বর্তমান যুগে এই গান বাজনা আমাদের জীবনের একটি compulsory চাহিদা হয়ে দাড়িয়েছে। গান শোনেনা এমন লোক পাওয়া খুব কঠিন। শিশু বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক বৃদ্ধ ব্যক্তিদের কাছেও এর ব্যাপক চাহিদা রেয়েছে। অবসর পেলেই আমরা সকলেই গান শোনায় ব্যস্ত থাকি।
তারপরেও অনেকেই মনে মনে অপরাধবোধে ভোগেন − কি জানি, গান গেয়ে গান শুনে গুনাহ্ করছি নাতো ! অসুখ নিয়ে ডাক্তারদের মধ্যে মতভেদ হলে রোগীর যে করুণ দশা সংগীত নিয়ে আমাদেরও তাই। বিভিন্ন আলেম বিভিন্ন মতামত দিচ্ছেন, জনগণের কে কার মতামত মানবেন সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
গানকে হারাম ও নিষিদ্ধ করেছে শারিয়াপন্থীদের (সবাই নন) কেতাব, সংগঠন, শারিয়া আইন এবং কোথাও কোথাও সরকারি আইনও। কিন্তু গানের কুৎসিৎ কথা, কুৎসিৎ অঙ্গভঙ্গি বা গানের অতিরিক্ত নেশায় জীবনের ক্ষতি ইত্যাদির সীমা টানেননি তাঁরা ও , পুরো সঙ্গীতকেই বাতিল করেছেন ঢালাওভাবে।
উদাহরণ দিচ্ছি :
শারিয়া কোর্টে গায়িকার সাক্ষ্য নিষিদ্ধ − হানাফি আইন হেদায়া পৃষ্ঠা ৩৬১, শাফি’ আইন নং ও-২৪-৩-৩।
স্ত্রীকে কোনো বাদ্যযন্ত্র দেয়া যাইবে না − টি পি হিউগ্স্ − ডিকশনারী অব্ ইসলাম, পৃষ্ঠা ৬৭৫, শিকাগো।
চুরির মাল কতটা ‘সম্মানিত’ তার উপরেও চোরের হাত কাটা নির্ভর করে। যেমন, বাদ্যযন্ত্র চুরি করা বৈধ − মেমরি, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৪, অর্থাৎ বাদ্যযন্ত্র এতই নিকৃষ্ট যে ওটা চুরি করা যেতে পারে।
২০০৪ সালের জানুয়ারীতে আফগান সরকার সংসদে এসেই সর্বপ্রম রেডিও-টিভি-বিচিত্রানুষ্ঠানে নারীর গান ও খবর পড়া নিষিদ্ধ, এ-আইন পাশ করে । ইত্যাদি আরও অনেক আছে ।
চার ইমামের ভাষ্য
গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-অভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। সকলেই গান- বাদ্যকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ইমাম মালেক রাহ. কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেবল ফাসিকরাই তা করতে পারে।- কুরতুবী ১৪/৫৫
ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেছেন যে, গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি হল আহমক।তিনি আরো বলেন, সর্বপ্রকার বীণা, তন্ত্রী, ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গী সবই হারাম এবং এর শ্রোতা ফাসেক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না।-ইগাছাতুল লাহফান ১/১৭৯; কুরতুবী ১৪/৫৫
হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ আল্লামা আলী মারদভী লেখেন, বাদ্য ছাড়া গান মাকরূহে তাহরীমী। আর যদি বাদ্য থাকে তবে তা হারাম।-আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৮৮
