আযাব, গজব এবং মানব

আযাব, গজব এবং মানব


 [এক]

আযাব কী? আল্লাহ সুবাহানাহু তাআলার কর্তৃক অবাধ্য, অত্যাচারী, উচ্ছৃঙ্খল জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার এক মহা ব্যবস্থাপনার নাম আযাব। আল্লাহ্‌ প্রদত্ত আযাব হতে পারে বিভিন্ন ধরনের। পবিত্র কুরআন এবং হাদিস গ্রন্থ থেকে জানা যায় ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, অগ্নি বায়ু, আগ্নেয়গিরির উদগীরণ এবং অজানা প্লেগের বিস্তার ইত্যাদি আযাবের মধ্যে অন্যতম।
.
আল্লাহ আযযা ওয়া জাল যেকোনো মুহূর্তে ইচ্ছা করা মাত্র যেকোনো অবাধ্য, অত্যাচারী ও পাপাচারগ্রস্ত জাতিকে এই সকল আযাবের দ্বারা নিমিষেই ধ্বংস করে দিতে পারেন। সর্বশক্তিমান সেই মহান সত্তার অসাধ্য কোনো কিছুই নেই। কিন্তু না, তিনি মহান, তার ক্ষমাশীলতার কোনো জাগতিক তুলনা নেই। তার তুলনা একমাত্র তিনি নিজেই।
.
মহান রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের বারংবার সুযোগ দেন। নিজেদের সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য প্রতিনিয়ত অবকাশ দেন। কিন্তু একেবারে লাগামহীনভাবে ছেড়ে দেন না।
.
প্রতিনিয়ত অগণিত সুযোগ দেয়ার পরও যখন অবাধ্য কোনো সম্প্রদায় বাধ্য হয় না, মহান সেই সত্তার আনুগত্য স্বীকার করে না তখন তাদের উপর আল্লাহ আযযা ওয়া জাল নাজিল করেন কঠোর যন্ত্রণাদায়ক আযাব। সীমা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির জন্যই সেই সকল জাতিকে কঠোরভাবে পাকড়াও করেন আল্লাহ্‌ সুবাহানাহু তাআলা।
.
আল্লাহ আযযা ওয়া জাল এই সকল নিকৃষ্ট জাতিসমূহকে ইহজাগতিক উছিলাতেই ধ্বংস করে দেন। যেমন– তিনি বিশাল প্লাবন দিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন নূহ (আঃ)-এর কওমকে। তিনি বজ্রপাতে ঝলসে দেন বনী ইসরাইলের অবাধ্যদেরকে একাংশকে। প্রতিনিয়ত হঠকারিতা, অবাধ্যতা এবং আত্ম অহংকারের দরুন প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ধ্বংস করে দেন দাম্ভিক আদ জাতিকে। বিধ্বংসী ভূমিকম্পের কবলে ফেলে ধ্বংস করে দেন সামূদ সম্প্রদায়কে। আল্লাহ সুবাহানাহু তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
“তুমি কি দেখনি তোমার প্রতিপালক ‘আদ জাতির সঙ্গে কী ব্যবহার করেছিলেন? যার সমতুল্য অন্য কোন দেশে নির্মিত হয়নি। উচ্চ স্তম্ভ নির্মাণকারী ইরাম গোত্রের প্রতি? এবং সামূদের প্রতি যারা উপত্যকায় পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করেছিল? এবং (সেনা ছাউনি স্থাপনের কাজে ব্যবহৃত) কীলক-এর অধিপতি ফেরাউনের প্রতি?” [১]
এই ঘটনাগুলো পবিত্র কুরআনের অসংখ্য স্থানে আলোচিত হয়েছে। কিন্তু আফসোস! এই সকল ঘটনা ও জাতিসমূহের পরিণতি থেকে আমরা কোনরূপ শিক্ষা গ্রহণ করি না।
.
এই সকল আয়াতের একটি মাত্র আয়াত ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করলে কিংবা জেনে বুঝে পবিত্র কুরআনের কোনো একটি আয়াত নিয়ে সামান্য পরিমাণ ব্যঙ্গ প্রদর্শন করলে যেকোনো ব্যক্তি মুসলিম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। সেই সকল ব্যক্তিরা ঈমান নবায়ন করার পূর্ব পর্যন্ত কোনোভাবেই তাদের মুসলিম বলার উপায় নেই।
[দুই]
আমাদের প্রজন্মের অনেকের মাথায় অনবরত ঘুরঘুর করে আল্লাহ কেন তার অবাধ্য জাতিদের জাগতিক দুর্যোগ তথা আযাবের মাধ্যমে ধ্বংস করেন? কেন তিনি অলৌকিক কোনো কিছুর মাধ্যমে তাদের ধ্বংস কর্ম সম্পাদন করেন না? প্রশ্নটাকে আপাতদৃষ্টিতে যতটা গভীর মনে হয়, আসলে ততটা গভীর নয়।
.
