্পাদনের দেমাগ দেখানো বা জানার পরিসরের অতিরিক্ত ক্ষেত্রে না জেনেই কোনো মতবাদ নিয়ে বাড়াবাড়ি করে তাদের প্রসঙ্গে ‘অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্কর’ প্রবাদটি তৈরি হয়েছে।
কিন্তু এ প্রবাদটির অপপ্রয়োগ করে যারা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে যা জানে তা-ই বলে, তার জানার বিষয়ের বাহিরের প্রসঙ্গে মন্তব্য করে না, তাদেরকে ‘বহুবিধ বিষয়ের জ্ঞানের ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকা’র অভিযোগ করে থামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টাও গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন, একটি নির্দিষ্ট বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে তার নিজ বিভাগের কাজে এ কথা বলে নিবৃত্ত করা যেতে পারে না যে, আপনি ডাক্তারি সকল বিষয়ের বিশেষজ্ঞ নন, তাই ডাক্তারি কোনো বিষয়ে আপনার মতামত চলবে না।
.
২:৪২ :: তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং সত্য জানা সত্ত্বেও তা গোপন করো না।
৭:৩ :: তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট যা নাজিল করা হয়েছে তোমরা সেটাই অনুসরণ করো এবং তাঁর পরিবর্তে (তাঁর দেয়া তথ্যের সাথে সঙ্গতিহীনভাবে) অন্য অলি-আওলিয়ার অনুসরণ করো না।
১৭:৩৬ :: যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই উহার অনুসরণ করিও না। নিশ্চয় কান, চোখ ও তথ্য বিশ্লেষণী মন, এগুলোর প্রত্যেকটির প্রয়োগ সম্পর্কে কৈফিয়ত চাওয়া হবে।
.
২:৪২ :: তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং সত্য জানা সত্ত্বেও তা গোপন করো না।
৭:৩ :: তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট যা নাজিল করা হয়েছে তোমরা সেটাই অনুসরণ করো এবং তাঁর পরিবর্তে (তাঁর দেয়া তথ্যের সাথে সঙ্গতিহীনভাবে) অন্য অলি-আওলিয়ার অনুসরণ করো না।
১৭:৩৬ :: যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই উহার অনুসরণ করিও না। নিশ্চয় কান, চোখ ও তথ্য বিশ্লেষণী মন, এগুলোর প্রত্যেকটির প্রয়োগ সম্পর্কে কৈফিয়ত চাওয়া হবে।
আলোচনা: কোনো তথ্যের বিষয়ে নিজ কান, চোখ ও অন্তরের তথা বিবেক-বুদ্ধির আওতায় কোনো খটকা এসে গেলে তখন সুনির্দিষ্ট তথ্য বা কোন আয়াত থেকে তথ্যটি এসেছে তা জেনে না নিলে অনুসরণ করা যাবে না। এক্ষেত্রে তথ্যটি সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে কিনা সেজন্য নিজের কান, চোখ, বিবেকের সাধ্যমতো ব্যবহারের মাধ্যমে আশ্বস্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সেটাকে স্থগিত রাখতে হবে।
.
৩৯:১৮ :: যারা মনোযোগ সহকারে কথা শুনে এবং তার মধ্য থেকে যা উত্তম সেটার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ হিদায়াত দান করেন এবং তারাই সঠিক চিন্তক।
আলোচনা: কোনো বিষয়ে যেমন কোনো আয়াতের তাৎপর্য সম্পর্কে একাধিক ব্যক্তি একাধিকভাবে তথ্য দিলে তা শুনে সাধ্যমতো যেটাকে উত্তম বলে বুঝা যাবে সেটাই অনুসরণ করতে হবে এবং এ নীতি অব্যাহত রাখতে হবে, তাহলেই আল্লাহ সঠিক পথে পরিচালিত করবেন।
৪৯:৬ :: হে ঈমানদারগণ, যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে, তোমরা অজ্ঞতাবশত কোন কওমকে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।
আলোচনা: প্রত্যেক ব্যক্তি এবং প্রত্যেক শাসকের দায়িত্ব হল, তাদের কাছে যে সংবাদই আসে -- বিশেষ করে চরিত্রহীন, ফাসেক (চুগোলখোর, গীবতকারী) ও ফাসাদী প্রকৃতির লোকদের পক্ষ হতে, সে ব্যাপারে প্রথমে যাচাই করে দেখা। যাতে ভুল বুঝে কারো বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়।
Tags:
ধর্ম চিন্তা