ইমাম শাফেয়ী রাহ. শর্তসাপেক্ষে শুধু ওলীমা অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশ আছে বলে মত দিয়েছেন। কেননা বিয়ের ঘোষণার উদ্দেশ্যে ওলীমার অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশের বর্ণনা হাদীসে রয়েছে।- জামে তিরমিযী হাদীস : ১০৮৯; সহীহ বুখারী হাদীস : ৫১৪৭, ৫১৬২ মনে রাখতে হবে, এখানে দফ বাজানোর উদ্দেশ্য হল বিবাহের ঘোষণা, অন্য কিছু নয়।-ফাতহুল বারী ৯/২২৬
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
অবশ্যই আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য মদ, জুয়া, ঢোল-তবলা এবং বীণা জাতীয় বাদ্যযন্তকে হারাম করেছেন।
*আহমাদ, সিলসিলাহ সহিহাহঃ ১৭০৮, বায়হাকীঃ ২১৫২৯। ( আরও অনেক হাদিস আছে )
‘দুনিয়ার সর্বোচ্চ প্রভাবশালী ইসলামী বিশেষজ্ঞ’দের মতামত
“অনৈতিক ও গুনাহ-এর কর্মকাণ্ডের সহিত যুক্ত না হইলে, কিংবা সেই বাহানায় মানুষকে হারামের দিকে না টানিলে, কিংবা মানুষকে ফরজ ইবাদত (আল ওয়াজিবাত) হইতে সরাইয়া (বা ভুলাইয়া) না দিলে সংগীত শোনা, সংগীত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা, এবং বাদ্যযন্ত্র বৈধ”।
ডক্টর কারযাভীও একই কথা বলেছেন- “কাজী আবুবকর ইবনুল আরাবী বলিয়াছেন ‘গান হারাম হওয়া পর্যায়ে একটি হাদিসও সহীহ নহে’।
ইবনে হাজম বলিয়াছেন – ‘এ পর্যায়ের সকল বর্ণনাই বাতিল ও মনগড়া রচিত’… এ পর্যায়ে বর্ণিত নিষেধমূলক হাদিসগুলি সমালোচনার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত ….বহুসংখ্যক সাহাবী ও তাবেয়ীন গান শুনিয়াছেন,… যে গানের সাথে মদ্যপান, ফষ্টিনষ্টি ও চরিত্রহীনতার মতো কোনো হারাম জিনিসের সংমিশ্রণ হয় সেই গান হারাম… রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেন- ‘কার্যাবলীর ভালোমন্দ নির্ভর করে তাহার নিয়তের ওপর।’ কাজেই যেই লোক এই নিয়তে গান শুনিল যে তাহার দ্বারা গুনাহের কাজে উৎসাহ পাওয়া যাইবে তাহা হইলে সে ফাসিক। পক্ষান্তরে যেই লোক স্বভাব মেজাজের সুস্থতা লাভের উদ্দেশ্যে শুনিল, আল্লাহর আনুগত্য কাজে শক্তি সাহস পাওয়ার এবং ভালো ও সৎকাজে আগ্রহ ও উৎসাহ বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে শুনিল, তাহার এই কাজ নিশ্চয়ই অন্যায় বা বাতিল নহে। আর যেই ব্যক্তি না আল্লাহনুগত্যের নিয়তে শুনিল না নাফরমানি নিয়তে, তার এই কাজ নিষ্ফল কাজের পর্যায়ে গণ্য।” (ইসলামে হালাল হারামের বিধান- পৃষ্ঠা ৪০৬ – ৪১১)