আল্লাহ সুবাহানাহু তাআলার মাহাত্ম্য এবং নিদর্শন সমূহ নিয়ে একটু গভীর চিন্তা-ভাবনা করলেই এই প্রশ্নের সঠিক, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান পাওয়া সম্ভব। কিন্তু ঐ যে বললাম, আমরা চিন্তা করি না।
.
এই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার আগে চলুন একটু চোখ রাখি আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীজির জীবনীর পাতায়। ইসলামের ইতিহাসের প্রথম ফায়সালাকারী যুদ্ধ বদরের কথাই চিন্তা করুন। সেদিন বদরের প্রান্তরে ৩১৩ জন মুসলিমের মুজাহিদের বিপরীতে ১০০০ কিংবা ততোধিক মুশরিক বাহিনীর সাথে সংঘটিত হয় এক চরম অসম যুদ্ধ।
.
শুধুমাত্র সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে নয়, সামরিক সরঞ্জামাদির দিক থেকেও এই যুদ্ধে ছিল অসম্ভব রকমের অসমতা। সেদিন আল্লাহ সুবাহানাহু তাআলা কি চাইলে পারতেন না বিনাযুদ্ধে মুশরিকদের ধ্বংস করে দিতে? তার স্বীকারকারী বাধ্য মুসলিম উম্মাহকে বিনা রক্তপাতে বিজয় দান করতে? হ্যাঁ, তিনি অবশ্যই পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি।
.
তাওহীদের পক্ষ নিয়ে মুসলিম সৈন্য সেদিন বদরের প্রান্তরে প্রাণপণ যুদ্ধ করেছে, আল্লাহর আযযা ওয়া জাল তাদের প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেছেন। সেদিনের জাগতিকভাবে যুদ্ধ করার ফলাফল হিসেবেই মুসলিম উম্মাহ বদরের প্রান্তরে পেয়েছে ইতিহাসের পাতায় অমলিন অসম যুদ্ধে অভাবনীয় বিজয়। এরফলে, মুসলিম জাতির শক্তিমত্তা দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। আরবে অঞ্চলে আবির্ভাব হয় এক নতুন পরাশক্তির। যে শক্তির নাম মুসলিম।
.
এবার একটু ভেবে দেখুন তো, বিনা যুদ্ধে যদি মুসলিম উম্মাহ জয়লাভ করত তবে কি শক্তিধর জাতি হিসেবে তাদের নাম ইতিহাসের পাতায় একই ভাবে লিপিবদ্ধ হতো?
.
এই পর্যায়ে সেই প্রশ্নটির কথা পুনরায় চিন্তা করুন, আল্লাহ সুবাহানাহু তাআলা কেন জাগতিক আযাব বা দুর্যোগের মাধ্যমে তার অবাধ্য সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দেন?
.
এই প্রশ্নের সবচেয়ে সহজ এবং গ্রহণযোগ্য উত্তর হচ্ছে, এই নশ্বর দুনিয়ায় যাবতীয় কর্মের উপর নির্ভর করে আমাদের অবিনশ্বর ভবিষ্যৎ। সেই হিসেবে এই দুই দিনের দুনিয়া আমাদের জন্য একটি পরীক্ষা ক্ষেত্র মাত্র। এই চলমান পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল আমাদের হাতে আসবে শেষ বিচারের দিবসে।
.
এই মুহূর্তে পুনরায় একটিবার ভেবে দেখুন তো, কোনো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়ে সেই পরীক্ষা নেয়ার যৌক্তিকতা কতটুকু? সর্বশ্রেষ্ঠ ন্যায় বিচারক যদি অলৌকিক শক্তি প্রদর্শন পূর্বক কোনো জাতিকে ধ্বংস করে দেন এবং সেই ঘটনা যদি ভিন্ন কোনো জাতি প্রত্যক্ষ করে তবে কি তাদের কাছে কি প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায় না? সেখানে কি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পরীক্ষা পদ্ধতি ও তার ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় না? সুবাহানআল্লাহ্‌!
.