যে গানে ইসলাম তথা আল্লাহতাআলার এবং আল্লাহর নবী-রাসূলগণ এঁর আদেশ-নির্দেশ, প্রশংসা এর প্রতিফলন রয়েছে, যেমন: হাম্দ-নাত (বা যে গানে কোনো অশালীন কথা, অবৈধ প্রেম, ইত্যাদি এর উল্লেখ নেই), সেটা ডাঃ যাকির নায়েক, ড: মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, ড: কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহিম, শাঈখ আসিম আল হাকীম সহ বিশ্বের অনেক স্কলারগণ এর মতে বৈধ গান । সেটা হতে পারে ধর্মীয় অথবা দেশাত্মবোধক, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রেম সম্পর্কিত (যা শুধুমাত্র স্বামী-স্ত্রীর মাঝেই সীমাবদ্ধ), সমাজের অনিয়ম এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, শিশুতোষ প্রভৃতি ।
গান বাজনা ঃ
গান বাজনা হারাম প্রসঙ্গে কোরআনের যে আয়াত গুলোর রেফারেন্স দেওয়া হয় । তা হল সুরা লোকমান আয়াত ৬
৩১:৬ وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡتَرِیۡ لَهۡوَ الۡحَدِیۡثِ لِیُضِلَّ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ٭ۖ وَّ یَتَّخِذَهَا هُزُوًا ؕ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ مُّهِیۡنٌ ﴿۶﴾
“একশ্রেণির লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ হইতে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে ।
বনি ইসরাইল ৬৪ নম্বর আয়াত
(আল্লাহ শয়তানকে বলছেন) −‘তোমার কণ্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পারো প্ররোচিত কর, তাদের উপর ঝাপিয়ে পড় তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে এবং তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে অংশীদার হও এবং তাদেরকে ওয়াদা দাও’। আর শয়তান প্রতারণা ছাড়া তাদেরকে কোন ওয়াদাই দেয় না। ”
সুরা লোকমান আয়াত ৬ এখানে লাহওয়াল হাদিস মানে হচ্ছে , অবান্তর কথাবার্তা , কিচ্ছা কাহিনী , ভিত্তি হীন বানোয়াট গল্প ইত্যাদি ।
সঙ্গীত-বিরোধীরা বলেন সুরা লোকমান ৬-এর ‘অবান্তর কথাবার্তা-ই নাকি ‘সঙ্গীত’ (মওলানা মুহিউদ্দিনের কোরানের অনুবাদ, পৃঃ ৭৮৩ ও ১০৫৩-৫৪)। কি হাস্যকর! আম জিনিসটা আম-ই। জামও নয়, কাঁঠালও নয়। ‘অবান্তর কথাবার্তা’ অবান্তর কথাবার্তাই, অন্যকিছু নয়। একই খেলা করা হয়েছে বনি ইসরাইলের ৬৪ নম্বর আয়াত নিয়েও। আয়াতটা হলো, মানুষকে পথভ্রষ্ট করার ব্যাপারে আল্লাহ শয়তানকে অনুমতি দিচ্ছেন: “তুই সত্যচ্যুত করে তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস স্বীয় আওয়াজ দ্বারা, স্বীয় অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তাদেরকে আক্রমণ কর”। অথচ এর অনুবাদ করা হয়েছে: “তুই তোর…রাগ-রাগিনী গান-বাজনা ও বাদ্যবাজনা দ্বারা …।”
সংগীতের আরবী হচ্ছে “মুসিকি”, সারা কোরানে ওই “মুসিকি” শব্দটাই নেই। কোরান কোথাও সংগীতকে নিষিদ্ধ করেনি অথচ “সঙ্গীত হারাম” দাবি করা হয় কোরানের দুটো আয়াত দিয়ে।