সর্বশ্রেষ্ঠ ন্যায় বিচারকের দ্বারা কি কস্মিনকালেও এমন বে-ইনসাফপূর্ণ কর্ম সম্পাদন সম্ভব? কখনই না। আল্লাহ আযযা ওয়া জাল পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে প্রত্যেকের কৃত কর্মফল বুঝিয়ে দেন এবং তা যদি চুল পরিমাণও হয়। সুবাহানআল্লাহ।
.
বলা বাহুল্য, আল্লাহ আযযা ওয়া জাল অবাধ্য জাতিসমূহকে সরাসরি অলৌকিক কোনো শাস্তি না দিলেও পৃথিবী ও মহাবিশ্বের পরতে পরতে রয়েছে চিন্তাশীল মস্তিষ্কের জন্য অগণিত নিদর্শন। প্রকৃতিতে প্রাপ্ত একটি ফুলের পাপড়ির সৃষ্টি থেকে শুরু করে চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্রের নিয়মতান্ত্রিক চলমান প্রক্রিয়া সেই নিদর্শনেরই অংশ।
.
পৃথিবী কেন সূর্য থেকে আরেকটু দূরবর্তী অবস্থানে নেই? যদি থাকত তবে পৃথিবীতে প্রাণের অবস্থা কী হতো? কিংবা কেনই বা সূর্য আরও কিছুটা নিকটে নেই? যদি তেমনটা হতো তবে আমাদের অবস্থা কেমন হতো? এই পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদের কাজ কী? চিন্তা করতে পারেন একজন সুপ্রিম পাওয়ার ছাড়া কীভাবে মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলমান রয়েছে?
.
অন্যদিকে আল্লাহ প্রদত্ত আযাবের কথা শুনে যারা নাক সিটকায় কিংবা সন্দেহ পোষণ করে তাদের জন্যও পৃথিবী জুড়ে রয়েছে অগণিত নিদর্শন। সাম্প্রতিক কালে সন্ধান পাওয়া ইতিহাসের ধ্বংস প্রাপ্ত নগরীর মধ্যে সিরিয়ার পালমিরা, ইতালির পম্পেই অন্যতম। যে বা যার মনে আল্লাহ আযযা ওয়া জালের আযাব নিয়ে সামান্যতম সন্দেহ আছে সে ইতালির পম্পেই নগরীর সামান্য কিছু ডকুমেন্টারি দেখতে পারেন। আশাকরা যায়, অন্তরের কলুষতা সম্পূর্ণরূপে কেটে যাবে। ইন শা আল্লাহ।
.
অজানা ইতিহাসের পাতায় এমন অভাবনীয় নিদর্শন থাকা সত্ত্বেও আমরা বড্ড গাফেল। আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিই না। আমাদের অলস মস্তিষ্ক তেমনভাবে ভাবতে চায় না। আজ আমরা দুনিয়া অর্জনের নেশায় আজ অন্ধত্বকেই বরণ করে নিয়েছি। জাগতিক সফলতার সংজ্ঞা আমাদের চূড়ান্ত সফল হওয়া থেকে সম্পূর্ণ গাফেল করে দিয়েছে।
[তিন]
আজকের উত্তর আধুনিক যুগের অত্যাধুনিক অনেক মোসলমান মন আল্লাহ প্রদত্ত আযাবকেই বিশ্বাস করে না। এই সম্পর্কিত এক আয়াতে স্বয়ং আল্লাহ আযযা ওয়া জাল পবিত্র কুরআনে বলেন,
"অতঃপর আযাব তাদেরকে পাকড়াও করল। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে না।" [২]
পবিত্র কুরআন এমন এক গ্রন্থ যা চিন্তাশীল মস্তিষ্কের জন্য নিদর্শন স্বরূপ। পূর্বেই একবার বলা হয়েছে, আল্লাহর পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত অস্বীকারের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিঃসন্দেহে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়। এমতাবস্থায়, এই আয়াতের বিপরীত ধারণা পোষণকারী কিংবা কোনো একটি আযাব সংক্রান্ত আয়াত অস্বীকারকারী মুসলিমই থাকবে না। অর্থাৎ সন্দেহাতীত ভাবে সেই ব্যক্তি কাফের। ঈমান নবায়ন ভিন্ন সে আর মুসলিম থাকবে না। এতে কোনো সন্দেহ নেই, সীমালঙ্ঘনকারীর জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক কঠোর শাস্তি।
.
অনেকের উর্বর মস্তিষ্কে আবার এমন প্রশ্নও উৎপাত করে যে, যেখানে আল্লাহর আযাব আসে সেখানে কি সবসময় অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়? সেখানকার মুমিন ব্যক্তিরা আক্রান্ত হয় না? প্রশ্নটি যতটা না গভীর ঠিক ততটাই বাচ্চাসুলভ।
.
একজন পরিপূর্ণ বিশ্বাসী ও মুমিন ব্যক্তি মৃত্যুর পরই পাবে আল্লাহ সুবাহানাহু তাআলার প্রতিশ্রুত প্রতিদান জান্নাত। যার তলদেশ দিয়ে নহর সমূহ প্রবাহিত হয়। এটাই সত্য, এটাই আল্লাহ সুবাহানাহু তাআলার ওয়াদা।
.
একজন মুমিনের মৃত্যুই কেবলমাত্র এই অমূল্য প্রতিদান প্রাপ্তির পথে একমাত্র প্রতিবন্ধকতা। অর্থাৎ আল্লাহর একান্ত বাধ্যগত, তাকওয়াবান মুমিমের মৃত্যুর মাধ্যমেই তার আকাঙ্ক্ষিত জান্নাতে পৌঁছানোর দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়। এই মৃত্যু মুমিনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এক সুখবর।
.
অন্যদিকে যারা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত, প্রতিনিয়ত যারা সীমালঙ্ঘন করছে তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ও আযাব। তারা যেমন নশ্বর এই দুনিয়াতে লাঞ্ছিত হবে তেমনিভাবে অনন্তকালের জন্য লাঞ্ছিত হবে মৃত্যুর পরের সেই অবিনশ্বর সেই জগতে। তারা তাদের অবাধ্যতার প্রতিদান হিসেবে পাবে চিরস্থায়ী জাহান্নাম। মানুষের উপর আসা আযাব ও প্রত্যেকের কর্মফল বিষয় ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
"যখন আল্লাহ কোন কওমের উপর আযাব অবতীর্ণ করেন তখন সেখানে বসবাসরত সকলের উপরই সেই আযাব পতিত হয়। অবশ্য পরে প্রত্যেককে তার আমল অনুযায়ী উঠানো হবে।" [৩]
এই হাদিস থেকে বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে, মুমিন মৃত্যুর মাধ্যমে আল্লাহর প্রতিশ্রুত প্রতিদানের নিকটবর্তী হয়ে উঠে। অন্যদিকে অবাধ্যদের জন্য এই আযাবের দ্বারা জাগতিক শাস্তি এবং ইহজাগতিক ও অনন্তকালের শাস্তির দ্বার উন্মোচিত হয়ে যায়। একজন তাকওয়াবান মুমিনের জন্য যেকোনো উছিলায় মৃত্যু তাকে তার প্রাপ্য পুরস্কারের নিকটবর্তী করে তোলে। অর্থাৎ মৃত্যু মুমিনের জন্য পুরষ্কার স্বরূপ। সুবাহানআল্লাহ।
[চার]
আধুনিক অর্থনীতির কল্যাণে ‘দারিদ্র্যের দুষ্টু চক্র’ –ধারণাটির নাম শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অর্থনীতির ভাষায় দারিদ্রের দুষ্টু চক্র হচ্ছে এমন এক অবস্থা, যখন গরীব আরও গরীব হয়, ধনী হয়ে উঠে আরও অনেক বেশি বিত্তশালী।
.
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত সম্পদের চরম অসম বণ্টন প্রক্রিয়ার নামান্তর আধুনিক অর্থনীতির ‘দারিদ্র্যের দুষ্টু চক্র’ –নামক ধারণা।
.
সমাজের এই বিত্তশালী শ্রেণী এসকল অবৈধ সম্পদ দিয়ে গড়ে তোলে সুউচ্চ ইমারত, দালানকোঠাসহ আরও কত কী! আরাম আয়েসের কতশত ব্যবস্থা যা একজন দরিদ্রের চিন্তারও অতীত।
.
এই সকল সুউচ্চ ইমারত ও দালানকোঠা বৈধ পন্থায় তৈরিতে বেশি অর্থের খরচ করা লাগবে বিধায় তারা অবৈধ পথে তুলনামূলক স্বল্প টাকায় সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পুরে নেয় পকেটে। অতি সামান্য উৎকোচের বিনিময়ে নিয়ে নেয় দালানকোঠা ও সুবিশাল ইমারত তৈরির অবৈধ অনুমোদন। শুরু হয় অপরিকল্পিত নগরায়ন ও উঁচু উঁচু প্রাসাদ তৈরি এক অনৈতিক প্রতিযোগিতা। এই সকল উঁচু উঁচু প্রাসাদ তৈরির প্রতিযোগিতা কিয়ামতের আলামতও বটে। [৪]
.