সংগীত-বিরোধী হাদিসগুলো ভিত্তিহীন
“সঙ্গীত এমন বিনোদন যাহা প্রাণে আনন্দ দেয়, হৃদয় তৃপ্ত করে এবং শ্রবণকে আরাম দেয়…উত্তেজনাপূর্ণ না হইলে ইহার সহিত বাদ্যযন্ত্র থাকিলে ক্ষতি নাই…আয়েশা রাঃ বলিয়াছেন যখন এক আনসারের সাথে এক মহিলার বিবাহ হইতেছিল তখন রসুল (সাঃ) বলিলেন, ‘আয়েশা, তাহারা কি চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করিয়াছে ? আনসারেরা চিত্তবিনোদন ভালবাসে’ (বুখারি)।
” ইবনে আব্বাস বলিয়াছেন আয়েশা তাঁহার এক আত্মীয়াকে এক আনসারের সাথে বিবাহ দিলেন। রসুল (সাঃ) আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন ‘তাহার সাথে কি কোন গায়িকা দিয়াছ ?’ আয়েশা বলিলেন, ‘না।’ তখন রসুল (সাঃ) বলিলেন, ‘আনসারেরা কবিতা ভালবাসে। এমন কাউকে পাঠানো তোমার উচিত ছিল যে গাহিবে − আমরা আসিলাম তোমাদের কাছে, আমাদের সম্ভাষণ করো, আমরাও তোমাদের সম্ভাষণ করি’ (ইবনে মাজাহ)
আয়েশা বলিয়াছেন ঈদুল আজহা’র দিনে মিনা’তে তাঁহার সহিত দুইজন বালিকা ছিল যাহারা ‘দফ’ (অনেকটা আমাদের ঢোলকের মতো – লেখক) বাজাইয়া গান গাহিতেছিল। রসুল (সাঃ) মুখ চাদরে ঢাকিয়া তাহা শুনিতেছিলেন (হাদিসে আছে তিনি মুখ ঢেকে শুয়েছিলেন), আবু বকর আসিয়া বালিকাদিগকে বকাবকি করিলেন। রসুল (সাঃ) মুখ বাহির করিয়া বলিলেন, ‘উহাদিগকে ছাড়িয়া দাও, আবু বকর। আজ ঈদের দিন’ (বুখারী ও মুসলিম)
ইমাম গাজ্জালী তাঁহার এহিয়ে উলুম আল্ দ্বীন কেতাবে (‘গান শোনা’ অধ্যায়ে ‘অভ্যাস’ পরিচ্ছেদে) গায়িকাবালিকার উলেখ করিয়াছেন…‘ইহা নিশ্চিতরূপে প্রমাণ করে গান গাওয়া ও খেলাধুলা করা হারাম নহে…দলিলে আছে বহু সাহাবি ও পরের প্রজন্মের মুসলিম বিশেষজ্ঞরা গান শুনিতেন ও ইহাতে কোন দোষ দেখিতেন না।
গবেষকদের মতে গান গাহিবার বিরুদ্ধে যেসব হাদিস আছে তাহা নির্ভরযোগ্য নহে।’ আইনবিদ আবু বকর আল্ আরাবি বলেন, ‘সঙ্গীত নিষিদ্ধের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোনই হাদিস নাই।’ ইবনে হাজম (১১শ’ শতাব্দীর স্পেন খেলাফতের বিখ্যাত শারিয়াবিদ − লেখক) বলিয়াছেন, ‘এই বিষয়ে (সঙ্গীত নিষিদ্ধের বিষয়ে − লেখক) যাহা কিছুই লিখা আছে সকলই মিথ্যা ও ভেজাল।’
সংগীতের পক্ষে অজস্র হাদিস আছে, লম্বা হয়ে যাবে বলে উদ্ধৃতি দিচ্ছিনা। এবারে চলুন আরো কিছু দলিল দেখা যাক।
১. অখণ্ড ভারতের সর্বোচ্চ ইসলামি নেতাদের অন্যতম, ভারতীয় কংগ্রেসের দুইবারের সভাপতি, কলকাতার ঈদের নামাজ পড়ানোর পেশ ইমাম মওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেছেন: “পয়গম্বর দাউদ (আঃ)-এর কণ্ঠস্বর অত্যন্ত মিষ্টি ছিল। তিনি সর্বপ্রথম হিব্রু সংগীতের সংকলন করেন ও মিশরের ও ব্যাবিলনের গাছ হইতে উচ্চমানের বাদ্যযন্ত্র উদ্ভাবনা করেন”। (তর্জুমান আল্ কুরান, ২য় খণ্ড পৃঃ ৪৮০।)