এই সকল নিকৃষ্ট মানুষগুলো নিয়মনীতির সামান্যতম তোয়াক্কা করে না। তাদের চাল চলনে মনে হয়, তারা যা বলে তাই নিয়ম। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা এই সকল নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও অপরিকল্পিত নগরায়নের জন্য ঢাকাকে বসবাস অযোগ্য শহর হিসেবে ঘোষণা করেছে।
.
অন্যদিকে জনসংখ্যা ও ঘনবসতির দিক থেকে ঢাকার অবস্থান সারা বিশ্বে নবম।[৫] চিন্তার বিষয় হচ্ছে, আইনের পরোয়া না করে, বিল্ডিং কোড না মেনে যত্রতত্র ব্যক্তি উদ্যোগে উঁচু উঁচু ভবন নির্মাণের এই বিকৃত প্রতিযোগিতা ঢাকা শহরকে পৃথিবীর অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ নগরীতে পরিণত করেছে। তাদের এই সকল বিকৃত ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পূর্ণ খেসারৎ দিতে হবে সাধারণ মানুষকে। বলা হয়, ঢাকা কিংবা এর আশেপাশে ৭ থেকে ৮ মাত্রার একটি মাত্র ভূমিকম্পে এই শহরের প্রায় অর্ধেকের বেশি ভবন ধ্বসে যাবে। চিন্তা করতে পারেন, যদি এমনটা হয় তবে কী পরিমাণ জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হবে?
.
বাংলাদেশ ভারত ও মিয়ানমারের বেশ কিছু অংশ জুড়ে ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১২ বছর সময় নিয়ে একটি গবেষণা করা হয়। গবেষণাটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু গবেষক।
.
জিওসায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তিন দেশের কিছু অংশে একটি চ্যুতির (ফল্ট) সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এই চ্যুতির কারণে রিখটার স্কেলে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প সংঘটিত হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। [৬] যদি এমনটা হয় তবে ঢাকাসহ সারা দেশের কী অবস্থা হবে তা একমাত্র আল্লাহ সুবাহানাহু তাআলাই ভালো বলতে পারবেন। কেননা, গায়েবের জ্ঞান আমাদের নেই।
.
আপনার কী মনে হয়, দেশব্যাপী এতশত ক্ষয়ক্ষতিসহ অগণিত প্রাণহানির সম্ভাব্য ঝুঁকি এমনি এমনি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়ে গিয়েছে? কখনই না। আল্লাহ আযযা ওয়া জাল বলেন,
"তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তোমাদেরই হাতের কামাইয়ের ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন।" [৭]
এই আয়াতের মধ্যে মানবজাতির জন্য রয়েছে অভাবনীয় শিক্ষা। বর্তমান সময়ের অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ঘোরতর বিপদ আসন্ন প্রায়। আজ আমাদের বিত্তবান শ্রেণীর একাংশ ৫ তলার অনুমোদন নিয়ে ১০/১৫ তলার দালান নির্মাণ করে। এই সকল অনৈতিক, অনিয়ম কি আমাদের সমাজের মানুষের মানুষই করছে না?
.
এই সমাজের গরীবের রক্ত চুষে, নিজেদের পকেট ভর্তি করে রাজধানীতে উঁচু উঁচু প্রাসাদ তৈরির প্রতিযোগিতা কি আমাদের সমাজের বিত্তবানদের কার্যক্রম নয়? প্রতিনিয়ত কেন্দ্র অভিমুখী এই জনস্রোতের জন্য কি আমাদের সমাজের নীতি নির্ধারকরা একটুও দায়ী নয়? গরীবের হক, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, ডেস্টিনি কেলেঙ্কারি, সরকারি বরাদ্দ চুরি, ত্রাণ চুরিসহ এই সকল নীতি বহির্ভূত অগণিত কর্মকাণ্ড কি আমাদেরই নেতা-নেত্রী, জনপ্রতিনিধি এবং দায়িত্বশীলদের নয়? এই সকল অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য কি আমরা একটুও দায়ী নই?
.
কথায় বলে, ‘যার আছে যত বেশি, সে চায় ততো বেশি’–এই বক্তব্যটি মূলত মানুষের সন্তুষ্টির সহজাত প্রবণতাকে নির্দেশ করে। মানুষের সন্তুষ্টির শেষ সীমা যে কোথায় সেটা অধিকাংশ মানুষ নিজেই জানে না।
.
এই ব্যাপারটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয় সমাজের বিত্তবানদের ক্ষেত্রে। এই সকল বিত্তবান মহল সম্পদের মোহে পড়ে প্রতিনিয়ত ধরাকে সরা জ্ঞান করে। আল্লাহর আইনের কোনো প্রকার তোয়াক্কাই তারা করে না। আল্লাহ প্রদত্ত বিধিনিষেধ মেনে চলা দূরের কথা, তার পাশ দিয়ে পর্যন্ত তারা যায় না। আজ তাদের অনেকের কাছে দান-সাদাকা সর্বোচ্চ অনীহার কারণ। আজকের জামানায় অনেকের কাছে যাকাত যেন জরিমানার নামান্তর (কিয়ামাতের আলামত)। [৮]
.
এই সমাজের অধিকাংশ আবার যাকাতের নামে শাড়ি-লুঙ্গি বিলি বাট্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যা ইসলামের ফরজ বিধান যাকাতের ধারণার কাছাকাছি পর্যন্ত নেই। আজ আমরা যাকাতের উদ্দেশ্য অর্জনে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ।
.
বর্তমান সমাজের অধিকাংশ মানুষ কি ইসলামের পূর্ণাঙ্গ বিধিনিষেধ থেকে দূরে সরে যায়নি? তারা কি ইসলামের বিধিনিষেধকে নিজ প্রয়োজন ও সুবিধা অনুযায়ী কাটছাঁট করে না? এই জন্য কি আল্লাহ্‌ আযযা ওয়া জাল আমাদের পাকড়াও করতে পারেন না?
[পাঁচ]
আধুনিক অর্থনীতির নামে পুঁজিবাদের জন্মলগ্ন থেকেই সমাজে রন্ধ্রে রন্ধ্রে জন্ম হয়েছে এক কৃত্রিম উঁচু নিচু ভেদাভেদের দেয়াল। আজ সেই ভেদাভেদের প্রাচীর আকাশ পানে মাথা তুলতে শুরু করেছে। দিনকে দিন এই ভেদাভেদের প্রাচীর উচ্চ থেকে উচ্চতর হচ্ছে। পুঁজিবাদের এই যুগে সম্পদের বণ্টন প্রক্রিয়া আজ প্রশ্নবাণে জর্জরিত। আধুনিক অর্থনীতির দারিদ্র্যের দুষ্টু চক্রের কষাঘাতে দরিদ্র শ্রেণীর জীবন মান আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে।
.
এই পৃথিবী ও পৃথিবীবাসীর আজ প্রচণ্ড অসুখ। এই অসুখ সম্পূর্ণ কৃত্রিম। এই অসুখের জন্য আমরা পৃথিবীবাসীই দায়ী। এই পৃথিবী জুড়ে চলমান উঁচু নিচু ভেদাভেদের প্রাচীরের ফলে সামাজিক বন্ধন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পতিত হচ্ছে ধ্বংসের মুখে। সামাজিক জীবন আজ বিপন্ন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শুধুমাত্র কাগজে কলমে; বাস্তবে তা অস্তিত্বহীন।
.
এই সমাজের উচ্চ শ্রেণিভুক্ত অসংখ্য মানুষের কাছে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা ও পাড়া-প্রতিবেশীর হক আদায় করা আজ এক অযাচিত দায়িত্ব। আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর হক আদায় অনেক দূরের কথা এই শ্রেণীর মানুষজন ঔরসজাত পিতা ও জন্মদাত্রী মাতার হক পর্যন্ত আদায় করে না।
.
প্রতি মুহূর্তে পিতামাতার চরম অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়। শেষ বয়সে যখন আপন সন্তানের হাত ধরে চলার কথা, নাতি নাতনিকে হাত ধরে হাঁটা শেখানোর কথা তখন সেই আদরের সন্তান তাদেরকে নিক্ষেপ করে নগরীর আস্তাকুঁড়ে। তাদের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হয় সুখের নিবাস নামক অজস্র দুঃখের বৃদ্ধাশ্রমে।
.