২. “হজরত ওমর(রঃ)-এর আবাদকৃত শহরের মধ্যে দ্বিতীয় হইল বসরা। আরবি ব্যাকরণ, আরূয শাস্ত্র এবং সংগীতশাস্ত্র এই শহরেরই অবদান” (বিখ্যাত কেতাব ‘আশারা মোবাশশারা’, মওলানা গরীবুল্লাহ ইসলামাবাদী, ফাজেল-এ দেওবন্দ, পৃষ্ঠা ১০৬।)
৩. ইমাম গাজ্জালী: “নবী করিম (সাঃ) হযরত আবু মুসা আশআরী (রাঃ) সম্পর্কে বলিয়াছেন − তাঁহাকে হযরত দাউদ (আঃ) এর সংগীতের অংশ প্রদান করা হইয়াছে।” (মুরশিদে আমিন, পৃষ্ঠা ১৭০ − এমদাদিয়া লাইব্রেরি)
এরকম অজস্র দলিল আছে।
‘কোনো কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ইসলামে নিষিদ্ধ’ (মায়েদা ৭৭, নিসা ১৭১ ও বিদায় হজ্বের ভাষণ)।
গান আসলে কি তা জেনে নেই
সঙ্গীত প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। গাছের ডালের মধ্য দিয়ে বাতাস বয়ে গেলে সঙ্গীত উৎপন্ন হয়। খরস্রোতা নদীর কুলুকুলু শব্দ একপ্রকার সঙ্গীত। নাম না জানা পাখির কলতানও সঙ্গীত। এগুলো শ্রবণ করা যদি পাপ না হয়ে থাকে, এই শব্দগুলো মানুষের আবিষ্কৃত যন্ত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুললে তাতে পাপ হবে কোন যুক্তিতে?
আমাদের জীবন যাপনের প্রাথমিক গাইডলাইন হল কুরআন - যার মাধ্যমে আল্লাহ্র সাথে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ। সেই কুরআনে মদ, জুয়া, শুকর, ইত্যাদি হারাম করা হল( আবার জীবনের প্রয়োজনে তা হালাল ) গান কেন হারাম করা হলনা। যেসব আয়াতের উল্লেখ করা হল, সেগুলোর ব্যাখ্যা আমার কাছে মনে হয়েছে, গরু রচনা লিখতে গিয়ে নদী রচনা লিখে গরুকে নদীতে ফেলার মত।
গানের ভিতরে ৩টি ভিত্তি আছে যা দ্বারা একটা গান বিকাশ লাভ করে , সেগুলো হোল --
১) কথা বা লিরিক্স
২) সুর বা টিউন
৩)তাল বা রিদম
অর্থাৎ কথা, সুর ও তাল দ্বারা গান গঠিত হয় । গানের কথাটা ভালো খারাপ দুটোই হতে পারে একই ভাবে সুর ও তাল ভালো খারাপ দুটোই হতে পারে । কথা সুর ও তালের সম্মনয়ে গান গঠিত হয় । গান মানে হোল কথা সুর ও তালের সমাহার ..
এবার বলুন
১) আজানের মধ্যে -- কথা, সুর ও তাল আছে কিনা ? যদি থাকে তাহোলে গান কেন হারাম ????
২)কোরান তেলোয়াতের ভিতর ---- কথা, সুর ও তাল আছে কিনা ? যদি থাকে তাহোলে গান কেন হারাম ?????
আল্লামা ইকবাল তাঁর এক কবিতায় লিখেছেন, ‘ওহ যামানা মে মুআযযায থী হামেলে কুরআন হো কর/ আওর তুম খার হুয়ী তারেকে কুরআন হো কর’।
অর্থাৎ ইসলামের প্রথম যুগের মানুষ সম্মানিত ছিলেন কুরআনের বাহক হয়ে, আর তোমরা অপদস্থ হচ্ছো কুরআন ছেড়ে দিয়ে। আমরা যদি আগের মত শুধু কোরআন অনুসরণ করি, তবেই মুক্তি।
ইসলামে গান-বাদ্য হারাম নয়, হারাম হচ্ছে অশ্লীলতা