সমাজের এই উচ্চ শ্রেণীর অধিকাংশ মানুষেরা তার আপন পিতামাতার সাথে চরম রূঢ় আচরণ করে কিন্তু বন্ধু-বান্ধবের সাথে করে সুন্দর, সাবলীল ও সৌহার্দপূর্ণ আচরণ। কতই না নিকৃষ্ট এই সকল মানুষরূপী অমানুষগুলোর বিবেকবোধ। এই নিকৃষ্ট বিবেকবোধও কিয়ামাতের আলামত। [৯] সমাজের এরূপ অধঃপতনের জন্য কি বিত্তবান শ্রেণী দায়ী নয়? আমাদের সমাজ ও আমরা নিজেরা কি এই দায় কোনোভাবে এড়াতে পারি?
.
আজকের সমাজে বৈধভাবে বিয়ে করা যেন ব্যাঘ্রের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়া ন্যায় কঠিনতম কাজে পরিণত হয়েছে কিন্তু একাধিক প্রেম করা কিংবা প্রেমের নামে প্রকাশ্য অশ্লীলতা করে বেড়ানো খুব সহজ ও স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। এই নিকৃষ্ট সমাজ ব্যবস্থায় কথিত কনসেন্টের নাম বিক্রি করে দেয়া হয়েছে ব্যভিচারের বৈধতা।
.
আজকের সমাজ ব্যবস্থায় এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে শরিয়াহ সম্মতভাবে একাধিক বিয়ে করা প্রায় অবৈধ, যারা আল্লাহর বিধান মোতাবেক একাধিক বিয়ের কথা ভাবে কিংবা করে তাদের কপালে জোটে নারীলোভী, দেহলোভী, চরিত্রহীনসহ অগণিত বিশেষণ। তারা পরিণত হয় এই সমাজের দুচোখের শূলে।
.
শুধু তাই নয়, ক্ষেত্রবিশেষে একাধিক বিয়ে করার জন্য এই সমাজের মানুষেররূপী পশুদের দ্বারা লাঞ্ছনারও স্বীকার হতে হয়। অথচ, এই একই সমাজে পরকীয়া সম্পূর্ণরূপে বৈধ। অন্যদিকে সুগার ড্যাডিদের লাখ লাখ টাকা খরচ করে রাখা রক্ষিতারা পর্যন্ত বৈধ। এই সকল রক্ষিতাদের খুন করে ফেললেও খুনির দিকে আঙ্গুল তোলার কেউ নেই।
.
আঙ্গুল তো অনেক দূরের কথা, মামলার এজাহারে অপরাধী হিসেবে কার নাম উল্লেখ করা হয়েছে তা পর্যন্ত আজকালকের মিডিয়া প্রকাশ করে না। কতই না নিকৃষ্ট আমাদের বিচার বিবেচনাবোধ। কতই না নিকৃষ্ট আমরা। সমাজের প্রতিটি স্থানে আজ দ্বিমুখী মুনাফিকের বসবাস।
.
অন্যদিকে এই পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় কিশোর ও যুবকদের ধ্বংস করার লক্ষ্যে নাটক, সিনেমা এবং বিজ্ঞাপনের নামে অশ্লীলতাকে প্রতিনিয়ত উস্কে দেয়া হয়। এমন সব কুরুচিকর নাটক, সিনেমা ও বিজ্ঞাপন বানানো হচ্ছে যা পরিপূর্ণরূপে ইসলামি মূল্যবোধের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। এই সকল নাটক, সিনেমার মাধ্যমে আজকের যুগের অসংখ্য ছেলে-মেয়ে ছোট্ট বয়স থেকেই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের তালীম প্রাপ্ত হয়।
.
আধুনিক টেলিভিশন নামক শয়তানের বাক্সের কল্যাণে অশ্লীলতা আজ পৌঁছে গিয়েছে উচ্চ, মধ্য ক্ষেত্রবিশেষে নিম্নবিত্তের ঘরে ঘরে। ইন্টারনেট নামক আধুনিক প্রযুক্তি ও আধুনিক মোবাইল ফোন অশ্লীলতাকে নিয়ে এসেছে সর্ব সাধারণের হাতে হাতে। এই একই সমাজের কেউ ইন্টারনেট ব্যবহার করে টাকা উপার্জনসহ বহুবিধ পন্থায় উপকৃত হচ্ছে তো অন্যকেউ টিকটক নামক প্রজন্ম ধ্বংসকারী উপাদানে বুঁদ হয়ে আছে।
.
এই সমাজে নিরবচ্ছিন্নভাবে হয়ে চলা এই অগণিত পাপাচারের জন্য কি বিত্তশালী পুঁজিবাদের হর্তাকর্তারা সামান্যতম দায়ী নয়? ধ্বংসপ্রাপ্ত এই সমাজকে সঠিক দিশা দেখানোর জন্য আমরা কি কোনো অবদান রেখেছি? আমরা কি নিজ নিজ অবস্থানে সর্বদা সঠিক কাজটা করি?
.
এই সমাজে সংঘটিত অনৈতিক কার্যক্রম মুখ বুজে সহ্য করার জন্যেও কি আমরা আমাদের বিবেকের কাঠগড়ায় অপরাধী হিসেবে বিবেচ্য হব না? এমতাবস্থায়, আমাদের সকলের কান খাড়া করে শুনে রাখা উচিৎ, উমার ইবনু আব্দুল আযীয (রহি.) থেকে বর্ণিত,
"বিশেষ লোকের গুনাহের কারণে আল্লাহ তাআলা জনসাধারণকে আযাব দেন না। তবে পাপাচার যদি প্রকাশ্যে হতে থাকে, তখন সকলেই আযাবের যোগ্য হয়।" [১০]
এখানে আমভাবে সকল মানুষ আযাব ভোগ করার একমাত্র কারণ প্রকাশ্যে হওয়া পাপাচারের কোন প্রকার প্রতিবাদ না করা। তাছাড়া কথায় বলে, নীরবতা সম্মতির লক্ষণ।
.
উপরোক্ত হাদিস থেকে আরও একটি বিষয় পরিস্কার যে, প্রকাশ্য পাপাচারের কারণে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল সমাজের সকল মানুষকে কঠোর ও যন্ত্রণাদায়ক আযাব প্রদান করেন।
.
এই পৃথিবীর বুকে নেমে আসা যাবতীয় আযাব যেমন– ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, অজানা প্লেগের বিস্তারসহ সকল প্রকার বিপদ-আপদ কি আমাদের নিজেদের হাতের কামাই নয়? শহরমুখী জনস্রোত, অপরিকল্পিত নগরায়ন, বনজঙ্গল উজাড়, প্রকাশ্য অশ্লীলতার প্রচার, পাপাচারের প্রসার, ব্যভিচারের বৈধতা, পরকীয়ায় প্রণোদনা, সামাজিক উঁচুনিচু ভেদাভেদ, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং প্লেগের সময় প্রতিনিয়ত স্থান ত্যাগের মত ইসলামের বিধিনিষেধ বিরুদ্ধ কর্মকাণ্ডের জন্যই কি সম্ভাব্য বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ও অগণিত প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে না?
.
আমাদের চোখের সামনে এই সকল পাপাচারমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার পরও আমরা যখন মুখে কুলূপ এঁটে বসে থাকি তখন কি আমরা তাদের মতোই অপরাধী নই? এই সকল আযাব, গজব কি আমাদের মতো মানবের নীরবতার কর্মফল নয়?
এই পুঁজিবাদী বিশ্ব ও সমাজ ব্যবস্থা থেকে উঁচুনিচু ভেদাভেদের প্রাচীরকে সমূলে ধ্বংস করতেই যে আল্লাহ্‌ আযযা ওয়া জাল ভূমিকম্পের মতো কঠোর আযাব দেন না তা কে নিশ্চিতভাবে বলতে পারে? এই বিষয়ে খোদ আল্লাহ সর্বাধিক জ্ঞাত, আমরা নই। সুবাহানআল্লাহ্‌।
গ্রন্থপঞ্জী সমূহঃ
_____________
[১] সূরাঃ ফাজর, আয়াতঃ (৬-১০)
[২] সূরা: আশ-শু'আরা, আয়াত: ১৫৮।
[৩] সহিহ বুখারীঃ ৭১০৮
[৪] সহিহ বুখারীঃ ৭১২১
[৫] ভূমিকম্প হলে আল্লাহ্‌ ভরসা, প্রথম আলো, ১৮ জুন, ২০১৯
[৬] ভূমিকম্প হলে আল্লাহ্‌ ভরসা, প্রথম আলো, ১৮ জুন, ২০১৯
[৭] সূরা: শুরা, আয়াত: ৩০
[৮] জামে আত-তিরমিজিঃ ২২১০ (দূর্বল হাদিস)
[৯] জামে আত-তিরমিজিঃ ২২১০ (দূর্বল হাদিস)
[১০] মুয়াত্তা ইমাম মালিক-১৮০৭ (ইমাম মালিক রহি. কর্তৃক এককভাবে বর্ণিত)

Post a Comment

Previous Post Next Post